আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্মিলীত অশুভশক্তি'র মহাজোটের আত্মপ্রকাশ উড়িয়ে দেয়া যায়না।

 
   পর্দার অন্তরালে হুশু হুশু, গুশু গুশু টের পাওয়া যাচ্ছে।আমরা জানি- অশুভশক্তি'র প্রেতাত্বাদের ফ্রন্ট লাইনে দুটি রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশের সমাজে '৭৫ পরবর্তি সময়ে উদ্ভব ঘটেছে। এই শক্তি'র উদ্ভব হতে পেরেছে '৭২ এ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির একটি অংশকে বিভ্রান্ত করে, 'বাংলাদেশ ছাত্রলীগে'র অভ্যন্তর থেকে। '৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর তাঁরা চরম মূল্য দিয়ে অশুভশক্তির ষড়যন্ত্র অনুধাবন করতে পেরেছে।ততদিনে উত্থিত অশুভশক্তি জাসদকে কোনঠাসা করে দীর্ঘ একুশ বছর দাপটের সঙ্গে বাংলাদেশের সমাজে বিচরন করে, তাঁদের শক্তি সামর্থ বাড়িয়ে নিতে পেরেছে। যাদের হাত ধরে অশুভশক্তির উত্থান ঘটেছিল সেই 'জাসদ'কে বিভিন্ন প্রলোভনের যাতাকলে পিষ্ট করে একক শক্তিকে বহুধা বিভক্ত করে দিতে সক্ষম হয়। অশুভশক্তি তাঁদের কায্যসিদ্ধি করেছে শুধু  তাই নয়-- বাংলাদেশের সমাজে শক্তিধর দু'টি রাজনৈতিক শক্তি' প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছে।

    মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির একটানা নয়বছর দেশ শাসনের ফলে অশুভশক্তি'র সকল ফ্রন্ট রাজনীতির ঘুরপাকে ইতস্তত: বিচ্ছিন্ন,আগোছালো, অসংসংগঠিত, শক্তিহীন অবস্থায় কোনরকম সমাজে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।তাঁরা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে--'ডান, চরম ডানপন্থি দলগুলী একহাট্রা হওয়ার মরণপণ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আপাত:দৃষ্টে ধূর্ত এরশাদ এবং তারেকপন্থি বিএনপি'র মধ্যে নির্বাচনী সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য সিঙ্গাপুর বৈঠকে এরশাদকে রাষ্ট্রপতি সহ সমসংখ্যক মন্ত্রীত্ব দিয়ে একটা সমাঝোতা হয়েছিল।তখননও খালেদা জিয়া জেলখানায় যায়নি। এরশাদ বিশ্বাস করতে পারেননি খালেদা জিয়া'র জেল হলেও তাঁর দল তাঁকে মুক্ত করার মত, যুৎসই আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবেনা। ফলে বিএনপি' চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রনালয় সহ সমসংখ্যক মন্ত্রীত্বের শর্তে, একশ আসনে নির্বাচনী সমঝোতায়  উভয়পক্ষ প্রাথমিক ভাবে রাজী হয়েছিল।

   সিঙ্গাপুর বৈঠক শেষ করে উভয়দলের প্রতিনীধিগন দেশে পদার্পন করার আগে'ই 'খালেদা জিয়া' ৫ বছরের শাস্তি মাথায় নিয়ে জেলে প্রবেশ করেন। ধুর্ত এরশাদ সুযোগ বুঝে সিঙ্গাপুর সমঝোতা থেকে কিছুটা সরে এসে জিয়া পরিবারের মামলা প্রত্যাহার সহ অধিক সংখ্যক মন্ত্রীত্বের প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় পার্টি'র নেতৃত্বে সরকার গঠনের প্রকাশ্য প্রস্তাব দিয়ে বসেন। সঙ্গতকারনে বিএনপি তাঁর উক্তপ্রস্তাবে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত: থাকে।উপায়ান্তর না দেখে এরশাদ পূণ:রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে হঠাৎ একদিন তাঁর কায্যালয়ে দেখা করেন। তিনি বাড়তি কয়েক মন্ত্রীত্ব ও কয়েকটি আসন ছাড়ের শর্তারোপ করে মহাজোট বহাল রেখে নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী "শেখ হাসিনা" এরশাদের হঠাৎ উপস্থীতি এবং আগাম দরকষাকষিতে তৎক্ষনাৎ কোন প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত না করে সময়ক্ষেপনের কৌশল গ্রহন করেন। তবে  মনে মনে কিছুটা যে ক্ষুব্দ হননি--তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

  আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ১৪দলীয় জোট বহাল রেখে আপাতত: এরশাদকে মাইনাস রেখে বিশদলীয় জোটের নির্বাচনে অংশগ্রহন করার হিসেব মাথায় রেখে মাঠ সাজানোর প্রতি মনযোগ প্রদান করেন।পূর্বের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি আগে ভাগে স্বচ্ছ, ত্যাগী, নির্ভেজাল, গ্রহনযোগ্য ব্যাক্তিদের দলীয় মনোনয়ন প্রদানের উদ্দেশ্যে তাঁর নিজস্ব কৌশলে নির্বাচনী মাঠ সাজাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।তিনি সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত রিপোর্ট এবং একাধিক কেন্দ্রীয় কমিটির তদন্ত দলের তথ্যানূযায়ী শতাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত এমপি, মন্ত্রীদের শনাক্ত করে তাঁদের তালিকা প্রনয়ন করেন। উক্ত নেতাদের আসনে নতুন মুখের মনোনয়ন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বিদ্যমান সাংসদ ও মন্ত্রীদের উক্ত তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণ করে তাঁদের সম্পদের উৎস সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়ার জন্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশনা প্রদান করেন। উদ্দেশ্য একেবারেই পরিস্কার-- আগে ভাগে বিদ্রোহী প্রার্থীর তালিকা ছোট করার যুৎসই পদক্ষেপ।ইতিমধ্যে অনেকগুলী আসনে নতুন এবং গ্রহনযোগ্য ব্যাক্তিদের কর্মকান্ড পরিচালনার নির্দেশনাও তিনি দিয়েছেন। দলের শৃংখলা রক্ষার ক্ষেত্রে নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করার নির্দেশনা দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলা উপজেলা সফর সুচি প্রনয়ন করার তাগিদ দিয়েছেন। 

  ইত্যবসরে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের কোটা সংরক্ষনের কারনে তথাকথিত মেধাবী ছাত্রছাত্রীগন সরকারী নিয়োগে প্রবঞ্চিত হচ্ছেন মর্মে উক্ত কোটা প্রথা বাতিলের দাবীতে  ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলে।দৃশ্যত: উক্ত ছাত্র  আন্দোলন ক্রমশ: স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এবং দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের নিয়ন্ত্রনে চলে যায় এবং ব্যাপকতা পেতে শুরু করে। আন্দোলনের মঞ্চ হতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিধ্বংসী স্লোগান সহ মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কটুক্তিমূলক শ্লোগান বর্ষিত হতে থাকে।ইত্যবসরে তারেক জিয়া কতৃক উক্ত আন্দোলনকে সহিংসতার দিকে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা মূলক এক অডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনের নিয়ন্ত্রন দেশবিরোধী অশভশক্তির হাতের লাটাইয়ে পরিণত হওয়ার আগেই ছাত্রদের সম্পুর্ণ দাবী মেনে নিয়ে সকল প্রকার কোটা প্রথা বাতিল করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হন।

    ছাত্রছাত্রীগন শিক্ষালয়ে প্রবেশ করার পর  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী' 'শেখ হাসিনা' জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগদান করার উদ্দেশ্যে বৃটেন সফরে যান। সেখানে প্রবাসি বাংলাদেশীদের এক সমাবেশে তারেক জিয়াকে দেশে ফেরৎ এনে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অঙ্গিকার ব্যাক্ত করেন। তাঁর এই অঙ্গিকার 'ধুর্ত এরশাদ'কে নতুন করে বাংলাদেশের সরকার গঠন করার স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দেয়।

   ইহা একান্ত সত্য যে--বিএনপি দলের নীতিনির্ধারক পয্যায় এমন কোন একক ইমেজ সম্পন্ন নেতা নেই, "জিয়া পরিবারের অনুপস্থীতিতে দল ও দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারবে।দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাধিক বিস্ফোরক মামলায় জড়িত নেতাকর্মী, ইতস্তত: বিক্ষিপ্ত--বিপুল সংখ্যক  সমর্থকদের একতাবদ্ধ করে জাতীয় নির্বাচনে কাংক্ষিত ফলাফল এনে দেয়ার মত সর্বজনগ্রাহ্য নেতা বিএনপি দলে অনুপস্থিত। এই সংকটময় মহুর্তে দলের হাল ধরার যোগ্যতাসম্পন্ন জিয়া পরিবারের একজনই আছেন প্রয়াত কোকোর স্ত্রী শারমিন। তিনি অবশ্য বিদূষী তবে সর্বজনগ্রাহ্য নহেন।তবে উচ্চশিক্ষিত এবং মার্জিত স্বভাবের, মামলা মোকদ্দমাহীন।

    তারেকের স্ত্রী জোবায়দাও অবশ্য উচ্চশিক্ষিত এবং মার্জিত স্বভাবের বিদূষী মহিলা।-কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে মামলা এবং নাগরিকত্ব নিয়ে জটিলতা রয়েছে। তারেক জিয়া তাঁর সম্পূর্ণ পরিবারের বাংলাদেশী পাসপোর্ট বৃটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে জমা দিয়ে--'সেই দেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করার জন্যে আবেদন করেছেন'। সুতারাং বিদেশী রাষ্ট্রের কোন নাগরিক বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য বা সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করার বিধান নেই।এক্ষেত্রেও  প্রয়াত কোকোর স্ত্রী শারমীন আক্তার অনেকটা এগিয়ে আছে।খালেদা জিয়া পারিবারীকভাবে নিজেও তাঁর কাছে অনেকটা দুর্বল বলে জানা গেছে। তাঁকে সরাসরি নেতৃত্বে আনতে না পারার ব্যাথাও তিনি লুকাননি। তিনি অকপটে  প্রকাশ্যই বলে দিয়েছেন দলের নেতাদের--ঢাকায় আন্দোলন গড়ে না উঠার কারন। আন্দোলন ব্যার্থতার দায় তিনি একতরফা তারেক এবং তাঁর পরিবারের উপরই বর্তিয়েছেন। তারেককে ইঙ্গিত করে তিনি বিরক্তির সূরে বলেন--তারেককে তো আপনারা চিনেন--"ও চায় ক্ষমতা, তাঁর বউও  চায় ক্ষমতা"।

    এদিকে  কোকোর স্ত্রীকে দলের নেতৃত্বে তারেক জিয়া কোনবস্থায় মেনে নেয়ার মানষিকতা রাখেন না'। এর বড় কারন হতে পারে--বিদেশে পাচারকৃত সম্পদের ভাগবাটোয়ারা"। উক্ত সম্পত্তির বিরোধ'কে কেন্দ্র করে কোকো'র মৃত্যুর ব্যাপারে তারেক জিয়ার উপর সন্দেহের তীর আগে থেকেই সবমহলের বিদ্যমান ছিল। উক্ত সন্দেহকে আরো শক্তভিতের উপর দাঁড় করেছে--"কোকোর মৃত্যুর দুইবছর দশমাস পর "কোকো'র স্ত্রী'র প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে হত্যা মামলা দায়ের এবং উক্ত মামলায় কোকোর স্ত্রী নিজে' সাক্ষী হয়ে'। কোকো'র  মালয়শিয়ান ব্যাবসায়ীক পার্টনার ও পারিবারীক বন্ধু মালয়শিয়ান মেজি:ষ্ট্রেট আদালতে তারেক জিয়াকে প্রধান আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন"। কোকোর মৃত্যুর পর তারেক তাঁর ছোট ভাই কোকো'র লাশ "ভিসা জটিলতা'র কারন দেখিয়ে দেখতে  আসেননি। ব্যাপারটি জনমনে সন্দেহের উদ্রেক করেছে, তারেক সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করেছে। যদিও এর আগে তারেক একাধিকবার মালয়শিয়া, দুবাই, সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশ "বৃটেনের রাজনৈতিক আশ্রয় সংক্রান্ত সাময়িক ভ্রমন ভিসায়" সফর করেছিলেন।

  এমনতর অবস্থায় বিএনপি দলের নেতৃত্ব নিয়ে ঘরে বাইরে মহাসংকটে আছে--'এতে কোন সন্দেহ নেই'। এমনিতে দলের তরুনতুর্কি অংশ 'তারেক জিয়া'র নেতৃত্বের প্রতি অনুগত।বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে দেখা গেছে--"দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দদের মধ্যে বড় অংশটি খালেদা জিয়ার প্রতি অনুগত"।কিন্তু খালেদা জিয়ার মুক্তির কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না। আবার বিদেশে অবস্থান করে অনেকগুলী মামলার দন্ড নিয়ে তারেক জিয়াকেও সিনিয়র নেতারা মেনে নিতে পারছেন না।

    সিনিয়র নেতারা প্রায় সকলেই একমত যে--'বিদেশী বন্ধুরাষ্ট্রের কূটনৈতিকগন তারেক জিয়া'র বিএনপি দলের নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছেনা'। খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর বিষয়টি সবমহলে আরো পরিস্কার হয়ে ধরা দেয়। খালেদা জিয়ার জেলমুক্তি সংক্রান্ত বিষয় বিদেশী কূটনৈতিকদের অবহীতকরনের উদ্দেশ্যে ডাকা সভায় বিষয়টি প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছেন প্রভাবশালী দেশের কূটনৈতিকগন। উক্ত সভায় একাধিক মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামী ''তারেক জিয়া'কে কেন দলের নেতা নির্বাচন করা হল--কূটনৈতিকদের এই সম্পর্কিত প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব, উপস্থিত বিএনপি নেতৃবৃন্দ দিতে পারেনি বলে পত্র পত্রিকার সংবাদে জানা গেছে।

  তাছাড়া তারেক জিয়া'র অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি, একাধিকবার বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যা প্রচেষ্টা, জঙ্গিবাদে মদদ দান, আগুন সন্ত্রাসে উস্কানী, বিদেশে অর্থপাচার সংক্রান্ত নেতিবাচক বিষয়গুলী অবাধ তথ্য প্রবাহের কারনে ব্যাপক ভাবে প্রচার পেয়েছে। তাঁর প্রতিটি নেতিবাচক কর্মকান্ড বুমেরাং হয়ে জিয়া পরিবার এবং বিএনপিকে অস্তিত্ব সংকটে নিপতীত করেছে।তারেকের এহেন কর্মকান্ড বাংলাদেশে সুদুর অতীত থেকে বিদ্যমান শক্তিশালী ডানপন্থি সাম্প্রদায়ীক রাজনীতি'র ধারাকে সংকটের মূখে ঠেলে দিয়েছে।এই একটি প্রশ্নে তদীয় পক্ষের প্রায় সকল শ্রেনী পেশার মানুষ একমত'। ইতিমধ্যে তারেকের উপর চরম বিরক্তি প্রকাশ করে বৃহৎ শক্তি 'হেফাজতে ইসলাম' এবং চরমোনাই পীর সাহেবের খেলাফতে মজলিশ সহ সাম্প্রদায়িক মৌলবাদীশক্তির বৃহৎ অংশ ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করে আলাদা অবস্থান গ্রহন করেছেন।

    এই মহুর্তে-কোকোর স্ত্রী'ই যে সম্ভাব্য বিকল্প--'এতে কোন পক্ষেরই সন্দেহ নেই'। এক্ষেত্রেও বড় বাঁধা তারেকে'র স্ত্রী জোবায়দা, খালেদার বক্তব্যেই স্পষ্ট। বিএনপি দলের অভিজ্ঞ নেতৃবৃন্দ মনে করেন কোকো'র স্ত্রী 'শারমিন'কে দলের নেতৃত্ব দিয়ে নির্বাচনের পুর্ব মূহুর্তে--অংশগ্রহন মূলক নির্বাচনের স্বার্থে খালেদা জিয়ার মুক্তি সংক্রান্ত বিষয় সরকারের সঙ্গে সমঝোতা সম্ভব হবে।বিএনপি নেতৃত্বের ধারনা--'বিদেশী কূটনৈতিক ও বুদ্ধিজীবি সমাজের চাপের মূখে এবং অবাধ ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে সরকার শেষমহুর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রশ্নে নমনীয় অবস্থান নিতে বাধ্য হবে।

  তদ্রুপ যদি হয় তারেক জিয়া বিষয়টি যে মানবেনা--'এক কথায় সে তাঁর মনের ভাব ইতিমধ্যে লন্ডন বিএনপি'র এক সভায় পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন'।তিনি স্পষ্টই বলেছেন--"বিএনপি তাঁর পৈত্রিক সম্পত্তি। এই সম্পত্তির বড় অংশের ভাগিদার একমাত্র পুত্র সন্তান হিসেবে সে নিজে'ই।

    বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ডানপন্থি, চরম ডানপন্থি, চীনপন্থি বাম, চরম বামপন্থি, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি'র ধারাবাহিকতা রক্ষা করার ক্ষেত্রে আন্তজাতিক মহলের, কতিপয় শক্তিশালী দেশের প্রচেষ্টা স্বাধীনতার পর থেকে লক্ষ করা গেছে।তাঁদের দাপট এই সেদিনও বাঙ্গালী, বাংলাদেশ হাড়ে হাড়ে অনুভব করেছিল। যখন মানবতা বিরুধী অপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনাল কতিপয় দেশদ্রোহীর শাস্তি দিয়েছিল। আন্তজাতিক অপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে তখন তাঁদের স্বিয় মূখোস উম্মোচন করেছিল। তাছাড়া সুদখোর ইউনূসকে যখন তাঁর স্বিয়পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল তখন আন্তজাতিক শক্তিধর মহলটি বাংলাদেশ সরকারের উপর উলঙ্গ হস্তক্ষেপ করতে চেয়েছিল। জাতির জনকের কন্যার দৃড অবস্থানের কারনে উভয়ক্ষেত্রে চরম ভাবে পরাজিত হয়ে মহলটি সাময়িক লেজ গুটিয়ে নিয়েছে বটে, তবে চক্রান্ত যে থেমে নেই--তাঁর প্রকাশও ইতিমধ্যে লক্ষ করা গেছে।

   বাংলাদেশবিরুধী কতিপয় বিদেশী পেইড এজেন্ট প্রেতাত্বাদের পক্ষে রাজনৈতিক চদ্মাবরণের বাইরেও তৎপর রয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই দেশের অভ্যন্তরের বুদ্ধিজীবি, সুশীল, বিভিন্ন শ্রেনী পেশায় নিয়োজিত নাগরিকবৃন্দ। তাঁরা নিজেদেরকে শুশীল সমাজের নাগরিক ভাবতে বেশী ভালবাসেন। তাঁরা সংখ্যায় অতিশয় নগন্য হলেও, তাঁদের নিয়ন্ত্রিত অধিকসংখ্যক মিডিয়ার কারনে প্রতিনিয়ত তাঁদের সরব উপস্থীতি টের পাওয়া যায়। তাঁরা সমাজের কতিপয় বাচাল তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি থামিয়ে দিতে এতবেশী মরিয়া যে-- "নিজেদের পরিবার, পরিজন, আত্মীয়স্বজন রেখে দীর্ঘদিন গুম হয়ে থাকতেও তাঁরা কুন্ঠিত হয়না।

    উল্লেখিত বাংলাদেশ বিরুধী বিদেশীশক্তি এবং দেশীয় প্রেতাত্বার দোসরগন বর্তমান সময়ে এসে প্রায় দিশেহারা। তাঁরা সমম্বিত শক্তি নিয়ে প্রধানশক্তি বিএনপি'র পতন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে, এখন আবার নতুন খেলায় মেতে উঠেছেন। প্রধানশক্তি বিএনপি'র নেতৃত্ব শুন্যতার বিকল্প দ্বিতীয়শক্তি জাতীয় পার্টি এবং তাঁর নেতা ধুর্ত 'এরশাদ'কে সামনে আনার প্রকল্প হাতে নিয়ে ভিতরে ভিতরে অনেকদুর এগিয়ে গেছেন। ঠিক জিয়ার মৃত্যুর পর যেমনটি এরশাদকে মঞ্চে এনেছিলেন, ঠিক তেমনভাবে না হলেও একই ফর্মুলায় এবারও এরশাদকে সামনে আনতে সর্বমহল সচেষ্ট হয়ে উঠেছেন।

  এবার এরশাদের নেতৃত্বে জোট গঠন করার জন্যে এরশাদকে দৌঁড়ঝাপ দেয়ার প্রয়োজন হচ্ছেনা। মুক্তিযুদ্ধ বিরুধী অশুভচক্রের সকল শ্রেনী পেশার নেতৃবৃন্দ, তদীয় বুদ্ধিজীবি, সুশীল সমাজ, চরম ডান, চরম বাম এবং তাঁদের আন্তজাতিক মরুব্বি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ সর্বমহলে বিকল্প রাজনৈতিক দল ও যুৎসই নেতার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বিএনপি'র নীতিনির্ধারকগন দলটি'র প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বদ্ধমূল ধারনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন যে--"জিয়া পরিবারহীন" বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একেবারে'ই অচল সিকি"। বিএনপি নেতৃত্বের এই অস্বাভাবিক দুর্বলতাকে আন্তজাতিক মহল যথাযথ মুল্যায়ন পূর্বক এরশাদের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ বিরোধী বৃহৎ জোট গড়ে তোলার প্রতি মনযোগ প্রদান করে।

  অশুভ দেশ বিরুধী শক্তি এরশাদকে সামনে আনার পেছনে দুটি উদ্দেশ্য কাজ করছে।তাঁরা মনে করে- সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী দল সমূহ বিএনপি'র চাইতে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে'ই তাঁদের আদর্শের নিকটতম মনে করে বেশী।যে সমস্ত মৌলবাদী দল ও গোষ্টি ইতিমধ্যে বিএনপি'র নেতৃত্বে বিশ দলীয় জোট ছেড়ে গেছে, এরশাদের নেতৃত্বে বৃহত্তর জোট গঠন করার উদ্যোগে তাঁরাও সম্পৃত্ত হবে বলে আশা করে।

    এই সুবর্ণ সুযোগ এরশাদ হাতছাড়া করবেনই বা কেন?  তারেক জিয়ার অন্তজ্বালায় 'মা' খালেদাও এক্ষেত্রে দল ও সরকারের নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে এরশাদকে নেতা মেনে ভোটযুদ্ধে অংশগ্রহনের পক্ষে মত দিয়েছেন বলে বিশ্বস্ত সুত্রে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে জিয়া পরিবার, তদীয় বুদ্ধিজীবিমহল, শুশীল শ্রেনীর প্রধান ব্যাক্তিদের চিন্তাচেতনায় একটি বিষয়ই কাজ করছে--"আর তা হচ্ছে জিয়া পরিবারের মামলা সমূহ প্রত্যাহার, শাস্তি মওকূপ, জিয়া পরিবারের সকল সদস্যের স্বাভাবিক রাজনীতির গ্যারান্টি"।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন