মিডিয়ায় বানিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋনে'র আলোচ্যসূচি বহির্ভুত অতিকথন-- আইন, রীতিনীতি অবজ্ঞা সমতুল্য৷ 

  বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষান্তে মিডিয়া বানিজ্যিক ব্যাংকের ঋন সম্পর্কিত জটিল, কঠিন, সাধারনে দুর্ভেদ্য এবং জনমনের স্পর্ষকাতর একটি বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত বৈঠকি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে৷ দেশের শিক্ষিত জনের মধ্যে অনেকের বানিজ্যিক ব্যাংকের শিল্প ঋন এবং ব্যাবসায়ীক ঋনের সাথে সম্পর্ক নেই৷ দেশের ৯০শতাংশ মানুষ অর্থ ঋন আইনের ধারা সম্মন্ধে জ্ঞান রাখেনা, অর্থ ঋন আদালতের মামলার প্রক্রিয়া অনুসরণ প্রয়োজন অনুভব করেনা৷কারন তাঁদের পেশার সঙ্গে বিষয়টি সম্পর্কিত নয়,আমজনতার থাকবে কোত্থেকে৷ এমনিতে বাঙ্গালী'র চিরাচরিত অভ্যেস, নিজে চোর হলেও অন্যের চুরি পছন্দ করেনা৷  এক ভিক্ষুক আরেক ভিক্ষুকের ভিক্ষা পছন্দ করেনা৷ এমন দেশে ব্যাংকের ন্যায় একটি সুরক্ষিত প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কোটি টাকা সরকার বা সরকারের সহযোগীতায় লুটপাট হয়েছে বা হচ্ছে--নিঃসন্দেহে দেশের জনগন মানতে পারেনা, মানবে না৷ নির্বাচনের পুর্বে টাকা লুটপাট সংক্রান্ত স্পর্ষকাতর বিষয়টি নিয়েই কতিপয় অতিজ্ঞানী বিজ্ঞ অভিজ্ঞ, গুনিজনদের দাওয়াত করে নিয়ে এসে ইলেকট্রোনিক্স মিডিয়া রাতভর বৈঠকি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে৷   
  আলোচক বৃন্দের আলোচনায় ব্যাংক ব্যাবস্থাপনায় দুর্বলতা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি,আইনের ফাঁক ফোঁকর, আইনের দুর্বলতা, ঘুষ, অনৈতিকতা ইত্যাদি বিষয়ে'র কঠোর সমালোচনা ও পথনির্দেশনা সীমাবদ্ধ থাকলে দেশ জনগন, সরকারের উপকারই হতো৷ এইরুপ গঠন মূলক, উপদেশ মূলক, সংশোধন মুলক  আলোচনাকে জনগন, সরকার, সংশ্লিষ্ট সকল মহলের  অবশ্যই সমর্থনযোগ্য,বাংলাদেশের অনৈতিকতাপূর্ণ সমাজে প্রয়োজনও আছে৷
   এক্ষেত্রে বেশীর ভাগ আলোচক প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা অবিরত চালিয়ে যাচ্ছে যে-বর্তমান সরকার দেশের বানিজ্যিক ব্যাংকগুলী লুটপাট করে দেউলিয়া বানিয়ে দিয়েছে৷ আলোচনায় আরো একটি বিষয় দর্শক শ্রোতাদের স্পষ্ট ধারনা দেয়ার চেষ্টা লক্ষ করেছি--ইতিপুর্বে বাংলাদেশে আর কখনও ঋন খেলাপি ছিলনা, খেলাপি ঋনের ভারে ন্যুজ কোন বানিজ্যিক ব্যাংকও ছিলনা৷ বর্তমান সরকারের শাসনামলে কেবলমাত্র লুটপাটের ভয়াবহ সমস্যার উদ্ভব হয়েছে৷ লক্ষনীয় বিষয়টি হচ্ছে--লুটপাটকৃত প্রতিষ্ঠানটির নামের আগে বানিজ্যিক, ঋন শব্দের আগে পরে খেলাপি শব্দটি তাঁরা রাতের আঁধারে বেমালুম ভুলে যায়৷ তাঁদের যেন মনে হয়--ব্যাংক ব্যাবসার উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করেনি, ব্যাবসায়ী প্রয়োজনীয় সম্পদ বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ব্যাবসার  মূলধন করেনি৷   শুধুমাত্র সরকারের লুটপাটের জন্যই সব আয়োজন আগে হতে নিস্পন্ন করে রাখা হয়েছিল৷  আলোচনার বিষয়বস্তু "ঋন খেলাপি এবং খেলাপি ঋনের ভয়াবহতার স্থানে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা হয়--আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুটপাট৷ 
 আসলে কি তাই? ব্যাংক সম্পদ বন্ধক রেখে ঋন গ্রহনের অর্থ কি টাকা লুট,? আত্মসাৎ? সরকার প্রধান, সরকার প্রধানের সহযোগী মন্ত্রী পরিষদের সদস্য বৃন্দ ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে, সেই ঋন আসলে'ই কি ফেরৎ দিচ্ছে না? নাকি সরকার দেশ পরিচালনার ঘাটতি পূরণার্থে ব্যাংকের সমূদয় টাকা নির্বাহী আদেশে উত্তোলন করে নিয়ে গেছে? রাষ্ট্রের স্থায়ী বিধি বিধান এবং রীতিনীতিতে কি সরকার বা সরকার প্রধানকে টাকা উত্তোলনের ক্ষমতা দিয়েছে? নাকি রাষ্ট্রের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রের বিধান অনুযায়ী আপদকালীন ঋন গ্রহন করে ফেরৎ দিচ্ছে না? 
  মিডিয়ায় আলোচকবৃন্দের আলোচনা শুনেশুনে, সরকারের উপর বেজায় ক্ষুব্দমনে মাননীয় অর্থমন্ত্রী'র সংসদে উত্থাপিত ১০০ ঋন খেলাপির তালিকা বারবার দেখেছি, তন্নতন্ন করে খুঁজেছি৷ না পেলাম না-সরকার, সরকার প্রধান, সরকারের সহযোগী মন্ত্রী পরিষদ সদস্য এবং অঙ্গ প্রতিষ্ঠান, কারোই একটি নাম আমি তালিকায় খুঁজে পেলামনা!!
 বরঞ্চ দেখে আশ্চায্য হলাম-ঋন খেলাপি ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৯ প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তিকে ২০/৩০বছর আগেও ঋন খেলাপির তালিকায় এইভাবেই দেখেছি৷ তখনও অর্থ ঋন আদালতে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে শুনেছি৷ এবারের তালিকায়ও তাঁদের দেখলাম,অর্থ ঋন আদালতে মামলার তালিকায়ও তাঁদের বা তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নামই পেলাম৷পুর্বেও শুনেছি সরকারী ব্যানিজিক ব্যাংক খেলাপি ঋনের চাপে প্রান যায় যায় অবস্থা, এখনও তথৈবচ৷ আলোচক বৃন্দের উষ্ণতার হেতু কি? মূল সমস্যাটি কোথায়? 
  আলোচক বৃন্দের নিকট আমার জানতে ইচ্ছে করে--জনাব,আপনার পিতা স্থানীয় কৃষিব্যাংক থেকে-যে শষ্য ঋন ২০হাজার টাকা ৩০/৩৫ বছর আগে গ্রহন করেছিল,আপনার পিতার মৃত্যুর পর, আপনি কি সেই ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছিলেন? নাকি সেই ২০ হাজার টাকা পূণঃ তফসিল (রিকোভারী) হতে হতে লক্ষ টাকার উপরে মুলধন দাঁড়িয়েছে৷  ঐ ঋনটি  আপনার নামে চলছে? নাকি ঐ ব্যাংকে মেয়াদ উত্তিন্ন ঋনের তালিকায় ঝুলছে? বলবেন কি? আপনার জবাব যেভাবেই দেন না কেন, ঐ জবাবের মধ্যেই খেলাপির ঋনের বর্তমান সময়ের ভয়াবহতা লুকায়িত আছে৷আসুন একবার দেখে আসি, খেলাপি ঋন কখন থেকে শুরু, কখন কেমন ছিল খেলাপি ঋনের প্রকৃত অবস্থা,ঋন আদায়ের কৌশলই বা কি,সরকারের দায় কতটুকু,সরকারের কি ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিৎ ছিল অথছ করেনি৷ নিম্নের আলোচনায় সকল প্রশ্নের জবাব খুঁজে দেখি৷  

 পরিবর্তিত বাংলাদেশঃ--
   বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ ১৯৭২ এ যাত্রা শুরু করেছিল মাত্র ৩হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট, তিনশত মেঘাওয়াট জলবিদ্যুৎ, ৮/৯টি ইংরেজী/বাংলা জাতীয় দৈনিক পত্রিকা,১০/১২টি আঞ্চলিক পত্রিকা, দৈনিক ৮ঘন্টা সম্প্রচার সর্বস্ব ১টি মাত্র টি,ভি কেন্দ্র, ১২ ঘন্টা সম্প্রচার সর্বস্ব ৩টি রেড়িও স্টেশন, ১৯টি আন্তজেলা ১৪ ফুট প্রশস্ত এবড়ো থ্যাবড়ো ব্রিজহীন পাকা সড়ক, ৪টি অর্থশূন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক, ১টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাভুক্ত বীমা কোম্পানি, ৩টি ব্রিজহীন ব্রডগেজ রেল সংযোগ সড়কের উপর নির্ভর করে৷
   বঙ্গবন্ধুর সেই'ই স্বপ্নের বাংলাদেশ অর্ধশত বছরের কাছাকাছি সময়ে এসে--তাঁর উন্নয়ন বাজেট দাঁড়িয়েছে ৪ লক্ষ কোটি টাকার অধিক৷  ১৬হাজার মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ, শতাধিক বাংলা/ইংরেজী দৈনিক জাতীয় পত্রিকা, হাজারের অধিক আঞ্চলিক পত্রিকা, হাজার হাজার অনলাইন পত্রিকা, পোর্টাল, লক্ষ লক্ষ ওয়েব পেইজ! শতাধিক সরকারি/বেসরকারী বানিজ্যিক ব্যাংক, অর্ধশত সরকারি/বেসরকারী বিমা কোম্পানি, আন্তজাতিক মান সম্পন্ন দু'টি শেয়ার বাজার, বিশাল আমদানি/রপ্তানী আর্থিক খাতের উপর এসে দাঁড়িয়েছে৷ যোগাযোগ ব্যাবস্থাপনায় ঘটেছে অভুতপূর্ব বিপ্লব--উল্লেখযোগ্যের মধ্যে ৬৪টি আন্তজেলা সংযোগ মহাসড়ক, ৪হাজার ৫শত এর অধিক উপজেলা আন্তঃ আঞ্চলিক সংযোগ সড়ক, প্রায় ৫৫জেলায় বিস্তৃতি ঘটেছে ব্রিজ, পুল সমৃদ্ধ ব্রডগেজ রেলসড়ক, নয়নাভিরাম আন্তঃদেশীয় মহাসড়ক, ব্যাস্ততম শহর ও স্থানে অত্যাধুনিক ফ্লাইওভার, ওভারব্রিজ, মেট্রো রেল পথ৷ বিস্তৃতি ঘটেছে আন্তদেশীয় আকাশপথ, সমুদ্রপথ, অভ্যন্তরীন আকাশপথ, জলপথ৷ কল্পনাতীত দ্রুতগতিতে সাহায্য নির্ভর বাংলাদেশ বিশাল এক উদীয়মান অর্থনীতি সমৃদ্ধ সাহায্যদাতা বাংলাদেশে'র অবস্থান নিশ্চিত করে দাঁড়িয়েছে৷
  আশ্চায্য হতে হয়--'৭২ এ বঙ্গবন্ধু যে দেশটির যাত্রা শুরু করেছিলেন মাত্র ৩হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট দিয়ে৷  ২০১৮ ইং সালে এসে সেই দেশটি'র ব্যাংক ব্যাবস্থাপনা রাষ্ট্রে বিদ্যমান আইন অনুসরন করে তাঁর দূবৃত্ত ঋন খাতকদের অতীতের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে, চলতি বছর ৪০ হাজার কোটি টাকা কৃ-ঋন অবলোপন অর্থাৎ হিসেবের খাতা থেকে চিরতরে মুছে দিয়েছে৷ 

খেলাপি ঋন ও ঋন খেলাপিঃ--
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাহেব চলতি বছরে'র সেপ্টেম্বর মাসে  সংসদ'কে জানিয়েছেন--৮৮টি সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও অন্যান্ন আর্থিক   প্রতিষ্ঠানের বর্তমানে ঋণখেলাপির সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৮ জন৷  এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট উক্ত অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা।(তথ্য সুত্রঃ সংসদ কায্য বিবরণী৷) 

রাষ্ট্রের নাগরিকদের যৌক্তিক ধারনাঃ--
   দেশের ৮০% নাগরিক বিদ্যমান সর্ববৃহৎ আর্থিক খাত ব্যাংক ব্যাবস্থাপনা'র সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত৷ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি, তম্মধ্যে ২লাখ ৩০ হাজার ৬শত ৫৮জন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট খেলাপি ঋনের পরিমান ১লাখ ৩১ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা৷ অর্থাৎ ৮০% হারে প্রায় ১৫ কোটি মানুষের তিলে তিলে জমানো টাকা ২লাখ ৩০ হাজার ৬ শত ৫৮ জন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান ব্যাবসার পুঁজি দেয়ার অঙ্গিকারনামা প্রদান করে ঋন হিসেবে গ্রহন করেছিল৷ উক্ত ব্যাক্তিগন উল্লেখিত টাকার সুদ প্রদান দূরে থাকুক আসল মূলধনও ফেরৎ দিচ্ছে না৷ 

সরকারঃ--
 রাষ্টের বহু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তাঁর নাগরিকদের নাগরিক সুবিধা দানের প্রয়োজনে পুর্বাপর গঠন করে রেখেছে, রাখবে৷ রাষ্ট্রের সেই সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যথাযথ কায্যকর, সচল, গতিশীল রাখার প্রয়োজনে উক্ত রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ট নাগরিকগন নির্দিষ্ট আইন, বিধি, নিয়ম, রীতি অনুসরণ করে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরের নাগরিকগনের মধ্য হতে কতিপয় নাগরিককে নির্বাচিত করেন৷ নির্বাচিত নাগরিকগন রাষ্ট্রের পুর্বের বিধান ও নিয়মানুসারে  আলোচ্য রাষ্ট্র  পরিচালনা করার নিমিত্তে আইনানুসারে একটি পরিষদ, সংঘ, দল, সংগঠন বা সংসদ গঠন করে থাকে৷ বাংলাদেশে এইরুপে গঠিত সংসদ, সংস্থা বা সংগঠনের নাম সরকার৷
 নাগরিকদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত কল্পে সরকার নির্দিষ্ট বিধি বিধান অনুসরন পুর্বক প্রয়োজন মাফিক বিদ্যমান আইন বাতিল, নতুন আইন প্রনয়ন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত৷   এককথায় রাষ্ট্রের পক্ষে তাঁর নাগরিকদের কল্যানকর কর্ম সম্পাদন করার উদ্দেশ্যে এবং প্রয়োজনে রাষ্ট্রের নাগরিকগন বিশেষ বিশেষ কতিপয় নাগরিককে নির্দিষ্ট নিয়মানুসারে চিহ্নিত করেন৷ ঐ চিহ্নিত ব্যাক্তিগন নির্দিষ্ট সময় রাষ্ট্র পরিচালনার করার নিমিত্তে সরকার গঠন করে থাকে৷  

সরকারের কর্ম পরিধিঃ--
সরকারের কর্ম পরিধি ব্যাপক,এখানে আলোচয় বিষয় সহজে বোধগম্য করার প্রয়োজনে অৎসংশ্লিষ্ট কর্ম পরিধি আলোচনা করছি৷ রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, সংস্থা পরিচালিত করার নিমিত্তে নির্দিষ্ট আইন, কাঠামো, বিধি, বিধান, নীতি, রীতি, আদর্শ বিদ্যমান থাকে৷ সরকারের কর্মকান্ড পরিচালনা, ক্ষমতা প্রয়োগ করারও নির্দিষ্ট বিধি বিধান, নীতি, আদর্শ রয়েছে৷ নাগরিকগন যেমন আইন ভঙ্গ করার অধিকারী নন, তেমনি সরকারও রাষ্ট্রের বিধি বিধান বর্হিভূত কর্মকান্ড করার অধিকারী হতে পারেন না৷ তদ্রুপ ঋন খেলাপি ও খেলাপি ঋন আদায়ে প্রচলিত আইন বর্হিভূত কোন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেন না৷ প্রয়োজনে রাষ্ট্রের বিধি বিধান, নীতিরীতি অনুসরণ করে অকায্যকর, অপ্রয়োজনীয় আইন বাতিল করে যুগোপযোগী নতুন আইন প্রনয়ন করার অধিকার রাখে বিদ্যমান আইন সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন করার অধিকার সরকার সংরক্ষন করেন৷ প্রনিত আইনানুযায়ী সরকার পরবর্তিতে উদ্ভূত ঘটনার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যাবস্থা গ্রহন করার বৈধ কতৃপক্ষকে আদেশ, নির্দেশ দিতে পারেন৷ সরকারের পক্ষে বৈধ কতৃপক্ষ আদিষ্ট হয়ে, রাষ্ট্রের আইনগত সংস্থা, সংগঠিত ঘটনায় জড়িত ব্যাক্তি অপরাধী বা অপরাধের সাথে সম্পৃত্ত প্রতিষ্ঠানের আইনানুগ পরিচালনা পরিষদকে, রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিচারালয়ে বিচার করার নিমিত্তে সোপর্দ করেন৷ বিচারালয় সরকারের প্রনিত আইনানুসারে উক্ত ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিচার কায্য সম্পাদন করে থাকেন৷  

 ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতির প্রতিকারঃ--
  রাষ্ট্রের ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিক যেমন প্রতিকার চাইবার অধিকার, রাষ্ট্র তাঁর আইনের বিধানে সংরক্ষন করেছে, তেমনি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন সংস্থা সমূহেরও প্রতিকার চাইবার অধিকার রাষ্ট্র সংরক্ষন করেছে৷ নাগরিকেরা যেমন নির্দিষ্ট আইনগত বৈধ সংস্থার নিকট প্রতিকার চাইতে হয়, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত সংস্থাও নির্দিষ্ট আইনগত বৈধ সংস্থার নিকট প্রতিকার চাইতে হয়৷ নাগরিক যেমন তাঁর ক্ষয়ক্ষতির প্রতিকার না চাইলে আপনা আপনি প্রতিকার এসে ধরা দেয়না, তেমনি. সংস্থার ক্ষেত্রেও তদ্রুপ৷

সরকারের দায়ঃ--
   সরকার আলোচ্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে'র নাগরিক ও সংস্থা সমূহের পরস্পরের কায্য যথারীতি যথাসময়ে, যথাযথ আইনানুসারে সম্পাদনের তদারকি কারক৷ এইরুপে রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যথাযথ আইনানুসারে কায্যকর, সচল ও গতিশীল রাখার স্বার্থে, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে'র সকল সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, নাগরিকের উদ্ভুত সমস্যা, সুবিধা, অসুবিধা সমূহের আইনানুগ সম্পাদন করার অধিকারী সরকার৷ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরের সর্ব বিষয় রাষ্ট্রের অনুসৃত নীতি,বিধিবদ্ধ আইনানুযায়ী সরকার নিয়ন্ত্রন, সচল, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সৃষ্টি, বিলীন করার অধিকারী৷ 

সরকার ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের পদক্ষেপঃ-
 এবার দেখা প্রয়োজন উপরে উল্লেখিত আলোচনা অনুসারে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ এবং সরকার ঘটিত চাঞ্চল্যকর খেলাপি ঋন আদায়ে স্বস্ব করণীয় কর্ম যথারীতি,যথাসময়ে সম্পাদন করেছিল, নাকি গড়িমসি করেছিল৷ 
ব্যাংক কতৃপক্ষ তাঁর ২লক্ষ ৩০ হাজার ৬৫৮ জন ঋন খেলাপি গ্রাহকের অনাদায়ী ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋন আদায়কল্পে রাষ্ট্রের বৈধ সংস্থা অর্থ ঋন আদালতে ২লক্ষ ৭২ হাজার ৬৫৮টি মামলা দায়ের করে টাকা আদায়ের প্রতিকার চেয়েছে৷ (সুত্রঃ অর্থ ঋন আদালত মামলার কজলিষ্ট)
 ইহা স্পস্ট যে ঋন গ্রহিতার সংখ্যা এবং মামলা দায়ের সংখ্যায় প্রমান করে সরকার আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহনে কোন প্রকার স্বজনপ্রীতি, সময়ক্ষেপন, অলসতা দেখায়নি৷

(১) ঋন খেলাপি এবং খেলাপি ঋনের উৎসঃ-
 (ক) দুর্বল আইনঃ-সরকার খেলাপি ঋনের ভয়াবহতা অনুভব করে ২০০৩ সালের অর্থ ঋন আইন সংশোধন ও নতুন করে ৮নং আইন সংযুক্ত করে৷ প্রনিত ৮নং আইনে ঋন প্রদান, ঋন আদায়ের কৌশল, ঋন গ্রহিতার অধিকার সংরক্ষন, ঋন প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, ব্যাংক কতৃপক্ষের ঋন আদায়ের বিধি বিধান সংযোজিত করে৷  
  (খ) ঋন গ্রহিতা ও ব্যাংক কতৃপক্ষের অনৈতিকতাঃ--আইনানুসারে ব্যাংক কতৃপক্ষের ঋন পূণঃতফসিলিকরন অনুসারে সম্পূর্ণ সুদ বা দুদাসলের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা মাত্র, নতুন ঋন বরাদ্ধের বিধান রাখা হয়৷  ঋন গ্রহিতা এবং অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজসে খাতাপত্রে পরিশোধ ও নতুন ঋন বরাদ্ধ নীতি অনুসরণ করে একই সময়ে সুদাসলের সমূদয় টাকা পরিশোধ এবং পুণঃঋন গ্রহন করেন৷ ফলে প্রতিবছর ঋন গ্রহিতা বরাবর প্রথম বরাদ্ধ ঋন ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে ৫/১০ গুন টাকায় পরিগনিত হওয়ার উদাহরন ভুরি ভুরি পাওয়া যায়৷  আসলের দ্বিগুন সুদ হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয় ভাবে খাতকের হিসেব স্থগিত--আইনগত ভাবে স্বিকৃত৷এখানে মূলধনের অধিক সুদের টাকা মওকুপ পাওয়ার আইনগত সুবিধা ঋনগ্রহিতা আইনগতভাবে অধিকারী৷ 
(গ)অবলোপন প্রক্রিয়াঃ--অর্থ ঋন আইনের ৮ ধারার বদৌলতে কু-ঋন অবলোপন, ঋন পূণঃ তসিলিকরন ইত্যাদি ফাঁক-ফোঁকর আরও প্রসারীত করা হয়৷  দৃবৃত্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজসে উল্লেখিত ঋন গ্রহিতা বরাবর প্রতি অর্থবছর ঋন পূণঃতফসিল, ঋন সমন্বয়ের আইনগত ভাবে সিদ্ধ৷ব্যাংক তাঁর ব্যাবসার উদ্দেশ্যে ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋন বিতরণ করে থাকে৷ দুর্বৃত্ত কর্মকর্তাদের ঋনের বিপরীতে প্রয়োজনীয় সম্পদ বন্ধকি না রাখায় ঋন গ্রহিতা সঙ্গত কারনে উক্ত ঋন পরিশোধে আগ্রহি হয়না  উল্লেখিত ঋনের সিংহভাগ পরবর্তিতে  কৃ-ঋন চিহ্নিত করে, প্রতি অর্থবছর অর্থ ঋনের ৮ নং আইনের বিধানবলে ব্যাংক কতৃপক্ষ হাজার হাজার কোটি টাকা অবলোপন করে এসেছে৷ফলতঃ ঋন গ্রহিতাগন এতে নিশ্চিত যে, কয়েক বছর ঋন পকেটস্ত করে রাখা সম্ভব হলে, উক্ত ঋন স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবলোপন হবে,ঋন গ্রহিতা ঋনের দায় হতে  মুক্তি পাবে৷ 
(ঙ) উচ্চ আদালতে মামলা স্থগিতাশের সুবিধাঃ--বছরের পর বছর মামলা পরিচালনার পর ব্যাংক কতৃপক্ষ অর্থ ঋন আদায় আদালতে রায় পেলেও ঋন খেলাপি খাতক উচ্চ আদালতে প্রতিকার চেয়ে রিট মামলা দায়ের করার অধিকার রয়েছে৷ ঋন গ্রহিতা অর্থ ঋন আদালতের রায় স্থগিতের আবেদন করে,  সম্পুর্ণ টাকাই সহজে হজম করার কৌশল গ্রহন করেন৷
   এইরুপে উচ্চ আদালতের বিভিন্ন ধরনের ৫৮৬৮ রিট মামলায় প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আটকে গেছে। এরমধ্যে অর্থঋণ সংক্রান্ত রিট মামলার সংখ্যা ৩ হাজার ৫৬৭টি, অর্থের পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকা। ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) সংক্রান্ত রিট মামলা ৫১১টি, জড়িত অর্থ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য ১ হাজার ৭৯০টি রিট মামলায় ১১ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে। 
(সুত্রঃ-অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ)

(২)  লুটপাট সংস্কৃতি'র ধারাবাহিকতাঃ-
 মনে করার কোন কারন নেই--বর্তমান সরকারের শাসনামলে এই বিপুল পরিমাণ টাকা, ঋনের নামে লুটপাট করা হয়েছে৷৭৫ পরবর্তি সরকার গুলোর মদদপুষ্ট কতিপয় ব্যাক্তি বিহারীদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তি, হিন্দুদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তি,সরকারের পরিত্যাক্ত সম্পত্তি, সরকারের খাস ভূমি লুটপাট, দখলের মাধ্যমে উঠতি ধনিক শ্রেনীতে পরিণত হয়৷ সময়ের পরিক্রমায় ঐ সমস্ত ব্যাক্তির পরিবার সমূহ অর্থ-বিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তিতে বর্তমান সময় বাংলাদেশের সমাজে কুলিন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ ঐ সমস্ত কুলিন পরিবার ক্রমান্বয়ে উন্নত দেশের নাগরিকত্ব,বাড়ী, গাড়ীর মালিকে পরিণত হয়ে আইন, কানুন, রীতি, নীতি তোয়াক্কা করার প্রয়োজন মনে করেনা৷
 লক্ষ করলে দেখা যায়--তাঁদের সন্তান-সন্ততিরাই আজকের বাংলাদেশের ব্যাংক, বিমা, শেয়ার বাজার লুটপাটের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে৷

(৩)বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের ধারাবাহিকতাঃ---
(ক)ঃ--(৭৫--৯০)
  বঙ্গবন্ধু'র অসীম সম্ভাবনার বাংলাদেশ ২১বছর দৃবৃত্ত শাসনের ফলে অর্থনীতি মাথাছাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি৷ ৯০দশকের প্রারম্ভে শাসক পরিবারের লাগামহীন দুর্নীতি, লুটপাট সত্বেও অর্থনীতি মন্থর গতিতে এগুতে থাকে৷ ২০০১ইং হতে ২০০৬ইং সাল পয্যন্ত শাসক পরিবারের দুর্নীতি, লুটপাট এমন এক পয্যায় পৌঁছে--৫বছরের শাসনকালে ৫বছরই বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খাতায় নাম লেখায়৷
  ১৯৭৫ হতে ৯০ পয্যন্ত  অতি ক্ষুদ্রাকার অর্থনীতির বাংলাদেশে খেলাপি ঋনের পরিমাণ আর্থিকখাতের মোট মূলধনের ৬′৫০--৭'০০ এর ঘরে ঘুরপাক পরিলক্ষিত ছিল৷ উল্লেখিত সময়ে নেয়া ঋন আজব্দি পূণঃতফসিল হতে হতে খেলাপির খাতায় যথারীতি বহুগুন বৃদ্ধি পেয়ে উপস্থিতি জানান দিয়ে যাচ্ছে৷ ঐ খেলাপি ঋনই কোন এক সুবিধাজনক সময় লাফিয়ে কু-ঋনের তালিকায় স্থান দখল করবে,এবং অবলোপনের অপেক্ষায় প্রহর গুনবে৷এভাবে'ই দীর্ঘকাল ব্যাংক কর্মকর্তা, ঋন খাতক যোগসাজসে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মহাউৎসব চালিয়ে আসছে৷ তথাপিও পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৯০ এর পর গনতান্ত্রিক আবরণের আবহাওয়ায়, দেশের অর্থনীতি'র পরিধি ধীরলয়ে হলেও বিস্তৃতি ঘটেছে৷
   মুলতঃ অগনতান্ত্রিক লুটেরা সরকার লুটপাট আইনসিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ২০০৩ সালে অর্থ ঋন আইনে ৮নং আইন সংযুক্তিকালে ব্যাপক ফাঁক ফোঁকর রেখে সংযুক্তি ঘটিয়েছিল৷ 
(গ) (১৯৯০--২০০৯)ঃ- ৯০ থেকে ২০০৯ ইং সাল পয্যন্ত ৭'০০ থেকে ৭′৫০ এর ঘরে খেলাপি ঋনের পরিমাণ উঠানামা পরিলক্ষিত হয়৷  ২০০৯ সালের পর শেখ হাসিনা'র গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিধি দ্রুত বিস্তৃতি ঘটতে থাকে৷ এই সময় হতে রাষ্ট্রের আর্থিক খাত সমূহের মূলধনও স্ফিত হতে  থাকে সমান তালে৷ 
(ঘ)--(২০১০--১৮)ঃ--২০১০ সাল হতে প্রতিনিয়ত স্ফিত মুলধনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধারাবাহিক ভাবে  খেলাপি ঋণের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে৷ ঐ বছরই মূলধনের বিপরীতে খেলাপি ঋনের পরিমান ৭′০৩ শতাংশের ঘরে এসে দাঁড়ায়৷ পরবর্তিতে ধারাবাহিক উঠানামায়--২০১১ সালে (৬'০,১), ২০১২ সালে (১০), ২০১৩ সালে (৮`০৯), ২০১৪ সালে (১০'০০), ২০১৫ সালে(৮'০৮), ২০১৬ সালে (১০`৫৩), ২০১৭ সালে (৯'৩১) শতাংশ৷
 (সুত্রঃ- বাংলাদেশ ব্যাংক ওয়েব সাইট)

(৪)আইনি ব্যাবস্থা গ্রহনঃ--
অর্থঋণ আদালত সূত্রে জানা যায়--চলতি বছরের ২০ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক এবং অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান কতৃপক্ষ ২৪৬টি মামলা দায়ের করেছে অর্থঋণ আদালতে। ২০১৭ সালে এর পরিমাণ ছিল ৬৬৮টি এবং ২০১৫ সালে ৭৪৪টি৷ 

(৫)মামলা নিস্পত্তিঃ--
 মামলা দায়েরের তুলনায় নিষ্পত্তির হার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান না জানালেও অর্থঋণ আদালতের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নিষ্পত্তির হার খুবই কম। কারণ বিবাদীরা কেউ আদালতে হাজির হয় না। বিবাদী অনেক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে।
 পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়--'৭৫ পরবর্তি সময় থেকে এযাবৎ বাংলাদেশের আর্থিক খাত সমূহ খেলাপি' ঋনের আন্তর্জাতিক মানদন্ড ৫'০০ শতাংশের ধারেকাছে ছিলনা৷ বর্তমান সময়ে এসে নতুন পুরাতন যুক্ত হয়ে বিশাল অর্থনীতি'র বাংলাদেশে খেলাপি ঋন এবং ঋন খেলাপির অংকে এবং সংখ্যার বিশালত্বে ভয়াবহতা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে৷  

(৬).মিডিয়ার একচোখা নীতিঃ--
  ঋন সংক্রান্ত ব্যাংকের স্বার্থগত ব্যাপারটিকে চাঞ্চল্যকর লুটপাটের ঘটনা অভিহিত করে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে দিনের পর দিন লাগাতার প্রচার পেয়েছে বা এখনও পাচ্ছে৷ দুঃখ্যজনক হলেও সত্য--উক্ত ঘটনায় সরকারের গৃহিত তড়িৎ আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন এবং জড়িত ব্যাক্তি ও মহলের পরিণতি সম্পর্কে তার ০'০১% প্রচারও পায়নি এবং পাচ্ছেনা৷

(৭)  অপপ্রচারকারীদের সুবিধাঃ--
  উল্লেখিত চাঞ্চল্যকর ঘটনা সমূহের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের গৃহিত পদক্ষেপ মিডিয়া প্রচারে বিরত ছিল, আছে বা দায়সারা প্রচার করেছে৷ ফলে উক্ত ঘটনা'র ইস্যুটি দীর্ঘদিন সরকার বিরোধী অপপ্রচারকারীদের হাতে থাকায়, তাঁরা যথেচ্ছভাবে হাতিয়ারটি প্রতিনিয়ত ব্যাবহার করে তিক্ষ্ম ধারালো হাতিয়ারে পরিণত করতে পেরেছে৷ অপপ্রচারে'র সুযোগটি মিডিয়াই ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে তুলে দিয়েছে, আমি মনে করি৷ 

 (৮) ব্যাংক কতৃপক্ষকে ঋন আদায়কল্পে সরকারের সহযোগীতা--
   এক্ষেত্রে খেলাপি ঋন আদায়, ঋন খেলাপির সংখ্যা সহনীয় পয্যায় রাখার প্রচেষ্টায় সরকারে'র আন্তরিকতায় ঘাটতি আছে, মনে হয়না৷ ঋন খেলাপির সংখ্যা এবং খেলাপি ঋন আদায়ে দায়ের কৃত মামলার  পরিসংখ্যানের প্রতি নজর দিলে বিষয়টি স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়৷ মাননীয় অর্থমন্ত্রী'র সর্বশেষ সংসদে দেয়া তথ্যানুযায়ী ঋন খেলাপি মোট ২লাখ ৩০ হাজার ৬শ ৫৮ জন৷ উল্লেরখিত ঋন খেলাপি'র বিরুদ্ধে অর্থ ঋন আদালতে বিচারাধীন মামলা ২লাখ ৭২ হাজার ৪শত ৬০টি৷ 

উপসংহারঃ--
 ১৯৮০ সাল হতে ২০১৮ ইং সাল বাংলাদেশের ৩৮ অর্থবছরের ধারাবাহিক ঋন খেলাপি এবং খেলাপি ঋনে'র পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায় ;-বাংলাদেশের আর্থিক খাতে খেলাপি ঋন এবং ঋন খেলাপি সংস্কৃতি কোনমতেই নতুন আমদানীকৃত রীতি নয়; বরঞ্চ--অগনতান্ত্রিক, লুটেরা, দূবৃত্ত শাসনামলের আইনসিদ্ধ সযত্নে লালীত অপসংস্কৃতির রীতির ভিত্তি স্থাপনের প্রানান্তকর প্রচেষ্টার উর্বর ফসল৷  
 ১৬ কোটি মানুষের আমানত রক্ষায় সরকার যখন দৃড প্রতিজ্ঞ, ব্যাংক, বিমা, শেয়ার বাজার লুটপাটকারীদের আইনের আওতায় আনতে বাংলাদেশের সমাজে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরব সামাজিক বিপ্লব ঘটে চলেছে, তখনই উল্লেখিত লুটেরাদের টনক নড়ে উঠেছে৷ তাঁরা যে কোন উপায় গনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত করতে উঠে পড়ে লেগেছে৷ তাঁরা জানে,আগামী সাধারণ নির্বাচনে কোন এক লুটেরা দলও যদি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে-- ঐ লুটেরা সরকারও অর্থিক খাতের লুটেরাদের বিচারের আওতায় আনতে বাধ্য হবে৷ নিরবে নিবৃত্তে ঘটে চলা সামাজিক সচেতনতা, লুটপাটকারীদের প্রতি জনমনে প্রতিনিয়ত ঘৃনার বহ্নি শিখাই বাধ্য করবে, দুর্বৃত্তায়নের বিচার প্রক্রিয়া সচল রাখতে৷ প্রয়োজনে আরও অধিক গতিশীলতা আনতে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কার, নতুন আইন প্রনয়ন, বিশেষ বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের পদক্ষেপ নিতেও সরকাকে জনগনই বাধ্য করবে৷ 
 বর্তমান সরকার ইতিপুর্বে রাষ্ট্রের অন্য আর একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক খাত শেয়ার বাজার লুটপাটের মামলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সুফল পেয়েছে৷ দীর্ঘ বছরেও যখন শেয়ার বাজাজারের মাত্র ১৭টি মামলা নিস্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছিলনা, বাধ্য হয়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার প্রক্রিয়া গ্রহন করেছিল৷ ঠিক একই ভাবে খেলাপি ঋন আদায়ের জন্যেও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যায় কিনা, তার আইনগত দিক সমূহ খতিয়ে দেখার নিমিত্তে ইতিপুর্বে সরকার একটি উচ্চপয্যায়ে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন৷ উল্লেখিত তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর ঋন খেলাপিগন তাঁদের পেইড এজেন্টদের মাধ্যমে উলটো সরকারই ব্যাংক লুটপাটে জড়িত প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় ব্রতি হল৷    উদ্দেশ্য পরিস্কার, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে জনমনে ঘৃনার উদ্রেক সৃষ্টি করে অনায়াসে ক্ষমতাচ্যুৎ করা৷ শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে'ই কেবলমাত্র  অনায়াসে বিগত জীবনের খেলাপি ঋনের টাকা হজম করা সম্ভব হবে৷    


মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন