গনতন্ত্র চর্চার বিষয়, প্রতিষ্ঠার নয়--বাক স্বাধীনতা গনতন্ত্রের অংশ।।

    রাজনৈতিক দল, ব্যাক্তি, সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, বিদেশী অর্থে লালিত এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার, সুশীল সমাজের কতিপয় ব্যাক্তি, বুদ্ধিজীবি মহলের মধ্যে অনেকে কথায় কথায় বলেন-"গনতন্ত্র এবং বাক স্বাধীনতা" বাংলাদেশের সমাজে বিরাজমান নেই"। উল্লেখিত কথাটি'র সারবর্তা নেই বলা যায়না।যেহেতু গনতন্ত্র এমন কোন বিষয় নয়, যাহা একটি পাত্রে বা শক্ত রশি দিয়ে বেঁধে রেখে প্রদর্শন করা যায়।গনতন্ত্রের বিশালতা, মহিমা, সৌন্দয্য মানুষকে অনন্তকাল কাছে টানবে, তাঁর চাহিদায় পূর্ণতা আসে নাই, আসবেনা।
   অত্রাঞ্চলে দুই তিনটি পত্রিকা যখন ছিল, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই-- এই কথাটিই বলা হয়েছে। বৃটিশদের নিকট থেকে স্বাধীনতা অর্জনের সময়কালেও বলা হয়েছে, পাকিস্তানী শাসক শোষকদের বিরুদ্ধেও ঠিক এই অভিযোগটিই প্রাধান্য পেয়েছে সর্বাজ্ঞে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত বছরের ইতিহাসে বর্তমান সময়ে এসে--হাজার হাজার পত্রিকা, লক্ষলক্ষ পোর্টালে দেশের প্রায় প্রত্যেকটি নাগরিক নিয়ন্তর ভাব প্রকাশ করে চলেছে।। এতদসত্বেও বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় অভাবের কমতি নেই। একদিনের জন্যেও কথাটি বলা বন্ধ হয়নি, হবেও না। যারা বলছেন তারাও ক্ষমতায় ছিলেন, বিরুধীরা তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। বিরুধীরাও সরকারে এসেছে, পুর্বের ক্ষমতাসীনরেরা ঠিক একই ভঙ্গিতে একই অভিযোগ পূর্ণবার উত্থাপন করে চলেছে।
 পবিত্র কোরানে নামাজ আদায় করার চেয়ে কায়েম করার উপর অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।অনাদিকাল হতে সমাজে সমাজে, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে নামাজ কায়েমের চেষ্টা অব্যাহত আছে, থাকবে। ইসলামী শাসন ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠার পরও নামাজ কায়েমের আবেদনে সামান্যতম ছিঁড় ধরবেনা। তেমনি গনতন্ত্রও এমন একটি মানব সৃষ্ট 'দর্শন' যার কোন প্রতিষ্ঠা নেই, চর্চা আছে। অব্যাহতভাবে তাঁর চর্চার মধ্যেই সৌন্দয্য বিকশীত হয় এবং হবে। ইসলামী অনুশাসনে যেমন সমাজে সমাজে ভিন্নতা পরিলক্ষিত, গনতন্ত্র অনুশীলনেও দেশে দেশে ভিন্নতা আছে। রাষ্ট্রপতি শাসনে যেমন গনতন্ত্রের চর্চা হয়, তেমনি মন্ত্রী পরিষদ শাসিত সরকারেও গনতন্ত্রের  চর্চা নেই বলা যায়না। গনতন্ত্রের বৈশিষ্টতাই তাঁকে এইরুপে চর্চার অধিকার দিয়েছে। নামাজ যদি একচ্ছত্র কায়েমই হতো তাঁর আবেদন অবশ্যই একসময় ফুরিয়ে যেত। আমাদের সমাজে মাওলানা মৌলবিদের আর কোন কদর বা প্রয়োজন হতোনা। তেমনি গনতন্ত্র যদি কায়েমের বা প্রতিষ্ঠার বিষয় হত তাঁর আবেদন একসময় ফুরিয়ে যেত। গনতন্ত্রের সংগ্রাম বা আন্দোলনে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনহানীর প্রয়োজন দেখা দিতনা।
  গনতন্ত্র একটি মাত্র শব্দ কখনই  নয়। গনতন্ত্র বিকশিত মানব সভ্যতা'র ব্যাক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার লিখিত রীতিনীতি সন্নিবেশিত একটি 'দর্শন'। -সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনায় প্রচলিত ও ব্যাবহৃত দর্শন সমূহের মধ্যে একমাত্র 'গনতন্ত্র' বা গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যাবস্থা উত্তম, ইহাই প্রমানীত। গনতন্ত্র তার আপন মহিমায় যুগোপযোগী, আধুনিক, বিজ্ঞান ভিত্তিক, প্রগতিশীল সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনায়, তাঁর আদর্শ ও নীতি সার্বজনিন গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে।
  সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনায় গনতন্ত্রের বিশালতা, উদারতা, মহিমা, প্রগতিশীল আধুনিক চিন্তাচেতনা'র সমৃদ্ধতায় অন্যসব' রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি, আদর্শ ও দর্শন সমূহকে অকায্যকর, অশুভনীয়, অননুসরনীয়, বর্জনীয় করে তাঁর শুন্যস্থান দখল করে নিয়েছে।  বিশ্বের দেশে দেশে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় গনতন্ত্র রাষ্ট্র পরিচালনার উন্নত ও স্বিকৃত, জনহিতকর নীতি হিসেবে গৃহিত হয়েছে, হচ্ছে।   
   গনতন্ত্রের বিশালত্ব, উদারতা, আধুনিক চিন্তাচেতনায় বিকাশমান মানব সভ্যতায় প্রগতির চাকা সামনের দিকে দাবমান রেখে অদ্ভুত নতুন নতুন সামাজিক সমস্যা ও বিষয়াদি নিস্পন্নের অবাধ সুযোগ থাকায়, কালক্রমে মানুষ গনতান্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। সমাজ, রাষ্ট্রের নাগরিকদের সমমায্যদা, সমবন্টন, সমধিকার, প্রত্যেক নাগরিকের মতের প্রতিফলন ইহার অন্যতম বৈশিষ্ট।
   গনতান্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থায় নাগরিক অধিকারের অসীমতা তাঁদের চিন্তাচেতনাকে করে তুলেছে অস্পৃষ্য, অকল্পনীয়, অসীম। সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতিটি ক্ষেত্রের অসীমতাকে "গনতন্ত্র" তাঁর সৌন্দয্য ও অলংকারে'র অন্যতম বাহন 'কেন্দ্রিকতা'র মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠায় সম্ভব করে তুলেছে। গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার অলংঙ্গনীয়তা নীতিরীতি, স্বাধীনতার ভোগের অসীমতার ইতিবাবাচক ধ্যান ধারনাকে সম্মান প্রদর্শন এবং নেতিবাচক ক্ষতিকারক উপসর্গ, ধ্যানধারনা নিয়ন্ত্রন বা পরিহারে সর্বমহলকে বাধ্য করে।বলা যায়--সকল মহলের বল্গাহীন স্বাধীনতা ভোগের অধিকারে 'গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা' সীমাবদ্ধ রেখা টেনে দেয়।একদিকে স্বাধীনতার অসিমতা গনতন্ত্রের চর্চার ক্ষেত্রকে প্রসারীত করে,অন্যদিকে গনতন্ত্রের কেন্দ্রিকতা স্বাধীনতা ভোগের ক্ষেত্রকে সংকুচিত করে নাগরিকদের সচেতন, মার্জিত, শ্রদ্ধাশীল করে গড়ে তোলে। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নাগরিক মৌলিক অধিকার ভোগে'র এইরুপ সীমাবদ্ধতার রেখা--সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিরতা, কল্যানমূখি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে। রাষ্ট্র ও  সমাজকে গড়ে তুলে সুন্দর সৃজনশীল, মানবিক গুন সমৃদ্ধ করে। ব্যাক্তিকে গড়ে তুলে মার্জিত, ভদ্র, শিক্ষিত, বিজ্ঞানমনস্ক ও আধুনিক মানুষরুপে।এই রূপ রাষ্ট্রে বসবাসরত নাগরিকের সমন্বয়ে গড়ে উঠা  জাতি বেড়ে উঠে সভ্য, মায্যদাশীল, বিবেকবান জাতি হিসেবে।
 গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা ব্যাক্তির-অমায্যদাকর নেতিবাচকতার ধ্যান ধারনা, জোর জবরদস্তি, ক্ষমতার অসীমত্ব, প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার ধ্যান ধারনা, চিন্তাচেতনা কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রন ও দূরিভূত করে।সমাজকে গড়ে তোলে ন্যায়নীতি, আইন, রীতিনীতি অনুসরন করার উপযোগী করে। এককথায় সভ্য সমাজ বিনির্মানে'র একমাত্র শক্তিশালী মাধ্যম গনতন্ত্র চর্চা অব্যাহত রাখার উপর নির্ভর করে, গনতন্ত্রের রক্ষাকবচ ''গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা" বা আইন, রীতি, নীতি'র কঠোর অনুশীলন।
  এককথায়, 'গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা" অন্যর্থে আইন প্রনয়ন ও কঠোর প্রয়োগ সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার ক্ষেত্র সমুহকে মসৃনতা, সাবলিলতা ও স্থায়িত্ব দিয়েছে।গনতন্ত্রের নিবিড় চর্চায় "সমাজ, রাষ্ট্র,  সরকার ও নাগরিকের সৃজনশীলতা প্রসারীত করে। গনতন্ত্রের অব্যাহত চর্চায় বিশ্বের দেশে দেশে গড়ে উঠছে কল্যানকর, সমমায্যদা সম্পন্ন জাতি, সমাজ ও রাষ্ট্র"৷ গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা বা আইনের শাসন--"প্রগতিশীল, আধুনিক, শিক্ষিত, যোগ্য, বিচক্ষন, কল্যানকামী ব্যাক্তি, দল, সমাজ, সরকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম বাহন।" আইনের বেষ্টনী(কেন্দ্রিকতা) ব্যাতিত কোনক্রমেই গনতন্ত্রের সুফল উপভোগ্য হয়না, হতে পারেনা।
  গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা সদাসর্বদা ঘুর্ণয়মান প্রগতিশীল কল্যান রাষ্ট্রের ব্যাক্তি, সমাজ ও সরকারে। প্রগতির ধারাবাহিকতায় সদা পরিবর্তনশীল সমাজের চাহিদানুযায়ী সময়োপযোগী আইন, রীতিনীতি'র সুদৃড ভিত্তি প্রতিষ্ঠা একান্ত কাম্য।যে সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার ব্যাবস্থায় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় আইনী বেষ্টনী যতবেশী সুদৃড ও কায্যকর--সেই সমাজ, রাষ্ট ও সরকারের নাগরিকগন গনতন্ত্রের উদারতা, সৌন্দয্য, মহত্ব উপভোগে ততবেশী সাবলীল ও স্বাচ্ছন্দ অনুভব করতে পারে।
   আলোচ্য বিষয়ের আর একটি অন্যতম উপজিব্য 'বাক স্বাধীনতা'। 'বাক' স্বাধীনতা  বলতে আমরা আসলে কি বুঝি? বাক অর্থ্যাৎ মুখ দিয়ে বাতাসের সাথে নির্গত আওয়াজটি হচ্ছে 'বাক বা কথা'। মানুষের কণ্ঠ, জিব্বা, ঠোঁটের সাহায্য আওড়িয়ে বাতাসের সাথে মুখ থেকে খন্ড খন্ড  নির্গত শব্দ সমষ্টিকে 'বাক বা কথা' বলে।
 স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে সমাজে বসবাসরতঃ প্রত্যেক নাগরিক সর্বক্ষেত্রে যত্রতত্র, যা ইচ্ছা তাই, যেমন ইচ্ছে তেমন বাধাহীনভাবে চলাচল, কর্মসাধন, ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারা। এককথায় নাগরিকগনের ইচ্ছা, আকাংক্ষা, চাহিদানুযায়ী অবারীত, অসিম ও বল্গাহীন সুযোগ সুবিধা ভোগরতঃ থাকার নাম স্বাধীনতা।
  উল্লেখিত আলোচনায় স্থির সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া যায়--আলোচ্য 'বাক স্বাধীনতা'র অর্থ হচ্ছে নাগরিক বা ব্যাক্তিগন যখন যা ইচ্ছা, যেমন ইচ্ছা, যেমন খুশী তেমন ভাবে, যার উপর ইচ্ছা তার উপর বা নিকটে মনের ভাব প্রকাশ করার উলঙ্গ সুবিধা ভোগই হচ্ছে। আসলে'ই কি তাই? ইহাও কি সম্ভব?
    আলোচ্য ক্ষেত্রে স্বাধীনতার অর্থ-রাষ্ট্রের নির্ধারিত নীতিরীতি, আইনকানুন অনুসরন পুর্বক নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সমূহ যথারীতি স্বাচ্ছন্দে ভোগ করার নাম নাগরিক স্বাধীনতা। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ইহাই গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা বিবেচিত।
 এইরূপে কারো মনে বা শ্রবনে বিরক্তি, বাঁধা বা আঘাত না করে  'কথা বলা'র অর্থই হচ্ছে বাক স্বাধীনতা বা কথা বলার স্বাধীনতা(উল্লেখিত গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতানুসারে)। মানুষ কথার মালা সাজায়, তাঁর মনের ভিতরে পুঞ্জিভূত ভাব অন্যের নিকট মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রকাশের জন্য। দেখা যায়-বাক স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গরুপ হচ্ছে মনের ভাব বা কথা প্রকাশের নিয়ন্ত্রিত নীতিরীতি অনুসারে মনের ভাব প্রকাশের নাম প্রকৃত অর্থে "বাক স্বাধীনতা"।
   বর্তমান যুগে বিভিন্ন ভাবে মানুষ তাঁর মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে। যেমনঃ--সংবাদ পত্র, বই পুস্তিকা, নাটক, সিনেমা, টিভি, রেডিও। তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে তাঁর বিস্তৃতি ঘটে  সামাজিক মাধ্যম ফেইচবুক, গুগুল, টুইটার, সহ ইলেকট্রোনিক্স মিডিয়া। দলের ক্ষেত্রে পথ সভা, জনসভা, পোস্টার লিপলেট।তাছাড়াও  বহুভাবে মানুষ তাঁর মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে।
    রাষ্ট্র ও সমাজ সভ্যতার প্রথম থেকে অদ্যাবদি মানব সমাজ 'স্বাধীনতা', গনতন্ত্র, রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার রীতিনীতি মিমাংসা করতে পারেনি। অর্থাৎ আদিকাল হতে মানুষে মানুষে, সমাজে সমাজে, দেশে দেশে কতিপয় কমন বাক্য অন্য অর্থে দাবী উত্থাপিত হতে দেখা যায়--"গনতন্ত্র' নেই বা গনতান্ত্রিক অধিকার নেই, অন্যটি হচ্ছে 'বাক স্বাধীনতা' নেই বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই।
  লক্ষ করলে দেখা যায়, বাক্য দু'টি সকল সময়, সকল কালে আলাদা আলাদা করে বলা হচ্ছে।অথছ গনতন্ত্রের সংজ্ঞার  মধ্যেই 'বাক ও ব্যাক্তি স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা, অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষার অধিকার সহ ইত্যাদি মৌলিক বিষয়গুলী'র মিমাংসা বা সংজ্ঞায়ীত করা আছে। সামগ্রিকার্থে গনতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মানের বা গনতন্ত্র চর্চারতঃ সমাজে অন্যান্ন বিষয় গুলী'র সাথে উল্লেখিত বিষয় দুইটি প্রতিপালিত ও বিকশিত হতে থাকে। গনতান্ত্রিক সমাজে গনতান্ত্রিক বাহন সমূহের একটির উপস্থিতিতে অন্যটির অস্তিত্ব অস্বিকার বা অস্তিত্বহীন রাখার কোন প্রকার সুবিধা নেই। উল্লেখিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গনতন্ত্রের সংজ্ঞায় গুরুত্ব সহকারে  সন্নিবেশিত আছে, ছিল, অনন্তকাল থাকবে।
  ব্যাক্তি, সমাজ, সরকার, রাষ্ট্র ও দলে গনতন্ত্র চর্চা অনুপস্থিত রেখে কতিপয় লোক খন্ডিত ভাবে নাগরিকদের উল্লেখিত দুটি অধিকার, রাষ্ট্র ও সরকার কতৃক লঙ্গিত করার অভিযোগ উত্থাপন করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।  ইহার একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে--নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষনের মাধ্যমে প্রতারিত করা, সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকারকে সদা বিব্রত রাখা, রাষ্ট্র ও নাগরিকদের প্রবঞ্চিত করার অসৎ মানষিকতা অথবা অভ্যেসগত অজ্ঞতা।
 ইহা অনস্বিকায্য যে--'গনতান্ত্রিক দর্শনে তাঁর মৌলিক বিষয় সমূহ খন্ড খন্ড প্রকাশ করার সুযোগ  নেই বা রাখা হয়নি।  গনতন্ত্র মৌলিক শব্দ। অন্যভাবে বলা যায়--'রাষ্ট্র, সমাজ, সরকার পরিচালনার রীতিনীতি সন্নিবেশিত দর্শনের মলাটে'র শিরোভাগে দৃশ্যমান খচিত অপরিবর্তিত, অমূচনীয়, অবিকৃত, সংযোজন, বিয়োজনহীন শিরোনাম হচ্ছে 'গনতন্ত্র'।--গনতন্ত্র সামগ্রিক অর্থেই অনুকরণীয়, অনুসরনীয়, প্রতিপালনীয়, অনুশীলনীয় বিষয়--নিশ্চয়ই প্রতিষ্ঠিতের বিষয় নয়।
  উল্লেখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে--'গনতন্ত্র শব্দটির আগে বা পরে কোন প্রকার বিশেষন যুক্ত করার অর্থ 'গনতন্ত্র বা গনতান্ত্রিক দর্শনে'র খন্ডিত বা বিকৃত উপস্থাপনের মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা।  সামগ্রিকভাবে গনতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মানের চর্চা, সংগ্রাম, আন্দোলনে ব্যাপৃত না থেকে, তাঁর অভ্যন্তরের বিশেষ অঙ্গের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ব্যাপৃত থাকার উদ্দেশ্য--কোনক্রমেই সৎ উদ্দেশ্য হতে পারেনা।'
   উল্লেখিত দুটি বিষয়ের অধিকার আদায়ের নিয়ন্তর, বিরামহীন আন্দোলন, সংগ্রাম উন্নত বিশ্বের দেশ দেশে চলছে, চলবে অনাদিকাল। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশে দেশে  যেমন চলছে, তেমনি গনতন্ত্রের 'রাজা-রাণী' খ্যাত 'বৃটেন--ভারতে'ও চলছে। পুঁজিবাদী বা ধনাঢ্য দেশে'র মানুষ যেমন অনাদিকাল হতে গনতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতার অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে ব্যাপৃত, তেমনি তৃতীয় বিশ্বের সর্বনিম্ন জীবনমানের দেশ সোমালিয়া, ইথিউপিয়ায়ও  আন্দোলন সংগ্রাম মূখর। মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ সমূহে যেমন গনতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মানের সংগ্রাম অব্যাহত, তেমনি উন্নয়নশীল দেশ সমূহের মধ্যে বাংলাদেশ, মালয়শিয়া, থাইল্যান্ড সহ অনেক দেশেই গনতন্ত্র রক্ষা,পূণঃদ্ধার, প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম অব্যাহত চলছে, চলবে অবিরত।
   শতবছরের আন্দোলন সংগ্রাম এবং আগামী সহস্র বছর অব্যাহত রাখার পরও গনতান্ত্রিক মৌলিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন,সংগ্রামের আবেদনে এতটুকু ঘাটতি হবেনা। কারন আগেই উল্লেখ করেছি--গনতন্ত্র এমন একটি মনুষ্য সৃষ্ট গভীরতম দর্শন, যাহা কস্মিনকালেও প্রতিষ্ঠিত করার বিষয় নয়, বরঞ্চ নিয়ন্তর চর্চা অব্যাহত রাখাই তাঁর ধর্ম।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন