গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ,বিচার বিভাগের ভুমিকা,জাতির অমিমাংসীত বিষয় সমূহ---
(রুহুল আমিন মজুমদার)

 স্বাধীনতার ৪৭ বছর অতিক্রান্তের আর কয়েকটি মাস মাত্র বাকি।জাতি হিসেবে আমরা বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো মিমাংসা করতে পারিনি। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ ইং সালে বাঙ্গালী জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতীয়ভাবে অনেকগুলী বিষয় মিমাংসা করতে পেরেছিল। কথায় বলে বাঁদরের কপালে সিঁদুর বেশীক্ষন টিকেনা, বাঙ্গালী জাতীর ক্ষেত্রেও ঘটেছে তাই। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ত্রিশলক্ষ মুক্তিকামী মানুষের রক্ত, প্রায় পৌণে চার লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত, বিপুল সম্পদ বিনষ্টের মাধ্যমে অর্জিত মিমাংসীত বিষয় সমূহকে রাতের আঁধারে জাতির মুক্তিদাতা, সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির জনক 'বঙ্গবন্ধু'কে স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যনে ৭১ এর অশুভ পরাজিত শত্রু, বিদেশী শোষক কালশক্তি পূণ: বিতর্কের মঞ্চে নিয়ে আসে।শুধু তাই নয়--দেশব্যাপি হত্যা, গুম, খুন, মামলা, হামলার মাধ্যমে সমাজ ব্যাবস্থাকে অস্থির, চঞ্চল,  অসহিঞ্চু করে তোলে এবং সর্বত্র অসাম্প্রদায়িকতার বিপরীতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়িয়ে দেয়। তাঁরা সুকৌশলে কখনও বা গায়ের জোরে ধীরে ধীরে বাঙ্গালী জাতির মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মিমাংসীত বিষয় সমূহকে বিতর্কের মঞ্চে নিয়ে আসে।

     সেইদিন স্বাধীনতার শত্রুগনের মূখপাত্র জোরপূর্বক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নেয়। বাংলাদেশকে অশুভচক্র জোরপূর্বক দীর্ঘদিন শাষন শোষন, লুটপাটের মাধ্যমে তাঁরা অর্থবিত্তে, সংখ্যা, সমর্থনে বিপুল শক্তি সঞ্চয়ের পর বাঙ্গালী জাতীর অর্জিত মিমাংসীত সম্পদ সমূহ, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত গৌরবের মকূট সমূহ একে একে ছিড়ে ফেলতে থাকে। এই সেইদিন স্বাধীনতা বিরুধী অশুভ শক্তির প্রকাশ্য দোষর, চারদলীয় জোটনেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নতুন করে বাঙ্গালী জাতির শ্রেষ্ঠ গৌরব, জাতির অস্তিত্ব----"মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু, জাতির জনক, স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদের   সংখ্যা" ইত্যাদি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, ইতিপূর্বে দেশে বিদেশে গৃহিত, সর্বকালের জন্যে মিমাংসীত বিষয় সমূহকে পরিকল্পিত পরিকল্পনায় বিতর্কের মঞ্চে উত্থাপন করেছেন।বাঙ্গালী জাতি সেদিন হতবিহব্বল, হৎচকিত যারপরনাই দিশেহারা হয়ে পড়েছিল।--সাবেক বাংলাদেশের  এই প্রধানমন্ত্রীর মুখে বিতর্কীত বক্তব্য শ্রবনের পর ফুঁসে উঠতে চেয়েছিল জাতি। উদ্ভব পরিস্থীতি সামাল দিতে বর্তমান সরকার আইনশৃংখলা বাহিনীকে কোঠোর নির্দেশনা প্রদান করে।মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির ভোটে বিজয়ী হয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে নিয়ন্ত্রন, দমনের নিমিত্তে কঠোর মনোভাব প্রদর্শনের কারনে  মুক্তিযুদ্ধের অগনিত, অসংখ্য মানুষের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ মাঝপথে থামিয়ে দিতে বাধ্য হয়।

   স্বাধীন দেশে বসবাস করে, শৃংখলমুক্ত দেশের মুক্ত বাতাসে বিচরণ করে, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার অর্জন করে তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করেছেন। শুধু তাই নয়--মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মসনদ দুইবারের অধিক অলকৃত করেছেন। তাঁর পরিবারের লুটপাট, ক্ষমতার অপব্যাবহারের কারনে জনগনের বিশাল ভোটে  ক্ষমতাচ্যুতির আট বছর যেতে না যেতে  দেশের প্রতি এহেন অনীহা, জাতির প্রতি  বিশোদগার, গৌরবের মূকুট সমূহের প্রতি তিরস্কার শুরু করে দিয়েছেন। কোন সচেতন  বাঙ্গালী জাতির বিরুদ্ধে এইরুপ ষড়যন্ত্র মেনে নিতে পারেনি। সরকার জনক্ষোভ প্রশমিত করার যথাযথ রাষ্ট্রীয়  উদ্যোগ নিয়ে জনক্ষোভ সাময়িক প্রশমিত করেছেন। কিন্তু বাঙ্গালী জাতির শ্রমের টাকায় প্রতিপালিত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বাংলাদেশের সংবিধান, স্বাধীনতা, সর্বোপরি রাষ্ট্রের  রক্ষক "উচ্চ আদালত" কোনপ্রকার ব্যাবস্থা অদ্যাবদি উক্ত দেশদ্রোহী ব্যাক্তির বক্তব্যের বিরুদ্ধে নিতে দেখা যায়নি।

       জাতির মিমাংসীত বিষয় সমূহ বিতর্কিত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রাষ্ট, সমাজ, সংবিধান সুরক্ষার কোনপ্রকার উদ্যোগতো নেয়নি বরঞ্চ নিজেরা বিতর্কের বা অমিমাংসীত শত বিষয়ের সাথে আরো একটি পলক ইচ্ছাকৃতভাবে জাতির ললাটে যুক্ত করে দিয়েছেন।

      ব্যাক্তিগত ভাবে আমি ১৬তম সংশোধনী ভালমন্দের পক্ষে বিপক্ষে কোনপ্রকার আলোচনা করতে রাজী নই। সময় বলে দিতে পারতো সরকারের সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ ভাল হয়েছে নাকি খারাপ হয়েছে। খারাপের প্রশ্নে জনগনের হাতে বড় অস্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানই দিয়ে রেখেছে।বাংলাদেশের জনগন ৫বছর নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে ঘোষিত সাধারন নির্বাচনে নিজস্ব মতামত প্রকাশের মাধ্যম 'ভোটাধিকার প্রয়োগ করে "গনবিরুধী,আইন অমান্যকারি, সংবিধান লঙনকারী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে নতুন জনদরদী সরকারের হাতে ক্ষমতার চাবি তোলে দিতে পারতো। নতুন সরকার জনপ্রত্যাশানুযায়ী দেশ পরিচালনা করে  আরো সুন্দর, উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মানের মহান ব্রত নিয়ে রাজনীতি করার খায়েস পূর্ণ করার সুযোগ পেতো।

   আমরা সবাই বিশ্বাস করি এবং কি জাতীয় নেতা নেত্রীগন, রাষ্ট্রের উধ্বতন, অধ:স্তন কর্মকর্তা কর্মচারিগন সর্বদা নিয়োজিত রয়েছে জনকল্যানের মহৎ উদ্দেশ্য সাধনকল্পে। তাঁরা সকলে  প্রতিনিয়ত বলেও থাকেন--''জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস। রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সমুদয় সিদ্ধান্তই জনকল্যানের বিবেচনায় গৃহিত হয়ে আসছে ভবিষ্যতেও হবে।এইরুপ জনকতৃত্ব শাষন ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার বা "জনগনের শাষন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে  ব্রতি রয়েছে অসংখ্য, অগনিত রাজনীতিবীদ, সমাজ সেবক, অগনিত বুদ্ধিজীবি, শুসীল, ছাত্র, শিক্ষক, যুবক, যুবতি, কর্মজীবি, পেশাজীবি সহ সমাজের অখ্যাত অজ্ঞাত অসংখ্য অগনীত মানুষ। সকলের একান্ত কামনা, বাসনা জনগন তাঁর বসবাসরত: দেশের সর্বময় কতৃত্বের অধিকারি হবে। কোটি কোটি জনতার নির্বাচিত গুটি কতেক নির্বাচিত প্রতিনীধি তাঁদের ক্ষমতা রাষ্ট্রের সর্বত্র বিস্তৃত করুক।জনগনের একমাত্র আশা প্রতিনীধিগন তাঁদের দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার কারনে তাঁদের নিকট জবাবদীহি করতে বাধ্য থাকবেন।নচেৎ নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে ভালমন্দের বিচার করার এবং  গ্রহন বর্জনের অধিকার তাঁরা প্রয়োগ করবেন। ভালমন্দ বিচারিক ক্ষমতা  একমাত্র  জনগনের, রাষ্ট্রের কোন অঙ্গ জনগনের অধিকার হাইজ্যাক করতে পারেনা। যেহেতু জনগনের কষ্টার্জিত বিপুল অর্থ রাষ্ট্রের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সমূহকে প্রতিপালনে সদা ব্যয় করে যাচ্ছে।

  এবার মূল বক্তব্যে আসি-- ববিশ্লেষনে দেখা যায় জনগনই সকল কক্ষমতার উৎস।সকলের বক্তব্য শতভাগ সত্য এবং নির্ভেজাল। জনগনই যদি ক্ষমতার উৎস হয়, জনগন প্রতিপালিত রাষ্ট্রের অঙ্গ আদালত কিভাবে জনগনের প্রতিনীধির সংবিধান সংশোধনী বাতিল করেন?

        প্রত্যেক রাজনৈতিক দলই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে থাকাবস্থায় জনগনের সামনে তাঁদের দলের আদর্শ, উদ্দেশ্য, কর্মসূচি প্রচারের মাধ্যমে জনগনকে পক্ষে রাখার চেষ্টায় ব্রতি হয়। অত:পর জনগনের বৃহত্তর অংশের ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আধিষ্ঠিত হয়ে  পুর্বের উল্লেখীত প্রতিশ্রুতি, দলীয় আদর্শ, অপরাপর রাষ্ট্রীয় জনকল্যানমূলক বিষয় সমূহ বাস্তবায়ন করেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় নিয়মিত দায়িত্ব পালনের সাথে নির্বাচনকালীন সময়ে বৃহত্তর জনগোষ্টির কল্যান সাধনকল্পে নির্বাচক মন্ডলীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করার প্রতিও মনযোগি হন। গানতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী রাজনৈতিক দল গুলি  জনগনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি, দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, শান্তি ,শৃংখলা, আইনের প্রয়োগ, আইনের শাষন প্রতিষ্ঠা এবং অধিকতর  জনকল্যানের উদ্দেশ্যে বহুমূখি পদক্ষেপ গ্রহন করে থাকে। রাষ্ট্র পরিচালনা করার নিমিত্তে রাষ্ট্রীয় সংবিধান, রীতিনীতি, কাঠামো পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন করার অধিকার জনগন থেকেই  সরকার প্রাপ্ত হয়েছেন।জনগনের নিরঙ্কুস ক্ষমতাকে সরকার রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রয়োগ করে থাকে। সরকারের নিয়ন্ত্রন প্রয়িষ্ঠায় সফলতা ব্যার্থ্যতার উপর নির্ভর করে সরকারের জনপ্রিয়তা বা জনগন কতৃক আবার পূণ: ক্ষমতায় ফিরে আসা বা না  আসার সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হবে কি হবেনা।

 কোন একটি দল জনগনের রায় নিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আরোহন করার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জনকল্যান করুক বা না করুক,  জনগন ঐ দলকে ক্ষমতা দিতে পারে আবার  পরিত্যাগও করতে পারে। বাংলাদেশের জনগন সেই  ক্ষমতা সংরক্ষন করেন। '৭২ এর সংবিধান সেই ক্ষমতা জনগনকে দিয়েছে।যে কোন দৃষ্টিকোন থেকেই আলোচনা করিনা কেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মালিক জনগন। জনগনের নির্বাচিত সরকার তাঁর মেয়াদের মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনা বিষয় জনগনের পক্ষে যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহন ও বাস্তবায়ন করার অধিকার রাখেন। বাস্তবায়িত সিদ্ধান্ত জনগনের পছন্দ সই না হলে ঐ সরকারকে মেয়াদ শেষে প্রত্যাক্ষান করার ক্ষমতাও জনগন সংরক্ষন করেন। সুতারাং দেখা যায় জনগনের পক্ষে একক ক্ষমতার মালিক তাঁদের নির্বাচিত সরকার।

  দুর্ভাগ্যজনক সত্য হচ্ছে--"বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে  জনগনের সেই একক কতৃত্ব ও ক্ষমতা প্রয়োগের  ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ অনেক সময়ে দ্বিমত পোষন, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, জনগনের কতৃত্ব অস্বিকার, জনগনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অপরগতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে"। রাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জনগন কতৃক প্রদত্ত দায়িত্ব ও ক্ষমতা, জনগনের মনোনীত সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার নির্দেশ প্রত্যাক্ষান, অবহেলা, দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ্যতার সুযোগ আছে কিনা তা সর্বমহলের ভেবে দেখার সময় এসেছে।
     
      আদালত সম্পর্কে কোন মন্তব্য করা যাবে না। আদালতের বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে আগাম মন্তব্য করা চলবেনা। আদালত নিজ ইচ্ছায় (স্ব-প্রনোদিত) যে কোন ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান,সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন, রুল জারি, জেল জরিমানা করতে পারেন। এবং কি কোন বিচারক চলার পথে অথবা  কাঁচা বাজারে গেলে যে কোন অনিয়মের কারনে যে কোন বিক্রেতার বা পথিকের জেল জরিমানা করার ক্ষমতা রাখেন। আদালতের কোন সিদ্ধান্ত, পয্যবেক্ষন,অভিমত এবং রায় নিয়ে কোন নাগরিকের মন্তব্য করা যাবেনা। বিচাতক নিয়োগ, বদলি, বরখাস্ত বিষয় সরকারের কোন হাত নেই।যে কোন মামলায় বিব্রত বোধ করলেও সমালোচনা করা যাবেনা। আদালতের অভ্যন্তরে অবাধে ঘুষ ,দুর্নীতি, রায় পরিবর্তন, রায়ের কপি ফাঁস ইত্যাদি অনৈতিকতা, অনিয়মের বিরুদ্ধেও নয়। উল্লেখিত সমস্ত ক্ষমতা জনগন উক্ত সংস্থাকে দিয়েছে অর্থাৎ জনগন কতৃক নির্বাচিত সাংসদ গনের 'আইন প্রনয়নের নিমিত্তে গঠিত  সর্বোচ্ছ সংস্থা "জাতীয় সংসদ"' কতৃক প্রদেয় ক্ষমতায় 'বিচার বিভাগ' ইতিমধ্যে উল্লেখিত ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে বেশ বলিয়ান।

      নিশ্চিত বলা যায় জনগনের নির্বাচিত সরকার কতৃক 'নিরপেক্ষ বিচার ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠার' অঙ্গিকার পূরণের নিমিত্তে উজাড় করে  সমস্ত ক্ষমতাই দিয়েছেন রাষ্ট্রের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ 'বিচার বিভাগকে'। উদ্দেশ্য-শুধুমাত্র ন্যায়ের সমাজ প্রতিষ্ঠা, নিরপেক্ষ বিচার, আইনের শাষন প্রতিষ্ঠার জনগনকে দেয়া সরকারের অঙ্গিকার পূরণের মহৎ উদ্দেশ্য সাধন। আইনের শাষনের প্রতি জনগনের পক্ষে সরকারের সদিচ্ছার বহি:প্রকাশ।

    আমি দেশের নব্বই শতাংশ সেই সমস্ত স্বল্পশিক্ষিত, অজ্ঞ, গ্রাম্য আমজনতার কাতারের একজন অন্ধ,অজ্ঞ মানুষ। বাংলাদেশের আপামর জনগনের ন্যায় আমিও আইন বিষয় কোন জ্ঞান সংরক্ষন করিনা।বিষয়টি সম্পর্কে বিশদ জানা ব্যাতিরেকে আলোচনা করাও সমীচিন নয় বলে মনে করি। আইনগত ব্যাখ্যা দেয়ার যেহেতু কোন জ্ঞান নেই,  সংগত কারনে সেদিকে আমি যেতেও চাইনা। তবে বাংলাদেশের  নাগরীক হিসেবে আমার প্রদত্ত ভোটে নির্বাচিত সংসদের ক্ষমতা, আমার অধিকার ও কতৃত্ব সংরক্ষন  বিষয়ে আমার ভোটে নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতার বিস্তৃতি সম্পর্কে আলোচনায় বাঁধা আছে বলে মনে করিনা।

      আমি জানি বাংলাদেশটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তাঁর নামের আগে 'গনপ্রজাতন্ত্র" শব্দটি লিপিবদ্ধ আছে। আমার ভোটে নির্বাচিত প্রতিনীধি সমন্বয়ে  "গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার" গঠিত হয়েছে। দেশের  নামই বলে দেয় জম্মগ্রহন কালীন সময়ে নিরঙ্কুষ কতৃত্ব আমি জনগনের ক্ষুদ্র অংশও অর্জন করেছি। আমি আরো জানি--"আমার নিরঙ্কুস ক্ষমতা সম্পন্ন বাংলাদেশ নামটি অর্জন করতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে ত্রিশলক্ষ বাঙ্গালী (যাঁরা আমার পূর্ব পূরুষ) প্রান দিয়েছিল)। প্রায় পৌণে চার লক্ষ মা-বোন (যাঁরা আমার জম্মদাত্রী) তাঁদের ইজ্জত বিলিয়ে দিয়েছিল। বেসুমার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছিল(যে সম্পদ আমার পূর্ব পূরুষগন আমার সুখ শান্তির জন্য আহরন করেছিল)। আমার পুর্বসুরীদের এই আত্মত্যাগ ছিল শুধুমাত্র তাঁদের বংশধর আমি স্বচ্ছন্দে, স্বাধীনভাবে, একক কতৃত্বের অধিকারি হয়ে এই ভূখন্ডে স্বচ্ছন্দে জীবন যাপন করতে পারি।আমি আমাকে পরিচালিত করতে পারি।,আমি আমার শাষক নিয়োগ করতে পারি। আমার পূর্ব পুরুষদের অর্জিত সম্পদ, আমার ব্যাক্তিগত আহরিত সম্পদ নিশ্চিন্তে, নিরুপোদ্রপে ভোগ করতে পারি। আমাকে যেন কোন ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান কোনকালে, ক্ষনিকের জন্যেও শাষন, শোষন করতে না পারে। আমার দেয়া বেতনভূক্ত রাষ্ট্রীয় নিরপত্তা বিধানকল্পে নিয়োজিত কোন বাহিনী  বন্দুকের জোরে আমার শাষন ক্ষমতা কেড়ে নিতে না পারে। যদি দেশের অভ্যন্তরের কোন অশুভশক্তি, দেশরক্ষা বাহিনী বা অন্য যেকোন অনির্বাচিত মহল তদ্রুপ ক্ষমতা কেড়ে নিতে চায় বা নেয় বিচার বিভাগ সংবিধানের আলোকে আমার পূর্বে দেয়া ক্ষমতাবলে--"আমার শাষন আমাকে ফেরৎ দেয়ার যথাযথ উদ্যোগ নিতে বাধ্য থাকবে এবং কি ফিরিয়ে দিবে।"

      এইরুপ দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র, সরকার  শাষন প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর হয়ে তাঁরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল।আমার পূর্ব পূরুষগন দীর্ঘ নয়মাস শাষকশ্রেনীর বেতভূক্ত আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে বিনা অস্ত্রে ত্রিশলক্ষ প্রানের বিনিময়ে খালি হাতে সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত করে স্বাধীন সার্বভৌম "গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ" প্রতিষ্ঠা করেছিল। আমার পূর্ব পূরুষদের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তৎকালিন গনপরিষদের সদস্য বৃন্দ স্বল্প সময়ে নতুন উদ্ভব রাষ্ট্রটি পরিচালনা করার জন্যে লিখিত একটি শাষন তন্ত্র তৈরী করেছিল।

   সংবিধানের মুখবন্ধে বলা ছিল চারটি মূলস্তম্ব অপরিবর্তনীয় থাকবে। মূলস্তম্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আইন ও বিধি সমূহ স্বয়ংক্রিয় বিলুপ্ত হওয়ার বিধান রাখা হয়েছিল। সংবিধানের সেই মূলস্তম্ভের চারটির মধ্যে তিনটি-ই বাতিল করে শুন্যস্থানে ভিন্ন শব্দযুক্ত অন্য তিন স্তম্ভ যুক্ত করে একটানা ২০১১ সাল পয্যন্ত নিয়ম বর্হিভূতভাবে দেশ পরিচালনা করলেও আমার রক্ষক "উচ্চ আদালতের হুশ হয়নি।

    ২০১১ সালে আমার নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংবিধান  রক্ষক "উচ্চ আদালত" সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী বাতিল করেছেন। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারি উক্ত দুই সেনা কর্মকর্তার শাষনামল  সংবিধান বর্হিভূত,   বে-আইনী ঘোষনা করেছেন।তাঁর আগে উচ্চ আদালত ২০০৮ সালে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী বাতিল করে রায় দিয়েছিলেন। ততদিনে বে-আইনী ভাবে বাংলাদেশের জনগনকে শাষন শোষন করা শাষকদের দুই জনের কেউই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলনা। সুতারাং  শাষনকালদ্বয় বে-আইনী সাব্যস্তে তাঁদের পরিবারকে দেয়া সমুদয় রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা বাতিল করে রায় প্রদান করেছেন উচ্চ আদালত।

     এখানে বিষয়টি স্পষ্ট যে--'৭৫ এর ১৫ আগষ্ট পরবর্তী সময় থেকে ২০১১ ইং সাল পয্যন্ত (অর্থাৎ মধ্য সময়ের ৮ম সংশোধনী এবং শেষে ১৩তম সংশোধনী বাতিলের পুর্ব পয্যন্ত) উচ্চ আদালত বাংলাদেশের  জনগন কতৃক প্রদত্ত পবিত্র সংবিধান রক্ষা করার পবিত্রতম দায়িত্ব- ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁদেরকে প্রদত্ত ক্ষমতা, আইন বা বিধি বিধান কায্যকর, ব্যবহার, প্রয়োগে অবহেলা অথবা অনীহা প্রদর্শন করেছিল। অথছ উচ্চ আদালতের বিশাল বহর নিয়মিত উক্ত সময়কালে জনগনের কষ্টার্জিত অর্থ  অ-নৈতিকভাবে  বেতন, ভাতা, রাষ্ট্রীয় সুযোগ, সুবিধা ইত্যাদি অবলীলায়, নির্দিদ্বায়, নিশ্চিন্তে গ্রহন করেছিল।উচ্চ আদালত কতৃক তৎসময়ে গৃহিত অর্থ ফেরৎদানের কোন নির্দেশনা 'সংবিধান সংশোধন বাতিলে'র রায়ে সংযোজন অদ্যাবদি সংযোজন করা হয়নি। এহেন দায়িত্ব অবহেলার কারনে রাষ্ট্রের অন্যসকল বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারিগন জনগনের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দিয়ে অথবা সরকার কতৃক নির্দেশ,আদেশ পালন করে তাঁদের গৃহিত সকল অর্থ ফেরৎদানে বাধ্য হ'তেন, অতীতে হয়েছেও অনেকবার।

      এখানে দেখা যায় রাষ্ট্রের বিধিবদ্ধ অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্বেও বিচার বিভাগ জনগনের নিরঙ্কুস ক্ষমতাকে বারংবার অস্বীকার,অবহেলা, অপরাগতার নিদর্শন স্থাপন করে চলেছে।

   সরকার  রাষ্ট্রের অন্য সকল অঙ্গ বা বিভাগ নিয়ন্ত্রন করার অধিকার প্রাপ্তি অনুযায়ী "বিচার বিভাগের পদোন্নতি, পদস্থলন, নিয়োগ, বদলি বিষয়ে জনগনের কতৃত্ব  প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষে ২০১৪ সালের শেষ দিকে নেয়া উদ্যোগ ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বাতিল করে দিয়েছেন উচ্চ আদালত। '৭২ এর সংবিধানের আলোকে জনগন কতৃক নির্বাচিত প্রতিনীধিদের সমন্বয়ে গঠিত সরকারের দেয়া ক্ষমতাবলে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে মাত্র একবছর ৫মাসের মধ্যে সংসদে গৃহিত প্রস্তাব বাতিল করে দিতে পেরেছেন। ইতোপূর্বে দুই সেনাশাষকের অবৈধ ক্ষমতা দখল, স্বৈরাচারী শাষন, শোষন থেকে রক্ষায় তদ্রুপ কোন উদ্যোগ উচ্চ আদালত ত্রিশ বছরেও নিতে  পারেনি। হ্যা  ব্যাবস্থা নিতে পেরেছেন এমন সময়--"আমার সংগ্রামের ফসল এবং আমার নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর"। ততদিনে ক্ষমতা দখলকারি অবৈধ সেনাশাষক দুই জনের একজন পৃথিবী থেকে চিরবিদায় গ্রহন করেছেন এবং অপরজন জনগনের রোষানলের মূখে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ত্যাগ এবং অসংখ্য দুর্নীতির মামলা মাথায় নিয়ে জনতার কাতারে অবস্থান নেয়ার পর।
 
       মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধান অশুভশক্তি ক্ষমতালোভী সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষমতার লিপ্সা মেটাতে কমপক্ষে  দুইবার সংবিধানের চারিত্রিক পরিবর্তন এবং ৫বার জনগনের আশা আখাংকার প্রতিফলন ঘটাতে সংশোধন করা হয়েছে। বাকি   ১১ বারের মধ্যে ৬বার প্রয়োজনে সংশোধন করা হয়েছে ধরে নিলেও বাকি ৫বারের সংশোধন কেন করা হয়েছিল? উক্ত সংশোধনী থেকে জনগনের কোন প্রকার লভ্যাংশ ভাগ্যে জুটেনি।যদিও ১৪বার ‘নির্বাচিত’ সরকারের হাতে সংশোধন করা হয়েছিল।আগেই উল্লেখ করেছি অষ্টম সংশোধনী বাতিল হয়েছিল ১৯৮৮ সালে, গুরুত্বপূর্ণ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল হয়েছিল ২০১১ সালে। ২০১৪ সালের  ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হয়েছে চলতি ২০১৭ সালের এই জুলাই মাসে।

    এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর ফলে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইন করা সম্ভব হয়েছে। ওই বছর ২২ সেপ্টেম্বর গৃহীত দ্বিতীয় সংশোধনীতে জরুরি অবস্থা জারির বিধান রাখা হয়। চুয়াত্তরের ২৮ নভেম্বর তৃতীয় সংশোধনীর পথ ধরেই পরবর্তী সময়ে আমরা ছিটমহল সমস্যার মীমাংসা করতে পেরেছি। পঁচাত্তরের ২৫ জানুয়ারি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সরকারব্যবস্থা আমূল বদলে ফেলে সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। এই চারটি সংশোধনী হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে, তাঁর উদ্যোগে।  চারটি সংশোধনীতেই জনগনের বৃহৎ প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছিল। ১৬তম সংশোধনীতে রাষ্ট্রের কতৃজত্ব অন্যান্ন বিভাগের কতৃত্ব করায়াত্ব করা অনুযায়ী বিচার বিভাগকেও জবাবদিহীতার আওতায় এনে উক্ত বিভাগের উপর জনগনের কতৃত্ব বহাল করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

 ৫টি অপ্রয়োজনীয় সংশোধনীতে জনগনের কি প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছিল? ক্ষমতা গ্রহন-- শোষন, শাষন, ক্ষমতার বিস্তৃতি, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপকৌশল ছিল। উক্ত ৫টি সংশোধনীতে জনগনের ক্ষমতা নিরঙ্কুস করার ক্ষেত্রে কোন সংশোধনী, পরিবর্তন, পরিবর্ধন করার প্রয়াস লক্ষ করা যায়নি।তথাপি উচ্চ আদালত চোখ কান বন্ধ করেই ছিলেন,সংশোধনীগুলী বাতিল করার কোন স্বপ্রনোদিত  উদ্যোগ জনগন দেখেনি। ষোলতম সংশোধনীতে জনগনের ক্ষমতা জনগনের নিকট নিয়ে আসার চেষ্টাকে রাষ্ট্রের শক্তিশালী অঙ্গ বাধাগ্রস্ত অল্পসময়ের মধ্যে বাধাগ্রস্ত করার হুঁশ ঠিকই রেখেছে। অথছ রাষ্ট্রের অর্থলোপাট, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড,জঙ্গীপনা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল ক্ষতিসাধন কল্পে আনীত মামলা সমূহ বছরের পর বছর শুনানীর অপেক্ষায় থাকা সত্বেও উচ্চ আদালতের শুনানী গ্রহনের সময় থাকেনা।বিশেষ মহলকে সময়ক্ষেপনের উদ্দেশ্যে শতবার সময় দিলেও জনগনের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টার বিরুদ্ধে রিট আবেদনের শুনানী গ্রহনে নির্দিষ্ট করে সময় বেঁধে দিতে দেখা গেছে।

      আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন--রাষ্ট্র শাষনে জনগনের নির্বাচিত প্রতিনীধি কতৃক নেয়া সিদ্ধান্ত ৭২ এর সংবিধান অনুসরন করা হলে' বাতিল হতে পারেনা। যেমন উচ্চ আদালত পারেনা প্রচলিত সংবিধান বাতিল, সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন স্থগিত করতে তেমনি সংশোধনীও পারার কথা নয়।যেমনি পারেনি নির্বাচিত সরকারের অপরাপর ৫টি সংশোধনী বাতিল অথবা স্থগিত করতে। অনির্বাচিত সরকারের দুটি বৃহৎ সংশোধনী সংবিধান রক্ষক হিসেবে বাতিল করার ক্ষমতা উচ্চ আদালতের ছিল এবং তা দেরীতে হলেও কায্যকর করেছেন।উক্ত অবৈধ সরকারের অবৈধ সংশোধনী বাতিল করার  ফলে সংবিধান তাঁর মূল চরিত্রে ফিরে আসতে পেরেছে। মূল চরিত্রে ফিরে  আসার অজুহাত দেখিয়ে উচ্চ আদালত আমার নির্বাচিত সরকারের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করার ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়েছেন বলা হচ্ছে। উক্ত ক্ষমতা প্রাপ্তি যদি  ধরে নিতে হয় আরো ৫টি সংশোধনী বাতিল করার প্রয়োজনীয়তা সামনে এসে যায়। ঐগুলীও বাতিল করে সংবিধানকে পূর্বের চরিত্রে অর্থ্যাৎ জাতির জনকের কাংখীত অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষতার চতিত্রে ফেরৎ নেয়ার দাবী কফ্রতেই পারি।

  আমরা জানি  সংবিধানের  পরিবর্তন, পরিবর্ধন,  পরিমার্জনের কারনে যদি সংবিধানের মূল চার নীতির সঙ্গে সংশোধিত  কোন অংশ সাংঘর্ষিক হয়--শুধুমাত্র সাংঘর্ষিক  অসামঞ্জস্য অংশটুকুই বাতিল, স্থগিত করার ক্ষমতা উচ্চ আদালত ধারন করেন। সংবিধানের এই রক্ষকের ভুমিকা টুকু পালন করার জন্য বিশাল বহরের বিচার বিভাগের সমুদয় খরছ জনগন প্রতিনিয়ত যোগান দিয়ে চলেছে। পবিত্র সংবিধানের রক্ষনাবেক্ষনের ক্ষমতাও জনগনই সাংবিধানে লিখিতভাবে  বিচার বিভাগকে গনপরিষদের সদস্যদের মাধ্যমে ৭২এ সংবিধান প্রনয়নকালে জনগনই দিয়েছিল।  পরবর্তিকালে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে প্রনীত  সংবিধান অনুমোদনকালে উক্ত  নীতি অবিকল রেখে সরকার বিচার বিভাগের উপর দেয়া দায়িত্ব ও কর্তব্য, ক্ষমতা অনুমোদন করেছিল।

      বিচারক নিয়োগ, বদলি, বরখাস্ত জনগনের নির্বাচিত প্রতিনীধি কতৃক সম্পাদন করার উদ্যোগ স্বাধীন বিচার ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় নয় বরঞ্চ জবাবদিহীতার আওতাভুক্ত। বিচার বিভাগ  স্বাধীনভাবে বিচারকায্য পরিচালনা করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অন্যকোন বিভাগ যেন হস্তক্ষেপ করতে না পারে তদ্রুপ আইন ও রীতিনীতি ইতিপূর্বে জনগনের নির্বাচিত প্রতিনীধিদের সর্বোচ্ছ সংস্থা সংসদ কতৃক 'শাষন বিভাগ' থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরনের মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়েছে।উক্ত পৃথকীকরনের কায্যকারিতা বিস্তৃত, সংরক্ষন, সংযোজন করার প্রয়োজন।  সরকারকে প্রস্তাবনার মাধ্যমে আইন বা নীতি সংশোধন বা নতুন কোন আইন  প্রনয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা উত্থাপন করার যথেষ্ট সুযোগ বহাল রয়েছে।

    উচ্চ আদালতের  প্রয়োজন মোতাবেক আইন প্রনয়ন করার নিমিত্তে   সু-পরামর্শ দিয়ে   সরকারের আইন প্রনেতাদেরকে উচ্চ আদালত সহযোগীতা করতে পারেন।নির্বাচিত সরকারের অঙ্গ আইন বিভাগ কতৃক এযাবৎ  প্রনীত আইন, কাঠামো,  নিয়ম ,কানুন, রীতিনীতি প্রচলনের অভ্যেস গড়ে তোলা সম্ভব হলে অন্যকোন বিভাগ বা ব্যাক্তি বিশেষ "'বিচার বিভাগে"র-বিচার কায্যে'র উপর কোনপ্রকার প্রভাব সৃষ্টি আদৌ সম্ভব হওয়ার কথা নয়।
     ruhulaminmujumder27@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন