চার জাতীয় নেতার বৃত্তের বাইরে নির্বাচিত "সাধারণ সম্পাদক" --অসহায় জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি।

চার জাতীয় নেতার বৃত্তের বাহিরে নির্বাচিত "সাধারন সম্পাদক"--অসহায় জনাব 'ওবায়দুল কাদের' এমপি।

    জাতি'র জনক বঙ্গবন্ধু--বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুপ্ত বাসনা বাস্তবায়নের লক্ষে স্বাধীনতা উত্তর পূর্ব বাংলায় তাঁর কায্যসিদ্ধির উদ্দেশ্যে আওয়ামী রাজনীতিতে প্রতিটি মহকুমায় একাধিক পরিবারকে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি পরিবার সমূহ'কে দলে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের গ্রহনযোগ্যতা স্ব-স্ব অঞ্চলের জনগনের নিকট আকাশচুম্বি করে গড়ে উঠতে, যাই কিছু প্রয়োজন ছিল তার সবটুকুই করেছিলেন।বঙ্গবন্ধু'র উদ্দেশ্য ছিল পরিস্কার--'সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ বেনিয়া 'শাসক ও শোষক' গুষ্টির ক্ষমতার বৃত্তে অবস্থান করে অত্রাঞ্চলের প্রতিটি মহকুমায় কতিপয় সাম্প্রদায়িক মূৎসুদ্ধি পরিবার অসীম ক্ষমতাধর, প্রভাব প্রতিপত্তি সম্পন্ন হয়ে উঠেছিল। পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনের  ধারাবাহিকতায় পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক চক্র তাঁদের রাষ্ট্র পরিচালনার গৃহিত নীতি অনুযায়ী, অত্রাঞ্চলের মহকুমা পয্যায়ের অসীম ক্ষমতাধর, প্রভাব প্রতিপত্তি সম্পন্ন সাম্প্রদায়িক মুৎসুদ্ধি  পরিবারগুলী'র একচেটিয়া অন্ধ সমর্থন লাভ করেছিল।

     সামন্তবাদি প্রথা বলবৎ থাকাবস্থায় উক্ত পরিবারগুলীর জমিদারীতে বসবাসরত: প্রজা সাধারন, তাঁদের মনোবৃত্তির বাহিরে স্বাধীন মতামত প্রদান, বাস্তবতায় কোনভাবেই সম্ভব ছিলনা। চতুর পশ্চিমা শাসক চক্র আজীবন পুর্ব বাংলাকে তাঁদের অধিনস্ত রেখে শোষন শাসনের হীন উদ্দেশ্যে উল্লেখিত পরিবার সমূহ'কে রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতার সাহায্যে আরো অপ্রতিরোধ্য অত্যাচারী শোষক শ্রেনীতে পরিণত করেছিল।

    বিপরীতে বঙ্গবন্ধু প্রতিটি মহকুমায় 'অসাম্প্রদায়িক চেতনা সম্পন্ন' পারিবারিক ঐতিহ্য মন্ডিত একাধিক পরিবারকে জনগনের নিকট অধিকতর গ্রহনযোগ্য করে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। উক্ত পরিবার গুলীকে বঙ্গবন্ধু স্ব-স্ব এলাকায় একচ্ছত্র দলীয় রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ দিয়ে, স্বল্প সময়ের মধ্যে পুর্বাঞ্চলব্যাপী 'পরিবার কেন্দ্রিক' একটি  'অসাম্প্রদায়িক চেতনা সম্পন্ন এবং গনতান্ত্রিক মানষিকতা সম্পন্ন' শক্তিশালী বলয়ের উদ্ভব ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

  দলের অভ্যন্তরে বঙ্গবন্ধু'র একান্ত বিশ্বস্ত অসাম্প্রদায়িক 'বলয়' সৃষ্টি করে তখনকার রাজনৈতিক পরিবেশে কোনক্রমেই যে তিনি ভুল করেননি, অচিরেই তা প্রমানীত হয়। '৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে স্ব-স্ব মহকুমায় তাঁদের সর্বস্ব উৎসর্গ করে 'বঙ্গবন্ধু'র অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে তাঁরা কেউ'ই কুন্ঠাবোধ করেননি। বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত সুপ্ত বাসনা 'স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অনুপস্থীতিতে, তাঁরা 'নিবেদন করেছিলেন তাঁদের অর্জিত সমূদয় সম্পদ ও জীবন। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাস একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।তাঁদের সম্মিলীত নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লাল সুয্য চিনিয়ে আনার ক্ষেত্রে একরকম অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছিল।

    '৭৫ এ বঙ্গবন্ধু'র মর্মান্তিক হত্যাকান্ড এবং আওয়ামীলীগ সরকার উৎখাতের পর, ৩রা নভেম্বর জেলখানায় চার জাতীয় নেতাকেও হত্যা করা হয়েছিল। অসংখ্য নেতাকে প্রহসনের "ক্যাঙ্গারু আদালত" বসিয়ে বিচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, সামরিক জান্তা জেনারেল জিয়ার ঈঙ্গিতে, জেলের অন্ধকার প্রকোষ্টে বন্দি করে রেখেছিলেন। কতিপয় বেঈমান, মীরজাফর ব্যাতিরেকে সিংহভাগ নেতা প্রয়াত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথ ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত  হননি। জেলখানার অভ্যন্তরে শহীদ বরেণ্য চার জাতীয় নেতাও বঙ্গবন্ধু সৃষ্ট অসাম্প্রাদায়িক প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের প্রধান ব্যাক্তি এবং বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচরদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।

      সঙ্গত কারনে '৭৫ পরবর্তি বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনীতিতে অভিভাবক শুন্য আওয়ামী ভাবধারার পরিবার, দলের অসংখ্য, অগনিত নেতাকর্মী এবং বাংলাদেশের আপামর জনগন,অবচেতন মনে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচরদের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে।এককথায় উক্ত পরিবার সমূহের--যে কোন সদস্যের রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতি অন্ধ সমর্থন জ্ঞাপনের মাধ্যমে, কর্মীরা সর্বস্ব উজাড় করে কৃতজ্ঞতা জানাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে উক্ত পরিবার গুলী'র সদস্যের মধ্যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বা আবশ্যকীয় রাজনৈতিক গুনাবলী বিদ্যমান আছে কি নেই--বিষয়টি আওয়ামী ঘরানায়, কখনই বড় হয়ে দেখা দেয়নি। বলতে গেলে--উক্ত পরিবারগুলীর প্রতি দেশব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে লালিত নেতাকর্মিগন এবং আওয়ামী ঘরানার পরিবার সমূহ,বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি'র জনগোষ্টি অন্ধ আনুগত্য প্রকাশে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

    '৭৫ পরবর্তি সময় থেকে একটানা ২০১৬ ইং পয্যন্ত মোটামোটি বঙ্গবন্ধু সৃষ্ট বলয়ের হাতেই আওয়ামী রাজনীতির দ্বিতীয় সর্বোচ্ছ নেতৃত্ব বহাল ছিল। জাতির জনকের জীবিত দুইকন্যাও পিতার সৃষ্ট বলয়ের প্রতি ভালবাসায়, উদারতায়, সম্মানে, শ্রদ্ধাবোধে, সহনশীলতায় অটুট ছিলেন।তাঁদের সম্মান বজায় রাখতে  কখনই কার্পন্য করেননি। বঙ্গবন্ধুকন্যাদ্বয়ের শ্রদ্ধাবোধের একাগ্রতায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মনমানষিকতায় তাঁরা আরো দৃড়ভাবে গেঁথে যায়। আওয়ামী রাজনীতিতে তাঁদের অবস্থান দৃড়তা পায়।  তাঁদের  পরিবারভুক্ত  সদস্যেদের "সরকারে বা দলে" 'অন্তভূক্তি বা বর্হিগমন' এতকাল অবিতকৃত' থেকেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যাও তাঁদের প্রতি উচ্চতর সহনশীল মনোভাবের বর্হিপ্রকাশ ব্যাতিত কখনও বিরক্তি' প্রকাশ করেননি।দলে বা সরকারে বিতর্কিত ভুমিকার কারনে অন্যকোন প্রভাবশালী নেতা বা নেত্রীর ক্ষেত্রে যাহা সাধারনত পরিলক্ষিত হয় না।গনতান্ত্রিক বিশ্বের যে কোন রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে এইরুপ আস্কারা'কে'  তোষননীতি বলে। শীর্ষ নেতার আস্কারা পেয়ে ঐ সমস্ত ব্যাক্তি' বা পরিবারের মধ্যে অহংকারী মনোভাবের জম্ম দেয়।

    আমরা জানি-- 'রাষ্ট্র পরিচালনা বা দলীয়  রাজনীতিতে অহংকার, দাম্ভিকতার মনোভাব জম্ম নিলে,সেই সরকার বা দল তখন আর জনগনের দল বা সরকার থাকেনা।অহংকার এবং দাম্ভিকতার  অপর নাম "সামন্ততন্ত্র''। সামন্তবাদী মতবাদ গনতান্ত্রিক সমাজের প্রধান শত্রু হিসেবে বিবেচিত। বিগত শতাব্দি এবং বর্তমান  শতাব্দির প্রথমার্ধ পয্যন্ত অত্রাঞ্চলের জনগন সামন্তবাদী প্রথা উচ্ছেদকল্পে লক্ষ লক্ষ তরুন,যুবক তাঁদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে গনতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত করছে। সুতারাং সামন্তবাদী প্রথার সামান্যতম অবশিষ্টাংশ সমাজে বিদ্যমান থাকুক অত্রাঞ্চলের জনগন চায়না।

   উক্ত বিষয়টি সম্পূর্ণ অবগত থাকা সত্বেও বঙ্গবন্ধুকন্যা এযাবৎকাল নেতাকর্মীদের মনোভাব লক্ষ করে ঐতিহ্য ভাঙ্গার চেষ্টা করেননি। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেনী'র  সম্পূর্ণ গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল।    ৩৬ বছর দলের শীর্ষ নেতৃত্বে অবস্থান করেও তিনি দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্ছ নেতা নির্বাচনে সম্পূর্ণ গনতান্ত্রিক ধারা অনুসরন করতে পারেননি।

    মুজিবাদর্শে বিশ্বাসী লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী' তাঁদের প্রতি প্রশ্নাতিত আনুগত্য এবং দলের শীর্ষ পয্যায়ের নেতৃত্বের ইতিবাচক মনোভাব পুঁজি করে অনেক পরিবারের একাধিক সদস্য অহংবোধের স্বর্গরাজ্যে বাসা বেঁধেছেন।  শ্রদ্ধাভাজন পরিবারের দাম্ভিক একাধিক সদস্য বর্তমান আওয়ামীলীগের দলীয় আদর্শ, উদ্দেশ্য, নীতি এবং কি বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্ব সম্পর্কিত বিষয় নেতিবাচক মন্তব্য করতেও দ্বিধাম্বিত নন। তাঁদের অহংকার, দাম্ভিকতার হাজারো গল্পকাহিনী পত্র পত্রিকা সহ লোকের মুখে মুখে প্রচলিত থাকা সত্বেও তাঁদের প্রতি বঙ্গবন্ধুকন্যাদ্বয় এযাবৎকাল বিরুপ মনোভাব পোষন করতে দেখা যায়নি।

   তদ্রুপ দুই পরিবারের পারিবারীক ইগো রক্ষার লড়াইয়ে নারায়নগঞ্জের অসংখ্য আওয়ামী  পরিবারের সন্তনদের রক্তস্রোতে রাজপথ যুগের পর যুগ রঞ্জিত হয়ে চলেছে। টাঙ্গাইলের দুই পরিবার--তমধ্যে এক পরিবারের এক দাম্ভিক সদস্য নিত্য বঙ্গবন্ধুকন্যার আকাশসম ভাবমূর্তি ধুলায় লুটাতে ব্যস্ত। শুধু তাই নয় ঐ পরিবারের অন্য এক সদস্য সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী থাকাবস্থায় পবিত্র ইসলাম ধর্মের কতিপয় অনুশাসন সম্পর্কে কটাক্ষ করে দল ও সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতেও ছাড়েননি। একই জেলার অন্য পরিবারের এক দাম্ভিক সংসদ সদস্য প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে মানুষ হত্যা করতেও তাঁর হাত কাঁপেনি।নি:সন্দেহে এইরুপ কর্মকান্ড যে কোন রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তাকে, যে কোন সময়ে ধূলায় লুটিয়ে দিতে পারে।

   ৩রা নভেম্বর জেলভ্যন্তরে  শহিদ জাতীয় চার নেতার অন্যতম মরহুম সৈয়দ কামরুজ্জমান সাহেবের সুযোগ্য পুত্র সর্বজনশ্রদ্ধেয় জননেতা  জনাব সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাহেব--দুই সেশন দলের 'সাধারন সম্পাদকে'র দায়িত্ব পালন করেছেন এবং আওয়ামীলীগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি দলের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বে থাকাবস্থায় তৃনমূল দুরের থাকুক, দলের উচ্চতর পয্যায় জেলা কমিটিও তদারকি করার প্রয়োজন অনুভব করেননি। দীর্ঘ বছর দলের উচ্চ পয্যায়ের তদারকির অভাবে বহু সংখ্যক জেলা, উপজেলায় দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অনেকে অত্রাঞ্চলের জনগনের শতবছরের সংগ্রাম, লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে উচ্ছেদকৃত সামন্তবাদী প্রথা'র অভিশাপ "জমিদারী" কায়েম করার সুযোগ পেয়েছে। জেলা, উপজেলার স্বার্থান্বেষী নেতা, ব্যাক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থের উদ্দেশ্যে বলা যায় তাঁদের লুটপাটের পরিধি বিস্তৃতি ও সাম্রাজ্য রক্ষার নিমিত্তে রাজাকার আলবদর, শান্তিবাহিনীর বংশধর, মাস্তান, অস্ত্রধারী, খুনী--ঝাঁকে ঝাঁকে অনুপ্রবেশ করার সুযোগ দিয়ে দলের স্থায়ী সর্বনাশ ঢেকে এনেছে।

    তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়া সত্বেও মন্ত্রানালয়ে মাসে তিনমাসেও একবার তাঁর দপ্তরে হাজির হতে অপরাগ ছিলেন। এমন কি সরকারের সর্বাদিক গুরুত্বপূর্ণ একনেক বৈঠকেও তাঁর গড়হাজির পরিলক্ষিত হ'ত।এমত:বস্থায়ও দলের তৃনমূল পয্যায়ের লক্ষ লক্ষ নিবেদিত নেতাকর্মীর আনুগত্যতা এবং বঙ্গবন্ধু কন্যাদ্বয়ের অপরিসীম স্নেহ, ভালবাসা, মুল্যায়ন থেকে তিনি কখনও বঞ্চিত হননি। বর্তমানেও তিনি সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন এবং আওয়ামীলীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন।

    আওয়ামীলীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জানেন--এইরুপ 'বলয়' গনতান্ত্রিক বিশ্বের কোন দেশের রাজনৈতিক দল বা সরকারে লালন পালন করা উচিৎ নয়। বলয়ভিত্তিক রাজনীতি দল, দেশ, জনগনের কল্যানার্থে কোনপ্রকার শুভ ফল বয়ে আনতে পারেনা। বাংলাদেশের ন্যায় ঘনবসতিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশে, সেতো কল্পনারও অতীত। তাঁর অনুপস্থীতিতে জাতির পিতার হাতে গড়া দলে'র অভ্যন্তরে ভয়াবহ পরিস্থীতি সৃষ্টি অবশ্যাম্ভাবী। যেমনটি হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর অকাল মৃত্যুর পর তাঁর লালীত বলয়ের একে অপরের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত অসহনশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট আত্মকলহের প্রেক্ষাপটে। '৭৫ পরবর্তি সময়ে তাঁদের দাম্ভিকতা ও অহংবোধের পায়ের তলায় পিষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছিল--"তাঁর পিতার হাতে গড়া দলের আদর্শ, সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন"।
   
     আওয়ামীলীগের বর্ষিয়ান নেতৃবৃন্দ কোন প্রকারেই দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে না পেরে, শেষাবদি তাঁদের একান্ত ইচ্ছার বিরুদ্ধে জাতির জনকের কন্যাকে দলের হাল ধরার আমন্ত্রন জানাতে বাধ্য হয়েছিলেন। পিতৃতুল্য নেতৃবৃন্দের বারংবার অনুরোধ এবং প্রয়াত পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রয়োজনীয়তা অনূভব করে, অবশেষে তিনি তাঁদের আহব্বানে রাজী হয়েছিলেন। বর্ষিয়ান নেতৃবৃন্দ তড়িগড়ি জাতীয় সম্মেলন আহব্বান করে তাঁর অনুপস্থীতিতে তাঁকে সভানেত্রী নির্বাচিত করে, দলের ভাঙ্গন রোধ করতে সক্ষম করেছিলেন। তিনি পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রত্যয়ে দলের দায়িত্ব গ্রহন গ্রহন করে সামরিক সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে  দীর্ঘ নির্বাসনের ইতি টেনে পদার্পণ করেছিলেন এই বাংলার মাটিতে। যে মাটিতে ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিলো তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে।  সেই দিন থেকে অদ্যাবদি প্রতি পদে পদে মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে, ব্যাক্তিগত এবং পারিবারীক সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়ে অবিরাম ছুটে চলেছেন, তাঁর প্রয়াত পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মানের অঙ্গিকার পূরণ করার লক্ষে। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব গ্রহন শুধুমাত্র 'বলয়ভুক্ত নেতাদের অশুভ খপ্পর থেকে আওয়ামীলীগ দল'ই মুক্ত হয়নি,সর্বস্তরের মুজিবাদর্শে বিশ্বাসী নেতাকর্মী এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির প্রান ফিরে পেয়ে উজ্জিবীত হয়ে উঠেছিল।

   বঙ্গবন্ধুকন্যা 'শেখ হাসিনা' দলের হাল ধরার ৩৬ বছরের ইতিহাসে এক'ই ধারাবাহিকতায় দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্ছ নেতা নির্বাচিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার জাতির জনকের ঘনিষ্ট সহচরদের বৃত্তের বাহিরে,গনতান্ত্রিক রীতিনীতি অনূসরনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের একান্ত ইচ্ছা থাকা সত্বেও, সর্বক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। যদিও তিনি প্রতিনিয়ত নেতা নির্বাচনে সর্বাদিক স্বচ্ছতা, গনতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা,প্রতিনিয়ত অনূভব করেছিলেন। অবশ্য বৃত্তের বাহিরে আওয়ামী রাজনীতিতে তাঁর নেতৃত্বের তিনযুগের মধ্যে সর্বজনগ্রাহ্য তেমন কোন চৌকস জাতীয় নেতার উত্থানও ঘটেনি।

     সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনের কমপক্ষে দুইবছর পুর্বে যোগাযোগ মন্ত্রী জনাব 'ওবায়দুল কাদের' এমপি নিজের কর্মগুনে, সততায় বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগন, দলীয় নেতাকর্মী, সরকারে--'প্রভূত সুনাম অর্জন করেন।' মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে হিন্দি সিনেমার অনূকরনে 'বাংলার 'ফাটাকেষ্ট' হিসেবে দেশের আপামর জনগনের মনে ঠাঁই করে নিতে সক্ষম হন। তাঁর কর্ম, সততা, বিচক্ষনতা, আনুগত্যতা, উপস্থিত বুদ্ধি দেশবাসীর সাথে সাথে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং কি বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী 'শেখ হাসিনা' জনগন, দল ও সরকারে নন্দিত ফাঁটা কেষ্টর" কাঁধে জটিল সেতু মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব তুলে দিয়ে স্বস্তির নি:শ্বাস নেন। জননন্দিত  'ফাঁটা কেষ্ট'র সুখ্যাতির জোয়ার তুঙ্গে থাকাবস্থায় ''বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের 'জাতীয় কাউন্সিলে'র সময় ঘনিয়ে আসে। 

    ২০১৬ ইং সালে ২০ অক্টোবর বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।রাজনীতি সংশ্লিষ্ট সকলেই অবগত আছেন যে--এবারের জাতীয় সম্মেলন বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুর্বের যে কোন জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন থেকে আলাদা মায্যদা ও গুনগত উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট মন্ডিত। এবারকার সম্মেলনে দলীয় গঠনতন্ত্রে যেমন যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে, তেমনি নেতৃত্ব নির্বাচনেও এসেছে অধিকতর স্বচ্ছতা ও গনতন্ত্রায়ন। শক্তিশালী সামাজিক মাধ্যমের বিস্তৃতির কারনে এই  প্রথম সারাদেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীগন তাঁদের প্রিয় দল 'বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে'র বনাঢ্য "জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে' সরাসরি সংযুক্ত হতে পেরেছন। শুধু সংযুক্ত'ই ছিলেন না--দলের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, নেতৃত্ব বাছাই সম্পর্কে স্ব-স্ব মতামত তাঁদের নিজস্ব ওয়ালে এক বা একাধিকবার শেয়ারও করেছেন। শক্তিশালী সামাজিক মাধ্যম ফেইছবুক সহ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তৃনমূল নেতাকর্মীদের অভিমত এবং চাওয়া পাওয়া, সম্মেলনে উপস্থিত দলের সম্মানীত কাউন্সিলর ও ডেলিগেট বৃন্দের মনোভাব দলের শীর্ষ পয্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়।সর্বশ্রেনীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক সম্পূর্ণ গনতান্ত্রিক ধারা অনুসরণ করে জাতীয় সম্মেলনের সমূদয় কায্যাদি সম্পন্ন করা হয়।

   আওয়ামী লীগের এবারের জাতীয় কাউন্সিলে দলীয় গঠনতন্ত্রের সংশোধনী ও নেতা নির্বাচনের অনুসৃত গনতান্ত্রিক রীতিনীতি ও পদ্ধতি এই প্রথম  দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রসংশিত হয়। এই প্রথম জাতির জনক 'বঙ্গবন্ধু' সৃষ্ট বলয়ের বাইরে দ্বিতীয় প্রজম্মের কেউ একজন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্ছ ক্ষমতাধর  নেতা নির্বাচিত হলেন। তাও কেবলমাত্র সম্ভব হয়েছে--বাংলাদেশের আপামর জনগন, বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী, উপস্থিত সম্মানীত কাউন্সিলর এবং ডেলিগেট বৃন্দের মনে এককভাবে হিরুইজমে অভিষিক্ত জনাব 'ওবায়দুল কাদের' এমপি মহোদয়ের একক ক্যারিসম্যাটিক নেতৃত্বের উত্থানের ফলে। বঙ্গবন্ধুকন্যাও দীর্ঘ (তিনযুগ) ৩৬ বছর অপেক্ষার পর আওয়ামী রাজনীতিতে পারিবারীক বলয় ভাঙ্গার সুযোগ হাতের নাগালে পেয়ে হাতছাড়া হতে না দিয়ে যথারীতি কাজে লাগাতে দেরী করেননি।

   এবারের নেতা নির্বাচনের পদ্ধতিতে যেমন ছিল নতুনত্ব তেমনি সর্বাদিক জন সমর্থিত ব্যাক্তি'রাই হয়েছেন নির্বাচিত। প্রথানুযায়ী দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিদায়ী বক্তব্য শেষে বিকাল ৫টা নাগাদ আগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। পরে নির্বাচন কমিশনের হাতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে মঞ্চ ছেড়ে তিনি কাউন্সিলরদের আসনে এসে বসেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, অন্য দুই নির্বাচন কমিশনার প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও সাবেক সচিব রাশিদুল হাসান নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করেন।

    প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রথমে সভাপতি পদে নির্বাচন দেন। এ পদে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সমর্থন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার পর পর তিনবার এ পদে আর কোনো প্রস্তাব আছে কিনা জানতে চান। কাউন্সিলররা ‘কেউ নেই, কেউ নেই’ বলে সমস্বরে বলতে থাকেন।   সভাপতি পদে অন্য কোনো প্রস্তাব না থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মতিক্রমে এ পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। এ সময় তুমুল করতালি আর স্লোগানে পুরো মিলনায়তন উল্লাসে মুখরিত হয়ে ওঠে।

    সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সমর্থন করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ পদে অন্য কোনো প্রস্তাব না আসায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে ওবায়দুল কাদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। তখন তুমুল করতালির মাধ্যমে তাকেও অভিনন্দন জানান কাউন্সিলররা।

  নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচন কমিশন মঞ্চ ত্যাগ করার পর নতুন সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঞ্চে ওঠেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী সভাপতিমণ্ডলীর ১৯টি পদের মধ্যে ১৬টি এবং ৪টি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষ পদের নাম ঘোষণা করেন।

   এ সময় বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, আশরাফকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ও আমার ছোট ভাইয়ের মতো। শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে সে সংগঠন ও দেশকে ভালোবেসেছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে সে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেছে। এ জন্য ধন্যবাদ জানাই। আশা করি সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে। নতুন সাধারণ সম্পাদক প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রনেতা থেকে সে এ পর্যন্ত উঠে এসেছে। সে সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় দল আরও শক্তিশালী হবে বলে আমি মনে করি।

    জননেতা জনাব ওবায়দুল কাদের 'সাধারন সম্পাদক' নির্বাচিত হওয়ার পর কালবিলম্ব না করে তাঁর উপর বর্তিত কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।তিনি বিভিন্ন জেলা, উপজেলা নেতাদের সদ্য সমাপ্ত জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে দলের গৃহিত রীতিনীতি অবহিত করেন। এর পরই তিনি জেলা উপজেলা সফরের কর্মসূচি হাতে নেন।তাঁর সফর উপলক্ষে ডাকা প্রতিটি সভায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা, দলীয় কোন্দল নিরসন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে করণীয় বিষয় সহ সাংগঠনিক বিষয়াদী আলোচনা করেন এবং স্থানীয় নেতাদের করণীয় বিষয়ে দিকনির্দশনা প্রদান করেন। 

    সভা সমাবেশে তাঁর স্বভাব সূলভ ভঙ্গিমায় হাস্যরসের মাধ্যমে কতিপয় দলীয় অভ্যন্তরীন বিষয় তিনি দলের উচ্চপয্যায়ের কঠোর মনোভাবের :প্রকাশ ঘটান। তাঁর দেয়া সময় উপযোগী বেশ কিছু বক্তব্য দলের অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোচিত সমালোচিত হতে থাকে। তাঁর এমন কতেক তির্যক মন্তব্য অথছ বাস্তব সত্য--নেতাকর্মীদের মুখরোচক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।  এমত:বস্থায় দল, দেশ, সরকারের কিছুদিন আগের সর্বাদিক প্রসংশিত হিরু সেতুমন্ত্রী 'ওবায়দুল কাদের' এমপি দলের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হতে না হতে, অনেকের অন্ধ চোখে বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে জিরু'তে অবস্থান করছেন।
   
      জনাব ওবায়দুল কাদের সাহেবের চৌকস রাজনৈতিক কর্মকান্ড  অন্ধ জনের চোখে দেখা না গেলেও আপামর দলীয় নেতাকর্মীদের খোলা চোখে ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হওয়া শুরু হয়েছে। তিনি সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে  দলের অভ্যন্তরে দীর্ঘযুগের লালিত অহংবোধে আচ্ছন্ন ক্ষমতাধর নেতাদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছেন তা ইতিমধ্যে প্রমানীত। আওয়ামীলীগের শ্রদ্ধাভাজন একাধিক নেতার  রাজনৈতিক বৈরিতার সম্মুখ্যিন জনাব ওবাদুল কাদের  নিজ যোগ্যতা, তিক্ষন মেধা, বিচক্ষনতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও পরিপক্ষতার গুনে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

   গত ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা  দিবসের অনুষ্ঠানে বর্ষিয়ান জননেতা তোফায়েল আহম্মদ সাহেবের অযাচিত ধাক্কা--'গুরুর আর্শিবাদ ভেবে অবনতচিত্তে হজম করে, সর্বমহলে তিনি প্রসংশিত হয়েছেন'। শুধু তাই নয়--"তাঁর অসীম ধৈয্য ও সহনশীলতা  প্রিয় দলকেও দেশে-বিদেশে ন্যাক্কারজনক পরিস্থীতি মোকাবেলা করা থেকে তৎক্ষনাৎ উপস্থিত বুদ্ধিতে তিনি উত্তরণ ঘটিয়েছেন।তাঁর এই বদন্যতা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ন্যায় বুর্জুয়া একটি দলের ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় মোটেও খাটো করে দেখার উপায় নেই।  সর্বজন শ্রদ্ধেয় বর্ষিয়ান জননেতা, বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর, প্রাজ্ঞ রাজনীতিক, মাননীয় বানিজ্যমন্ত্রী জনাব তোফায়েল আহম্মদ সাহেব সহ অনেকে'  অহংবোধের বৃত্ত থেকে মুক্ত হতে পারেননি--উক্ত ঘটনাই প্রমানের জন্যে যথেষ্ট।
 
       সুদীর্ঘকালের আওয়ামী রাজনীতির ইতিহাসে উল্লেখিত বিষয়টি অত্যান্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। উক্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা বলে দেয় দলের বর্ষিয়ান জননেতাদের নিকট সময়ের প্রিয় ওবায়দুল কাদের এমপি  "সাধারন সম্পাদক" নির্বাচিত হওয়ার পর সঙ্গতকারনে অপ্রিয় 'ওবায়দুল কাদের এমপি'তে পরিণত হয়েছেন।বলতে দ্বিধা নেই--"যে দলের অভ্যন্তরে দীর্ঘকাল আগে থেকে জান্তে-অজান্তে ভাইলীগের প্রচলন লালিত হচ্ছে, সেই দলে কেউ কারো চেয়ে তথাকথিতদের শক্তিতে শক্তিহীন ভাবা নেহায়েৎ বোকামী ছাড়া কিছুই নয়।" বর্ষিয়ান সর্বজন শ্রদ্ধেয় জননেতা জনাব তোফায়েল আহাম্মদ এমপি সেই বোকামিটাই করেছেন।

    রাজনীতি সংশ্লিষ্ট সকলের কমবেশী জানা আছে--যে কোন গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলে সৃষ্ট সমস্যা যেমন একদিনে সৃষ্টি হয়না, তেমনি সৃষ্ট সমস্যা সমাধানও একদিনে করা সম্ভব হয়না।সৃষ্ট সমস্যা যেমন কারো না কারো  রাজনৈতিক লাভক্ষতির কারনে হয়, সৃষ্ট সমস্যাও রাজনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে নিরসন করার প্রয়োজন হয়। যেমন ওবায়দুল কাদের সাহেবের 'কাউয়া তত্ব' সম্পর্কে বলা যায়-- 'কাউয়া' কি একদিনে বিতাড়ন সম্ভব, না এক দুই বছরে বিতাড়ন সম্ভব? এমন কোন জেলা বা উপজেলা নেতা কি আছেন--যিনি তাঁর জেলা বা উপজেলায় আগত কাউয়া'র তালিকা কেন্দ্র চাইলে'ই পাঠাবেন? তিনি কেন পাঠাবেন-'তিনি তো নিজের প্রয়োজনে তাঁদেরকে দলে ভিড়িয়েছেন'। জেলা বা উপজেলা কায্যকরি কমিটির সভায় সর্বসম্মত অনুমোদন সাপেক্ষে তালিকা পাঠালেই তো কেন্দ্র বহিস্কার করার ক্ষমতা পাবেন? না পাঠালে কিভাবে তাড়াবেন? হ্যাঁ, তাড়াতে পারবেন--তাঁরও প্রক্রিয়া আছে, সেই প্রক্রিয়া রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, সেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া'ই তো দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

     এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পর্কে যাদের জ্ঞান সীমিত, তাঁরাই কাউয়া নিয়ে ট্রল করেন। অন্যভাবে বলতে গেলে বলতে হয়--ইদানিং প্রচলীত 'কাউয়া' কটুক্তি একান্ত ঘৃনা বশত: উৎসারীত শব্দসমষ্টি নয়।দলের আজীবনের নিয্যাতীত, নীপিড়িত সর্বস্বহারা ত্যাগী নেতাকর্মীদের 'জলন্ত অগ্নি কুন্ডে'র মাঝখানে দাঁড়িয়ে অসহিঞ্চু মনের ভাবাবেগের প্রকাশ মাত্র।

    উল্লেখিত বিশদ আলোচনা শেষে এইটুকু বলতে পারি--স্বল্প সময়ে কাউয়াদের দলত্যাগে তিনি বাধ্য করতে পারেননি বটে--কাউয়ার কাঁ-কাঁ কর্কশ ডাক, দাপাদাপি অনেকাংশে কমিয়ে এনেছেন। কিভাবে কমিয়েছেন?ত্যাগী নেতাকর্মীদের 'ঘৃনার ঢালা'র সবটুকু ঘৃনা তিনি নিজ দায়িত্বে সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের সর্বাদিক দুর্নামের বিষয় কতিপয় স্বার্থান্বেষী অসৎ নেতাকর্মীর দখলবাজী, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, মাস্তানীর খবর পুর্বের ন্যায় ইদানিং নিত্যদিন পত্রিকার পাতায়  দেখা যায়না।

    জনগনের সঙ্গে আদৌ সম্পৃত্ত নয় নিতান্তই নিকৃষ্ট চরিত্রের কতিপয়  বলদর্পি, অশিক্ষিত, মাস্তান রাতারাতি নেতা হওয়ার মানসে আত্বপ্রচারের প্রতিযোগীতায় লিপ্ত ছিল।অবস্থা এমন এক পয্যায় ছিল তাঁরা ধরাকে সরাজ্ঞান ভেবে 'জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা'র ছবি অদৃশ্যমান ক্ষুদ্রাকৃতি--স্থানীয় তথাকথিত বলদর্পি নেতার ছবি বিলবোর্ড়, তোরন, ব্যানার জুড়ে ছাপিয়ে সড়ক মহাসড়ক সয়লাব করে দিয়েছিলেন। দেশের বহুস্থানে'র জনগন এবং সড়ক মহাসড়কের যানবাহন ইতিমধ্যে তৈল চকচকে চোখ ধাঁধানো বাহারি রঙের আকাশছোঁয়া সেই সমস্ত বিলবোর্ড়ের যন্ত্রনা থেকে  রক্ষা পেতে শুরু করেছে।

   চট্রগ্রাম, খুলনা, গাজীপুর সহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে দলীয় অভ্যন্তরীন কোন্দল, রেসারেসি, আত্বকলহে জর্জরীত নেতাকর্মীদের কোন্দল কলহ মিটিয়ে একমঞ্চে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ অবদান ইতিমধ্যে খুলনায় ভুমিধ্বস বিজয় এনে দিয়েছে, গাজীপুরেও দলীয় প্রার্থির বিজয় অর্জন সম্ভব হবে, দলীয় নীতিনির্ধারক পয্যায় ইতিমধ্যে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। 

   আওয়ামীলীগ দীর্ঘবছরের বলয় ভেঙ্গে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। অতীতের অভ্যস্ততাহেতু এই পরিবর্তন মেনে নিতে অনেকেরই কষ্ট হচ্ছে--ইহা একান্ত স্বাভাবিক। রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবারে নতুনত্ব সহজেই সবাই মেনে নিতে পারেনা। নতুনের সুফল যখন সবার ভাগে সমভাবে বন্টিত হয় অনায়াসে সবার নিকট গ্রহনযোগ্যতা পেতে থাকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী 'ডিজিটাল বাংলাদেশে'র কথা যখন বলেছিলেন, দেশের সবাই কি গ্রহন করেছিলেন? করেননি, বরঞ্চ দাঁত বের করে কটুক্তি করেছিলেন। সুফল যখন ঘরে ঘরে পৌছা শুরু হয়েছে, এখন আর টাকা খরছ করলেও কেউ দাঁত দেখাবেনা।

      তদ্রুপ, প্রথম "বলয়" ভাঙ্গা সাধারন সম্পাদকের সকল মন্তব্যই অসহ্য লাগবে-সময়ে তাঁর সুফল অবশ্যই ঘরে ঘরে পৌছে গেলে, সেই মুখেই পূণ:রায় মধুর ফোয়ারা বের হবে। হয়ত বা তিনি হবেন আর কোন এক 'ওবায়দুল কাদের' এমপি।--বৃত্তের বর্ষিয়ান জননেতাদের ঘৃনার রেশ তৃনমূলে আছড়েও পড়তে পারে। নয়তো কেন এমন হবে---"যে ওবায়দুল কাদেরের  দুইবছর আগে মুখের সকল শব্দই ছিল মধুর ফোঁটা।দুইবছরের মধ্যে কি এমন বড় অপরাধ করেছেন--সেই একই মুখে সকল শব্দ "কুইনিন ট্যাবলেট" হয়ে গেল!!

     এমন কি হতে পারেনা--"ওবায়দুল কাদের এমপি বঙ্গবন্ধুকন্যা, দেশরত্ম 'শেখ হাসিনা'র দীর্ঘ যুগের লালিত ইচ্ছা 'বলয়ে'র দেয়াল ভাঙ্গার হাতের 'শাবল মাত্র'? বৃত্ত তো একবার ভেঙ্গেছে-এতেই দলের শত বছর আয়ু বাড়িয়ে নিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এতেই খুশী, এতেই সুখ জনাব ওবাদুল কাদের এমপি সাহেবের ন্যায় লক্ষ লক্ষ মুজিবাদর্শে বিশ্বাসী নেতাকর্মী।



মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন