"চল যাই যুদ্ধে--মাদকের বিরুদ্ধে" বিষয়ভিত্তিক শ্লোগানের মধ্যে সর্বমহলে জনপ্রিয় এবং সময়োপযোগী শ্লোগান।
   
   
     মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত কয়েকদিন যাবৎ দেশব্যাপী পরিচালিত হচ্ছে আইনশৃংখলা বাহিনী কতৃক 'মাদক বিরোধী' সর্বাত্মক সাড়াষী অভিযান। অভিযানে অদ্য ২৪/০৫/২০১৮ইং পয্যন্ত দেশব্যাপী ৪২ জন মাদক বিক্রেতা'র আইনশৃংখলা বাহিনী'র সঙ্গে 'বন্দুক যুদ্ধে' প্রানহানী ঘটেছে।পত্র পত্রিকা সহ বিভিন্ন মিডিয়া এ সংক্রান্ত খবরা খবর গুরুত্ব সহকারে পরিবেশন করছে। বিশেষ করে বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে সবচেয়ে শক্তিশালী সামাজিক মাধ্যম ফেইছবুক সহ অন্যান্ন মাধ্যম সমূহে ''মাদকের ভয়াবহতা, ব্যাবহারের নেতিবাচক দিক ব্যাপকভাবে প্রচার পাচ্ছে। সমসাময়িককালে সরকারের আর কোন জনসম্পৃত্ত পদক্ষেপ, এতবেশী জনপ্রিয়তা বা আলোচিত হতে দেখা যায়নি।

     সন্ত্রাসী, মাস্তান, চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারীদের দৌরাত্ব মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে সমাজিক অস্থিরতা দেখা দেয়ার উপক্রম হলে, আইনশৃংখলা বাহিনী সময় সময় কথিত বন্দুক যুদ্ধের নাটক অনুষ্ঠানের রীতি অলিখিতভাবে বেশ কিছুকাল আগে থেকে ভিত্তি পেয়েছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় এইরুপ বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড সর্বপ্রথম ১৯৯১ ইং সালে বাংলাদেশের জনগন অবলোকন করেছিল। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের পর অনুষ্ঠিত 'জাতীয় সংসদ' নির্বাচনে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সংসদের সংখ্যাগরিষ্ট আসনে জয়ী হয়।বিএনপির নেতৃত্বে বেগম খালেদা জিয়া সরকার গঠনের পর রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় বিচার বর্হিভূত অমানবিক হত্যাযজ্ঞ সর্বপ্রথম প্রচলন করে। এর পুর্বেও অবশ্য হত্যা, গুম, খুন ছিল, তবে তা রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা পেয়েছিল কি না--'তা জানা যায়না'।

    বেগম জিয়া বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী'র শপথ গ্রহন করার পর 'জাতীয় ও আন্তজাতিক' রীতিনীতির কোনপ্রকার তোয়াক্কা না করে দেশের সার্বিক শান্তিপূর্ণ অবস্থায় বিচার বর্হিভূত হত্যা অলিখিত অনুমোদন পায়। রীতি অনুযায়ী কোনপ্রকার আগাম ঘোষনা বা রাষ্ট্রীয় জরুরী অবস্থা ঘোষনা ব্যাতিরেকে তিনি দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মোতায়েন করেন। চলমান সংসদ বা রাষ্ট্রপতির পুর্বানুমতি ব্যাতিরেকে, যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান নাথাকা সত্বেও সম্পুর্ণ বে-আইনীভাবে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী'র ক্ষমতাবলে, একক সিদ্ধান্তে দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মোতায়েন করার হুকুম জারী করেন। সরকারের প্রধান নির্বাহীর হুকুমে সেনাবাহিনী বে-আইনী অস্ত্র উদ্ধারের নামে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপর সর্বপ্রথম তথাকথিত 'হার্ট এটাকে' মৃত্যুর  অভিনব এক 'আওয়ামী নিধন' অভিযান পরিচালনা করেন। শেষতক সংসদের বৃহৎ বিরুধী দল আওয়ামীলীগ এবং  দেশী-বিদেশী মানবতাবাদী সংগঠন সমূহের সম্মিলীত প্রতিবাদের মূখে অভিযান বন্ধ এবং সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফেরৎ নিয়েছেন সত্য। ততদিনে ৩০হাজারের অধিক আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী'র জীবন কেড়ে নিয়েছিলেন।তম্মধ্যে অনেকের লাশ আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংখ্যাগরিষ্টতার জোরে সংসদে ইমডেমনিটি আইন পাশ করে উক্ত হত্যাযজ্ঞের দায় থেকে সেনাবাহিনীকে মুক্তি দিয়েছিল তখনকার ক্ষমতাসীন সরকার।  বিভিষীকাময় সেই দিনগুলী'র স্মৃতি আজও হত্যাযজ্ঞের শিকার প্রতিটি পরিবার'কে তাড়িয়ে বেড়ায়।

    সেই যে শুরু আজব্দি সময় সময় বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড থেমে থেমে স্বল্প পরিসরে,কখনও বা বৃহৎকারে চলছে।পরিচালিত হত্যাকান্ডগুলী কখনও কখনও অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে, কখনও কখনও  চাঁদাবাজ, মাস্তান, চিনতাইকারী'র বিরুদ্ধে অঘোষিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। জাতীয় ও আন্তজাতিকভাবে বিভিন্ন সংগঠন বিচার বর্হিভূত এইরুপ হত্যাকান্ডের নিয়মিত কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, হচ্ছে। বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন সমূহ বিভিন্ন সময়ে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড সমূহের কঠোর সমালোচনা করে বিবৃতি দিচ্ছে।একই সংগঠন ক্ষমতায় গেলে আবার ভুলেও যাচ্ছে। চিরাচরিত নিয়মে আবার অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দল অতীত ভুলে প্রতিবাদ করছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে--'স্বল্প পরিসরে হোক বা বৃহৎকারে ঘোষনা করে'ই অভিযান পরিচালিত হোক--প্রায় অভিযান বাংলাদেশের জনগন কতৃক নন্দিত, নিন্দিত হয়েছে, আগামীতেও হয়তো বা হবে।

  কিন্তু সরকারের এবারকার মাদকের বিরুদ্ধে ঘোষিত সাড়াষি অভিযানের বিষয়টির প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। আইনশৃংখলা বাহিনী'র সাড়াষি অভিযানের ক্ষেত্রেও বিষয়টি কিছুটা নতুনত্বের দাবীদার। সার্বিক গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারের একটি অধিদপ্তর প্রায় ১২০০ জনবল নিয়ে দেশব্যাপী সার্বক্ষনিক মাদক বিরোধী অভিযানে লিপ্ত রয়েছে। তদুপোরী সকল আইন-শৃংখলা বাহিনী'র নিয়মিত তদারকিতে বিষয়টি'র গুরুত্ব সকল বাহিনীর নিকট সরকারী নির্দেশে অত্যাধিক গুরুত্ববহ। পুলিশ বাহিনী, কোষ্ট গার্ড, বিজিপি, র্যাবের অভিযানে নিয়মিত মাদক দ্রব্য উদ্ধার হচ্ছে, আটক ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে যথারীতি মামলা হচ্ছে। এক হিসেবে দেখা গেছে--শুধুমাত্র র্যাবের করা মাদক সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা গত ১০ বছরে ৭০ হাজারের অধিক। এতদসত্বেও বর্তমান সময়ে এসে 'মরণ নেশা মাদক' বিশেষ করে ইয়াবা'র আগ্রাসন বাংলাদেশের সমাজে মহামারী আকার ধারন করেছে। সরকারের সাড়াষি অভিযানের নির্বাচিত 'মাদক নির্মুলের বিষয়টি পরিবারকেন্দ্রিক হলেও জনসম্পৃত্ততা এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্টতার সুদুরপ্রসারী গুরুত্ব রয়েছে।  যদিও  রাষ্ট্রীয় ক্ষতির ক্ষেত্রে সূদুরপ্রসারী হলেও সর্বজনবিদীত নয় এবং কি বিষয়টি রাষ্ট্রীয় ক্ষতি সর্বজন অ-বোধগম্য, জটিল। কিন্তু পারিবারিক অশান্তি এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারে'ই হালনাগাদ এবং সর্বজনবিদীত।

       গত ৩রা মে ২০১৮ ইং র্য্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তৃতায় মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর নির্দেশ প্রদান করেন। মাদকের ভয়াবহতার উল্লেখ করে তিনি বলেন-- "মাদক সেবীরা তাঁদের পরিবারের বিপয্যয় ডেকে আনছে। ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া ছেড়ে মাদকাসক্ত হয়ে প্রজম্ম ধ্বংসের ধারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে।জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যেভাবে সারা জাতী ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, ঠিক তেমনি মাদকের বিরুদ্ধেও সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্যে তিনি সকলের প্রতি আব্বান জানান।

    মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর সকলপ্রকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১৪ই মে আইনশৃংখলা বাহিনী মাঠে নেমে পড়ে। গত ১৮/৫/২০১৮ ইং তারিখ রোববার  র্যাবের উদ্যোগে "চল যাই যুদ্ধে--মাদকের বিরুদ্ধে" শিরোনাম সংবলীত 'লিপলেট' বিলির মাধ্যমে মাদকে'র বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং তাঁদের সাড়াষি অভিযান শুরু করে।এর পুর্বে শুধুমাত্র সরকারের বিশেষায়ীত বাহিনী র্যাব ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার মাদক বিক্রেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে জেলে প্রেরণ করেছেন বলে র্যাব প্রধান জানিয়েছেন। গত ১৮/০৫/২০১৮ ইং থেকে অদ্য ২৩/০৫/২০১৮ ইং শেষ খবর পাওয়া পয্যন্ত সর্বমোট ৪২জন মাদক বিক্রেতা আইনশৃংখলা বাহিনী'র সাড়াষি অভিযানকালে এনকাউন্টারে নিহত এবং ৬জন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। র্যাব প্রধান বেনজির আহাম্মদ একটি বাস্তব সত্য উপলব্দি করতে পেরেছেন, একারনে তিনি বর্তমান সময়ে সর্বসাধারনের শ্রদ্ধার শিখরে অবস্থান করছেন--'আমি মনে করি।' তিনি বলেন--"মাদক সকল প্রকার অপরাধের মা"। তিনি দেশবাসীকে মাদক নির্মূলে চলমান অভিযান'কে সর্বাত্মক সহযোগীতা প্রদান করার আহব্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি জনগনের সার্বিক সহযোগীতায় সমাজ থেকে মাদক নির্মূলের প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।

      মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব জামাল উদ্দিন আহাম্মদ জানান দেশের ৭০লক্ষ লোক বর্তমানে মাদকাসক্ত। ভুক্তভোগী সহ বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার মতে--'এই সংখ্যা এইমহুর্তে কোটি ছাড়িয়ে গেছে। সম্প্রতি  মিয়ানমার--বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পয্যায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ৪৯টি ইয়াবা কারখানা চিহ্নিত করে একটি তালিকা মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। অতিসত্বর কারখানাগুলী বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যেও মিয়ানমার সরকারের প্রতি বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয় পয্যায় আহব্বান জানিয়েছে।

   একটি বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে-'আইনশৃংখলা বাহিনী সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য যাছাই বাছাই পুর্বক ৫০০ মাদক ব্যাবসায়ী'র তালিকা হালনাগাদ করেছে। উক্ত তালিকা সামনে রেখে আইনশৃংখলা বাহিনী তাঁদের সর্বাত্মক অভিযান পরিচালনা করছে। তালিকায় বর্তমান এবং সাবেক এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান সহ আওয়ামীলীগ, বিএনপি'র একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতাও রয়েছে।

    মোটকথা হচ্ছে--'সরকার এমন এক সময় মাদকের বিরুদ্ধে সাড়াষি অভিযানের নির্দেশ দিয়েছে, যখন সারা জাতী মাদকের ভয়াবহতায় আচ্ছন্ন, সর্বস্তরের জনগন উদ্ভিগ্ন হয়ে পড়েছে'। মাদকের সহজলভ্যতা বিশেষ করে ইয়াবা'র সহজলভ্যতা ও আগ্রাসনে ছাত্র/ছাত্রী, যুবক/যুবতী তাঁদের সৃজনশীল শক্তি হারিয়ে ইতিমধ্যে ঝিঁমিয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিটি পরিবারের একাধিক ছেলেমেয়ে কমবেশী 'ইয়াবা' নামক মাদকাসক্তে আসক্ত হয়ে পারিবারীক  সুখ-শান্তি বিনষ্টের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতীতে কখনও আর কোন মাদকদ্রব্য গ্রামগঞ্জ, পাড়া মহল্লায় ব্যাপক আকারে ছড়াতে দেখা যায়নি। কোন মাদকই সর্বস্তরে এতবেশী জনগুষ্যিকে আকৃষ্ট করতে পারেনি, জনপ্রিয়তাও অর্জন করতে পারেনি। মদ, গাঁজা, কোকেন, হিরোইন হাল আমলের ফেন্সিডিল সীমিত ব্যবহারকারী, বিপনণকারীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু 'ইয়াবা নামক মরণ নেশা'টি বিগত ৫/৬ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সর্বত্র সর্বজন ব্যাবহায্য অকল্পনীয় আবেদনময়ী মরণ নেশায় রুপ নিয়েছে।

     এক ইয়াবাসক্তের ভাষ্যমতে--'ইয়াবাসক্ত বলতে আসলে কিছুনা, এতে যা আছে মুলত: সম্পূর্ণ মায়াসক্ত'। কেউ হয়তো শৌখিনতাবসত: এক দিয়ে শুরু করে, প্রতিনিয়ত: চাহিদা বেড়ে পরবর্তিতে মায়াসক্ত অতৃপ্তকারে পৌঁছায়। অতৃপ্তকারে পৌঁছাতে কিন্তু খুব বেশীদিন সময়ের প্রয়োজন হয়না, প্রথম প্রথম নগদ  টকার জোগান থাকলে'ই হল। আর এই নেশার মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে, কেউ সম্পূর্ণ মায়া ত্যাগ করতে পেরেছে, এমন লোক খুঁজে পাওয়া যায়না। অন্যদিকে দেখা যায়--'যে আজ 'ইয়াবা' ক্রেতা, আগামীকাল সে-ব্যাক্তি'ই বিক্রেতা।বিস্ময়কর ব্যাপারটি হচ্ছে উঠতি বয়সের ছেলেরা যতনা ইয়াবার প্রতি আসক্ত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা তাঁর দ্বিগুন বেশী আসক্ত হয়ে পড়েছে।

   একারনে'ই বলা যায়--"ইয়াবায় নেশা বা অভ্যেস বলতে কিছুই নেই, কিন্তু মায়া'র জাল বিস্তৃত আছে"। এই মায়াজাল প্রতিনিয়ত  ব্যাক্তি'কে টানতে  থাকে। ফলে এক সময় এসে পরিবার পরিজন, নিকটতম বন্ধু বান্ধব বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যাক্তি একাকিত্বে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পরিবার, পরিজন তখন তাঁর নিকট হয়ে উঠে বিরক্তিকর এক একটা আপদ। সহসাই সংসারে নেমে আসে বিপয্যয়। 'মায়ার' টাকা জোগান দিতে দিতে এক সময়ে এসে ব্যাক্তির পরিবার সকল সম্পদ হারিয়ে পথের ভিখারীতে পরিণত হয়।তখন আর কোন সমাজবিরুধী কাজই তাঁর ভিতরে অপরাধবোধ জাগ্রত করেনা।  মান সম্মান, জেল জরিমানা--তাঁর নিকট কোনপ্রকার অপমানবোধ জাগায় না। বোধশক্তি হারিয়ে সে হয়ে উঠে সমাজে, পরিবারে অপাংক্তেয়, অর্ধপাগল। উল্লেখিত ভাষ্যটি অনুধাবন করা গেলে বুঝতে কষ্ট হয়না--"মরণ নেশাটি ব্যাক্তি'র  জ্যান্ত মৃত্যুর কারন শুধু নয়, সংশ্লিষ্ট পরিবারেরও অধ:পতনের মুল কারন ডেকে আনে।

  আপনার সঙ্গি ইয়াবাসক্ত কিনা জানার কিছু সহজ উপায় আছে।প্রথমত তাঁর খাওয়া দাওয়ার রুচিবোধ কমে যাবে।ঘুম একেবারেই কমে যাবে,কাজ কর্মের প্রতি আগ্রহ কমে যাবে।মেজাজ সব সময় খিট খিটে থাকবে, প্রয়োজনীয় আলোচনায় অন্যমনস্ক থাকবে।স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়বে, অযথা কথা বলবে। মোটামোটি এই বিষয়গুলীই যথেষ্ট আপনার সঙ্গি ইয়াবাসক্ত কিনা আপনাকে বুঝতে। অন্যদিকে--উল্লেখিত বিষয়াবলীর বিপরীত আচরণ দেখা গেলে বুঝতে হবে আপনার সঙ্গি ফেন্সিডিলে আসক্ত হয়ে পড়েছে।অর্থাৎ পূর্বের স্বাভাবীক আচরণে পার্থক্য দেখা গেলেই আপনাকে তাঁর প্রতি লক্ষ রাখতে হবে--সে কার সঙ্গে মিশে,কোথায় যায়।

    'ইয়াবা' নামক মরণ নেশা মাদকটি'র উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশ সংলগ্ন মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা। মিয়ানমারের গভী'র জঙ্গলে গড়ে উঠা প্রায় ৫০ এর অধিক অবৈধ ইয়াবা কারখানা ইতিমধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে। উক্ত কারখানা সমূহে উৎপাদিত 'ইয়াবার চালান' টেকনাফের নাফ নদী পার হয়ে অনায়াসে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে আইনশৃংখলা বাহিনী সুত্রে জানা গেছে। মাদকটি বহন, বাজারজাতকরণ, ভোক্তা পায্যায় পৌঁছানো সহজ বিধায় স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের সর্বত্র এই 'মরণ নেশা' ছড়িয়ে পড়েছে।

   লক্ষনীয় বিষয়টি হচ্ছে--'আইনশৃংখলা বাহিনী'র যে কোন সমাজ বিরুধী ইস্যুতে চালানো অভিযান সাধারনে কমবেশী আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে, নিন্দিত--নন্দিত হয়েছে। ইতিপূর্বে সরকারের জঙ্গিবিরুধী অভিযান আপামর জনগনের বিপুল সমর্থন পেলেও তথাকথিত সুশীল সমাজে কমবেশী বিতর্কের সৃষ্ট্রি হতে দেখা গেছে।কিন্তু বর্তমান সময়ে সরকারের নির্দেশে আইনশৃংখলা বাহিনীর চলমান সর্বাত্মক 'মাদক বিরুধী সাড়াষি' অভি্যান, গুটি কয়েক 'সুশীল তথাকথিত ব্যাক্তি বিশেষের' সমালোচনা ব্যাতিরেকে আপামর জনগনের অকুন্ঠ সমর্থন, সর্বাত্মক সহযোগীতা পাচ্ছে। বন্দুক যুদ্ধে এক একজন মাদক সম্রাটের প্রানহানী ঘটছে--সামাজিক মাধ্যমে নারী পূরুষ সকলে'ই উল্লাস প্রকাশ করছে। সংশ্লিষ্ট আইনশৃংলা বাহিনী'কে ধন্যবাদ জানাচ্ছে। ভাবখানা যেন এমন--'হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে হলেও জনগন মাদকের ভয়াবহতা থেকে আপাত:দৃষ্টে মুক্তি চায়।এমনটি আর কখনও সরকারের কোন সমাজবিরুধী কর্মকান্ড নিস্তেজ করার অভিযানে চোখে পড়েনি।

   ইহা সত্য যে--'আইনশৃংখলা বাহিনী কর্তৃক বিচার বর্হিভূত হত্যা সভ্য সমাজে গ্রহনযোগ্য নয়, মানবতা বিরোধী অপরাধও বটে'। কিন্তু মাদকের ভয়াবহতার বিচারে বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবার কমবেশী উদ্ভিগ্ন বিধায় উক্ত বে-আইনী বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ডকেও স্বাগত: জানাতে বাংলাদেশের জনগন কুণ্ঠাবোধ করছেনা। ইতিপূর্বে দেশবিরোধী সরকারের আর কোন বিষয়ে পরিচালিত অভিযান জনগন কতৃক এত বেশী অভিনন্দিত হতে দেখা যায়নি। এই থেকেই প্রমানীত হয়--মাদক বিরুধী চলমান সাড়াষি অভিযান সরকারের সময়োপযোগী একটি জনপ্রিয় অভিযান। 'মাদক' নির্মূলে সরকারের জনসচেতনতা সংক্রান্ত নির্বাচিত শ্লোগান--"চল যাই যুদ্ধে--মাদকের বিরুদ্ধে" এযাবৎকাল সরকারের নির্ধারীত বিষয়ভিত্তিক শ্লোগানের মধ্যে "অন্যতম, জনপ্রিয় এবং শ্রেষ্ঠ শ্লোগান" হিসেবে সর্বস্তরের জনগনের মধ্যে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে এবং হচ্ছে।
 
 
 
   

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন