এম, কে আনোয়ার, মাহবুবর রহমান গং এর  প্রলাপ "স্বজ্ঞানে দেশও জাতীর অনিষ্টকারী নেতার  মৃত্যুপথে অবচেতন মনের অনুশোচনা।
(রুহুল আমিন মজুমদার)

      জনাব এম,কে আনোয়ার, মাহবুব রহমান, তরিকুল ইসলাম গং নি:সন্দেহে উচ্চশিক্ষিত, মেধাবী, আপাত:দৃষ্টে ব্যাক্তি জীবনে সবাই সফল মানুষ ও সার্থক জীবনের অধিকারী। বিএনপি'র নেতৃত্বে চার দলীয় জোট সরকারের ঘরে বাইরে লুটপাটের তান্ডব লীলার হরিহর শাষনামলে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রানালয়ের দায়িত্বে থাকাবস্থায় তাঁদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক তেমন কোন মন্তব্য কেউ করেনি বা করতে পারেনি। কিন্তু বিএনপি'র উচ্চ শিক্ষিত মহলটি স্বইচ্ছায়, স্বজ্ঞানে  দেশ ও জনগনের চিরস্থায়ী ক্ষতি করেছিলেন বা ক্ষতির উপসর্গ ছিলেন প্রতিনিয়ত তাঁদের মধ্যে কেউ না কেউ তাঁরই বহি:প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছেন। উল্লেখিত ব্যাক্তিবর্গ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের অনুসরনীয়,অনুকরনীয় ছিল সন্দেহ নেই। সময়ের ব্যবধানে বয়সের ভারে ন্যুজ্ব, মৃত্যু পথযাত্রী দেশ ও জনগনের অনিষ্টকারি ব্যাক্তিবর্গ অবচেতন মনে তাঁদের অনুসারীদের বার্তা পৌছে দেয়ার চেষ্টা করছেন যে-- "তাঁরা স্বার্থে অন্ধ হয়ে ভুল রাজনীতি করেছেন।প্রজম্ম যেন তাঁদের দেখানো ভুলপথ পরিত্যাগ করে জনগনের কল্যানে বাস্তবতায় ফিরে আসে। এই যেন অকুন্ঠ  পাঁপের সাগরে নিমজ্জিত পাপিষ্টদের প্রায়চিত্ত করার প্রতিনিয়ত: মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে,এককালের দাপুটে দল পাপিষ্ট বিএনপি দলের অভ্যন্তরে।"

       তাঁদের মধ্যে কেউ সরকারের প্রাক্তন আমলা,কেউবা উচ্চ আদালতের আইনজীবি ছিলেন, এখনও কেউ কেউ আইনপেশায় জড়িত থেকে সুনামের সঙ্গে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।তাঁরা সকলেই সামরিক সরকারের মন্ত্রীত্ব গ্রহন করে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির চালিকা শক্তির ভূমিকা পালন করেছেন এবং এখনও অনেকেই করে চলেছেন। অনেকে  আগে পরে দীর্ঘদিন বিএনপি'র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। সম্প্রতি বিএনপি'র রাজনীতি সম্পর্কে তাঁরা সকলেই কিছুনা কিছু খোলামেলা অথছ জাতির জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য অবলীলায় বলতে শুনা যাচ্ছে। আজকের পত্রিকায় দেখলাম জনাব এম,কে আনোয়ার সাহেবের একটি মন্তব্য প্রকাশ পেয়েছে।তিনি বলেছেন--"বিএনপিতে চলছে রাজতন্ত্র, রাণী আর যুবরাজের শাষন, আমরা হলাম ক্রিতদাস"( সুত্র: পূর্ব-পশ্চিম বিডি,২০/৭/২০১৭ ইং)। তার আগে জনাব তরিকুল ইসলাম বলেছেন--বিএনপি চলে কর্মচারীর হুকুমে।ব্যারিষ্টার নাজমূল হুদা, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহম্মদ সাহেবেরা কত কথাই বলেন লিখতে গেলে পাতা ভরে যাবে। জনাব মাহবুবর রহমান সম্প্রতি মনের ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

     তাঁদের দেয়া বিভিন্ন সময়ের  বক্তব্যগুলী নি:সন্দেহে প্রতিপক্ষ দল ও জোটের নেতাকর্মীগন লুপে নিয়েছেন এবং   মূখরোচক কথায় পরিণত করে গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিএনপি'র লক্ষলক্ষ নেতাকর্মীদের আঘাতে আঘাতে প্রতিনিয়ত তাঁদের  মনোবল ভেঙ্গেচূরে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছেন।

       তাঁরা সবাই দীর্ঘদিন মন্ত্রীত্ব করেছেন,বিএনপি দলের সর্ব উচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম "স্থায়ী কমিটি'র সদস্য ছিলেন এবং এখনও অনেকেই আছেন। সবাই জানেন--মেজর জিয়া, এরশাদ শিক্ষাগত যোগ্যতায় তাঁদের সমকক্ষ নয়।দুই জনই রাষ্ট্রের পাহারাদার  ছিলেন। রাষ্ট্র বিশ্বাস করে তাঁদের হাতে দেশরক্ষা করার হাতিয়ার তোলে দিয়েছিলেন। তাঁরা দু'জনই জনগনের বিশ্বাস ভঙ্গ করে দেশরক্ষার হাতিয়ার ক্ষমতা দখল করার জন্য ব্যবহার করে দেশের মালিকের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিলেন। তাঁরা ভাল করেই জানেন সেনাশাষকগন প্রভুত্ববাদী শোষক সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য এবং তাঁদের সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশের জনগনের সঙ্গে চরম বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিল। জনগনের কষ্টার্জিত অর্থে কেনা অস্ত্র তাঁরা জনগনের নির্বাচিত প্রতিনীধির উপর ব্যবহার করে তাঁদের প্রভুদের স্বার্থ রক্ষা এবং তাদের ক্ষমতা স্থায়ী করার চেষ্টা করেছিল। উচ্চশিক্ষিত মেধাবি ব্যাক্তিবর্গ আরো ভাল করেই জানেন বিএনপি দলের নেত্রী 'খালেদা জিয়া' এবং দ্বিতীয় শক্তিধর নেতা  জিয়া  পুত্র তারেক  উত্তরাধিকার সুত্রে পিতা এবং পিতার অনুসারী অন্য সামরিক স্বৈরাচারের আদর্শ ধারন করার একচ্ছত্র অধিকার লাভকারী ব্যাক্তির সমষ্টি ব্যাতিরেকে অন্য কিছু নয়।

               প্রভূত্ববাদে বিশ্বাসী সাম্রাজ্যবাদের দোসরগন বিশ্বের দেশে দেশে জনগনের সম্পত্তিকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে--বাংলাদেশেও এর ব্যাতিক্রম হয়নি।ভাঙ্গা স্যুটকেস, ছেঁড়াগেঞ্জীর মালিক মেজর জিয়া রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার সাথে সেনা কর্মকর্তার জন্যে জনগন কতৃক বরাদ্ধকৃত সেনানিবাসের বিশাল সম্পত্তি পরিবেষ্টিত বাড়ী রাষ্ট্র প্রধানের বসবাসের জন্যে জনগনের উপহার গনভবনের বাড়ী, রাষ্ট্রপ্রধানের দপ্তর ভঙ্গভবনের বাড়ী দখল করে নিয়েছিলেন। জিয়ার মন্ত্রী সভায় থাকাকালে তাঁরা সবাই বঙ্গবন্ধু সরকার কতৃক রাষ্টের অনুকুলে জাতীয়করনকৃত একাধিক বাড়ী তাঁদের নিজেদের নামে বরাদ্ধ নিয়েছিলেন। এর বাইরেও সরকারি, বেসরকারি একাধিক বাড়ী, সম্পত্তি কলকারখানা নামমাত্র মূল্যে অথবা জোরবপুর্বক দখল করে নিয়েছিলেন।তদ্রুপ দখলকৃত একাধিক বাড়ী এবং সম্পত্তি উচ্চ আদালতের  নির্দেশে বর্তমান  সরকার তাঁদের নিকট থেকে ফেরৎ  নিয়েছেন, আরো কতিপয় ব্যাক্তি ও সংগঠনের বাড়ী ফেরৎ নেয়ার চুড়ান্ত আদেশের অপেক্ষায় আদালতে অপেক্ষমান রয়েছে। জিয়ার আদর্শের অনুসারী হিসেবে বেগম জিয়া ও  'তারেক জিয়া'র বাল্যকাল, যুবকাল স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন। রাজনীতির হাঁড়ির খবর জানা স্বার্থন্ধ অভিজ্ঞ ব্যাক্তিবর্গ  তারেক, কোকোর হাতে  কলা দিয়ে  মন্ত্রনালয় ও দলের লোভনীয় দায়িত্ব যতবার বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছিল এবং দল পূর্ণগঠিত হয়েছে ততবার মন্ত্রীত্ব ও দলীয়পদ হাতিয়ে নিতে কখনো কার্পন্য  করেননি।

      তাঁরা মন্ত্রীত্ব গ্রহন করার আগে প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন  পাকিস্তান সরকারের সিএসপি  মেধাবী  কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্যতম  কর্মকর্তা হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশেরও বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। প্রত্যেকেই সরকারি চাকুরী অবসরের কয়দিন পরেই  রাজনীতিতে নাম লেখান এবং বিভিন্ন 'স্বৈরশাষক সরকারের মন্ত্রীত্ব' গ্রহন করে প্রভূত্ববাদী 'স্বৈরতন্ত্র' কায়েমের পক্ষে তাঁদের শিক্ষা, সততা, মেধা, বিচক্ষনতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা উজাড় করে ঢেলে দিয়েছেন। 'সরকার, দল এবং অশুভশক্তির জোটে তাঁদের সম্মান, মায্যদা, নেতৃত্বের দাপট কখনই প্রশ্নের সম্মুখ্যীন হতে দেখা যায়নি বা হয়নি।

       দীর্ঘ ৪৩বছর তিনযুগের অধিককাল দীর্ঘতর না হলেও দীর্ঘকাল। তাঁদের কখনই মনে হয়নি অত্র জনপদের 'বাঙ্গালী জাতি' বিদেশীদের শাষন, শোষন তথা গোলামীর জিঞ্জির থেকে মুক্তির লক্ষে হাজার বছর আন্দোলন, সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন এবং  বুকের তাজা রক্ত অকাতরে ঢেলে দিয়েছিলেন। তাঁদের কখনই মনে হয়নি এইরুপ পাকিস্তানী প্রভুত্ববাদী শাষন, শোষনের বিরুদ্ধে সর্বশেষ পরিণতি দীর্ঘ ২৩ বছর 'বঙ্গবন্ধু মুজিব' তাঁর জীবনের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে, অসীম ত্যাগের বীনিময়ে বাঙ্গালী জাতীকে "প্রভুত্বমুক্ত জাতী, দেশকে শোষন মুক্ত দেশ, শাষনকে নীজেদের শাষন" করার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

       তথাকথিত দেশবরেন্য ব্যাক্তিবর্গের একবারের জন্যেও মনে হয়নি-- বাঙ্গালী জাতী বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী নেতৃত্বে "মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে নয়মাস মরণপণ রক্তক্ষয়ী সসস্ত্র যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করেছিল। বাঙ্গালী জাতী স্বাধীন, শৃংখলমুক্ত, শোষন, শাষনমুক্ত, দাসত্বমুক্ত জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরতে পেরেছিল--একমাত্র বঙ্গবন্ধুর দুরদর্শী নেতৃত্ব, অসীম সাহষের উপর ভর করে। তাঁরা ভুলেই গিয়েছিলেন--"বাঙ্গালী জাতীর হাজার বছরের সংগ্রাম সাধনার  বেদনা দায়ক দাসত্বমুক্তি, শৃংখলমুক্তির শেষপরিণতির একমাত্র  কারিগর, স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অন্যতম পুরূধা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের কালান্তরজয়ী নামটি।"

     তথাকথিত মেধার পাহাড়সম নেতৃবৃন্দ    দীর্ঘ তিন যুগের অধিক  ভূলেই ছিলেন--বাঙ্গালী জাতীর দাসত্বমুক্তির একমাত্র পূরূধা সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারকে ১৫ই আগষ্ট কালরাতে হত্যা করে প্রভুত্ববাদের এদেশীয় দোষর অশুভশক্তি বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করেছিল। এম,কে আনোয়ার, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিষ্টার হুদা, মাহবুবুর রহমান, মেজর  আক্তারুজ্জমান, ব্যারিষ্টার মওদূদের ন্যায় অসংখ্য অগনীত উচ্চ শিক্ষিত, জাতির বিবেকদের কখনই মনে হয়নি---তাঁরা সকলেই প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সর্বোচ্ছ সনদ অর্জনকারী ব্যাক্তিত্ব এবং পাকিস্তান ও স্বাধীন সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র দুই দেশের মধ্যে  সর্বোচ্ছ সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তা, আইনের সর্বোচ্ছ শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। অনেকেই সরকারের উচ্চ পদপদবি দীর্ঘবছর বহন করার পর অবসর গ্রহন করেছিলেন বা স্বেচ্ছায় চাকুরী পরিত্যাগ অথবা অনৈতিক কাজে যুক্ত থাকার কারনে প্রজাতন্ত্রের চাকুরী হারিয়েছিলেন।

          এই উচ্চশিক্ষিত জাতির  সেবক, জাতির বিবেক হিসেবে  পরিচিত সম্মানীত ব্যাক্তিবর্গ গন কখনই মনে করেননি--তাঁদের প্রধান নেতা 'মেজর জিয়া' বঙ্গবন্ধু হত্যার ঠান্ডা মাথার খুনী হিসেবে নেপথ্য কারিগর ছিলেন এবং তিনিই একমাত্র প্রভূত্ববাদী পরাজিত শক্তির এদেশীয় প্রধানতম দোসর ব্যাক্তি হিসেবে সাম্রাজ্যবাদী শোষকশ্রেনীর পছন্দনীয় ব্যাক্তিদের তালিকার শীর্ষব্যাক্তি ছিলেন। তাঁদের কস্মিনকালেও মনে হয়নি তাঁর মৃত্যুর পর একই ধারাবাহিকতায় তাঁর পত্নি 'খালেদা জিয়া এবং দ্বিতীয় ক্ষমতাধর নেতা তারেক জিয়া'' প্রভূত্ববাদের স্বার্থরক্ষার এদেশীয় প্রেতাত্বার উত্তরাধিকার সূত্রে অশুভশক্তির নেতৃত্বের মসনদ লাভ করেছেন। এবং কি অদ্যাবদি বিদেশী প্রভূদের স্বার্থরক্ষার ভূমিকায় সর্বতোভাবে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন।তাঁর প্রকৃষ্ট প্রমান বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে সাত বছর সাজাপ্রাপ্ত এবং ২০০ কোটি টাকা ফেরৎ দানের আদেশ উপেক্ষা করে তিনি আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশ ২০০ বছর শোষন শাষনকারী বৃটিশদের একটি শহরে সেই দেশের সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী হওয়া সত্বেও আশ্রয় পেয়েছেন।তাঁকে বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠানোর আহব্বান বারবার বৃটিশ সরকার প্রত্যাক্ষান করে চলেছেন।

       তথাকথিত চাতুয্যপূর্ণ বক্তব্যের অসিম ক্ষমতা সম্পর্ন্ন ব্যাক্তিবর্গের কখনও মনে পড়েনি অত্রাঞ্চলের জ্বরাজীর্ণ, শীর্ণকায় জনতা দাসত্ব মুক্তির লক্ষে ১৯৭১ ইং সালে বিনা অস্ত্রে  'মহান মুক্তিযুদ্ধ' সংগঠিত করে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে  অত্রাঞ্চলকে 'প্রভুত্বমুক্ত শাষন, সার্বিভৌম স্বাধীন দেশ', শৃংখলমুক্ত  জাতি" হিসেবে বিশ্বদরবারে  প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ওরা ভূলেই ছিলেন দাসত্বমুক্ত জাতী উম্মেষের লক্ষে "বঙ্গবন্ধু যখন বর্তমান বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাঠে ঘাটে, বনে জঙ্গলে, গ্রামে গঞ্জে, হাটে বাজারে, নগরে বন্দরে রোধবৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, বাঙ্গালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার মহতি চেষ্টায়, বরেণ্য ব্যাক্তিরা  তখন, পাকি সরকারের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে বঙ্গবন্ধুর চলার পথেপথে কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছেন।

         বর্তমান সময়ের উচ্চশিক্ষিত বাকপটু ব্যাক্তিবর্গের অধিকাংশই  '৭৫ পরবর্তী 'মেজর জিয়ার তথাকথিত "বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে"র আদর্শে অনুপ্রানীত হয়েছিলেন। অনূসন্ধানে দেখা যায় 'পাকিস্তান সরকারের উচ্চপদে আসীন সিএসপি কর্মকর্তা অথবা সেনা কর্মকর্তা অথবা তথাকথিত নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী কম্যুনিষ্ট আদর্শের অনুসারী, অনুগামী, সমর্থকেরাই আবহমান কালের বাঙ্গালী জাতিসত্বা 'বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে'র বিপরীতে জিয়া  উদ্ভাবীত 'বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে' বিশ্বাস স্থাপন করে জাতীকে দ্বিখন্ডিত করার চক্রান্তে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন।

     মেধাবী রাজনীতিকগনের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের  নয়মাস 'পাকিস্তানী জালেম সরকারে চাকুরীরত: ছিলেন।  তৎসত্বেও বৃহৎ হৃদয়ের অধিকারি ''বঙ্গবন্ধু" তাঁদেরকে সদ্য স্বাধীন দেশের সরকারে যোগদানের অনুমতি দিয়ে অকৃত্তিম বদন্যতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। অকৃতজ্ঞ উচ্চশিক্ষিত তথাকথিত মেধাবী, বরেণ্য ব্যাক্তিবর্গ বঙ্গবন্ধুর সেই বদন্যতাকেও  কখনও স্মরণ করেনি,স্বীকারও কোনদিন করেনি। বরঞ্চ এই সেইদিনও বলতে শুনেছি--"কোন এক সেনা কর্মকর্তার একঘোষনায় এই সোনার বাংলা স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ নাম ধারন করেছিল।

   আমি স্বীকার করি অশীতিপর বৃদ্ধ রাজনীতিক গন সকলেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে চাটুকারিতার পাশাপাশি দেশ ও জনগনের কল্যানে নিবেদিত ছিলেন। কিন্ত প্রজাতন্ত্রের অবসর প্রাপ্তির পর ভাবলেশহীন, উৎফুল্লচিত্তে, অবলীলায়, অনায়াসে  যুক্ত হয়েছিলেন তাঁদের মুখে বর্তমানে কথিত--"রাজা, বাদশাহ, মহারাজ, যুবরাজ তথা প্রভুত্ববাদী শক্তির এদেশীয় দোষর 'সেনা শাষক চক্রের স্বৈরচারী শাষকের দলে ও সরকারে। তাঁরা উচ্চ শিক্ষিত হলেও তাঁদের চেয়ে অর্ধেক শিক্ষিত সেনাশাষকের তল্পিবাহক হিসেবে নিজেদেরকে জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। উচ্চশিক্ষিত ব্যাক্তিবর্গ জেনে শুনে, স্বজ্ঞানে ''অশুভশক্তির সাক্ষাৎ প্রেতাত্বা চার দলীয় জোটের নেত্রী জিয়া পত্নি খালেদা এবং তাঁর পুত্র 'তারেক জিয়া'র নেতৃত্ব মান্য করে দলে ছিলেন, আছেন, থাকবেন। অথর্ব উচ্চ শিক্ষিত হলেই কেবলমাত্র শিক্ষার মধ্যমস্তর- "মাধ্যমিকের গন্ডি" পার না হ'ওয়া ব্যাক্তির নেতৃত্বের প্রতি আস্থা স্থাপন করে উদ্দেশ্য সাধন বৃহৎ স্বার্থ মনে করতে পারে। উচ্চশিক্ষিত তাবৎ ব্যাক্তিবর্গ শুধু রাজনীতির কারনে আস্থা রেখেছেন এইরুপ ভাবার কোন কারন নেই- অর্ধশিক্ষিত মা' ছেলেই প্রভুত্ববাদে বিশ্বাসী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অন্যতম পছন্দের বাংলাদেশী নেতা এই সরল অংকটি  উচ্চশিক্ষিত ব্যাক্তিরা, সবজান্তা নেতারা বুঝতে পারেনি বললে আমিই বোকার স্বর্গে বাসকরি, এমনও ভাবতে পারেন অনেকেই।

     অশিক্ষিত মূর্খ্য খালেদা এবং অথর্ব তারেক জিয়া' উভয়ের নেতৃত্ব প্রভুতুল্য স্বীকার করে সর্বোচ্ছ ভক্তি শ্রদ্ধা রেখে তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত ব্যাক্তিবর্গ দাপটের সঙ্গে দীর্ঘ তিনযুগের অধিক রাজনীতি এবং সরকারের নীতিনির্ধারকের ভুমিকায় অবতীর্ন থেকে বাংলাদেশের তথাকথিত সেবার পরাকাষ্টা দেখিয়েছিলেন। বিএনপি'র পতনকালে তাঁদের স্মরণে এসেছে রাণী ও যুবরাজের নেতৃত্ব চলছে বিএনপি', কেউ বলেন চাকর বাকরের দল, কেউবা বলেন নোয়াখালী সমিতি, কেউবা বলেন অশিক্ষিত মা 'ছেলের দল।

      বাকপটুতায় পারদর্শী উচ্চশিক্ষিত নেতৃবৃন্দ জনগনকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে সেনাশাষকদের অবৈধ শাষনকে বৈধ শাষনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ধর্মকর্মের সঙ্গে সম্পৃত্ত না থেকে বাকপটুতায় ধর্মকে যথেচ্ছ ব্যাবহার করে ধর্মের আবেদন ক্ষুন্ন করার অপরাধে মহান আল্লাহর নিকট তাঁরা প্রত্যেকেই জবাবদীহি করার সময় সমাসন্ন। হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ বাঙ্গালী জাতীকে উদ্দেশ্যমূলক দ্বিখন্ডিত করার চক্রান্তে জড়িত থেকে  আমৃত্যু জাতীর অভিশাপে ভাগিদার হয়ে রইলেন।

       মৃত্যুকালে পাঁপমোছন করার অবিরাম বিবেকের তাড়নায়, অবচেতন মনে প্রলাপ বকে যাচ্ছেন তাঁরা। অথবা প্রজম্মকে তাঁদের দেখানো পথে না হাঁটার গ্রিন সিগনাল দিয়ে যাচ্ছেন, অশীতিপর বৃদ্ধ রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ।

    আমি সর্বান্তকরনে বিশ্বাস করি--"নিজ রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীর বিরুদ্ধে, এবং দলের আদর্শের বিরুদ্ধে সারা জীবনের নিজ আস্থা, বিশ্বাস ধুলায় লুটিয়ে এইরুপ অ-রাজনৈতিক, অশালীন বক্তব্য দিতে পারে কেবল মাত্র স্বার্থান্বেষী ব্যাক্তি, দুচরিত্রের অধিকারী, নীতি নৈতিকতাহীন ব্যাক্তিরাই।  দেশও জাতী চিরকাল ভোগার কর্মকান্ডে সম্পৃত্ত ছিলেন স্বজ্ঞানে, স্বইচ্ছায়, জাতীর  অ-কল্যানকর কর্মসাধনকারীর ভূমিকায় অবতীর্ন্ন ছিলেন বিধায় মৃত্যুকালে বিবেকের তাড়নায় প্রতিনিয়ত পিষ্ট হয়ে চলেছেন। আমি মনে করি-- তাঁদের  অসংলগ্ন, অরাজনৈতিক, আপন বিশ্বাস পদদলীত করার প্রলাপ---"কেবল মাত্র না পাওয়ার বেদনার উৎগীরন নয়। তাঁদের নিয়ন্তর প্রলাপ সত্যিকার অর্থে মাতৃভূমির  অ-মোচনীয় অনিষ্টকারী মৃত্যু পথযাত্রী নেতার সর্বক্ষন বিবেক তাড়িৎ অনুশোচনায় দগ্ধ হওয়ার বহি:প্রকাশ।" জাতীর কষ্টার্জীত অর্থে লালিত বিশিষ্ট   ব্যাক্তিগন শেষ সময়ে এসে স্বজ্ঞানে অহরহ দেশ ও  জাতীর ক্ষতিজনীত পাঁপ মোছন করার  বিবেকের চূড়ান্ত তাড়না থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রানান্তকর চেষ্টার কারনে - মন প্রান, বুদ্ধি বিবেচনা, লজ্জা শরম একাকার হয়ে তাঁদের মনকে অ-চেতন, উদাসী করে দিয়েছে। তাইতো তাঁরা সকলে আপন বিশ্বাসে ধ্বস নামার অভিব্যক্তি মনের অজান্তে প্রতিনিয়ত প্রকাশ করে চলেছেন।
ruhulaminmujumder27@gmail.com

               "জয়বাংলা    জয়বঙ্গবন্ধু"

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন