প্রকৃতি পলাশী'র 'মীর জাফরে'র চেয়ে ধানমন্ডির মীর জাফর 'জিয়া' এবং তাঁর পরিবারে'র পরিণতি আরো ভয়াবহ করে তুলছে।
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে দুটি ঘটনা বাংলাদেশ, বাঙ্গালী জাতীর অস্তিত্ব পৃথিবীতে যতদিন থাকবে ততদিন ঘৃনাভরে উচ্চারীত হবে। প্রথমটি বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব সিরাজদ্দৌল্লাহ ক্ষমতাচ্যুতি এবং নির্মম হত্যাকান্ড। দ্বিতীয়টি- বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, বাঙ্গালী জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সরকারের ক্ষমতাচ্যুতি এবং স্বপরিবারে নির্মম হত্যাযজ্ঞ। প্রথমটির প্রধান নায়ক নবাব সিরাজের ঘনিষ্ট আত্মীয় এবং প্রধান সেনাপতি মীর জাফর আলী খাঁন। দ্বিতীয়টির প্রধান চরিত্রে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর এবং তাঁর সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী "খোন্দকার মোস্তাক আহম্মদ।
১৯৭৫ ইং সালের ১৫ আগষ্ট কতিপয় বিপদগামী সেনাকর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়ী আক্রমন করে তাঁকে সহ স্বপরিবারে হত্যা করে।প্রথমে খোন্দকার মোস্তাক আহম্মদ ক্ষমতা দখল করার কারনে বাংলাদেশের জনগনের সকল ঘৃনার ঝড় তাঁর উপর প্রবাহীত হয়। মোস্তাক ষড়যন্ত্রের প্রকাশ্য আধাঁর হলেও নেপৈথ্যে ছিল বাংলার আর এক নব্য মীর জাফর।তিনি আর কেউ নন--"জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু যাকে বউ ফেরৎ দিয়েছিলেন--সেই বেঈমান "মেজর জিয়াউর রহমান"।
সেদিন কে জানতো এই হত্যাকান্ডের মাষ্টার মাইন্ড খুনী ছিল মেজর জিয়াউর রহমান?হত্যা পরবর্তি ঘটনাপ্রবাহ এবং বিশ্বব্যাপী সমাদৃত "উইকিলিকস" এর "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের" গোপন দলিল প্রকাশিত হলে জানা যায় 'মেজর জিয়াউর রহমান'ই ছিল 'বঙ্গবন্ধু' হত্যাযজ্ঞের নৈপথ্য নায়ক এবং প্রধান বেনিফিসিয়ারী। মেজর জিয়া ক্ষমতা গ্রহন করে তাঁর সাথে ষড়যন্ত্রে জড়িত একে একে সবাইকে হত্যা করে অথবা বিদেশে চাকুরি দিয়ে পাঠিয়ে দিয়ে তাঁর ক্ষমতা নি:স্কটক করে নিয়েছিলেন। তিনি প্রথমেই উক্ত সেনা অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক 'থিম ট্যাংক কর্ণেল তাহের"কে প্রহসনের বিচারে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে হত্যা করেন। পরবর্তিতে সাজানো সেনা অভ্যুত্থানের অজুহাতে একে একে সকল সেনা অফিসারকে হত্যা করে, তাঁর বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার প্রমান মূছে দিতে চেয়েছিলেন। বিধির বিধান, না যায় খন্ডন--''বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রত্যক্ষ খুনী "কর্ণেল ফারুক" পালিয়ে থাকা অবস্থায়, বিবিসি'র সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে "মেজর জিয়া"র ভুমিকা এবং নেপৈথ্যে জড়িত থাকার বিষয়টি সবিস্তারে বর্ণনা প্রদান করে ঐতিহাসিক সত্যটি প্রকাশ করে।
তাইতো দেখা যায়--নবাব সিরাজের হত্যাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, হত্যা পরবর্তি উপকারীভোগীদের প্রকৃতি যে নিয়মে বিচারের বিধান করেছিল; ঠিক একই ভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী, ষড়যন্ত্রকারী উপকারভোগীদেরও প্রায় একই বিধানে বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছেন। মেজর জিয়া এবং অন্যান্যদের তুলনামূলক আলোচনা করা গেলে স্পষ্ট ভাবে তাঁরই চিত্র ফুটে উঠে।
মীর জাফর আলী খাঁন:--
পলাশীর যুদ্ধের পর প্রচুর ঘুষের বিনিময়ে রবার্ট ক্লাইভের হাত ধরে মসনদে আরোহণ করেন নবাব মীর জাফর আলী খান। তবে তাকে পুতুল বানিয়ে মূল ক্ষমতা পরিচালনা করেন ইংরেজরা। একপর্যায়ে বনিবনা না হওয়ায় মীর জাফরকে সরিয়ে তারই জামাতা মীর কাশেমকে ক্ষমতায় বসানো হয়। মীর কাশেমের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হলে ইংরেজরা মীর কাশেমকে সরিয়ে দেন। এ সময় বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর নির্লজ্জের মতো আবারও ইংরেজদের আজ্ঞাবহ নবাব হিসেবে মসনদে বসেন। নামে নবাব থাকলেও মূলত মীর জাফরকে ইংরেজদের অবজ্ঞা আর দেশীয়দের ঘৃণার পাত্র হিসেবেই বাকি জীবন কাটাতে হয়। মীর জাফরের প্রাসাদে ঢোকার প্রধান ফটকটি ইতিহাসে, সরকারি দলিলে এবং ট্যুরিস্ট গাইড বইয়ে 'নেমক হারাম দেউর' বা 'বিশ্বাসঘাতকের গেট' নামে পরিচিত পেয়েছে।
মীরজাফরের পতন হয় বড় মর্মান্তিক অবস্থায়। ১৭ই জানুয়ারী ১৭৬৫ ইং সালে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয় মীরজাফর। তার শরীরে অসংখ্য ঘা ও ফোঁড়া হয়ে দূষিত রক্ত ও পুঁজ পড়ে দুর্গন্ধ বের হয়। এ অবস্থায় পরিবারের লোকেরা তাকে লোকালয়হীন জঙ্গলে রেখে আসে। রাজা নন্দকুমার কিরিটেশ্বরী দেবীর পা ধোয়া পানি ওষুধ হিসেবে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে দেয়। এভাবে ঈমান পর্যন্ত নষ্ট করে সে মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশসহ এ এলাকার মানুষ বেঈমান বলতে মীরজাফর শব্দ যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে আসছে।
মীর জাফর পুত্র মীরণ সহ অন্যান্ন সহযোগীগন:---
মীরজাফরপুত্র মীরন সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা থেকে শুরু করে বহু অপকর্মের নায়ক। ঐতিহাসিকরা বলেন, সে বজ্রাঘাতে মৃত্যুবরণ করেছে, আবার কেউ কেউ বলেন, জনৈক ইংরেজ সেনাপতি তার বাড়াবাড়ি দেখে তাকে গুলি করে হত্যা করে। সিরাজউদ্দৌলার খালা ঘসেটি বেগম যিনি রক্ত সম্পর্কীয় হওয়া সত্ত্বেও ষড়যন্ত্রকারীদের অন্যতম ছিলেন। তাকে মীরন বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করে।
মোহাম্মদী বেগ ছিল আমেনা-জয়েনউদ্দীনের পালিত পুত্র। সিরাজের মা-বাবা সিরাজ জন্মের আগে তাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে লালন-পালন করেন। তার বিয়েতে মুর্শিদাবাদ রাজ প্রাসাদে ধুমধামের বন্যা বয়ে যায়। সেই মোহাম্মদী বেগ মাত্র ১০ হাজার টাকার লোভে কারাগারে সিরাজকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে সে পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে পানিতে ডুবে মারা যায়।
মীরজাফরের জামাতা মীরকাশিম সিরাজকে ভগবান গোলা থেকে ধরিয়ে দেয়। সিরাজ-পরবর্তী স্বাধীন নবাব তাকে বলা হয়। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ইংরেজদের চরিত্র। তাকে ইংরেজরা ক্ষমতাচ্যুত করার পর পথে পথে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। একদিন সকাল বেলায় তার লাশ মুঙ্গের দুর্গের সামনে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
বায়দুর্লভ ও জগৎ শেঠকে ক্ষমতায় থাকাকালে মীরকাশিম দুর্গশিখর থেকে গঙ্গায় নিক্ষেপ করেন। ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের বেঈমানির জন্য। রাজা রাজবল্লভকে গলায় বালুর বস্তা বেঁধে গঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়া হয় এবং ওই অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে। ইয়ার লতিফ খাঁ নিরুদ্দেশ হয়। উমীচাঁদ ২০ লাখ টাকা না পেয়ে শোকে পাগল হয়ে যায়। পরে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
লর্ড ক্লাইভ:--
ভারতীয় উপমহাদেশ ইংরেজ বেনীয়াদের শাসন শোষন কায়েমের মূল নাটের গুরু ছিলেন লর্ড ক্লাইভ।তিনি মাত্র ৮০ টাকা বার্ষিক বেতন নিয়ে কেরানি ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানিতে ১৭৪৪ সালে মাদ্রাজে খ্যাতিহীন, বিত্তহীন, ক্লাইভ বিলাত থেকে আসেন।
১৭৬০ সালে সেনানায়ক কর্নেল ক্লাইভ যখন ভারত ছেড়ে স্বদেশে যান তখন তাঁর হাতে বিপুল অর্থ সংরক্ষিত ছিল।তাঁর জাহাজ যখন পোর্টস মাউথ বন্দরে এসে থামে, তখন ইংল্যান্ডের ম্যানুয়েল রেজিস্টারে তার সম্পর্কে মন্তব্য ছিল ‘এই কর্নেলের কাছে নগদ টাকা আছে প্রায় দুই কোটি টাকা। তার স্ত্রীর গয়নার বাক্সে মণিমুক্তা, হীরা ও জহরত আছে দুই লাখ টাকার। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে তার চেয়ে অধিকতর অর্থ আর কারো নেই।
ক্লাইভের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের কমন্স সভায় জোরালো দাবী উত্থাপিত হয় তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সমূহের বিচারের।দাবী সমূহের মধ্যে সম্পদ আহরণ ছাড়াও ক্লাইভ সিরাজের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের জন্য মীরজাফর ও মীরনকে প্ররোচিত করেছে। সিরাজের মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞায় সই করতে মীরজাফরকেও প্ররোচিত করে। মোহাম্মদী বেগকে হত্যার জন্য সে মীরনকে টাকা দিতে বলেছে।
ক্লাইভ বাংলা লুণ্ঠনের দায়ে বিলাতে দুর্নীতি মামলায় সাত বছর জেল খেটে কপর্দকহীন হয়ে পড়ে। পরে এ অবস্থায় টেমস নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। ডা: হল ওয়েলের স্ত্রী তাকে রেখে অন্য যুবকের সাথে চলে গেলে সে আত্মহত্যা করে। ঘৃণ্য মীর জাফরের কুষ্ঠরোগে মৃত্যু হয়। ঘষেটি বেগমের মৃত্যু হয় বুড়িগঙ্গায় ডুবে। দেশমাতৃকার সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকারী বেঈমানদের এভাবেই অপঘাতে মৃত্যু হয়েছিল।
খোন্দকার মোস্তাক আহম্মদ:--
সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হবার পর মোশতাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। এই পদে তিনি মাত্র ৮৩ দিন ছিলেন। রাষ্ট্রপতির দ্বায়িত্ব নেবার পর তিনি ইনডেমিনিটি বিল পাশ করেন। তিনি "জয় বাংলা" স্লোগান পরিবর্তন করে এর স্থলে "বাংলাদেশ জিন্দাবাদ" স্লোগান চালু করেন। এই সময় তিনি "বাংলাদেশ বেতার" এই নাম পরিবর্তন করে "রেডিও বাংলাদেশ" করেন। তার শাসনামলে চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মোঃ মনসুর আলী ও এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (৩ নভেম্বর) হত্যা করা হয়।মাত্র ২৩ দিন সরকার পরিচালনার পর মোশতাক আহমেদ ১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর সেনাবিদ্রোহের দ্বারা অপসারিত হন। একই বছর সামরিক শাসককে অপসারণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ২ টি দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয় এবং আদালত তাকে ৫ বছরের শাস্তি প্রদান করে।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করলে প্রথমে বন্দী থাকলেও পরে ১৯৭৮ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্ত হয়ে ডেমোক্রেটিক লীগ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গড়তে গিয়ে ব্যর্থ হন মোশতাক। পরবর্তী ১৮ বছর রোগ-শোক আর একাকিত্বে দিন কাটাতে হয় তাকে। ১৯৯৬ সালের ৫ মার্চ ৭৮ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন খন্দকার মোশতাক আহমদ।
বিপদগামী সেনাসদস্যগন:--
১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। ২৮ জুন বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত ৬ জনসহ ৯ কূটনীতিককে (জিয়া, এরশাদ ও খালেদা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সেসব খুনিদের কূটনীতিকের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন) দেশে তলব করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১৩ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল (অব.) ফারুক, শাহরিয়ার ও খায়রুজ্জামানকে গ্রেফতার এবং ৩১ আগস্ট ধানমণ্ডি থানায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মামলা দায়ের করা হয়। পরে ২ অক্টোবর ধানমণ্ডি থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। আর ওই বছর ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি বাতিল বিল পাস হয়। এই বিলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করলে ১৯৯৭ সালের ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট ইনডেমনিটি বাতিল আইনকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। দীর্ঘ একুশ বছর পর বাঙালি জাতি একটি বর্বর অধ্যাদেশের কলঙ্ক থেকে মুক্ত হয়।
তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ২১ এপ্রিল নিম্ন আদালতে প্রচলিত আইনে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার। দীর্ঘ শুনানি, জেরা ও উভয় পক্ষের আইনজীবীদের সওয়াল জবাব শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বিচারিক আদালত বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মামলায় ১৫ জন অপরাধীকে প্রকাশ্যে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করে।
মেজর জিয়াউর রহমান:--
১৯৮১ ইং সালের ৩০ মে চট্রগ্রাম সার্কিট হাউজে আরো কতিপয় সেনাকর্মকর্তার সাথে মেজর জিয়াকেও মেজর মঞ্জুরের নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নির্মম ভাবে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়।এর পর মঞ্জুরের নেতৃত্বে তিনটি লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ফটিক ছড়ির দিকে।চট্রগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ব বিদ্যালয় সংলগ্ন কাপ্তাই সড়কের পাশে রাঙ্গুনিয়ার নির্জন একটি স্থানে ৩০শে মে সকাল ১১টায় জিয়াসহ আরো তিনজনকে একই গর্তে মাটি চাপা দেয়া হয়।
পহেলা জুন কিছু সামরিক ও বেসামরিক লোকজনের যৌথ অভিযানে জিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়।প্রত্যক্ষদর্শির জবানীতে জানা যায়, তাঁরা যা উদ্ধার করেছিল তা লাশ ছিলনা, উহা ছিল মাংসহীন কিছু হাঁড়গুড়। একদিনের ব্যাবধানে কিভাবে লাশগুলী মাংসহীন হল তাঁর রহস্য আজও উৎঘাটন হয়নি। শুধুমাত্র আগুনে পোড়ালেই লাশগুলী এমন হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাছাড়া ঐ গর্তে জিয়ার লাশ ছিল কিনা, তাও রহস্য রয়ে গেছে। জিয়ার লাশ চট্রগ্রাম এবং ঢাকায় কাউকেই দেখতে দেয়া হয়নি এবং কি ডিএনএ টেস্টও করা হয়নি।যা একান্তই প্রয়োজন ছিল।
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে এখন বা আরও অনেক পরেও লাশ শনাক্ত করা সম্ভব বলে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।ইতিমধ্যে সচেতন মহল থেকে 'মেজর জিয়া'র কবর সংসদ ভবন এলাকা থেকে সরিয়ে অন্যত্র নেয়ার এবং হাড়গুড়ের ডিএনএ টেষ্টের মাধ্যমে লাশের পরিচিতি নিশ্চিত করার দাবী উঠতে শুরু করেছে।
জিয়া পত্নি বেগম খালেদা জিয়া:--
খালেদার পাঁচ মামলা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুদক। গত বছরের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এর আগে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রমনা থানায় মামলা করে দুদক। এ মামলায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনকে আসামি করে ২০১০ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
এ ছাড়া বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ঠিকাদারি কাজে ক্ষমতার অপব্যবহার ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে খালেদাসহ ১৬ জনকে আসামি করে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলা করে দুদক। ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো-সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা এবং একই বছরের ৯ ডিসেম্বর নাইকো-সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা করে দুদক। এ তিনটি মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷ ০৮/০২/২০১৮ ইং আদালত এ মামলার রায় দিলে সেফিন থেকে আজব্দি তিনি কারাগারেই রয়েছেন।পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে তাঁর প্যারালাইজড আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।এই অবস্থায় তাঁর জেলমূক্তির বিষয় তাঁর দল কায্যকর কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যত অন্ধকারের দিকেই যাচ্ছে, মনে করি।
জিয়াপুত্র আরাফাত রহমান কোকো--
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেননি। কোকোর সম্পত্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যেই "তারেক জিয়া" এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছেন। তারেক জিয়ার নির্দেশেই মালয়েশিয়ায় বসবাসরত কয়েকজন বাঙালি তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে।’ এরকম একটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করে কোকোর মৃত্যুর দুই বছর দশ মাস পর মালয়েশিয়ার একটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন জনৈক আবদুল হামিদ ওমর। তিনি মালয়েশিয়ার নাগরিক। তিনি কোকোর ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে পরিচিত।মামলায় কোকোর স্ত্রীকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন মামলার বাদী আবদুল হামিদ ওমর।
বিএনপির আয়োজিত আরাফাত রহমান কোকোর ১ম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল শেষে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরাফাত রহমানের স্মরণে ‘স্মৃতির পাতায়’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করেন।তিনি তাঁর সেদিনের আলোচনায় উল্লেখ করেন ১/১১ /২০০৬ ইং সালে'র গঠিত সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের নিপীড়নে জনাব আরাফাত রহমান কোকো ২০১৫ সালের ২৪ শে জানুয়ারী মালয়শিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন।
আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর আগে বাংলাদেশের আদালতে ৭টি মামলা চলমান ছিল।উক্ত মামলার সব কয়টি ১/১১ এর তত্বাবধায়ক সরকার কতৃক রুজু করা হয়েছিল। সাত মামলার মধ্যে একটি সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচার সংক্রান্ত। সিঙ্গাপুরে ২০ কোটি টাকার বেশি অর্থের অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ কাফরুল থানায় আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মামলাটি করে দুদক।উক্ত মামলায় ছয় বছরের সাজা বিশকোটি টাকা জরিমানা নিয়ে কোকো মৃত্যুবরণ করেছেন।পাচারকৃত অর্থের বৃহৎ অংশ বাংলাদেশ সরকার ফেরৎ আনতে সক্ষম হয়েছে।
জিয়াপুত্র তারেক রহমান:--
তারেকের ১৭ মামলা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা এবং তাতে ২২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুটি মামলা করে পুলিশ। একটি হত্যা ও আরেকটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলা। বর্তমান সরকারের আমলে এ দুটি মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমানকে আসামি করা হয়।
২০১১ সালের ৩ জুলাই সিআইডির দেওয়া সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমান ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতের নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, হারিছ চৌধুরীসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়। এঁদের নিয়ে মোট আসামির সংখ্যা ৫২। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিশেষ এজলাসে এ মামলার বিচারকাজ চলছে।
তারেক ও তাঁর ছোট ভাই আরাফাত রহমানের বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলা হয় ২০১২ সালের ২ অক্টোবর। ঋণখেলাপির অভিযোগে মামলাটি করে সোনালী ব্যাংক।সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা দেয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে এসব মামলার অনেকগুলীর কার্যক্রম স্থগিত আছে। এগুলোর মধ্যে আটটি চাঁদাবাজির মামলা-- ২০০৭ইং সালে বিভিন্ন ব্যক্তি বাদী হয়ে গুলশান, কাফরুল, শাহবাগ ও ধানমন্ডি থানায় মামলাগুলো করেন।
এ ছাড়া কাফরুল থানার পুলিশ বাদী হয়ে জরুরি ক্ষমতা আইনে একটি, দুদক বাদী হয়ে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কাফরুল থানায় একটি (স্ত্রী জোবাইদাও আসামি), একই বছর বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তা সাব্বির হত্যা মামলা ভিন্ন খাতে নিতে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দুদক আরেকটি মামলা করে। পরের বছরের ৪ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর ফাঁকির অভিযোগে একটি মামলা করে।
২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ক্যান্টনমেন্ট থানায় তারেক রহমান ও তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক। উক্ত মামলায় গত ২১ শে জুলাই ২০১৬ ইং তারিখে সাত বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাঁকে ২০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সর্বশেষ জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলায় তাঁর মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দশ বছরের কারাদন্ড ও দুইকোটি দশলক্ষ টাকা আর্থিক জরিমানার রায় মাথায় নিয়ে তারেক লন্ডনে অবস্থান করছেন।
বিগত নয় বছর জিয়া পরিবার খাদের কিনারায় থাকাবস্থায় টেনে তোলা সম্ভব হয়নি। বরঞ্চ বিপুল সংখ্যক সমর্থক সহ প্রতিনিয়ত গর্তের অভ্যন্তরেই যেতে বাধ্য হয়েছে। সেহেতু বলা যায়- অচিরেই জিয়া পরিবারের করুণ পরিণতি মীর জাফর আলী খাঁ এর পরিণতিকেও হার মানালে আশ্চায্যের কিছুই থাকবেনা। ঘটনা প্রবাহ প্রকৃতি ধীরে ধীরে সেদিকেই টেনে নিচ্ছে। নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়--'মীর জাফর আলী মহাভারতের সবচেয়ে বড় বেঈমান যদি হয়ে থাকে-তবে 'মেজর জিয়া' স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় "মীর জাফর"।
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে দুটি ঘটনা বাংলাদেশ, বাঙ্গালী জাতীর অস্তিত্ব পৃথিবীতে যতদিন থাকবে ততদিন ঘৃনাভরে উচ্চারীত হবে। প্রথমটি বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব সিরাজদ্দৌল্লাহ ক্ষমতাচ্যুতি এবং নির্মম হত্যাকান্ড। দ্বিতীয়টি- বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, বাঙ্গালী জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সরকারের ক্ষমতাচ্যুতি এবং স্বপরিবারে নির্মম হত্যাযজ্ঞ। প্রথমটির প্রধান নায়ক নবাব সিরাজের ঘনিষ্ট আত্মীয় এবং প্রধান সেনাপতি মীর জাফর আলী খাঁন। দ্বিতীয়টির প্রধান চরিত্রে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর এবং তাঁর সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী "খোন্দকার মোস্তাক আহম্মদ।
১৯৭৫ ইং সালের ১৫ আগষ্ট কতিপয় বিপদগামী সেনাকর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়ী আক্রমন করে তাঁকে সহ স্বপরিবারে হত্যা করে।প্রথমে খোন্দকার মোস্তাক আহম্মদ ক্ষমতা দখল করার কারনে বাংলাদেশের জনগনের সকল ঘৃনার ঝড় তাঁর উপর প্রবাহীত হয়। মোস্তাক ষড়যন্ত্রের প্রকাশ্য আধাঁর হলেও নেপৈথ্যে ছিল বাংলার আর এক নব্য মীর জাফর।তিনি আর কেউ নন--"জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু যাকে বউ ফেরৎ দিয়েছিলেন--সেই বেঈমান "মেজর জিয়াউর রহমান"।
সেদিন কে জানতো এই হত্যাকান্ডের মাষ্টার মাইন্ড খুনী ছিল মেজর জিয়াউর রহমান?হত্যা পরবর্তি ঘটনাপ্রবাহ এবং বিশ্বব্যাপী সমাদৃত "উইকিলিকস" এর "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের" গোপন দলিল প্রকাশিত হলে জানা যায় 'মেজর জিয়াউর রহমান'ই ছিল 'বঙ্গবন্ধু' হত্যাযজ্ঞের নৈপথ্য নায়ক এবং প্রধান বেনিফিসিয়ারী। মেজর জিয়া ক্ষমতা গ্রহন করে তাঁর সাথে ষড়যন্ত্রে জড়িত একে একে সবাইকে হত্যা করে অথবা বিদেশে চাকুরি দিয়ে পাঠিয়ে দিয়ে তাঁর ক্ষমতা নি:স্কটক করে নিয়েছিলেন। তিনি প্রথমেই উক্ত সেনা অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক 'থিম ট্যাংক কর্ণেল তাহের"কে প্রহসনের বিচারে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে হত্যা করেন। পরবর্তিতে সাজানো সেনা অভ্যুত্থানের অজুহাতে একে একে সকল সেনা অফিসারকে হত্যা করে, তাঁর বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার প্রমান মূছে দিতে চেয়েছিলেন। বিধির বিধান, না যায় খন্ডন--''বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রত্যক্ষ খুনী "কর্ণেল ফারুক" পালিয়ে থাকা অবস্থায়, বিবিসি'র সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে "মেজর জিয়া"র ভুমিকা এবং নেপৈথ্যে জড়িত থাকার বিষয়টি সবিস্তারে বর্ণনা প্রদান করে ঐতিহাসিক সত্যটি প্রকাশ করে।
তাইতো দেখা যায়--নবাব সিরাজের হত্যাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, হত্যা পরবর্তি উপকারীভোগীদের প্রকৃতি যে নিয়মে বিচারের বিধান করেছিল; ঠিক একই ভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী, ষড়যন্ত্রকারী উপকারভোগীদেরও প্রায় একই বিধানে বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছেন। মেজর জিয়া এবং অন্যান্যদের তুলনামূলক আলোচনা করা গেলে স্পষ্ট ভাবে তাঁরই চিত্র ফুটে উঠে।
মীর জাফর আলী খাঁন:--
পলাশীর যুদ্ধের পর প্রচুর ঘুষের বিনিময়ে রবার্ট ক্লাইভের হাত ধরে মসনদে আরোহণ করেন নবাব মীর জাফর আলী খান। তবে তাকে পুতুল বানিয়ে মূল ক্ষমতা পরিচালনা করেন ইংরেজরা। একপর্যায়ে বনিবনা না হওয়ায় মীর জাফরকে সরিয়ে তারই জামাতা মীর কাশেমকে ক্ষমতায় বসানো হয়। মীর কাশেমের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হলে ইংরেজরা মীর কাশেমকে সরিয়ে দেন। এ সময় বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর নির্লজ্জের মতো আবারও ইংরেজদের আজ্ঞাবহ নবাব হিসেবে মসনদে বসেন। নামে নবাব থাকলেও মূলত মীর জাফরকে ইংরেজদের অবজ্ঞা আর দেশীয়দের ঘৃণার পাত্র হিসেবেই বাকি জীবন কাটাতে হয়। মীর জাফরের প্রাসাদে ঢোকার প্রধান ফটকটি ইতিহাসে, সরকারি দলিলে এবং ট্যুরিস্ট গাইড বইয়ে 'নেমক হারাম দেউর' বা 'বিশ্বাসঘাতকের গেট' নামে পরিচিত পেয়েছে।
মীরজাফরের পতন হয় বড় মর্মান্তিক অবস্থায়। ১৭ই জানুয়ারী ১৭৬৫ ইং সালে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয় মীরজাফর। তার শরীরে অসংখ্য ঘা ও ফোঁড়া হয়ে দূষিত রক্ত ও পুঁজ পড়ে দুর্গন্ধ বের হয়। এ অবস্থায় পরিবারের লোকেরা তাকে লোকালয়হীন জঙ্গলে রেখে আসে। রাজা নন্দকুমার কিরিটেশ্বরী দেবীর পা ধোয়া পানি ওষুধ হিসেবে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে দেয়। এভাবে ঈমান পর্যন্ত নষ্ট করে সে মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশসহ এ এলাকার মানুষ বেঈমান বলতে মীরজাফর শব্দ যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে আসছে।
মীর জাফর পুত্র মীরণ সহ অন্যান্ন সহযোগীগন:---
মীরজাফরপুত্র মীরন সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা থেকে শুরু করে বহু অপকর্মের নায়ক। ঐতিহাসিকরা বলেন, সে বজ্রাঘাতে মৃত্যুবরণ করেছে, আবার কেউ কেউ বলেন, জনৈক ইংরেজ সেনাপতি তার বাড়াবাড়ি দেখে তাকে গুলি করে হত্যা করে। সিরাজউদ্দৌলার খালা ঘসেটি বেগম যিনি রক্ত সম্পর্কীয় হওয়া সত্ত্বেও ষড়যন্ত্রকারীদের অন্যতম ছিলেন। তাকে মীরন বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করে।
মোহাম্মদী বেগ ছিল আমেনা-জয়েনউদ্দীনের পালিত পুত্র। সিরাজের মা-বাবা সিরাজ জন্মের আগে তাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে লালন-পালন করেন। তার বিয়েতে মুর্শিদাবাদ রাজ প্রাসাদে ধুমধামের বন্যা বয়ে যায়। সেই মোহাম্মদী বেগ মাত্র ১০ হাজার টাকার লোভে কারাগারে সিরাজকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে সে পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে পানিতে ডুবে মারা যায়।
মীরজাফরের জামাতা মীরকাশিম সিরাজকে ভগবান গোলা থেকে ধরিয়ে দেয়। সিরাজ-পরবর্তী স্বাধীন নবাব তাকে বলা হয়। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ইংরেজদের চরিত্র। তাকে ইংরেজরা ক্ষমতাচ্যুত করার পর পথে পথে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। একদিন সকাল বেলায় তার লাশ মুঙ্গের দুর্গের সামনে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
বায়দুর্লভ ও জগৎ শেঠকে ক্ষমতায় থাকাকালে মীরকাশিম দুর্গশিখর থেকে গঙ্গায় নিক্ষেপ করেন। ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের বেঈমানির জন্য। রাজা রাজবল্লভকে গলায় বালুর বস্তা বেঁধে গঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়া হয় এবং ওই অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে। ইয়ার লতিফ খাঁ নিরুদ্দেশ হয়। উমীচাঁদ ২০ লাখ টাকা না পেয়ে শোকে পাগল হয়ে যায়। পরে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
লর্ড ক্লাইভ:--
ভারতীয় উপমহাদেশ ইংরেজ বেনীয়াদের শাসন শোষন কায়েমের মূল নাটের গুরু ছিলেন লর্ড ক্লাইভ।তিনি মাত্র ৮০ টাকা বার্ষিক বেতন নিয়ে কেরানি ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানিতে ১৭৪৪ সালে মাদ্রাজে খ্যাতিহীন, বিত্তহীন, ক্লাইভ বিলাত থেকে আসেন।
১৭৬০ সালে সেনানায়ক কর্নেল ক্লাইভ যখন ভারত ছেড়ে স্বদেশে যান তখন তাঁর হাতে বিপুল অর্থ সংরক্ষিত ছিল।তাঁর জাহাজ যখন পোর্টস মাউথ বন্দরে এসে থামে, তখন ইংল্যান্ডের ম্যানুয়েল রেজিস্টারে তার সম্পর্কে মন্তব্য ছিল ‘এই কর্নেলের কাছে নগদ টাকা আছে প্রায় দুই কোটি টাকা। তার স্ত্রীর গয়নার বাক্সে মণিমুক্তা, হীরা ও জহরত আছে দুই লাখ টাকার। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে তার চেয়ে অধিকতর অর্থ আর কারো নেই।
ক্লাইভের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের কমন্স সভায় জোরালো দাবী উত্থাপিত হয় তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সমূহের বিচারের।দাবী সমূহের মধ্যে সম্পদ আহরণ ছাড়াও ক্লাইভ সিরাজের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের জন্য মীরজাফর ও মীরনকে প্ররোচিত করেছে। সিরাজের মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞায় সই করতে মীরজাফরকেও প্ররোচিত করে। মোহাম্মদী বেগকে হত্যার জন্য সে মীরনকে টাকা দিতে বলেছে।
ক্লাইভ বাংলা লুণ্ঠনের দায়ে বিলাতে দুর্নীতি মামলায় সাত বছর জেল খেটে কপর্দকহীন হয়ে পড়ে। পরে এ অবস্থায় টেমস নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। ডা: হল ওয়েলের স্ত্রী তাকে রেখে অন্য যুবকের সাথে চলে গেলে সে আত্মহত্যা করে। ঘৃণ্য মীর জাফরের কুষ্ঠরোগে মৃত্যু হয়। ঘষেটি বেগমের মৃত্যু হয় বুড়িগঙ্গায় ডুবে। দেশমাতৃকার সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকারী বেঈমানদের এভাবেই অপঘাতে মৃত্যু হয়েছিল।
খোন্দকার মোস্তাক আহম্মদ:--
সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হবার পর মোশতাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। এই পদে তিনি মাত্র ৮৩ দিন ছিলেন। রাষ্ট্রপতির দ্বায়িত্ব নেবার পর তিনি ইনডেমিনিটি বিল পাশ করেন। তিনি "জয় বাংলা" স্লোগান পরিবর্তন করে এর স্থলে "বাংলাদেশ জিন্দাবাদ" স্লোগান চালু করেন। এই সময় তিনি "বাংলাদেশ বেতার" এই নাম পরিবর্তন করে "রেডিও বাংলাদেশ" করেন। তার শাসনামলে চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মোঃ মনসুর আলী ও এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (৩ নভেম্বর) হত্যা করা হয়।মাত্র ২৩ দিন সরকার পরিচালনার পর মোশতাক আহমেদ ১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর সেনাবিদ্রোহের দ্বারা অপসারিত হন। একই বছর সামরিক শাসককে অপসারণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ২ টি দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয় এবং আদালত তাকে ৫ বছরের শাস্তি প্রদান করে।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করলে প্রথমে বন্দী থাকলেও পরে ১৯৭৮ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্ত হয়ে ডেমোক্রেটিক লীগ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গড়তে গিয়ে ব্যর্থ হন মোশতাক। পরবর্তী ১৮ বছর রোগ-শোক আর একাকিত্বে দিন কাটাতে হয় তাকে। ১৯৯৬ সালের ৫ মার্চ ৭৮ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন খন্দকার মোশতাক আহমদ।
বিপদগামী সেনাসদস্যগন:--
১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। ২৮ জুন বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত ৬ জনসহ ৯ কূটনীতিককে (জিয়া, এরশাদ ও খালেদা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সেসব খুনিদের কূটনীতিকের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন) দেশে তলব করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১৩ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল (অব.) ফারুক, শাহরিয়ার ও খায়রুজ্জামানকে গ্রেফতার এবং ৩১ আগস্ট ধানমণ্ডি থানায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মামলা দায়ের করা হয়। পরে ২ অক্টোবর ধানমণ্ডি থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। আর ওই বছর ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি বাতিল বিল পাস হয়। এই বিলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করলে ১৯৯৭ সালের ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট ইনডেমনিটি বাতিল আইনকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। দীর্ঘ একুশ বছর পর বাঙালি জাতি একটি বর্বর অধ্যাদেশের কলঙ্ক থেকে মুক্ত হয়।
তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ২১ এপ্রিল নিম্ন আদালতে প্রচলিত আইনে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার। দীর্ঘ শুনানি, জেরা ও উভয় পক্ষের আইনজীবীদের সওয়াল জবাব শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বিচারিক আদালত বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মামলায় ১৫ জন অপরাধীকে প্রকাশ্যে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করে।
মেজর জিয়াউর রহমান:--
১৯৮১ ইং সালের ৩০ মে চট্রগ্রাম সার্কিট হাউজে আরো কতিপয় সেনাকর্মকর্তার সাথে মেজর জিয়াকেও মেজর মঞ্জুরের নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নির্মম ভাবে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়।এর পর মঞ্জুরের নেতৃত্বে তিনটি লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ফটিক ছড়ির দিকে।চট্রগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ব বিদ্যালয় সংলগ্ন কাপ্তাই সড়কের পাশে রাঙ্গুনিয়ার নির্জন একটি স্থানে ৩০শে মে সকাল ১১টায় জিয়াসহ আরো তিনজনকে একই গর্তে মাটি চাপা দেয়া হয়।
পহেলা জুন কিছু সামরিক ও বেসামরিক লোকজনের যৌথ অভিযানে জিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়।প্রত্যক্ষদর্শির জবানীতে জানা যায়, তাঁরা যা উদ্ধার করেছিল তা লাশ ছিলনা, উহা ছিল মাংসহীন কিছু হাঁড়গুড়। একদিনের ব্যাবধানে কিভাবে লাশগুলী মাংসহীন হল তাঁর রহস্য আজও উৎঘাটন হয়নি। শুধুমাত্র আগুনে পোড়ালেই লাশগুলী এমন হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাছাড়া ঐ গর্তে জিয়ার লাশ ছিল কিনা, তাও রহস্য রয়ে গেছে। জিয়ার লাশ চট্রগ্রাম এবং ঢাকায় কাউকেই দেখতে দেয়া হয়নি এবং কি ডিএনএ টেস্টও করা হয়নি।যা একান্তই প্রয়োজন ছিল।
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে এখন বা আরও অনেক পরেও লাশ শনাক্ত করা সম্ভব বলে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।ইতিমধ্যে সচেতন মহল থেকে 'মেজর জিয়া'র কবর সংসদ ভবন এলাকা থেকে সরিয়ে অন্যত্র নেয়ার এবং হাড়গুড়ের ডিএনএ টেষ্টের মাধ্যমে লাশের পরিচিতি নিশ্চিত করার দাবী উঠতে শুরু করেছে।
জিয়া পত্নি বেগম খালেদা জিয়া:--
খালেদার পাঁচ মামলা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুদক। গত বছরের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এর আগে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রমনা থানায় মামলা করে দুদক। এ মামলায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনকে আসামি করে ২০১০ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
এ ছাড়া বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ঠিকাদারি কাজে ক্ষমতার অপব্যবহার ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে খালেদাসহ ১৬ জনকে আসামি করে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলা করে দুদক। ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো-সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা এবং একই বছরের ৯ ডিসেম্বর নাইকো-সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা করে দুদক। এ তিনটি মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷ ০৮/০২/২০১৮ ইং আদালত এ মামলার রায় দিলে সেফিন থেকে আজব্দি তিনি কারাগারেই রয়েছেন।পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে তাঁর প্যারালাইজড আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।এই অবস্থায় তাঁর জেলমূক্তির বিষয় তাঁর দল কায্যকর কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যত অন্ধকারের দিকেই যাচ্ছে, মনে করি।
জিয়াপুত্র আরাফাত রহমান কোকো--
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেননি। কোকোর সম্পত্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যেই "তারেক জিয়া" এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছেন। তারেক জিয়ার নির্দেশেই মালয়েশিয়ায় বসবাসরত কয়েকজন বাঙালি তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে।’ এরকম একটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করে কোকোর মৃত্যুর দুই বছর দশ মাস পর মালয়েশিয়ার একটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন জনৈক আবদুল হামিদ ওমর। তিনি মালয়েশিয়ার নাগরিক। তিনি কোকোর ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে পরিচিত।মামলায় কোকোর স্ত্রীকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন মামলার বাদী আবদুল হামিদ ওমর।
বিএনপির আয়োজিত আরাফাত রহমান কোকোর ১ম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল শেষে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরাফাত রহমানের স্মরণে ‘স্মৃতির পাতায়’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করেন।তিনি তাঁর সেদিনের আলোচনায় উল্লেখ করেন ১/১১ /২০০৬ ইং সালে'র গঠিত সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের নিপীড়নে জনাব আরাফাত রহমান কোকো ২০১৫ সালের ২৪ শে জানুয়ারী মালয়শিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন।
আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর আগে বাংলাদেশের আদালতে ৭টি মামলা চলমান ছিল।উক্ত মামলার সব কয়টি ১/১১ এর তত্বাবধায়ক সরকার কতৃক রুজু করা হয়েছিল। সাত মামলার মধ্যে একটি সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচার সংক্রান্ত। সিঙ্গাপুরে ২০ কোটি টাকার বেশি অর্থের অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ কাফরুল থানায় আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মামলাটি করে দুদক।উক্ত মামলায় ছয় বছরের সাজা বিশকোটি টাকা জরিমানা নিয়ে কোকো মৃত্যুবরণ করেছেন।পাচারকৃত অর্থের বৃহৎ অংশ বাংলাদেশ সরকার ফেরৎ আনতে সক্ষম হয়েছে।
জিয়াপুত্র তারেক রহমান:--
তারেকের ১৭ মামলা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা এবং তাতে ২২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুটি মামলা করে পুলিশ। একটি হত্যা ও আরেকটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলা। বর্তমান সরকারের আমলে এ দুটি মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমানকে আসামি করা হয়।
২০১১ সালের ৩ জুলাই সিআইডির দেওয়া সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমান ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতের নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, হারিছ চৌধুরীসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়। এঁদের নিয়ে মোট আসামির সংখ্যা ৫২। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিশেষ এজলাসে এ মামলার বিচারকাজ চলছে।
তারেক ও তাঁর ছোট ভাই আরাফাত রহমানের বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলা হয় ২০১২ সালের ২ অক্টোবর। ঋণখেলাপির অভিযোগে মামলাটি করে সোনালী ব্যাংক।সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা দেয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে এসব মামলার অনেকগুলীর কার্যক্রম স্থগিত আছে। এগুলোর মধ্যে আটটি চাঁদাবাজির মামলা-- ২০০৭ইং সালে বিভিন্ন ব্যক্তি বাদী হয়ে গুলশান, কাফরুল, শাহবাগ ও ধানমন্ডি থানায় মামলাগুলো করেন।
এ ছাড়া কাফরুল থানার পুলিশ বাদী হয়ে জরুরি ক্ষমতা আইনে একটি, দুদক বাদী হয়ে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কাফরুল থানায় একটি (স্ত্রী জোবাইদাও আসামি), একই বছর বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তা সাব্বির হত্যা মামলা ভিন্ন খাতে নিতে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দুদক আরেকটি মামলা করে। পরের বছরের ৪ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর ফাঁকির অভিযোগে একটি মামলা করে।
২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ক্যান্টনমেন্ট থানায় তারেক রহমান ও তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক। উক্ত মামলায় গত ২১ শে জুলাই ২০১৬ ইং তারিখে সাত বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাঁকে ২০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সর্বশেষ জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলায় তাঁর মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দশ বছরের কারাদন্ড ও দুইকোটি দশলক্ষ টাকা আর্থিক জরিমানার রায় মাথায় নিয়ে তারেক লন্ডনে অবস্থান করছেন।
বিগত নয় বছর জিয়া পরিবার খাদের কিনারায় থাকাবস্থায় টেনে তোলা সম্ভব হয়নি। বরঞ্চ বিপুল সংখ্যক সমর্থক সহ প্রতিনিয়ত গর্তের অভ্যন্তরেই যেতে বাধ্য হয়েছে। সেহেতু বলা যায়- অচিরেই জিয়া পরিবারের করুণ পরিণতি মীর জাফর আলী খাঁ এর পরিণতিকেও হার মানালে আশ্চায্যের কিছুই থাকবেনা। ঘটনা প্রবাহ প্রকৃতি ধীরে ধীরে সেদিকেই টেনে নিচ্ছে। নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়--'মীর জাফর আলী মহাভারতের সবচেয়ে বড় বেঈমান যদি হয়ে থাকে-তবে 'মেজর জিয়া' স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় "মীর জাফর"।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন