ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রানিত--রাষ্ট্রের প্রয়োজনে দূর্নীতি সম্পর্কীত পরামর্শ গ্রহনে সরকারের ইতিবাচক সাড়া দেয়া উচিৎ।
 (রুহুল আমিন মজুমদার)

       "দূর্নীতি" বলতে আমরা সাধারনত: বুঝি অবৈধ, অনৈতিক, দখল, ঘুষ, আত্মসাৎ, পরের  সম্পদ হরন, জোর পুর্বক অর্থ আদায় ইত্যাদি পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, সকল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে--"সর্বক্ষেত্রে, সর্বজনগ্রাহ্য, সর্বনিকৃষ্ট, নীতিনৈতিকতা বিবর্জিত একটি শব্দকে। যে ব্যাক্তি, গোষ্টি, সম্প্রদায় উল্লেখিত বিষয়গুলীর একটির সাথেও সম্পৃত্ত থাকেন---তাঁকে সর্বসাধরন মনের সমস্ত ঘৃনা উগড়ে দিয়ে বলি "দুর্নীতিবাজ"।

   শব্দটি তিন অক্ষরের অত্যান্ত নগন্য শব্দ।  সাধারনে যত সহজে শব্দটির পরিধি বা বিস্তৃতি, তাৎপয্য বোধগম্যতায় আসে বাংলা ভাষায় 'সমশব্দের সহজে সাধারনে আদোপান্ত বুঝার মত 'তাৎপয্যমন্ডিত শব্দ' আমার মনে হয় বালা ভাষায় আর কোন  শব্দ নেই। শব্দটি আক্ষরিক অর্থে বাংলাদেশের সর্বমহলে অত্যান্ত ঘৃনিত, নিন্দিত, ধর্মীয় দিক থেকে অনৈতিক এবং বড় একটি 'গুনাহকার' শব্দ।লক্ষ করলে দেখা যায় শব্দটি আপাত:দৃষ্টে তিন অক্ষরের হলেও আরো কতক বর্ণরাজী সঙ্গপোনে উহার ভিতরে আঁকাবাঁকা হয়ে অবস্থান নিয়েছে। সাধারনে কয়টি বর্ণ এবং বর্ণগুলির কি নাম--আদৌ বুঝে উঠার মত নয়।

   'শব্দটি'র আকারে প্রকারে যেমন বিবিধতা রয়েছে তেমনি সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবারে ইহার উপস্থীতিতেও রয়েছে বিবিধতা--'যাহা সাধারনে নির্ণয় আদৌ সম্ভব নয়।'
 কালের পরিক্রমায়  বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে মূখে মূখে, প্রবন্ধে, কবিতায়, লেখনীতে যদিও 'শব্দটি ঘৃনিত ও' নিন্দিত--অন্তরে সর্বমহলে গ্রহনীয়, অহংবোধী, প্রতিযোগী, সম্মানীয় বটে। শেষাবদি পরকালের বিচারে আল্লাহর দরবারে  সুখে শান্তিতে কোটিকোটি বছর অতিবাহিত করার বিশেষ অবলম্বন। দান খয়রাতের উছিলায় অনন্তকাল কবরে নেকী পৌঁছার বাহন হিসেবে বিবেচিত অনেক মহল বিশেষের।  কথাটা অবশ্যই বিতর্কিত--আপাত:দৃষ্টে আপনার আমার তাই মনে হতে পারে। তবে বিতর্কীত বলতে পারবেন-- শেষনীশিতে একেবারে অ-যৌক্তিক যে বলতে পারবেন না--তাও আমি বেশ ভালই জানি।

    বাংলাদেশের সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি সহ সর্বক্ষেত্রে অধিক মূল্য, গুরুত্ব, প্রভাব যাহাই বলিনা কেন--"থাকার কথা ছিল জ্ঞান, শিক্ষা, আবিস্কার, উদ্ভাবন, শিল্প, সংস্কৃতি, আদর্শ, নীতি-নৈতিকতার। দু:খ্যজনক হলেও সত্য--'বাজার অর্থনীতি'র কল্যানে ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজের নীতি-নৈতিকতা, সম্মান, ব্যাক্তিত্ব অনায়াসে  দখল করে নিয়েছে অনৈতিকতায় ভরপূর ঘৃনিত, নিন্দিত, নিকৃষ্টতম শব্দ দূর্নীতি অর্থাৎ অনৈতিক উপায়ে অর্জিত "টাকায়"।

   জাতির জনক বঙ্গবন্ধু "দূর্নীতি" সম্পর্কে প্রচন্ড ঘৃনা পোষন করতেন তাঁর মনের মণিকোঠায়। বিষয়টি উপলব্দি করা যায় দিব্যচোখে যখন তাঁর আজীবনের সংগ্রাম অবলীলায় উৎসর্গ করেছিলেন দূর্নীতির বিরুদ্ধে। ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধান হিসেবে স্বীকারোক্তির মাধ্যমে দূর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষনা করেছিলেন একমাত্র সমসায়িক বিশ্ব ইতিহাসে 'বঙ্গবন্ধু।'  সর্ব উচ্চ রাষ্ট্রীয় পদে থেকে যেখানে সর্বপ্রকার দূর্নীতি অস্বীকার করে "সাধু" সাজার রীতি প্রচলন ছিল এবং এখনও আছে, সেখানে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছিলেন। বাকশাল গঠনের আগেপরে দেয়া তাঁর ভাষন গুলী মনযোগ দিয়ে শুনলে যে কেউ আমার কথার সত্যতা পাবেন। বাকশাল' গঠনের কারন উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন--"দুর্নীতি আমার কৃষক করেনা, দুর্নীতি আমার শ্রমিক করেনা।দুর্নীতি করে আমার কৃষক, শ্রমিকের টেক্সের টাকায় যারা ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন,ডাক্তার হয়েছেন, অফিসার হয়েছেন তাঁরা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে তিনি আরো বলেন--"আমি লাল ঘোড়া দাবড়াবো।"

    এতেই স্পষ্ট বুঝা যায়--বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগের মূল আদর্শ ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে ন্যায়নীতির সমাজ প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সাম্যভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। আর সেই ন্যায়নীতির সমাজ, আইনের শাষন প্রতিষ্ঠার মূল দর্শন ছিল "বাকশাল" অর্থাৎ "বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ"। মূলত: "বাকশাল দর্শন" ছিল  দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান মারাণাস্ত্র। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন দুর্নীতিমূক্ত দেশ, সমাজ, ব্যাক্তি ব্যাতিত তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশের কাংখীত উন্নয়ন, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি, জনগনের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন কোন অবস্থায় সম্ভব হবেনা। তাই তিনি তাঁর "রাজনৈতিক পরিপক্কতার সর্ব উচ্চ স্তরে পৌঁছার পর তাঁর মনের আঙ্গিনায় দীর্ঘযুগের লালিত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক দর্শন  "বাকশাল" তথা কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ" নামে জাতীয়দল  উপহার দিয়েছিলেন--"তাঁর প্রানপ্রিয় "বাঙ্গালী জাতি" তথা বাংলার মানুষকে।"
 
         আমি সর্বান্তকরনে বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধুকে শুধুমাত্র নতুন বাংলাদেশের শাষক পরিবর্তনের ইচ্ছার বশবর্তি হয়ে দেশীয় ও আন্তজাতিক  ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়নি।  অন্যসব কারনের মধ্যেও বড় একটি কারন ছিল "দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার নতুন লড়াইয়ের ঘোষনা"। মূলত: বাকশাল ঘোষনা--'পুজিবাদী শোষন, শাষনের বিরুদ্ধে প্রচন্ড আঘাত সৃষ্টি করেছিল। পশ্চিমাদের নিকট "বাকশাল" পুঁজিবাদী অর্থনীতির সর্বাত্মক 'কবর' রচনার দর্শন  হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

      উল্লেখিত বক্তব্যের সত্যতা নির্ণয়ের জন্যে বেশীদূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা জানি টিআইবির জন্ম হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। কিন্তু অদ্যাবদি সর্ব সরকারের রোষানলের আগুনে দগ্ধ টিআইবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল "বঙ্গবন্ধুর আদর্শ"কে ধারন করে,এবং তাঁর আদর্শকে লালন করার মানষে। এটা কোনমতেই আমার মনগড়া বক্তব্য নয়--"টিআইবি'র প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধারদের অন্যতম একজন জনাব  ড. ইফতেখারুজ্জমান সাহের কথা। অতিসম্প্রতি তাঁর একটি নিবন্ধে বিশদ বর্ণনা দিয়ে উল্লেখিত কথাটি তিনি অবলীলায় স্বীকার করে নিয়েছেন।

    তিনি একপয্যায় বলেন---"টিআইবির কার্যক্রমের ধারণাগত কাঠামোর অন্যতম উৎস ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ দেওয়া বঙ্গবন্ধুর উপরোল্লিখিত ভাষণ। যেখানে তিনি বলেছিলেন-- "দুর্নীতিবিরোধী আইনের কথা, দুর্নীতিবাজ কাউকে ছাড় না দেওয়ার কথা, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার কথা, রাজনৈতিক সদিচ্ছার কথা, আর বলেছিলেন ছাত্র-তরুণ-বুদ্ধিজীবীসহ সব নাগরিকের সংঘবদ্ধ গণ-আন্দোলনের কথা।"

   জনাব ড. ইফতেখারুজ্জমান সাহেবের নিবন্ধের লেখাটি যদি সত্যি হয়-- তাহলে তাঁর বক্তব্যের প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিলে দেখা যায়,-১৫ আগষ্ট কালরাতে খুনীরা শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি।,তাঁরা হত্যা করেছিল দুর্নীতির  বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ের "প্রধান সেনাপতিকে। খুনীরা দুর্নীতি বিরুধী লড়াইয়ের প্রধান সেনাপতিকে হত্যা করে কেড়ে নিয়েছিল--নীতি নৈতিকতায় সমৃদ্ধ পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে প্রধান মারাণাস্ত্র সামাজিক সাম্যতা বিকশীত করার পাঠশালার আবশ্যকীয় বিদ্যা 'বাকশাল'' দর্শনকে।

      '৭৫ পরবর্তী খুনিচক্র, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি, চাটুকার, মৌসাহেব,পুঁজিবাদের দোষরদের সম্মিলীত শক্তি "বাকশালের" বিপরীতে আমদানী করে "বাজার অর্থনীতির দর্শন")। তাঁরা তাঁদের প্রভুদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আ-জীবন পোড় খাওয়া রাজনৈতিক জীবনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ,  পরিপক্ক রাজনীতি, নিচ্ছিদ্র অভিজ্ঞতা, মেধার প্রাজ্ঞতার উৎগীরনকৃত দর্শন  "বাকশাল"কে পরিত্যাগ করে। স্নায়ু যুদ্ধের ভয়াবহ আন্তজাতিক রাজনীতি, বাংলাদেশের  ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, পাশ্ববর্তী বৃহৎ জনসংখ্যা অধ্যুষিত প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের অবস্থান ইত্যাদি বিবেচনা সাপেক্ষ প্রাজ্ঞতা, অভিজ্ঞতা, সর্বোৎকৃষ্ট রাজনৈতিক, সামাজিক মেধার উৎসরনের অপর নাম বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ। অশুভ শক্তির জোট "সর্বদলের সারমর্ম একমাত্র জাতীয় দল (বাকশাল)কে পরিহার করে তদস্থলে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত "পশ্চিমা পুজিবাদী গনতন্ত্রের" ধারায় চালু করে তথাকথিত "বহুদলীয় রাজনীতির উদ্ভট দর্শন।" গনতান্ত্রিক রাজনীতির অন্যতম সহনশীলতার মাধ্যম " বহু মত ও পথের একাধিক রাজনৈতিক দলের সহবস্থানে"র ধারনার বিপরীতে ''বহুদলীয়" শব্দটি যুক্ত করে মূলত: অশুভ শক্তি  সারাসরি "ডানপন্থি উগ্রবাদের" চরম ধারায় নিজেদের সম্পৃত্ত করে নেয়।

      বাংলাদেশে বসবাসরত সর্বস্তরের বাঙ্গালী অধিবাসির মন মেজাজ, ষড় ঋতুর নানামূখী আবাহাওয়া উপযোগী দর্শন "বাকশালে'র বিপরীতে--পশ্চিমা জগতের ভদ্রতার আবরনে ঢাকা পূঁতিগন্ধময় প্রতিযোগীতামূলক "বাজার অর্থনীতি" (মূলত: পুঁজিবাদী অর্থনীতি") দর্শন আমদানী করে--"খুনীচক্র দেশব্যাপি লুটপাটের রামরাজত্ব কায়েম করে"। সঙ্গত কারনে ব্যাক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, সরকার সর্বত্র প্রতিযোগীতা মূলক অর্থনীতির ধারনা সহজ উপায় "গরীব থেকে 'ধনীতে রুপান্তরের" মানষিকতা' বাঙ্গালী চরিত্রে দ্রুত প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। বাঙালীর আজম্ম পরাধীনতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট "মৌসাহেবী"কে মাধ্যম করে সদ্য ক্ষমতাসীন খুনীচক্রের কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে রাতারাতি বঙ্গবন্ধু সরকারের জাতীয়করনকৃত জনগনের সম্পদ--"কল কারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান নামমাত্র মূল্যে, ক্ষেত্র বিশেষ বিনামূল্যে ধুর্ত ব্যাক্তিদের পক্ষে নামজারী, ভূয়া রেজি: নেয়,  রাষ্ট্র অনৈতিক কাজে সর্বাত্বক সহযোগীতা প্রদান করে। তাঁরা পাকিস্তানের সমূদয় সম্পদ কুক্ষিগত করা ধনাঢ্য ২২ পরিবারের পরিত্যাক্ত  বাড়ী, গাড়ী, শিল্প, বাগান, সম্পত্তি দখল করে নেয়। সরকারি বাড়ী, গাড়ী, প্লট, প্লাট, খাস ভূমি, স্থাপনা কিছুই রেহাই পায়নি দখলবাজ পাকি প্রেতাত্বাদের কবল থেকে। এবং কি তাঁদের নিকটতম বন্ধু বিহারীদের ফেলে যাওয়া বাড়ী, ,গাড়ী, ব্যাবসা, বানিজ্য, প্রতিষ্ঠান দখল করে নিতেও দ্বিধা করেনি। গ্রামেগঞ্জে সংখ্যালুঘু বাঙ্গালী হিন্দুদেরকে ভয়ভীতি, মারপিট, দাঙ্গাহাঙ্গামা সর্বোপরি সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়িয়ে তাঁদের যুগযুগান্তরের অর্জিত সহায় সম্পদ ফেলে সীমান্ত অতিক্রমে বাধ্য করে-- তাঁদের সমূদয় সম্পত্তি জালজালিয়াতির মাধ্যমে দখল করে নেয়।

      ধূর্ত সাম্প্রদায়িক গোষ্টি, মুক্তিযুদ্ধ বিরুধী চক্র, বঙ্গবন্ধুর খুনীচক্র সম্মিলীত ভাবে লুটপাট, দখলবাজি, কালবাজারী, হঠকারীতা, চৌয্যবৃত্তি, জাল জালিয়াতির মাধ্যমে রাতারাতি ফুঁলেফেঁপে কলাগাছে পরিণত হয়। একসময়ে ঘামের গন্ধে যাদের পাশে বসার উপায় ছিলনা সময়ের ব্যবধানে তাঁদের গাড়ীর পেট্রোলের পোড়া গন্ধে গ্রাম, পাড়া মহল্লায় স্বাভাবিক ধম বন্ধ হয়ে সাফহারন মানুষের  মৃত্যুর আশংকা দেখা দেয়। স্বল্পসময়ের মধ্যে রাজধানীর ঢাকায় গরুর গাড়ী, ঘোড়ার গাড়ীর স্থলে চলতে থাকে জাপান থেকে আমদানী করা অত্যাধুনিক প্রাডো, পাজেরো সহ হরেক নামের লক্ষ লক্ষ ব্যাক্তিগত গাড়ী। একসময় পশ্চিমাদের বাড়ীর পাহারাদার,তল্পিবাহক, মৌসাহেবগন সময়ের ব্যবধানে পরিণত হয় বহু সহজ সরল বাঙ্গালী পাহারাদারের 'অক্ষর জ্ঞান শুন্য মস্তবড় সাহেবে'।একসময়ের ঢাকার নির্মল বাতাস দূর্নীতির কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে হয়ে পড়ে। দুষীত বাতাসে আবাসিক এলাকা হয়ে উঠে বসবাস অযোগ্য।  সময়ের  ঢাকার ফাঁকা  রাস্তা গাড়ীর লম্বা সারি চোখের দৃষ্টিসীমা চাড়িয়ে যায়। গাড়ীর সারির সাথে সরকারের পাকা রাস্তা তৈরির দপ্তর,অধিদপ্তর পাল্লা দিতে না পারায় স্থীর হয়ে যায় রাজধানী ঢাকা। অচল হয়ে পড়ে সাধারন মানুষের জীবনযাপন।দুর্নীতির ব্যাপ্তি এতই বিস্তৃত হয়ে উঠে যে ঐ সময় বাংলাদেশের ৬৮ হাজার  গ্রামে অতিদ্রুত  লোকের মূখে ছড়িয়ে পড়ে একটি "প্রবাদ"--'ঢাকার বাতাসে টাকা উড়ে--যে ধরে সে হয় কোটিপতি।"

    মূলত: জাতির জনকের হত্যাকারী অশুভচক্র অবৈধ, অনৈতিক, নিকৃষ্টতম উপায়ে ক্ষমতা দখল করনকে জাতীয় পয্যায় বৈধতা দানের মানষিকতায় ইচ্ছাকৃত ভাবে বাঙ্গালী জাতীকে অনৈতিকতার সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনৈতিকতার বিষবাস্প ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমি মনে করি--'তাঁরা তাঁদের মিশনে শতভাগ সফলতা অর্জন করেছে'। উচ্চ আদালত তাঁদের উভয়ের ক্ষমতা দখল অবৈধ ঘোষনা করার পরেও অনেকেই মনে করেন তাঁরাই বৈধ। আমি কাউকে বলতে শুনিনা--জিয়া/এরশাদ অবৈধ উপায়ে বন্দুকের নলে ক্ষমতা দখল করেছিল।বরং অনেকে বলতে শুনী তাঁরা সফল রাজনীতিবীদ ছিলেন! কেউ কেউ আগবাড়িয়ে বলে থাকেন--মেজর জিয়া ছিল নির্লোভ, সফল রাষ্ট্রনায়ক!" জেনারেল এরশাদকে অনেকেই বলেন 'পল্লিবন্ধু'! আমি শুধু বলতে চাই, আপনার ভাষায় তাঁরাও যদি রাজনীতিবীদ হন, তবে দয়া করে নামের আগে 'মেজর' বা 'মেজর জেনারেল' বলতে অন্তত: আপনি পারেন না। আপনিও জানেন-- 'মেজর' বলতে রাষ্ট্রের পাহারাদারদের অনেকের মধ্যে মধ্যম শ্রেনীর সর্দারকে বুঝায়। মেজর 'জেনারেল' বলতে নিশ্চয়ই সবার মাঝে বড় জনকে বুঝায়,অর্থাৎ "পাহারাদারের পাহাদার।" আপনি নিজেই বিবেচনা করুন আপনার বাড়ীর পাহারাদার আপনার অনুপস্থীতি ব্যাতিরেকে কখনও কি আপনার বাড়ীর মালিক বলতে পারবে? রাষ্ট্রের পাহাদার কি করে রাষ্ট্রনায়ক হয় এই বোধ, বিবেচনা, চেতনা অনেকের উবে গেছে?

    কালক্রমে দূর্নীতির বিষবৃক্ষ ডালপালা ছড়িয়ে সারা দেশ কে আচ্ছন্ন করে দিয়েছে। দূর্নীতির শিকড় ছড়িয়ে বাঙ্গালী জাতীর রক্তের সঙ্গে শক্ত গাঁথুনী দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে মিশে গেছে।বাঙ্গালী জাতির বোধদয় নেই, চেতনা লোপ পেয়েছে। এই সময়ে এসে কোন কাজটি দূর্নীতিযুক্ত, অবৈধ--কোনটি নয় তাও বুঝার শক্তি এখন আর অবশিষ্ট নেই। ছোট্র কয়টি উদাহরন দিলে আপনারা সহজেই বুঝতে পারবেন। যেমন--টেবিল চেয়ার সাজিয়ে, অফিস বানিয়ে, নামের আগে আল শব্দযুক্ত করে চড়া সুদের রমরমা ব্যাবসা চলছে, আমরা তাঁকে বলি "মাল্টি পারপাস" ব্যাবসা। কিস্তির শেষ এক টাকার সুদ প্রথম কিস্তির সমপরিমান ৬০ টাকা নিচ্ছে,আমরা ইহাকে অনৈতিকতা বলি না-- বলি এনজিও ব্যাবসা।, ক্ষুদ্র ঋন সহায়তার মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের জনহীতকর কর্মকান্ড। ঘুষকে নতুন নামে ডাকি পরিশ্রমের উপরি পাওনা(খোদ মন্ত্রীর মূখেও শুনেছি)। চাঁদাবাজি, মাস্তানী, প্রভাব বিস্তারকে বলি রাজনীতি। চুরি, ডাকাতি, রাহাজানী, চিনতাই মামলায়  জেলে গেলে বলি জেলফেরৎ দলের ত্যাগী নেতা। পাড়া মহল্লায় ত্যাগী নেতার জেলমূক্তিতে সম্বধনার আয়োজন চলতে থাকে চাঁদার টাকায় বড় বড় আয়োজন। দখলবাজি, টেন্ডারবাজীকে বলি নেতা বহু গুনে গুনাম্বিত, টাকা পয়সা, ধন  সম্পদ অর্জনে সফল নেতা।, কালবাজারীকে বলি এপার ওপার অথবা প্লাইং ব্যবসা, বড় পুঁজিদার হলে বলি আমদানী-রপ্তানী  ব্যাবসায় সফল, ব্যবসা জগতের ম্যাগনেট। অনৈতিক অহরনের টাকা মসজিদ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করাকে বলে অনন্তকাল কবরে নেকী যুক্ত হওয়ার চাবি। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে গগন বিদির্ণ করে মাঠজুড়ে হুজুরের সাথে তালমিলিয়ে "মারহাবা"য় শরিক হতেও কারো কোন আপত্তি থাকেনা। ভাবতে অবাক লাগে--"বাঙ্গালীর  বিবেচনা বোধ, চেতনাবোধ, সততার অহংবোধ দিনে দিনে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে, ফিরে আর কখনই আসবেনা।
 
     আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে বর্তমান সরকারের সফলতা রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে উধ্বমূখীর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। আপনি কি মনে করেন সরকারের কোন খাতেই ব্যার্থতা নেই? আমি সোজা  উত্তর দিতে কুন্ঠিত হবনা-"অবশ্যই ব্যার্থতা  আছে।" আর সেই ব্যার্থতা সরকারের সফলতার যতগুলী খাতের সূচক উধ্বমূখী চিহ্নিত করে তথ্য প্রকাশ করেছে ঠিক ততগুলী উধ্বমূখী খাতের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, শিরা উপশিরায় দূর্নীতির বিষ বাস্প  প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে শুধুমাত্র সরকার বাৎসরিক খাত ওয়ারী উধ্বমূখী  সূচকের রেখচিত্র প্রদর্শন করেছে কিন্তু দূর্নীতির "এক্স-রে" রিপোর্ট প্রকাশ করেনি।

     কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে একটি দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির প্রধান অন্তরায় কি? আমি সোজা উত্তর দেব "দূর্নীতি"। যদি জিজ্ঞেস করে কিভাবে? আমি বলব  সরকারের উন্নয়ন বাজেটের প্রতি নজর দিন, উত্তর খুঁজতে হবেনা, আপনি  নিজেই পেয়ে যাবেন। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের বছর বছর ব্যায়বৃদ্ধির দিকে তাকালে অনুমান করা যায়--কি পরিমান অর্থ সরকারের উন্নয়ন বরাদ্ধে দুর্নীতি হচ্ছে।এমন সব প্রকল্পের নাম  বলা যায়--শুরুতে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্ধ দেয়া হয়েছিল শেষ পয্যন্ত কাজের পরিধি না বাড়িয়ে ব্যয় বরাদ্ধ  তিন চার গুন বাড়ানোর পরও উক্ত প্রকল্পের কাজ হয়তো বা এখনো সমাপ্ত করা যায়নি। বিশেষ ভাবে  উল্লেখ্ করতে চাই--প্রকল্প গ্রহন করার সময় আনুষাঙ্গীক খরছ সহ ১০/শতাংশ হারে ঠিকাদারের লভ্যাংশ যুক্ত করে ব্যয়বরাদ্ধ নির্ধারন করা হয়েছিল,বছরান্তে তিন চার বার ব্যয় সংশোধনের কি কারন থাকতে পারে? বলতে পারেন মূল্য স্ফীতির কারনে ব্যয় বরাদ্ধ বাড়াতে হয়েছে। কথাটি অবান্তর নয়।এক্ষেত্রে আমি বলব একটা দেশের অর্থনীতিতে কত পার্সেন্ট মূল্যস্ফীতি ঘটলে  প্রকল্পব্যায় দ্বিগুন হয়? আপনি কি কখনও শুনেছেন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোন এক অর্থবছর মূল্যস্ফীতি দ্বিগুন আকার ধারন করেছিল?

     এই প্রসঙ্গে ১১ই ডিসেম্বর ২০১৬ ইং সালে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার উপ সম্পাদকীয় কলামে জনাব আবু নোমান বিস্তারীত এক নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন।নিবন্ধে দূর্নীতির ভয়াবহতা এবং ক্ষমতাসীন্দের উদাসীনতার ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে।  উক্ত নিবন্ধের দুটি চরন পাঠকদের উদ্দেশ্যে হুবহু তোলে দিলাম।
  তৎসময়ের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান একটি পরিসংখ্যানে বলেছেন, রফতানিকারকদের দেয়া বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধার অপব্যবহারের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ যে পরিমাণ বন্ড সুবিধার অপব্যবহার হয় তা ঠেকানো গেলে বছরে ২টি পদ্মা সেতুর সমপরিমাণ অর্থায়ন করা সম্ভব। ড. ইফতেখারুজ্জামানের মতে, রাষ্ট্রের সব খাত মিলিয়ে দুর্নীতির পরিমাণ কমপক্ষে জিডিপির ৫ শতাংশ। যাতে ক্ষতির পরিমাণ ৬৫ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার কম নয়।

  বর্তমান আওয়ামীলীগ    মন্ত্রী, নেতাদের দুর্নীতি সম্পর্কে উদাসীনতার কয়েকটি উদাহরন পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আরেকটি বার্তা দিয়েছেন জাতিকে। যে বার্তা ভয়ঙ্কর। গা শিউরে ওঠার মতো খবর বটে। তিনি বলেছেন, ‘নিজেদের লোকদের সমর্থনের কারণে সোনালী ও বেসিক ব্যাংক অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেননি’। শেয়ার কেলেঙ্কারির কারণে ৩৪ লাখ বিনিয়োগকারী পথে বসলেও অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি শেয়ারবাজার বুঝি না’। হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে হইচই করার কিছু নেই বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী। এমনকি তিন বা চার হাজার কোটি টাকা Its Nothing  বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরির ব্যাপারে এফবিসিসিআই সভাপতি সরকারের আস্থাভাজন আবদুল মাতলুব আহমেদ বলেছিলেন, ‘এটা কোন বিষয় না’, ‘অত বড় চোর নয়, ছেঁচড়া চোর’।

   এবার বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ এই সম্পর্কীত বিষয় কি বলেছিল সেদিকে নজর দিয়ে দেখি।     বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সবাই পায় সোনার খনি, তেলের খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি। যারেই যেখানে দায়িত্ব দেই, সে কেবল চুরি করে’।

      তবে বর্তমান আওয়ামীলীগ মন্ত্রী নেতারা যে যাই বলুকনা কেন 'বঙ্গবন্ধু কন্যা ' এবং তাঁর সরকার অন্তত: দুর্নীতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছেননা কেউ যদি বলেন তিনি বড় রকমের গোনাহগার হবেন। সরকারের ভিতরে বাইরে দূর্নীতি রোধে প্রতিনিয়ত সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেনই ; তাঁর বাইরেও রয়েছে দৃশ্যমান ব্যাপক দুর্নীতি বিরুধী অভিযান।  দুর্নীতি দমন কমিশন সাত ভাগে বিভক্ত হয়ে সারাদেশ চষে বেড়াচ্ছেন, প্রতিনিয়ত জেল জরিমানা হচ্ছে, মামলা হচ্ছে। সততার পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছেন। প্রথমত তাঁর সরকার দুর্নীতির উৎস খুঁজে নিয়েছেন। তম্মধ্যে দৃশ্যমান উৎস খুঁজে পেয়েছেন সরকারি--বেসরকারি কর্মকর্তা--কর্মচারিদের বেতনের সংঙ্গে দৈনন্দিন জীবন যাত্রার ব্যায়ের বড় রকমের তফাৎ। তাঁর সরকার সকলের জন্য নতুন স্থায়ী বেতন কাঠামো নির্ধারন করার জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি ঘোষনা করেন।তাঁরা দীর্ঘ আলোচনা পয্যালোচনা করে ৫স্তরের স্থায়ী বেতন নির্ধারন করে দেন। এতে সর্ব শ্রেনীর বেতনভোগী শ্রমিক কর্মচারী, কর্মকর্তার বেতন ভাতা  দিগুনের চেয়ে বেশীতে দাঁড়ায়। তাঁর বাইরেও নতুন করে পালা পার্বন কেন্দ্রিক উৎসব ভাতা সহ পুর্বের বিভিন্ন উৎসব ভাতা ক্ষেত্র বিশেষ দ্বিগুনে দাঁড়ায়। এতে বেতনভোগী সর্ব শ্রেনীর নিত্য  অভাব নিবারনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সহয়ায়ক হবে।

    ট্রান্সপারেন্সি ইন্টার ন্যাশানালের তথ্য প্রকাশকে কেন্দ্র করে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়গন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দুর্নীতি যদি না হয় সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দিল কেন? অভাব মোচনে বেতনভোগীদের বেতন ভাতা দ্বিগুন করার কি এমন প্রয়োজন ছিল। অনস্বীকায্য স্বীকার করে নেয়া উচিৎ দুর্নীতি হচ্ছে এবং তাঁর ব্যাপকতা হয়ত বা অনেকটা কমেছে। তাঁরা ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে বলে ক্ষান্ত দেননি তুলনা মূলক ধীরে হলেও কমছে তাঁর তথ্য প্রমানও উল্লেখ করেছেন।সরকারের উচিৎ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশানালের অমলোচনাকে আত্মসুদ্ধির মহৌষদ হিসেবে নিয়ে পরামর্শকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া। এতে দুর্নীতিবাজেরা অন্তত: উৎসাহীত হবেনা, রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই তাঁদের রিপোর্ট মুল্যায়ন করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
 
      ২০০৫ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত তালিকায় পৃথিবীর  সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে স্থান লাভ করেছিল পর পর চারবার, আমার প্রিয় মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পয্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল চার দলীয় জোট সরকার।এই জোটে অন্তভূক্ত ছিল দেশব্যাপি অনৈতিকতার বিষবাস্প ছড়িয়ে দেয়ার কারিগর অশুভ সাম্প্রদায়িক শক্তি, বঙ্গবন্ধুর খুনীচক্র, পুঁজিবাদের দোষর, সাম্রাজ্যবাদের প্রেতাত্বাদের জোট, নেত্রীত্বে থেকে প্তধানমন্ত্রীর আসন অলংকৃত করেছিলেন মেজর জিয়ার সহধর্মীনি বেগম খালেদা জিয়া।  হাওয়া ভবনে ছিলেন তাঁরই মূর্খ্য পুত্রধন তারেক জিয়া। আরেক অথর্ব পুত্র "কোকো" ছিলেন মেজর জিয়া যিনি স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও ,অবৈধ দখলে রেখে দিয়েছিলেন সেনাকর্মকর্তাদের জন্যে বরাদ্ধকৃত বাড়ী সেই  সেনাকুঞ্জের বাড়ীতে।তিনি সেখানে  বসে ঘুষের সাগরে নিমজ্জিত ছিলেন গোটা প্রশাসন যন্ত্রকে'। এই যেন হরিলুটের তীর্থভূমি-- ত্রীমূখী লুটপাটে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে চোর, লুটেরা, দূর্নীবাজের দেশ হিসেবে পরপর চারবার শীর্ষ স্থান দখল করে বিশ্বব্যাপি বাংলাদেশকে ধিকৃত, নিন্দিত লুটেরার দেশে পরিচিত করেছিলেন।

২০১১ এবং ২০১২ সালে এসে বাংলাদেশ তালিকার অবস্থানে যথাক্রমে ১২০ এবং ১৪৪ তম স্থান লাভ করে, যেখানে কোন দেশ নম্বরের দিক থেকে যত উপরের দিকে যাবে ততই বেশি দুর্নীতিগ্রস্থ হিসেবে গণ্য হবে।তথ্যটি সাথে ক্রমানুসারে কমার ধারাবাহিকতা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ১৩তম স্থানে স্থীর রয়েছে।সরকারের বিগত ৮বছরের শাষনে দেখা যায় প্রতি বছর এক পয়েন্ট করে নিম্নমূখীতায় সর্বগ্রাসী দূর্নীতি।

  এখানে  শেয়ার বাজার, হলমার্ক, ব্যাংকের টাকা হ্যাক হওয়া সহ বড় বড় দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটলেও দুর্নীতির তালিকার নিম্নমূখীতায় প্রভাব পড়েনি। এখানে বলতে দ্বিধা নেই সরকারের শীর্ষ মহল অন্তত: পক্ষে মন্ত্রী পরিষদের বেশীরভাগ সদস্য কোন প্রকার দুর্নীতিতে যুক্ত নেই। বড় বড় দুর্নীতির ঘটনাগুলীর ব্যাপারে সরকার যথাবিহীত ব্যবস্থা গ্রহন করাকে দুর্নীতির নিয়ন্ত্রনে সরকারের সফিচ্ছার প্রকাশ ঘটায়।

          ভোগবাদী মানসিকতা এবং অনেক ক্ষেত্রে অভাব "দুর্নীতি"র পেছনে দায়ী। তবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট দেখলে বোঝা যায় ভোগবাদী মানসিকতাই দায়ী। বাংলাদেশে বর্তমানে সব শ্রেণির ব্যাক্তিরাই লুটপাট, ঘুষ, আত্মসাত দখলবাজী করে থাকে।  উচ্চ পর্যায়ের কর্তারা মূলত তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে  ঘুষ গ্রহণকে তাদের অভ্যাসে পরিণত করেছে। উচ্চবিত্তের দেখাদেখি মধ্যবিত্তরা ও নিম্নবিত্তরাও তাদের জীবনযাত্রা মান উন্নয়নে ঘুষ গ্রহণ, লুটপাটকে নিজেদের জীবনে বৈধ করে নিতে বাধ্য হয়েছে। খোলা চোখেই  দেখা যায় যে--রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার, অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা, মসজিদেও লুটপাট, চুরী, আত্মসাৎ জাতীয়ভাবেই যেন স্বীকৃত হয়ে আছে।

আশার কথা বঙ্গবন্ধুকন্যা চতুর্দিকে চোরের অবস্থান থাকা সত্বেও নিজের পরিবার, আত্মীয় স্বজনদের রাখতে পেরেছেন বহু দূরে।ঘুষখোরের পাহারায় ঘোষ বন্ধ, লুটেরার তদারকীতে লুট, স্বজনপ্রীতিকারীদের তদারকীতে স্বজনপ্রীতি নিয়ন্ত্রন করার কঠিন এক সংগ্রামে নিয়োজিত রয়েছেন তিনি এবং তাঁর সরকারকেও রাখতে পেরেছেন সর্বদা  কঠিন এই সংগ্রামে ব্যাপৃত।
ruhulaminmujumder27@gmail.com

 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন