মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে কোন প্রেতাত্বার ঠাঁই হতে পারেনা।

  এই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশ--প্রেতাত্বার ঠাঁই এই বাংলাদেশে হবেনা।


  কার সাথে কার তুলনা? আপনাদের আমরা ভালভাবে জানি। আপনারা আওয়ামীলীগে ঘাপটি মেরে থাকা নৈরাশ্যবাদে বিশ্বাসী গুটিকয়েক মুজিবাদর্শে অবিশ্বাসী স্বার্থন্ধ সৈনিক। যারা সারা দেশ থেকে জড়ো হওয়া হাজার হাজার হেফাজতির শাফলাচত্বরে অবস্থান দেখে, দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। অনেকের গলার সুর তৎক্ষনাৎ পরিবর্তন করে হেফাজতের সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে বলেছিলেন--'মহিলাদের নিজস্ব আয়ে সম্পদ অর্জন ইসলামে হারাম'।

    আপনারা'ই ২০০১ইং সালে 'শেখ হাসিনা' ক্ষমতা হস্তান্তর করে বাসায় ফেরার আগে পুর্বের অবস্থানে ফিরে যেতে দেরী করেননি। এবং তাঁদের সাথে হাত মিলিয়ে আওয়ামী নিধনে হামলে পড়েছিলেন।'৯৬-২০০১ অপকর্ম যাই হয়েছিল, করেছিলেন কিন্তু আপনারাই--অশুভশক্তির প্রেতাত্বাদের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তাও আপনারাই। ২০০৯ ইং সালে ভুমিধ্বস বিজয় অর্জন করে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে কিছুদিন অবশ্য চুপচাপ ছিলেন। আওয়ামীলীগের খাস খতিয়ানের সুযোগ নিয়ে কৌশল করে আবার যথারীতি ফিরে এসেছেন। মানুষের যেমন উত্থান পতন আছে, তেমনি আদর্শিক দলেরও উত্থান পতন আছে।

   মানুষের মৃত্যু হয় আদর্শের মৃত্যু হয়না-বলেছেন বাঙ্গালী জাতীর জনক সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু 'শেখ মজিবুর রহমান'। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মুসলিম লীগ দলের বাংলাদেশের রাজনীতিতে কবর হয়েছিল সত্য। বিএনপি নামে মেজর জিয়ার ওরসে পুর্ণজম্ম হয়েছে ইহাও সত্য।মুসলিম লীগের মৃত্যু হয়েছিল কিন্তু মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক আদর্শের মৃতু হয়নি।মুক্তিযুদ্ধে তাঁরা পরাজিত হয়েছিল মৃতু হয়নি। বিএনপি'র জম্মকালীন নেতাদের কথাই ভাবুন-বিএনপির উৎপত্তিকালে জিয়ার সাথে  কারা হাত মিলিয়েছিল'? তাঁরা সকলে'ই পরাজিত এবং মৃত: মুসলিম লীগের জীবিত নেতৃবৃন্দ সাথে চীনপন্থি তথাকথিত সমাজতন্ত্রীরা, নয় কি? একদল সরাসরি বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী অন্যদল মুক্তিযুদ্ধকে দুই কুকুরের লড়াই বলে অভিহীতকারী। দুইদল মিলেই তো বিএনপি--অন্য কেউ কি ছিল? নাকি এখনো আছে? জামায়াতে ইসলামী দল--সে তো সাংগঠনিক ঘোষনা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয়েছিল। বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ে সর্বশক্তি নিয়ে বিরুধীতা করেছিল।অবশ্য আদর্শিক ভাবে তাঁরা এখনও বাংলাদেশকে স্বিকার করেনা। বাঙ্গালী জাতীর মহান মুক্তিযুদ্ধে এই ত্রি-শক্তি'র বিরুধীতা' সম্পর্কে কমবেশী পঞ্চাশোর্ধ আমরা সবাই জানি।

    আওয়ামীলীগের সুদময় আগত আপনারা সকলে'ই ঐ ত্রিশক্তি'র বংশধর।আপনাদের মুরুব্বিদের আমরা সময়ের অভাবে নতুন বাংলাদেশের সমাজ থেকে নিচ্ছিন্ন করতে পারিনি।সুযোগ পেয়ে আপনাদের মুরুব্বিরাই আমাদের নিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেছে দীর্ঘ একুশ বছর।এই একুশ বছরে মুক্তিযুদ্ধের প্রায় সমপরিমান নেতাকর্মী, শিল্পি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবি হত্যা করেছে আপনাদের মুরুব্বিরা।আপনাদের জম্ম সুবিধাবাদের ঔরসে, সুবিধা আপনারা নিবেন--ইহা স্বাভাবিক। কারন আপনাদের মুরুব্বিদের চোখে লজ্জা ছিল না, আপনাদের কোত্থেকে থাকবে।মুক্তিযুদ্ধে'র পর আব্বা ডেকে জীবন রক্ষা করেছিল আপনাদের মুরুব্বিরা।--৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে আপনাদের মুরুব্বিদের বুক কাঁপেনি, বাবা ডাক ভুলে গিয়েছিল।
   
     আপনারা প্রজম্ম সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলবেন--আমরা জানি। নচেৎ প্রগতিশীল গনতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, ধর্ম নিরপেক্ষ, বাঙ্গালী জাতীয়তা বাদী চেতনার ধারক বাহক--বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে থেকে কিভাবে আপনারা নৈরাশ্যবাদে বিশ্বাস করেন? কিভাবে সাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করেন? আওয়ামীলীগ দলের  আদর্শগত বা মুলনীতিতে  ইতিমধ্যে কোনরুপ পরিবর্তন ঘটেছে? আগে আসেননি কেন? এখন কেন এসেছেন? কি উদ্দেশ্য আপনাদের?
   
    আমরা জানি আপনাদের উদ্দেশ্য--'৭১---৭৫, ৯১-৯৬, ৯৬-- ২০০১, ২০১৪-১৫ ইং সাল আমাদের মনে আছে। আমাদের অভিজ্ঞতার ঝুড়ি পূর্ণ আছে।খুব বেশী সুবিধা হবেনা, সুবিধা করতে পারবেন না। কারন অশুভশক্তির প্রেতাত্বার বংশধর আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগে আরেক প্রেতাত্বার সাথে চুক্তি করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।আরেকজন প্রেতাত্বার শক্তি সঞ্চয়ের আগে বাংলাদেশ উন্নত, সমৃদ্ধ, তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর রুপ লাভ করবে।তখনকার বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্কিত প্রজম্ম আপনাদের ছলনায় ভুলবেনা- অন্ধকার জগতে ফিরে যাবেনা।
   
    নতুন সংযুক্ত হেফাজত--সব কিছুতে ইসলামের গন্ধ খুঁজে বেড়ানোই তাঁদের কাজ। বাঙ্গালী জাতীর মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সমাজে সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাস্প পোষনকারী একটি নতুন উপসর্গের নাম--'হেফাজত'। তাঁরা মানতেই চায় না--"বাংলাদেশ ইসলামী প্রজাতন্ত্র নয়, ইহা সম্পূর্ণই মানব সৃষ্ট গনতন্ত্রের অনুসারী অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমৃদ্ধ 'গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ'। হেফাজতে ইসলাম মূলত: সাম্প্রদায়িকতার নতুন উপসর্গ  নয়। '৭০ এর দশকে শক্তি সামর্থ কম ছিল বলা যায়, তাই নড়াচড়া তেমন চোখে পড়েনি। দীর্ঘকাল সুন্নী আলেমদের দাপটে তাঁরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

   লক্ষ করলে দেখা যায়--ধর্ম, কর্ম, শিক্ষা, জাতীয়তাবোধ সবকিছুতেই তাঁরা ব্যাতিক্রম।আবহমান কালের ভারতীয় উপমহাদেশে ধারনকৃত ধর্মীয় চেতনা, ইসলামী আচার আচরণ, ধর্মীয় অনুশাসনের বিপরীতে তাঁদের অবস্থান। প্রথমত: তাঁদের নির্বাচিত নামই আল্লাহর কতৃত্বকে চেলেঞ্জ করে।কোরান ঘোষিত এবং নবী (স:) বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়--ইসলাম ধর্ম এবং পবিত্র কোরাণের হেফাজতকারী একমাত্র আল্লাহ। হেফাজতে ইসলাম তাঁরা নিজেরাই নাম দিয়েছে ইসলামের হেফাজতকারী-'হেফাজতে ইসলাম। কেমন অথর্ব, গোঁড়া ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলে এমন নাম নির্বাচন করতে পারে? ইসলাম ধর্মে গোঁড়ামী'র কি কোন স্থান আছে?
   
     আমরা জানি--ধর্মীয় মৌলিক বিষয়ে দীর্ঘকাল 'সুন্নী আলেম ওলামা'দের সাথে 'কওমী আলেম ওলামা'দের  বিরোধ ছিল। আবার উভয় শ্রেনীর আলেম ওলামাদের দুশমন ছিল 'ওলামা' না হওয়া সত্বেও ইসলামের নাম ব্যাবহারকারী দল মওদুদীবাদে বিশ্বাসী 'জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশ'। মুসলিম লীগ ক্ষমতাভুগী উভয়শ্রেনীর প্রেতাত্বা (বর্তমান বিএনপি)। হেফাজতে ইসলামের আলেম, সুন্নী আলেম এবং জামায়াতে ইসলামের অনুসারীদের মধ্যে ধর্মীয়, আদর্শগত, অনুশাসন ও রীতিনীতি পালনের ক্ষেত্রে পাহাড় প্রমান পার্থক্য থাকা সত্বেও শাফলা চত্বরে এক ও অভিন্ন ছিল সকলের অবস্থান।

   ১৬ কোটি মানুষের দেশে তাবিজ বিক্রেতার--তাবিজের গুনাশুন শুনার জন্য হাজার মানুষের ভিড় জমে।দেশের আনাছে কানাছে হাজার হাজার মাদ্রাসার লাখ লাখ শিক্ষার্থী এক স্থানে সমবেত হওয়ার অর্থ যদি হয় জনসমর্থনে হেফাজতিরা ভারী---বলতে দ্বিধা নেই প্রকৃতই আপনি নৈরাশ্যবাদে বিশ্বাসী। প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দলে অনুপ্রবেশকারী, সুযোগ সন্ধানী আগাছা।

    ইহা একান্তই সত্য--বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে একাধিক কওমী মাদ্রাসার অস্তিত্ব বিদ্যমান। তথাপি তাঁরা সাধারন মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি।সাধারন আমজনতাকে তাঁরা যেমন বিশ্বাস করেনা--তেমনি সাধারন মানুষও তাঁদের বিশ্বাস করেনা।তাঁদের গঠিত দলে যেমন সাধারন মানুষের অন্তভুক্তি অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ; সাধারন মানুষও ওয়াজ মাহফিল, দান, খয়রাত ব্যাতিত অন্যকোন সামাজিক কর্মকান্ডে তাঁদের অন্তভূক্তি প্রয়োজন মনে করেনা। ধবধবে পাঞ্জাবি, মাথায় পাগড়ি, হাতে লাঠি, দুই আঙ্গুলের চিপায় মেচওয়াক, পোষাকি এবাদত সত্বেও ধর্মীয় গোঁড়ামী, নৈরাশ্যবাদে বিশ্বাস, স্বার্থপরতা, উদ্দেশ্যমূলক কোরাণ ও হাদিসের ব্যাখ্যা, ধর্মীয় উগ্রতা, যুক্তিহীনতা ইত্যাদি কারনে তাঁরা সাধারন মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি বরঞ্চ সাধারন মানুষের মন থেকে বহুদুরে তাঁদের অবস্থান। বাস্তবতায় যদিও  তাঁদের ঈমানী শক্তির দৃড়তা পরিলক্ষিত হয় কায্যক্ষেত্রে তাঁর কিয়দংশও প্রতিফলিত নয়। ইতিমধ্যেই তার একাধিক প্রমান আমজনতার চোখের সামনে দিব্যি ফুটে উঠেছে।

   অশিক্ষিত, মদমত্ততায় আসক্ত, কালটাকা সাদা করার দালীলিক প্রমান যে নেত্রীর রয়েছে, দূর্ণীতির দায়ে যে নেত্রীর জেল জরিমানা হয়েছে, ইসলাম ধর্মের রীতিনীতি, ধর্মীয় অনুশাসন যাঁর মধ্যে ছিটেফোঁটাও বিদ্যমান নেই; তাঁরা তাঁকেই নেত্রী মেনে শাফলাচত্বরে সমবেত হয়েছিল ইসলাম ধর্মের হেফাজত করার মানসে। সভা, সমাবেশ, মত প্রকাশের অধিকার সকল নাগরিকের রয়েছে--অবশ্যই বিশ্বাস করি এবং বিরুদ্ধ মতকে সম্মান করি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করার অধিকার কোন নাগরিকের নেই। ধর্মীয় গ্রন্থ অবমাননা করার এবং আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার অধিকার দেশের অভ্যন্তরের কোন ধর্মীয় গোষ্টি বা সম্প্রদায়ের নেই। হেফাজতের ছত্রছায়ায় অশুভশক্তি'র প্রেতাত্বারা তাও করেছে ইসলাম রক্ষার নামে। বাংলাদেশের ধর্মপ্রান মানুষের মনে আজ একটি প্রশ্নই বার বার উঁকি দেয়--পবিত্র  কোরানে আগুন দিয়ে কোন ইসলামকে হেফাজত করতে চেয়েছিল 'হেফাজতে ইসলাম'?

   আওয়ামীলীগ দীর্ঘবছর ক্ষমতায় ছিলনা--আমার মত অনেকে'ই মানষিক শান্তিতে ছিল না--'ইহা সত্য'।অবশ্য মানষিক অশান্তিতে থাকার মূলে সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে কতিপয় কারন সবাই অন্তর দিয়ে অনূভব করেছিল। তম্মধ্যে অন্যতম--স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, জাতীর জনকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার, তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যে অপপ্রচার, হাজার বছরের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ বাঙ্গালী জাতী সত্বাকে পদদলিত করা, শাসক শ্রেনীর মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকা,  ক্ষেত্র বিশেষ বাঙ্গালী জাতীর অস্তিত্ব বিপন্ন করে পরাজিত শক্তির তাঁবেদারী, সাম্রাজ্যবাদের তাঁবেদারী, শাসকবর্গের ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েমের উদগ্র বাসনা ছিল অন্যতম।

    একজন সাধারন সচেতন নাগরিক হিসেবে ফ্যাসিবাদী শক্তির  উল্লেখিত অনিয়ম, অপশাসন, বাসনা, কামনা মেনে নিতে পারিনি বিধায় পতিত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারন করে আন্দোলন, সংগ্রামে ব্যাপৃত ছিলাম।যাই হওয়ার তাই হয়েছে--ফ্যাসিষ্ট শাসনের রোষানলের আগুনে পুড়ে সর্বস্ব হারিয়েছি। সর্বস্ব হারিয়েছি সত্য--এই সময়ে অর্থাৎ প্রৌড়ত্বে পদার্পন করে, আমার মত অনেকে মানষিক প্রশান্তিতে বুক ভরে ন্বাস প্রশ্বাস নিচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন ক্ষুদ্রকর্মী হিসেবে নির্ভেজাল প্রসস্তি অনূভব করছি। আমি এবং আমার মত অনেকে সর্বস্ব হারানোর সাত্বনা খুঁজে পেয়েছে--'জাতীর জনকের জৈষ্ঠকন্যার নেতৃত্বের বিচক্ষনতায়, দৃড়তায়, সাহষে, স্পৃহায়, উদ্ভাবনী শক্তিতে'।

     আমার লালিত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে তাঁর জোষ্ঠকন্যা শেখ হাসিনা দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন।তাঁর পরিশ্রমের ফসল বাংলাদেশের জনগন ও বিশ্ববাসী ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছে।তাঁর লৌহকঠিন নেতৃত্বে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ এবং বাঙ্গালী জাতী মায্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের মুল্য আমি সহ লাখ লাখ নেতাকর্মী, মুজিবপ্রেমী পেয়েছি। আমাদের ত্যাগের ফসল আমাদের প্রানপ্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা সারা বিশ্বের সরকার প্রধানদের মধ্যে "তৃতীয় কর্মঠ সরকার প্রধানে"র গৌরব অর্জন করেছেন।এই গৌরবের অংশীদার অবশ্যই বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের লাখ লাখ মুজিবাদর্শের তৃনমুলের কর্মীবাহিনীও বটে।

   তিনি আমার প্রিয় জম্মভূমিকে উন্নয়নকামী ভিক্ষাবৃত্তির দেশের বদনাম ঘুচিয়ে--উন্নয়নশীল নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মায্যদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বর্তমান বাংলাদেশ সর্বদিক থেকে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং তাঁর পরিবার যতদিন বাংলাদেশের মাটিতে জীবিতবস্থায় থাকবেন--উন্নয়ন অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত থাকবে ইনশাল্লাহ। আওয়ামীলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের বিশ্বাস লৌহকঠিন দৃড়তা পেয়েছে--একমাত্র জাতীর জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী "শেখ হাসিনা" বিশ্বের তৃতীয় সৎ সরকার প্রধানে"র মায্যদা প্রাপ্তিতে।
 
  নির্দিদ্বায় বলতে পারি--তাঁর এবং তাঁর পরিবারের নির্লোভ চিন্তাচেতনায় জাতীর জনকের লালিত স্বপ্ন ক্ষুদামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশের আকাংক্ষা পূরণ হওয়ার ক্ষেত্রে বহুদুর অগ্রসর হয়েছে। আমি এবং আমার মত লাখ লাখ নাগরিক আধুনিকতার স্বর্ণযুগে জম্মগ্রহন করেছিলাম। অত্যান্ত পরিতাপের বিষয়--আমাদের কিশোর ও যৌবনকাল--শোষক শ্রেনীর শোষনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে। আধুনিকতার ছিটেফোঁটা ছোঁয়া কোনদিন ভাগ্যের বৃত্তে আনতে পারিনি। জাতির জনকের কন্যা'কে ক্ষমতায় আনতে না পারলে হয়তোবা এই দু:খ্যবোধ নিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে, চলে যেতে হত অনন্ত পারাপারে। মহান রাব্বুল আলামিন সহায় হয়েছেন--বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে, সহায় সম্পদ হারিয়ে, অবশেষে আমার লালিত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়নের দরজা উম্মুক্ত হয়েছে। অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্রে  বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের পতন এবং দলের সাময়িক বিপয্যয় ঘটেছিল। জাতীর জনকের কন্যার বিচক্ষন নেতৃত্বে পূণ:রায় সরকার পরিচালনার দায়িত্বে ফেরৎ এসেছে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকেও সদর্পে নিয়ে এসেছে।

   আওয়ামীলীগ সরকার পরিচালনায় এসেছে বলে'ই জনককন্যার নেতৃত্বে মাত্র নয় বছরের শাসনে আধুনিক যুগের উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নিজকে উজাড় করে ভাসিয়ে দিতে পেরেছি। সত্যিকার অর্থে--জনকের আদর্শ বাস্তবায়ীত হচ্ছে, দেশ উন্নত হচ্ছে, বাংলাদেশের পরিচিতির পরিধি বহুগুন বেড়েছে। ইতিমধ্যে আমার প্রিয় বাংলাদেশ বিশ্ব নেতৃত্ব করায়ত্ব করেছে এবং করছে। এখন আর অতীতের ন্যায়  বৃহৎশক্তি আমার দেশের সরকারকে চোখ রাঙাতে পারেনা। আমার প্রিয় মাতৃভূমি সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করতে পারেনা।আমার দেশের নীতি আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহষ দেখাতে পারেনা। আমার প্রিয় বাংলাদেশ পরিচালনায়, বৈদেশীক সম্পর্কে, সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুতে অযথা হস্তক্ষেপ করতে পারেনা।

    বঙ্গবন্ধুর কাংক্ষিত ইচ্ছা, লালিত স্বপ্ন 'সোনার বাংলা' ধীরে ধীরে পুর্ণতা পাচ্ছে। যে আদর্শ আমি সহ লাখ লাখ মুজিব প্রেমিক দীর্ঘযুগ মনের আঙ্গিনায় সযত্নে লালন করেছিলাম তাহাই অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই সময়ে এসে আমরা সকলে'ই নতুন প্রজম্মের হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দিয়ে পরম তৃপ্তিতে লাখ লাখ মুজিবাদর্শের অনুসারী ধ্বংস প্রাপ্ত নিজ নিজ পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে গৃহকর্মে মনোনিবেশ করেছি এবং করছি। এর চেয়ে সুখ, শান্তি, তৃপ্তি, প্রাপ্তি, প্রশান্তি আর কি হতে পারে?

  আমরা জানি--গনতান্ত্রিক দেশে  ক্ষমতা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তি নয়। কিন্তু সরকার পরিচালনাকারী দলের নেতাকর্মীদের সৎ গুনাবলী, সরকারের জনহীতকর কর্মকান্ড, উন্নয়ন অগ্রগতি যে কোন দলের ক্ষমতা উপভোগের সময়কাল দীর্ঘায়ীত  করতে পারে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দীর্ঘায়ীত হলেই কেবলমাত্র লালিত আদর্শ বাস্তবায়ন সম্ভব হয় এবং তাঁর ফসল জনগন উপভোগ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।দলীয় আদর্শের ভগ্নাংশ বাস্তবায়ন কেবলমাত্র দল ও সরকারের বদনাম কুড়ায়, সুফল বয়ে আনেনা।

    প্রকৃত রাজনীতিবীদ, মুজিব আদর্শের সৈনিকেরা দেশত্যাগ করেনা, করতে পারেনা। এই বাংলাদেশ মুজিবাদর্শের অনুসারীদের বাংলাদেশ, মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশ, অসাম্প্রদায়ীক ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসীদের বাংলাদেশ, প্রকৃত দেশপ্রমিক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের নিজস্ব ভুখন্ডের স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। সম্মিলীত সকলের সাগরসম রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই বাংলাদেশ।

  কোন সাম্প্রদায়িক গোষ্টি বা সম্প্রদায়ের আস্ফালন উপভোগ করার জন্যে ত্রিশলক্ষ বাঙ্গালী জীবন সঁপে দেয়নি। কোন ধর্মীয় জঙ্গীগোষ্টি'র চারনভুমিতে পরিণত করার জন্যে বাঙ্গালী জাতী অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেয়নি। এই বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রতার স্থান হতে পারেনা, ফ্যাসিবাদের স্থান হতে পারেনা। এখানে অতিবিপ্লবী,দ প্রেতিবিপ্লবীদের স্থান হতে পারেনা।এখানে কোন প্রকার কমিউনিজমে বিশ্বাসী নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসীদের স্থান হতে পারেনা। ওরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ত্যাগ করবে--আমরা কেন করবো?

      আমাদের পুর্বপুরুষ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে, অগনীত মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে, অজস্র সম্পদ্হানীর বিনিময়ে জাতির জনকের নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন করেছে।  অতীতে বহুবার খুনীদের ক্ষমতা দখল করার পরও দেশ ছেড়ে মুজিবাদর্শের বিশ্বাসী নেতাকর্মীরা পালায়নি--ভবিষ্যতেও পালাবে না। আগেও পালিয়েছিল নৈরাশ্যবাদে বিশ্বাসী ঘাপটি মেরে দলের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা লুটেরা--আগামীতেও দৈবচক্রে হয়তো বা তাঁরাই পালাতে হবে।

   অতীতে যেমন মুজিবাদর্শে বিশ্বাসী কর্মীগন শত নিপীড়ন সহ্য করে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলেছিল--ভবিষ্যতেও প্রয়োজন হলে গড়ে তুলবে।  অথর্ব, আশিক্ষিত, ফ্যাসিষ্ট শক্তি যদি কখনও কোন দৈব দুর্বিপাকের কারনে ক্ষমতা দখল করে নেয়--একজন আদর্শিক কর্মীও দেশছেড়ে পালাবেনা। গনতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাবাহিকতায় আন্দোলন, সংগ্রামের মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগনকে সম্পৃত্ত করে প্রিয় দলকে আবারো ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনবে ইনশাল্লাহ।

    জাতির জনক বঙ্গবন্ধু অসীম ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ বাঙ্গালী জাতিকে উপহার  দিয়েছে। বাঙ্গালী জাতির স্বতন্ত্র জাতিসত্বার পরিচিতি দিয়েছে। তাঁর জৈষ্ঠকন্যা জাতিকে দিচ্ছে উন্নয়ন, অগ্রগতি, মায্যদা, স্বাবলম্বিতা। প্রানপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ভান্ডার কানায় কানায় পূর্ণ করে দিচ্ছে তাঁর সততা, আন্ততিকতা, আদর্শের মন্ত্রে। নেতাকর্মীদের দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের মাটিতে মাথা উঁচু করে বিচরণ করার সম্মান, মায্যদা, উন্নয়ন, অগ্রগতির মহিসোপান।

                            

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন