আওয়ামী লীগ আধুনিক ও গতিশীল বিএনপি সেকেলে ও গতানুগতিক
রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ আধুনীক-- বি,এন,পি সেকেলে, গতানুগতিক--
========= =========
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুগপোযোগী আধুনিক রাজনৈতিক সংগঠন। যুগের সাথে তালমিলিয়ে কর্মসূচি প্রনয়নে এই দলের জুড়ি মেলা ভার। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে স্পষ্ট দেখা যায়- জনগন যাহা চায়, তাঁর সাথে তালমিলিয়ে কর্মসুচি প্রনয়নে দলটি অগ্রনী থেকেছে সর্বসময়ই।নতুন নতুন দিকনির্দেশনার জন্য দলের নেতাকর্মিরা মুখিয়ে থাকার প্রয়োজন হয়নি।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর সংগত কারনে এই অঞ্চলে একটা কায্যকর গনতান্ত্রীক বিরুদী দলের প্রয়োজন অনস্বিকায্য হয়ে পড়ে। ক্ষমতাসীন মুসলীম লীগের বিপরীতে তেমন কোন অ-সাম্প্রদায়িক দলের অস্তিত্ব অত্র অঞ্চলে ছিলনা। যে সসমস্ত দল বা ব্যাক্তি ছিল তাঁদের মানুষ ধর্মীয় দল বা কমিনিষ্ট প্রকারান্তরে নাস্তিক হিসেবেই জানত।ঠিক তখনি বঙ্গবন্ধু দলের নাম থেকে মুসলিম একক সম্প্রদায়গত শব্দটি বাদ দিয়ে দলকে অসাম্প্রদায়িক রুপ দিতে কালক্ষেপন করেননি।তিনি মুলত: পাকিস্তানের পুর্বাংশে বসবাসরত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব সম্প্রদায় আওয়ামী রাজনীতিতে অংশ নিতে উদ্যোগটি গ্রহন করেছিলেন। সম্প্রদায় গুলীও মুসলিমদল বিবেচনায় নিজেদেরকে সংকুচিত ভাব প্রদর্শনের প্রয়োজন হয়নি।তখনকার সময়ে হিন্দুরা লেখাপড়ায় অগ্রগামি ছিল। দলীয় প্রচার প্রপাগান্ডায় হিন্দু ছাত্র যুবকেরা সহজে সাধারন মানুষের অত্যান্ত কাছে যেতে পারতেন, যুক্তি দিয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করতেও কোন অসুবিধা হত না।
'৬৫ইং সালের পাকভারত যুদ্ধে পুর্ববাংলার জনগনের চোখ কান খুলে দেয়।যদিও ভাষার দাবীতে ৫২ সালেই রক্ত দিয়ে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বীজ রোপন করা হয়ে গিয়েছিল-,দিনে দিনে তা মহীরুহের আকার ধারন করা শুরু করেছিল। কিন্তু ফলভাব হচ্ছিলনা। সেই ফল ধরানোর সুযোগ পশ্চিমারাই '৬৫ইং পাক--ভারত যুদ্ধে তুলে দিলেন।দুরদর্শী বঙ্গবন্ধু ৬৫ ইং সালের পুর্ব বাংলার অরক্ষিতবস্থাকে জনমনে গেঁথে দিতে সামান্য সময় ও নষ্ট করেননি।
সর্বমহলের বিরুধীতা সত্তেও তিনি পুর্ব পাকিস্তানকে সুরক্ষার নিমিত্তে যুগোপযোগী ৬দফা দাবী প্রণয়ন করেন।৬দফা পুর্ববাংলার মানুষের মনের চাওয়ার সাথে হুবহু মিলে গেল।পুর্ববাংলার জনগনের ন্যায্য দাবি ৬দফা নিয়ে এগিয়ে গেলেন।এতে বিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যাক্তিরা, এবং বিশিষ্ট জনেরাও বিচ্ছিনতার গন্ধ পেয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে সরে গেলেন।তাঁরা মুলত একিভুত পাকিস্তানের সমর্থকই ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারায় ছিল অন্য আর একটি বিষয়।তিনি মনে মনে পোষন করতেন বঙ্গভঙ্গের আদলে বাঙ্গালীদের জন্য আলাদা একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা।ভাষা আন্দোলনের রুপরেখায় বাংলা ভাষাবাসীদের জাতীয় পরিচয় সমৃদ্ধ বাঙ্গালী জাতীয়তার ভিত্তিতে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ব্যবস্থা। পাকিস্তান রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে থেকে মুখে কোন অবস্থায় প্রকাশ করা যাচ্ছিলনা। প্রকাশ করতে গেলেই বিচ্ছিন্নতা বাদীতার অভিযোগে ফাঁসীতে ঝুলতে হবে। পশ্চিমারা ৬দফা দাবী মেনে নিলে পুর্ব পাকিস্তান কায্যত স্বাধীন, নানিলে যুৎসই আন্দোলন সংগ্রামের হাতিয়ার। পাকিস্তানীরা ঠিকই বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা সম্পর্কে আঁচ করতে কোন অসুবিধা হয়নি।কিন্তু বঙ্গবন্ধু পুর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার পথেই এগিয়ে যাচ্ছেন -প্রমান করার জন্য তেমন কোন যুক্তি সঙ্গত তথ্য প্রমান না থাকায় উপযুক্ত ব্যাবস্থা গ্রহন করতেও পারছিলনা। বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় করার জন্য রাজপথে বের হলেই জেলে নিতে কার্পন্য করছিলনা পাকিস্থানিরা। এতে হিতে আরও বিপরীত হয়েছে শেষ বিচারে পাকিস্তানীদের জন্য।যতই বঙ্গবন্ধুর উপর নির্য্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল পাকিস্তানের বিশেষ করে পুর্ব অংশের জনগনের সম্পৃত্ততা এবং আস্থা বঙ্গবন্ধুর প্রতি দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু একদিকে স্বাধীনতা অর্জনের প্রাথমিক কাজ গুলী সংগোপনে ধীরে ধীরে সমাপন করে যাচ্ছিলেন অন্যদিকে পুর্ববাংলার জনগনকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্দিপ্ত করে তাঁদের মনমানষিকতাকে চুড়ান্ত পয্যায় নিয়ে নো-রিটার্নের পয্যায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। অকস্মাৎ ঘটে গেল এক চরম বিপয্যয়-আগড়তলায় যাদেরকে পাঠিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু পুর্ববাংলার স্বাধীনতার ব্যাপারে ভারতের মনোভাব জানার জন্য তাঁদের সেই ঘটনাটি প্রকাশিত হয়ে যায়। ফলে সার্জেন্ট জহুরুলকে ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে গুলী করে হত্যা করে পাকিস্তানীরা। ষড়যন্ত্রের কারনে দেশদ্রোহীতার মামলা হয়। বঙ্গবন্ধুকে ওই মামলায় প্রধান আসামী করে জেলে প্রেরন করে।"আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলাটিই মুলত বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দেখা দেয়"। মামলাটিকে "পাকিস্তানীদের শেষ পরিনতি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ" এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট বলা যায়।
কোন রাজনৈতিক নেতা প্রথমত ছয় দফা সমর্থন না করলেও বঙ্গবন্ধু পিছু হটেননি।তিনি সম্যক বুঝতে পেরেছিলেন যে, ছয় দফা বাংলার মানুষ ভাল ভাবেই গ্রহন করেছে।পাকিস্তানী শাষক গোষ্টি মেনে নিলে বাংলাদেশ স্বাধীকার পাবে বিনা রক্তপাতে, না মানলে স্বাধীনতা যুদ্ধ অনিবায্য।কারাগারে নেয়ার পর বঙ্গবন্ধুকে নানাহ লোভলালসা ছয় দফা পরিত্যাগ করার জন্য দেখিয়েছেন, কিন্তু টলাতে পারেননি।অনস্বিকায্য ভাবে বেগম মুজিবের ভুমিকা বঙ্গবন্ধুকে নীতিতে অটল থাকতে প্রচুর সাহায্য করেছিল।আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় জেলে থাকার কারনে '৬৯এ গনভ্যুত্থান হতে পেরেছিল।বঙ্গবন্ধু ও পুর্ব পাকিস্তানের একক নেতা বা একমাত্র নীতি নির্ধারক হতে পেরেছিলেন।কিন্তু তিনি যে একক পুর্ব পাকিস্তানের জনগনের প্রতিনিধি হিসেবে,তাঁর আইনগত কোন ভিত্তি ছিল না।সবাই সবাইকে জনগনের একক নেতা ভাবতেন।কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন গনুভ্যুত্থানের কারনে পশ্চিমারা তাঁকে জেল মুক্ত করতে বাধ্য হয়েছে, সুতারাং তিনিই তখন একমাত্র একক সর্বজনগ্রায্য নেতা। এককত্বের স্বিকৃতি প্রয়োজন।
১৯৬৯ সালের মার্চে গণআন্দোলনের মুখে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের পদত্যাগ কিংবা আসলে পাক সামরিক জান্তা কর্তৃক তাঁর অপসারিত হওয়ার পর জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হাতে নিয়ে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। বলা হয় সার্বজনীন বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত দেশের উভয় অংশের জনপ্রতিনিধিরা দেশের ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণয়ন করবেন। তবে নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া 'লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক' অর্ডার (এলএফও) বা 'আইনগত কাঠামো আদেশ' নামে একটি আদেশও জারি করেন। সেই আদেশ জারির মাধ্যমে কার্যত সংবিধান প্রণয়নের ব্যাপারে জনপ্রতিনীধিদের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, জনপ্রতিনীধিদের প্রণীত সংবিধানে-" ইসলাম এবং পাকিস্তানের ঐক্য বা সংহতির" পরিপন্থী কিছু থাকতে পারবে না। প্রেসিডেন্ট অনুমোদন পাওয়ার পরই কেবল সে সংবিধান কার্যকর হবে--"তারপরই ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারটি ঘটবে" আগে নয়। 'পাকিস্তানের ঐক্য বা সংহতির পরিপন্থী' কি এবং সেটা কে বিচার বা নির্ধারণ করবে,তাঁর বিচারের ভার জনপ্রতিনীধিদের হাতে রইলনা। বলা বাহুল্য, 'প্রেসিডেন্ট নিজেই সেই ক্ষমতা নির্বাচন ঘোষনার আগেই কেড়ে নিলেন।' এভাবে নির্বাচনের পরও ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কর্তৃত্ব প্রেসিডেন্টের হাতেই রেখে দেওয়া হল। এলএফও-র ২৫নং ধারায় বলা হয়, জনপ্রতিনীধিদের প্রণীত সে সংবিধান যদি 'প্রেসিডেন্ট অনুমোদন না করেন' তবে জাতীয় পরিষদ আপনা আপনি বাতিল হয়ে যাবে। সেদিন 'এলএফও' জারির পর দুই ন্যাপসহ অনেকগুলো দলই তার সমালোচনা করেছিল। তারা এলএফও-র ওই ধারাগুলো বাতিল না করা পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে মত ব্যক্ত করেছিল। বিশেষ করে মস্কোপন্থী ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের তরফ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বাচনে না গিয়ে আন্দোলনে যাওয়ার জন্য নিয়ন্তর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছিলেন।পুর্ব পাকিস্তানের প্রায় সব দল এবং কি পশ্চিম পাকিস্তানের দুই একটি দল ছাড়া সবাই চাইছিলেন ইয়াহিয়া খাঁন কতৃক জারী কৃত আদেশ প্রত্যাহার ব্যতিত ইলেকশান করে কোন লাভ হবেনা। বঙ্গবন্ধু এরই মাঝে 'আন্দোলন এবং নির্বাচন' যুগৎপৎ করার দিকেই মতামত রাখলেন। মাওলানা ভাসানী 'ভোটের আগে ভাত চাই' বলে মাঠেই নেমে গেলেন। ভাসানীর জনপ্রিয় শ্লোগান ছিল-'ভোটের বাক্সে লাথি মার,শ্রমিক রাজ কায়েম কর।' ভোটের আগে ভাত দেয়-,নইলে গদি ছেড়ে দেয়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই তিনি তখন নিজেকে পাকিস্তানের পুর্ব অংশের একক নেতা দাবি করতেন খুব দৃডতার সাথেই।
নির্বাচনের মাধ্যমে তখনও প্রমান হয়নি,জনগনের প্রতিনিধিত্ব কে করছে।
"৬৯এর গন আন্দোলনের ফসল তখন বঙ্গবন্ধুর গোলায়-তা ঠিকই বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন।কিন্তু জনগনের প্রত্যক্ষ রায়ের অভাবে একক কোন সিদ্ধান্ত দেশে বিদেশে কোথাওগ্রহন্যোগ্য বা কায্যকর হবেনা।বঙ্গবন্ধুর মুল যে উদ্দেশ্য তাতো তিনি পাকিস্তানের জম্মলগ্ন থেকেই পোষন করে আসছেন। প্রকাশ করা যাছে না 'রাষ্ট্রীয় কাঠামো' এবং জনগনের প্রত্যক্ষ রায়ের অভাবে।ক্ষমতা দিবে না পাকিস্তানীরা তাও বঙ্গবন্ধু জানতেন-"ভোটে না গেলে বিশ্ব বাসি তা বিশ্বাস করবে কেন?"
'৭০এর নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলেন এক বিদেশী সাংবাদিক-'‘আপনি চাইছেন ছয় দফার ভিত্তিতে বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে। যদি মেজরিটি সিট পেয়ে তা করতে পারেনও ইয়াহিয়া খান তা মেনে নেবে না। হয়তো জাতীয় পরিষদই বাতিল করে দেবে। তাহলে নির্বাচনে জয়লাভ করে কি লাভ হবে?’"বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন--‘লাভ আছে, "আমি সমগ্র পৃথিবীকে দেখাতে পারব বাংলার মানুষ কি চায়।" আজ দেশে অনেক দল- অনেক নেতা। সবাই বলে জনগণ তাদের সঙ্গে আছে। কিন্তু জনগণ কার সঙ্গে আছে তার কোনো আইনগত প্রমাণ নেই। আমি জানি-"বাংলার মানুষ আমার সঙ্গে আছে।"কিন্তু এই পরম সত্যেরও বিধিগত কোনো ভিত্তি নেই। যদি নির্বাচনে জয়লাভ করি, জনগণের ম্যান্ডেট পাই, সেই আইনগত ভিত্তি অর্জিত হবে। আর তখন জনগণের নির্বাচিত নেতা হিসেবেই আমি জনগণের পক্ষ হয়ে ইয়াহিয়ার সেচ্ছাচারী নীতি-পদক্ষেপ চ্যালেঞ্জ করতে পারব। বিশ্ববাসী দেখবে—শেখ মুজিব যা বলেছে, যা চাইছে, তা তার একার কথা নয়, গোটা দেশবাসীর কথা। আর এভাবেই বাঙালির স্বাধিকার সংগ্রাম বিশ্ববাসীরও সমর্থন লাভ করবে।’ এমনই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। এই দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার কারণেই অর্জিত হয়েছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা।
তখন যেমন বিচক্ষনতার অভাবে মুসলিম লীগের অনিবায্য পতন, পরবর্তীতে বিলীন হয়ে গিয়েছিল দলটি। বর্তমানেও বিচক্ষনতা ও জনগনের চাওয়া পাওয়ার সাথে তাল মিলাতে না পেরে--বি,এন,পি দিনে দিনে নিষ্কৃয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। অনেকে বলেন, নিরপেক্ষ ভোট হলে এখন বি,এন,পি জিতবে।ভোট নিরপেক্ষ হ'ত না অন্যভাবে হ'ত-ভোটে এসেই তা প্রমান করা যেত। কারচুপি হলে সারা পৃথিবী দেখতো ভোটে কারচুপি করে বি,এন,পি কে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। জনগন ও তখন আন্দোলনে সক্রিয় হত। আওয়ামী লীগের অধীনে ভোটে কারচুপি হয়েছে-তদ্রুপ উদাহরন সৃষ্টিআওয়ামী লীগের অতীতে যেহেতু নেই-উদাহরন সৃষ্টি করার জন্য হলেও বি,এন,পি কে ভোটে আসা উচিৎ ছিল।
বিএনপি আজ নানা সংকটে জর্জরিত। এ জন্য তারা নিজেরাই দায়ী। এই দলের নানা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সরকারও বিএনপির নেতা ও কর্মীদের ওপর খড়্গহস্ত। কোনো বড় দলই তাদের সমান প্রতিদ্বন্দ্বী চায় না। আওয়ামী লীগও চায় না বিএনপি একটি বড়, শক্তিশালী ও জনপ্রিয় দল হিসেবে টিকে থাকুক। কিন্তু দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে দেশে একক দলের একচেটিয়া ক্ষমতা থাকা উচিত নয়।সেদিক বিবেচনা করে শেখ হাসিনা ব্যাংকের ঝাঁকের মত বিএনপি নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া শুরু করলে তিনি ঘোষনা দিয়ে বলেন-বিএনপির কোন নেতাকর্মীকে আওয়ামী লীগে যোগদান করতে দেয়া হবেনা। যোগদানের সুযোগ কোথাও কোন জেলা উপজেলায় না দিতে পারে তার জন্য কঠোর নির্দেশনাও জারী করেন।
গণতন্ত্র ও সুশাসনের স্বার্থে আমরা চাই-দেশে তিন, চার বা তারও বেশি রাজনৈতিক দল সক্রিয় থাকুক। মানুষের সমর্থন তাদের ঘিরেই আবর্তিত হোক। অন্তত চারটি বড় রাজনৈতিক দল বা জোটের ওপর যেন নির্বাচন, সরকার পরিবর্তন নির্ভর করে। দুঃখের বিষয়, বহু বছর রাজনীতি করেও ক্ষমতায় যাওয়ার মতো বাংলাদেশে তৃতীয় দল বা জোট এখনো তৈরি হয়নি। কাজেই ঘুরেফিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বা তাদের নেতৃত্বের জোটই ক্ষমতায় যায় বা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে।
বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। দুবার পুরো মেয়াদ ক্ষমতায় ছিল। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের পক্ষে আবারও ক্ষমতায় যাওয়া কঠিন ছিল না। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুপস্থীতি দেশের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিএনপিকে এমন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে -তাদের পক্ষে আবার ক্ষমতায় যাওয়া শুধু কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। ক্ষমতাসীন দল বুঝতে পেরেছিল-"সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির পক্ষে জয়লাভ করা সম্ভব হবেনা।তাই নির্বাচনে সম্পৃত্ত 'স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সহ একাধিক মন্ত্রনায়' এবং মন্ত্রী তাঁদের জোটকে দিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব নিয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী খালেদাকে ফোন দিলে -খালেদা খুব ভাল ব্যবহার করেননি।"
আওয়ামী লীগও খালেদার খারাপ ব্যবহারের পর নির্বাচন যে কোন উপায় সফল করার জন্য নানা ফন্দি আঁটা শুরু করে।নির্বাচন প্রতিহতের অস্ত্র তোলে দেয় বিএনপির হাতে।বিএনপি সেই অস্ত্র ব্যবহারে পুর্ব অভিজ্ঞতা নাথাকার কারনে ভুল জায়গায় ব্যবহার করা শুরু করে। ভুল জায়গায় ব্যবহারের কারনে মুলত: 'আওয়ামী লীগকে বিনাভোটের এমপি হওয়া সত্বেও দেশে বিদেশে নির্বাচন গ্রহন যোগ্যতা এনে দেয়।
আন্দোলন এবং নির্বাচনের সিদ্ধান্ত যুগৎপৎ না নেয়াই হল বিএনপি জোটের চরম ভুল। জাতীয় সরকারের প্রস্তাব ছিল আওয়ামী লীগের জন্য সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার আন্তরীক প্রচেষ্টা। জাতীয় সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হ'তে যত সময় ব্যয় হয়েছে বিএনপি জোটের পতনেও ঠিক একই সময় ব্যয় হয়েছে। এর পরই শুরু হয় ধারাবাহিক ভাবে আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে বিএনপি জোটের পরাজয়।
ক্ষমতায় যেতে হলে বিএনপি জোটকে নির্বাচনে আসতে হবে। নির্বাচন না করে ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কাজেই বিএনপিকে এখন ক্ষমতাসীনদের ছকের নির্বাচন করেও কিভাবে জয়লাভ করা যায় তার কৌশল বের করতে হবে। সেই কৌশল কাজে লাগাতে না পারলে বিএনপিকে চিরকাল বিরোধী শিবিরে থাকতে হবে। এই কৌশল বের করা এখন বিএনপির জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ বা সর্বদলীয় সরকার আওয়ামী লীগ এখন আর মানার প্রয়োজন নেই।
বিএনপির দুর্বল নেতৃত্ব, ভুল কৌশল, দুর্বল বক্তব্য, মিথ্যে অপপ্রচার,ক্ষমতায় থাকাকালিন লূটপাট, জঙ্গী তোষননীতি, স্বাধীনতা বিরুধী শক্তির সংগে শক্ত আঁতাত, বিচার প্রক্রিয়া থেকে রক্ষার জন্য দল ও জোটকে ব্যাবহার, আদালতের সঙ্গে উদ্যত আচরন সর্বোপরী তৃতীয় শক্তির ঘাড়ে চড়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দলটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
বিএনপি এখনো তার প্রতিষ্ঠাকালের (১৯৭৮) "ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা" এই নীতি আদর্শ থেকে মুক্ত হতে পারেনি। মিথ্যা প্রপাগান্ডা, অপপ্রচার, পেশী শক্তির রাজনৈতিক আবহে রয়ে গেছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের চিন্তাধারা, কৌশল, জনগণ সম্পর্কে তাদের ধারণা, ছাত্র ও তরুণ সম্পর্কে ধারণা—সবই প্রায় আশির দশকের। সেই চিন্তায় বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।তাঁদের প্রতিষ্ঠাকালীন ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা থেকে বের হয়ে সুস্থ্য ধারার রাজনীতিতে আসতে হবে।
সর্বশেষ টানা একচল্লিশ দিন আগুন সন্ত্রাস করে জনমনে যে আতংক সৃষ্টি করেছিল-তা জনগনের মন থেকে মুছে দেয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে।জনগন এখন জানে বি,এন,পির আন্দোলন মানে পেট্রোল বোমা, ভাংচুর, লুটপাট। বর্তমানে যেই অবস্থায় আছে দল ও জোট- তাতে আগামী নির্বাচন পয্যন্ত দল এবং জোটের ঐক্য ধরে রাখাই হবে বি,এন,পির জন্য বড় চেলেঞ্জ-আন্দোলন গড়ে তোলা জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করা দুরের চিন্তা।
তাছাড়াও দলটি নির্বাচন কালীন কোন নতুনত্ব দিতে আগেও পারেনি,ভবিষ্যতেও পারবে বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগ যেমন রাজনীতিতে 'ডিজিটাল' বাংলাদেশের ঘোষনা দিয়ে বা "ভিশন ২০২১"এর স্বপ্ন দেখিয়ে তরুন সমাজকে আকৃষ্ট করে একক ভাবে সরকার গঠন করেছিল-তদ্রুপ নতুন চমক বি,এন,পি যত দিন উদ্ভাবন করতে পারবেনা ততদিন বি,এন,পি কে ক্ষমতার বৃত্তের বাহিরে থেকে বিরুদীদলের ভুমিকাই পালন করতে হবে। বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশেই বিশেষ করে 'পশ্চিমা ভোটের গনতন্ত্রে' যেই সমস্ত দেশ বিশ্বাস করে তাঁরা এভাবেই এক দল অন্যদলকে 'ক্ষমতার রাজনীতিতে নিষ্কৃয় করে ক্ষমতা ধরে রাখে।' বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যবস্থার বাহিরের কোন দ্বীপ নয় এর ব্যতিক্রম আশা করা যেতে পারে।
বি,এন,পি ক্ষমতায় থাকা কালে শেখ হাসিনাকে হত্যা করে ক্ষমতার ভীত পাকা করার চেষ্টা করেছিল।ব্যর্থ হয়ে নীজদলের প্রেসিডেন্টকে তত্বাবধায়ক প্রধান করে নির্বাচনের পায়তারা করার কারনে ১/১১ এর সৃষ্টি হয়েছিল।এখন পয্যন্ত শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ থেকে তদ্রুপ কোন আচরন জনগন প্রত্যক্ষ করেনি-এটাও বি,এন,পি এবং তাঁদের জোটের জন্য কম প্রাপ্তি নয় --আমি মনে করি।এমন বিরুদীদলের অস্তিত্বহীন অবস্থা বিরাজমান থাকলে-"যে কোন দল ও জোট ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপকৌশল গ্রহন করতেন।"" "যাঁরা এই বাক্যটিতে দ্বিমত পোষন করবেন তাদেরকে- তাঁদের সরকারের অতীত ইতিহাসের প্রতি নজর দেয়ার অনুরুধ জানাব।"
পরিশেষে বলতে পারি, আওয়ামী লীগ যত সহজে জনগনের আঁতের খবর রাখতে পারে এবং সেইমতে কর্মসুচি প্রনয়ন করতে পারে-?৯আন্দোলনকে যৌক্তিক পয্যায় নেয়ার সফলতা দেখাতে পারে-- বি,এন,পি তাঁর ধারে কাছেও যাওয়ার কোন শক্তি, সামর্থ, রাজনৈতিক বিচক্ষনতা , দৃডতা, কর্মী সমর্থ্যক ইত্যাদি অনুসঙ্গ কিছুই নেই।আওয়ামী লীগ এককথায় তাঁর সকল App সব সময় আপডেট দিয়ে রাখে-বি,এন,পি আপডেট না দিয়ে স্থবির করে রাখে। ফলে বিএনপির সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বাধ্য হয়ে ট্রাফিক জ্যামে পড়ে বন্ধ হয়ে যায়।আওয়ামী লীগ পুরাতন সংগঠন হলেও-"নেতৃত্বে নতুনত্ব আনতে পারে।" বি,এন,পি নতুন হলেও- "নেতৃত্বে পুরাতন ধ্যান ধারনা ত্যাগ করতে পারেনি।" প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে অনিবায্য পতনের দিকেই ধাবিত হচ্ছে বিএনপি দল ও জোট।প্রকৃতির উপর কারো হাত নেই যে পতন রোধ করে স্বাভাবিক রাজনীতিতে বিএনপিকে ফিরিয়ে আনতে পারে।
" জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু"
========= =========
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুগপোযোগী আধুনিক রাজনৈতিক সংগঠন। যুগের সাথে তালমিলিয়ে কর্মসূচি প্রনয়নে এই দলের জুড়ি মেলা ভার। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে স্পষ্ট দেখা যায়- জনগন যাহা চায়, তাঁর সাথে তালমিলিয়ে কর্মসুচি প্রনয়নে দলটি অগ্রনী থেকেছে সর্বসময়ই।নতুন নতুন দিকনির্দেশনার জন্য দলের নেতাকর্মিরা মুখিয়ে থাকার প্রয়োজন হয়নি।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর সংগত কারনে এই অঞ্চলে একটা কায্যকর গনতান্ত্রীক বিরুদী দলের প্রয়োজন অনস্বিকায্য হয়ে পড়ে। ক্ষমতাসীন মুসলীম লীগের বিপরীতে তেমন কোন অ-সাম্প্রদায়িক দলের অস্তিত্ব অত্র অঞ্চলে ছিলনা। যে সসমস্ত দল বা ব্যাক্তি ছিল তাঁদের মানুষ ধর্মীয় দল বা কমিনিষ্ট প্রকারান্তরে নাস্তিক হিসেবেই জানত।ঠিক তখনি বঙ্গবন্ধু দলের নাম থেকে মুসলিম একক সম্প্রদায়গত শব্দটি বাদ দিয়ে দলকে অসাম্প্রদায়িক রুপ দিতে কালক্ষেপন করেননি।তিনি মুলত: পাকিস্তানের পুর্বাংশে বসবাসরত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব সম্প্রদায় আওয়ামী রাজনীতিতে অংশ নিতে উদ্যোগটি গ্রহন করেছিলেন। সম্প্রদায় গুলীও মুসলিমদল বিবেচনায় নিজেদেরকে সংকুচিত ভাব প্রদর্শনের প্রয়োজন হয়নি।তখনকার সময়ে হিন্দুরা লেখাপড়ায় অগ্রগামি ছিল। দলীয় প্রচার প্রপাগান্ডায় হিন্দু ছাত্র যুবকেরা সহজে সাধারন মানুষের অত্যান্ত কাছে যেতে পারতেন, যুক্তি দিয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করতেও কোন অসুবিধা হত না।
'৬৫ইং সালের পাকভারত যুদ্ধে পুর্ববাংলার জনগনের চোখ কান খুলে দেয়।যদিও ভাষার দাবীতে ৫২ সালেই রক্ত দিয়ে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বীজ রোপন করা হয়ে গিয়েছিল-,দিনে দিনে তা মহীরুহের আকার ধারন করা শুরু করেছিল। কিন্তু ফলভাব হচ্ছিলনা। সেই ফল ধরানোর সুযোগ পশ্চিমারাই '৬৫ইং পাক--ভারত যুদ্ধে তুলে দিলেন।দুরদর্শী বঙ্গবন্ধু ৬৫ ইং সালের পুর্ব বাংলার অরক্ষিতবস্থাকে জনমনে গেঁথে দিতে সামান্য সময় ও নষ্ট করেননি।
সর্বমহলের বিরুধীতা সত্তেও তিনি পুর্ব পাকিস্তানকে সুরক্ষার নিমিত্তে যুগোপযোগী ৬দফা দাবী প্রণয়ন করেন।৬দফা পুর্ববাংলার মানুষের মনের চাওয়ার সাথে হুবহু মিলে গেল।পুর্ববাংলার জনগনের ন্যায্য দাবি ৬দফা নিয়ে এগিয়ে গেলেন।এতে বিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যাক্তিরা, এবং বিশিষ্ট জনেরাও বিচ্ছিনতার গন্ধ পেয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে সরে গেলেন।তাঁরা মুলত একিভুত পাকিস্তানের সমর্থকই ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারায় ছিল অন্য আর একটি বিষয়।তিনি মনে মনে পোষন করতেন বঙ্গভঙ্গের আদলে বাঙ্গালীদের জন্য আলাদা একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা।ভাষা আন্দোলনের রুপরেখায় বাংলা ভাষাবাসীদের জাতীয় পরিচয় সমৃদ্ধ বাঙ্গালী জাতীয়তার ভিত্তিতে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ব্যবস্থা। পাকিস্তান রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে থেকে মুখে কোন অবস্থায় প্রকাশ করা যাচ্ছিলনা। প্রকাশ করতে গেলেই বিচ্ছিন্নতা বাদীতার অভিযোগে ফাঁসীতে ঝুলতে হবে। পশ্চিমারা ৬দফা দাবী মেনে নিলে পুর্ব পাকিস্তান কায্যত স্বাধীন, নানিলে যুৎসই আন্দোলন সংগ্রামের হাতিয়ার। পাকিস্তানীরা ঠিকই বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা সম্পর্কে আঁচ করতে কোন অসুবিধা হয়নি।কিন্তু বঙ্গবন্ধু পুর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার পথেই এগিয়ে যাচ্ছেন -প্রমান করার জন্য তেমন কোন যুক্তি সঙ্গত তথ্য প্রমান না থাকায় উপযুক্ত ব্যাবস্থা গ্রহন করতেও পারছিলনা। বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় করার জন্য রাজপথে বের হলেই জেলে নিতে কার্পন্য করছিলনা পাকিস্থানিরা। এতে হিতে আরও বিপরীত হয়েছে শেষ বিচারে পাকিস্তানীদের জন্য।যতই বঙ্গবন্ধুর উপর নির্য্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল পাকিস্তানের বিশেষ করে পুর্ব অংশের জনগনের সম্পৃত্ততা এবং আস্থা বঙ্গবন্ধুর প্রতি দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু একদিকে স্বাধীনতা অর্জনের প্রাথমিক কাজ গুলী সংগোপনে ধীরে ধীরে সমাপন করে যাচ্ছিলেন অন্যদিকে পুর্ববাংলার জনগনকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্দিপ্ত করে তাঁদের মনমানষিকতাকে চুড়ান্ত পয্যায় নিয়ে নো-রিটার্নের পয্যায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। অকস্মাৎ ঘটে গেল এক চরম বিপয্যয়-আগড়তলায় যাদেরকে পাঠিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু পুর্ববাংলার স্বাধীনতার ব্যাপারে ভারতের মনোভাব জানার জন্য তাঁদের সেই ঘটনাটি প্রকাশিত হয়ে যায়। ফলে সার্জেন্ট জহুরুলকে ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে গুলী করে হত্যা করে পাকিস্তানীরা। ষড়যন্ত্রের কারনে দেশদ্রোহীতার মামলা হয়। বঙ্গবন্ধুকে ওই মামলায় প্রধান আসামী করে জেলে প্রেরন করে।"আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলাটিই মুলত বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দেখা দেয়"। মামলাটিকে "পাকিস্তানীদের শেষ পরিনতি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ" এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট বলা যায়।
কোন রাজনৈতিক নেতা প্রথমত ছয় দফা সমর্থন না করলেও বঙ্গবন্ধু পিছু হটেননি।তিনি সম্যক বুঝতে পেরেছিলেন যে, ছয় দফা বাংলার মানুষ ভাল ভাবেই গ্রহন করেছে।পাকিস্তানী শাষক গোষ্টি মেনে নিলে বাংলাদেশ স্বাধীকার পাবে বিনা রক্তপাতে, না মানলে স্বাধীনতা যুদ্ধ অনিবায্য।কারাগারে নেয়ার পর বঙ্গবন্ধুকে নানাহ লোভলালসা ছয় দফা পরিত্যাগ করার জন্য দেখিয়েছেন, কিন্তু টলাতে পারেননি।অনস্বিকায্য ভাবে বেগম মুজিবের ভুমিকা বঙ্গবন্ধুকে নীতিতে অটল থাকতে প্রচুর সাহায্য করেছিল।আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় জেলে থাকার কারনে '৬৯এ গনভ্যুত্থান হতে পেরেছিল।বঙ্গবন্ধু ও পুর্ব পাকিস্তানের একক নেতা বা একমাত্র নীতি নির্ধারক হতে পেরেছিলেন।কিন্তু তিনি যে একক পুর্ব পাকিস্তানের জনগনের প্রতিনিধি হিসেবে,তাঁর আইনগত কোন ভিত্তি ছিল না।সবাই সবাইকে জনগনের একক নেতা ভাবতেন।কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন গনুভ্যুত্থানের কারনে পশ্চিমারা তাঁকে জেল মুক্ত করতে বাধ্য হয়েছে, সুতারাং তিনিই তখন একমাত্র একক সর্বজনগ্রায্য নেতা। এককত্বের স্বিকৃতি প্রয়োজন।
১৯৬৯ সালের মার্চে গণআন্দোলনের মুখে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের পদত্যাগ কিংবা আসলে পাক সামরিক জান্তা কর্তৃক তাঁর অপসারিত হওয়ার পর জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হাতে নিয়ে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। বলা হয় সার্বজনীন বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত দেশের উভয় অংশের জনপ্রতিনিধিরা দেশের ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণয়ন করবেন। তবে নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া 'লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক' অর্ডার (এলএফও) বা 'আইনগত কাঠামো আদেশ' নামে একটি আদেশও জারি করেন। সেই আদেশ জারির মাধ্যমে কার্যত সংবিধান প্রণয়নের ব্যাপারে জনপ্রতিনীধিদের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, জনপ্রতিনীধিদের প্রণীত সংবিধানে-" ইসলাম এবং পাকিস্তানের ঐক্য বা সংহতির" পরিপন্থী কিছু থাকতে পারবে না। প্রেসিডেন্ট অনুমোদন পাওয়ার পরই কেবল সে সংবিধান কার্যকর হবে--"তারপরই ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারটি ঘটবে" আগে নয়। 'পাকিস্তানের ঐক্য বা সংহতির পরিপন্থী' কি এবং সেটা কে বিচার বা নির্ধারণ করবে,তাঁর বিচারের ভার জনপ্রতিনীধিদের হাতে রইলনা। বলা বাহুল্য, 'প্রেসিডেন্ট নিজেই সেই ক্ষমতা নির্বাচন ঘোষনার আগেই কেড়ে নিলেন।' এভাবে নির্বাচনের পরও ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কর্তৃত্ব প্রেসিডেন্টের হাতেই রেখে দেওয়া হল। এলএফও-র ২৫নং ধারায় বলা হয়, জনপ্রতিনীধিদের প্রণীত সে সংবিধান যদি 'প্রেসিডেন্ট অনুমোদন না করেন' তবে জাতীয় পরিষদ আপনা আপনি বাতিল হয়ে যাবে। সেদিন 'এলএফও' জারির পর দুই ন্যাপসহ অনেকগুলো দলই তার সমালোচনা করেছিল। তারা এলএফও-র ওই ধারাগুলো বাতিল না করা পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে মত ব্যক্ত করেছিল। বিশেষ করে মস্কোপন্থী ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের তরফ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বাচনে না গিয়ে আন্দোলনে যাওয়ার জন্য নিয়ন্তর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছিলেন।পুর্ব পাকিস্তানের প্রায় সব দল এবং কি পশ্চিম পাকিস্তানের দুই একটি দল ছাড়া সবাই চাইছিলেন ইয়াহিয়া খাঁন কতৃক জারী কৃত আদেশ প্রত্যাহার ব্যতিত ইলেকশান করে কোন লাভ হবেনা। বঙ্গবন্ধু এরই মাঝে 'আন্দোলন এবং নির্বাচন' যুগৎপৎ করার দিকেই মতামত রাখলেন। মাওলানা ভাসানী 'ভোটের আগে ভাত চাই' বলে মাঠেই নেমে গেলেন। ভাসানীর জনপ্রিয় শ্লোগান ছিল-'ভোটের বাক্সে লাথি মার,শ্রমিক রাজ কায়েম কর।' ভোটের আগে ভাত দেয়-,নইলে গদি ছেড়ে দেয়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই তিনি তখন নিজেকে পাকিস্তানের পুর্ব অংশের একক নেতা দাবি করতেন খুব দৃডতার সাথেই।
নির্বাচনের মাধ্যমে তখনও প্রমান হয়নি,জনগনের প্রতিনিধিত্ব কে করছে।
"৬৯এর গন আন্দোলনের ফসল তখন বঙ্গবন্ধুর গোলায়-তা ঠিকই বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন।কিন্তু জনগনের প্রত্যক্ষ রায়ের অভাবে একক কোন সিদ্ধান্ত দেশে বিদেশে কোথাওগ্রহন্যোগ্য বা কায্যকর হবেনা।বঙ্গবন্ধুর মুল যে উদ্দেশ্য তাতো তিনি পাকিস্তানের জম্মলগ্ন থেকেই পোষন করে আসছেন। প্রকাশ করা যাছে না 'রাষ্ট্রীয় কাঠামো' এবং জনগনের প্রত্যক্ষ রায়ের অভাবে।ক্ষমতা দিবে না পাকিস্তানীরা তাও বঙ্গবন্ধু জানতেন-"ভোটে না গেলে বিশ্ব বাসি তা বিশ্বাস করবে কেন?"
'৭০এর নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলেন এক বিদেশী সাংবাদিক-'‘আপনি চাইছেন ছয় দফার ভিত্তিতে বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে। যদি মেজরিটি সিট পেয়ে তা করতে পারেনও ইয়াহিয়া খান তা মেনে নেবে না। হয়তো জাতীয় পরিষদই বাতিল করে দেবে। তাহলে নির্বাচনে জয়লাভ করে কি লাভ হবে?’"বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন--‘লাভ আছে, "আমি সমগ্র পৃথিবীকে দেখাতে পারব বাংলার মানুষ কি চায়।" আজ দেশে অনেক দল- অনেক নেতা। সবাই বলে জনগণ তাদের সঙ্গে আছে। কিন্তু জনগণ কার সঙ্গে আছে তার কোনো আইনগত প্রমাণ নেই। আমি জানি-"বাংলার মানুষ আমার সঙ্গে আছে।"কিন্তু এই পরম সত্যেরও বিধিগত কোনো ভিত্তি নেই। যদি নির্বাচনে জয়লাভ করি, জনগণের ম্যান্ডেট পাই, সেই আইনগত ভিত্তি অর্জিত হবে। আর তখন জনগণের নির্বাচিত নেতা হিসেবেই আমি জনগণের পক্ষ হয়ে ইয়াহিয়ার সেচ্ছাচারী নীতি-পদক্ষেপ চ্যালেঞ্জ করতে পারব। বিশ্ববাসী দেখবে—শেখ মুজিব যা বলেছে, যা চাইছে, তা তার একার কথা নয়, গোটা দেশবাসীর কথা। আর এভাবেই বাঙালির স্বাধিকার সংগ্রাম বিশ্ববাসীরও সমর্থন লাভ করবে।’ এমনই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। এই দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার কারণেই অর্জিত হয়েছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা।
তখন যেমন বিচক্ষনতার অভাবে মুসলিম লীগের অনিবায্য পতন, পরবর্তীতে বিলীন হয়ে গিয়েছিল দলটি। বর্তমানেও বিচক্ষনতা ও জনগনের চাওয়া পাওয়ার সাথে তাল মিলাতে না পেরে--বি,এন,পি দিনে দিনে নিষ্কৃয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। অনেকে বলেন, নিরপেক্ষ ভোট হলে এখন বি,এন,পি জিতবে।ভোট নিরপেক্ষ হ'ত না অন্যভাবে হ'ত-ভোটে এসেই তা প্রমান করা যেত। কারচুপি হলে সারা পৃথিবী দেখতো ভোটে কারচুপি করে বি,এন,পি কে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। জনগন ও তখন আন্দোলনে সক্রিয় হত। আওয়ামী লীগের অধীনে ভোটে কারচুপি হয়েছে-তদ্রুপ উদাহরন সৃষ্টিআওয়ামী লীগের অতীতে যেহেতু নেই-উদাহরন সৃষ্টি করার জন্য হলেও বি,এন,পি কে ভোটে আসা উচিৎ ছিল।
বিএনপি আজ নানা সংকটে জর্জরিত। এ জন্য তারা নিজেরাই দায়ী। এই দলের নানা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সরকারও বিএনপির নেতা ও কর্মীদের ওপর খড়্গহস্ত। কোনো বড় দলই তাদের সমান প্রতিদ্বন্দ্বী চায় না। আওয়ামী লীগও চায় না বিএনপি একটি বড়, শক্তিশালী ও জনপ্রিয় দল হিসেবে টিকে থাকুক। কিন্তু দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে দেশে একক দলের একচেটিয়া ক্ষমতা থাকা উচিত নয়।সেদিক বিবেচনা করে শেখ হাসিনা ব্যাংকের ঝাঁকের মত বিএনপি নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া শুরু করলে তিনি ঘোষনা দিয়ে বলেন-বিএনপির কোন নেতাকর্মীকে আওয়ামী লীগে যোগদান করতে দেয়া হবেনা। যোগদানের সুযোগ কোথাও কোন জেলা উপজেলায় না দিতে পারে তার জন্য কঠোর নির্দেশনাও জারী করেন।
গণতন্ত্র ও সুশাসনের স্বার্থে আমরা চাই-দেশে তিন, চার বা তারও বেশি রাজনৈতিক দল সক্রিয় থাকুক। মানুষের সমর্থন তাদের ঘিরেই আবর্তিত হোক। অন্তত চারটি বড় রাজনৈতিক দল বা জোটের ওপর যেন নির্বাচন, সরকার পরিবর্তন নির্ভর করে। দুঃখের বিষয়, বহু বছর রাজনীতি করেও ক্ষমতায় যাওয়ার মতো বাংলাদেশে তৃতীয় দল বা জোট এখনো তৈরি হয়নি। কাজেই ঘুরেফিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বা তাদের নেতৃত্বের জোটই ক্ষমতায় যায় বা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে।
বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। দুবার পুরো মেয়াদ ক্ষমতায় ছিল। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের পক্ষে আবারও ক্ষমতায় যাওয়া কঠিন ছিল না। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুপস্থীতি দেশের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিএনপিকে এমন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে -তাদের পক্ষে আবার ক্ষমতায় যাওয়া শুধু কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। ক্ষমতাসীন দল বুঝতে পেরেছিল-"সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির পক্ষে জয়লাভ করা সম্ভব হবেনা।তাই নির্বাচনে সম্পৃত্ত 'স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সহ একাধিক মন্ত্রনায়' এবং মন্ত্রী তাঁদের জোটকে দিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব নিয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী খালেদাকে ফোন দিলে -খালেদা খুব ভাল ব্যবহার করেননি।"
আওয়ামী লীগও খালেদার খারাপ ব্যবহারের পর নির্বাচন যে কোন উপায় সফল করার জন্য নানা ফন্দি আঁটা শুরু করে।নির্বাচন প্রতিহতের অস্ত্র তোলে দেয় বিএনপির হাতে।বিএনপি সেই অস্ত্র ব্যবহারে পুর্ব অভিজ্ঞতা নাথাকার কারনে ভুল জায়গায় ব্যবহার করা শুরু করে। ভুল জায়গায় ব্যবহারের কারনে মুলত: 'আওয়ামী লীগকে বিনাভোটের এমপি হওয়া সত্বেও দেশে বিদেশে নির্বাচন গ্রহন যোগ্যতা এনে দেয়।
আন্দোলন এবং নির্বাচনের সিদ্ধান্ত যুগৎপৎ না নেয়াই হল বিএনপি জোটের চরম ভুল। জাতীয় সরকারের প্রস্তাব ছিল আওয়ামী লীগের জন্য সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার আন্তরীক প্রচেষ্টা। জাতীয় সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হ'তে যত সময় ব্যয় হয়েছে বিএনপি জোটের পতনেও ঠিক একই সময় ব্যয় হয়েছে। এর পরই শুরু হয় ধারাবাহিক ভাবে আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে বিএনপি জোটের পরাজয়।
ক্ষমতায় যেতে হলে বিএনপি জোটকে নির্বাচনে আসতে হবে। নির্বাচন না করে ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কাজেই বিএনপিকে এখন ক্ষমতাসীনদের ছকের নির্বাচন করেও কিভাবে জয়লাভ করা যায় তার কৌশল বের করতে হবে। সেই কৌশল কাজে লাগাতে না পারলে বিএনপিকে চিরকাল বিরোধী শিবিরে থাকতে হবে। এই কৌশল বের করা এখন বিএনপির জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ বা সর্বদলীয় সরকার আওয়ামী লীগ এখন আর মানার প্রয়োজন নেই।
বিএনপির দুর্বল নেতৃত্ব, ভুল কৌশল, দুর্বল বক্তব্য, মিথ্যে অপপ্রচার,ক্ষমতায় থাকাকালিন লূটপাট, জঙ্গী তোষননীতি, স্বাধীনতা বিরুধী শক্তির সংগে শক্ত আঁতাত, বিচার প্রক্রিয়া থেকে রক্ষার জন্য দল ও জোটকে ব্যাবহার, আদালতের সঙ্গে উদ্যত আচরন সর্বোপরী তৃতীয় শক্তির ঘাড়ে চড়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দলটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
বিএনপি এখনো তার প্রতিষ্ঠাকালের (১৯৭৮) "ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা" এই নীতি আদর্শ থেকে মুক্ত হতে পারেনি। মিথ্যা প্রপাগান্ডা, অপপ্রচার, পেশী শক্তির রাজনৈতিক আবহে রয়ে গেছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের চিন্তাধারা, কৌশল, জনগণ সম্পর্কে তাদের ধারণা, ছাত্র ও তরুণ সম্পর্কে ধারণা—সবই প্রায় আশির দশকের। সেই চিন্তায় বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।তাঁদের প্রতিষ্ঠাকালীন ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা থেকে বের হয়ে সুস্থ্য ধারার রাজনীতিতে আসতে হবে।
সর্বশেষ টানা একচল্লিশ দিন আগুন সন্ত্রাস করে জনমনে যে আতংক সৃষ্টি করেছিল-তা জনগনের মন থেকে মুছে দেয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে।জনগন এখন জানে বি,এন,পির আন্দোলন মানে পেট্রোল বোমা, ভাংচুর, লুটপাট। বর্তমানে যেই অবস্থায় আছে দল ও জোট- তাতে আগামী নির্বাচন পয্যন্ত দল এবং জোটের ঐক্য ধরে রাখাই হবে বি,এন,পির জন্য বড় চেলেঞ্জ-আন্দোলন গড়ে তোলা জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করা দুরের চিন্তা।
তাছাড়াও দলটি নির্বাচন কালীন কোন নতুনত্ব দিতে আগেও পারেনি,ভবিষ্যতেও পারবে বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগ যেমন রাজনীতিতে 'ডিজিটাল' বাংলাদেশের ঘোষনা দিয়ে বা "ভিশন ২০২১"এর স্বপ্ন দেখিয়ে তরুন সমাজকে আকৃষ্ট করে একক ভাবে সরকার গঠন করেছিল-তদ্রুপ নতুন চমক বি,এন,পি যত দিন উদ্ভাবন করতে পারবেনা ততদিন বি,এন,পি কে ক্ষমতার বৃত্তের বাহিরে থেকে বিরুদীদলের ভুমিকাই পালন করতে হবে। বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশেই বিশেষ করে 'পশ্চিমা ভোটের গনতন্ত্রে' যেই সমস্ত দেশ বিশ্বাস করে তাঁরা এভাবেই এক দল অন্যদলকে 'ক্ষমতার রাজনীতিতে নিষ্কৃয় করে ক্ষমতা ধরে রাখে।' বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যবস্থার বাহিরের কোন দ্বীপ নয় এর ব্যতিক্রম আশা করা যেতে পারে।
বি,এন,পি ক্ষমতায় থাকা কালে শেখ হাসিনাকে হত্যা করে ক্ষমতার ভীত পাকা করার চেষ্টা করেছিল।ব্যর্থ হয়ে নীজদলের প্রেসিডেন্টকে তত্বাবধায়ক প্রধান করে নির্বাচনের পায়তারা করার কারনে ১/১১ এর সৃষ্টি হয়েছিল।এখন পয্যন্ত শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ থেকে তদ্রুপ কোন আচরন জনগন প্রত্যক্ষ করেনি-এটাও বি,এন,পি এবং তাঁদের জোটের জন্য কম প্রাপ্তি নয় --আমি মনে করি।এমন বিরুদীদলের অস্তিত্বহীন অবস্থা বিরাজমান থাকলে-"যে কোন দল ও জোট ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপকৌশল গ্রহন করতেন।"" "যাঁরা এই বাক্যটিতে দ্বিমত পোষন করবেন তাদেরকে- তাঁদের সরকারের অতীত ইতিহাসের প্রতি নজর দেয়ার অনুরুধ জানাব।"
পরিশেষে বলতে পারি, আওয়ামী লীগ যত সহজে জনগনের আঁতের খবর রাখতে পারে এবং সেইমতে কর্মসুচি প্রনয়ন করতে পারে-?৯আন্দোলনকে যৌক্তিক পয্যায় নেয়ার সফলতা দেখাতে পারে-- বি,এন,পি তাঁর ধারে কাছেও যাওয়ার কোন শক্তি, সামর্থ, রাজনৈতিক বিচক্ষনতা , দৃডতা, কর্মী সমর্থ্যক ইত্যাদি অনুসঙ্গ কিছুই নেই।আওয়ামী লীগ এককথায় তাঁর সকল App সব সময় আপডেট দিয়ে রাখে-বি,এন,পি আপডেট না দিয়ে স্থবির করে রাখে। ফলে বিএনপির সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বাধ্য হয়ে ট্রাফিক জ্যামে পড়ে বন্ধ হয়ে যায়।আওয়ামী লীগ পুরাতন সংগঠন হলেও-"নেতৃত্বে নতুনত্ব আনতে পারে।" বি,এন,পি নতুন হলেও- "নেতৃত্বে পুরাতন ধ্যান ধারনা ত্যাগ করতে পারেনি।" প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে অনিবায্য পতনের দিকেই ধাবিত হচ্ছে বিএনপি দল ও জোট।প্রকৃতির উপর কারো হাত নেই যে পতন রোধ করে স্বাভাবিক রাজনীতিতে বিএনপিকে ফিরিয়ে আনতে পারে।
" জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু"
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন