শেখ হাসিনার দলীয় নেতৃত্ব ত্যাগ রাগ বা অনূরাগ বলবোনা--প্রয়োজন ছিল।
শেখ হাসিনার দলীয় নেতৃত্ব ত্যাগ রাগ বা অনুরাগ বলবোনা--প্রয়োজন ছিল।
১৯৯১ ইং সালের সাধারন নির্বাচনের প্রেক্ষাপট নিশ্চয়ই আপনারা কেউ ভুলে যাননি।উক্ত নির্বাচনে দেশী বিদেশী সকল জরিপ ফলাফলকে ভুল প্রমান করে বিএনপি বিজয়ী হয়ে জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। বাংলাদেশের জনগন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি, আওয়ামীলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং কি বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রের জনগন, রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগন অতিশয় বিস্মিত হতবাক, কিংকর্তব্যবিমূড হয়ে পড়েছিলেন নিশ্চিত বিজয়ী আওয়ামীলীগের অকস্মাৎ পরাজয়ে।
লক্ষনীয় বিষয়টি ছিল-জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর জৈষ্ঠকন্যা, আজকের লৌহমানবী খ্যাত জননেত্রী 'শেখ হাসিনা' অকস্মাৎ এই পরাজয়ে মোটেও হতবাক হননি। তাঁর চলন বলন, কথাবার্তা, আচার আচরণ, খাওয়া দাওয়া এবং মুখায়বে অন্য সকল দিনের মত সম্পুর্ণ স্বাভাবিকতা বিরাজমান ছিল।ভাবখানা এমন ছিল যেন--"বহু আগে থেকে'ই তিনি জানতেন, এমন একটি পরাজয় তাঁর এবং দলের জন্যে অপেক্ষমান ছিল"। তিনি পরাজয় মেনে নিতে আগে ভাগে প্রস্তুত হয়ে বসে আছেন"।
জননেত্রী শেখ হাসিনার অন্তরে ব্যাঘ্র চিত্ত অথছ আচরনে ধীরস্থির সুস্থ্য এবং সাবলীল মস্তিস্কে বিচক্ষন, সাহষী এবং দুরদর্শী এক সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। যাহা অতীতে এতদাঞ্চলের রাজনীতি বা সরকারে কখনই প্রচলিত ছিলনা ,বর্তমানেও প্রচলন নেই। তিনি তৎক্ষনাৎ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর পদ সহ দলের সকল স্তর হ'তে পদত্যাগের দু:সাহষী সিদ্ধান্ত ঘোষনা করেন। ঘোষনানুযায়ী তাঁর সিদ্ধান্তে লৌহকঠিন অনড় ছিলেন। এই কয়দিন পর ক্ষমতায় আসার দৃড আত্মবিশ্বাসী আওয়ামীলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের অকস্মাৎ পরাজয়ের গ্লানী--নিম্ন থেকে উধ্বস্তরে হতবিহব্বল, জ্ঞান শুন্যবস্থায় রেখে অকস্মাৎ তাঁর এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত, দলের ভিতরে বাইরে বড় রকমের ঝাঁকুনি দেয়। এই ঝাঁকুনি দেশ ও দলের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তিনটি গুরুত্বপুর্ণ বার্তা সর্বমহলে পৌঁছে দিয়েছিলেন এবং পরবর্তিতে অক্ষরে অক্ষরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিফপিত হতে দেখা গেছে।
(১) নীতি আদর্শহীন রাজনৈতিক দল দেশ পরিচালনায় সক্ষম নয়:--
শেখ হাসিনার তাৎক্ষনীক পদত্যাগ সারা বিশ্বকে বাংলাদেশের রাজনীতি'র ক্ষেত্রে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল।তিনি বিশ্বকে বুঝাতে চাইলেন যে--"বিএনপি'র এই বিজয় দলীয় আদর্শিক বিজয় নয় বা রাজনৈতিক দর্শনের বিজয়ও নয়"। এই বিজয় একান্ত বাঙ্গালী মননের শ্বাস্বত: আবেগের বিজয়। "সুতারাং এই বিজয়কাল অত্যান্ত ঠুনকো এবং ক্ষনস্থায়ী। শেখ হাসিনা তাঁর বার্তার গুরুত্বের প্রমান রেখেছেন মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায়।
(খ) ঐক্যবদ্ধ আওয়ামীলীগ দুর্ভেদ্যশক্তি প্রমানীত:--
আওয়ামীলীগের অতি আত্মবিশ্বাসী, বিশৃংখল নেতাকর্মীগন বিভিন্ন সংসদীয় আসনে আত্মকলহে লিপ্ত ছিল। নেতাদের উপদলীয় কোন্দলে সাধারন কর্মীরা বিপযস্ত ছিল। দল দ্বিধাবিভক্ত, অনেক ক্ষেত্রে ত্রিধাবিভক্ত নেতাকর্মীরা পরস্পর কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়িতে ব্যাস্ত ছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত তৎক্ষনাৎ পরাজয়ের গ্লানী মূছে দলের অভ্যন্তরে সকল মহলকে এক বিন্দুতে নিয়ে আসতে অকল্পনীয় ভুমিকা রেখেছিল।
আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে নেতৃত্বের প্রশ্নে স্পষ্টত: দুটি ধারা বিরাজমান ছিল। একটি অংশ শেখ হাসিনার প্রতি অনুগত অন্য অংশটি দলের প্রতি অনুগত হলেও নেত্রীর প্রতি ছিল অনিহা। নেত্রীর প্রতি অনিহা অংশটি'র প্রস্তাবক্রমে শেখ হাসিনা বিদেশে অবস্থানকালীন সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।দলের ঐক্য এবং বয়সে জুনিয়র নেত্রীর উপর খবরদারী করার মানষিকতায় তাঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন--পরবর্তি ঘটনা প্রবাহে তা স্পষ্ট প্রমানীত হয়।শেখ হাসিনা এবং দল উভয়ের প্রতি অনুগত অংশটি মুলত: আদর্শিক, ত্যাগী, নিবেদিত নেতাকর্মীদের অংশ। এদের ধারনা ছিল আওয়ামীলীগের ন্যায় ঐতিহ্যবাহী দলের ঐক্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ব্যাতিরেকে অন্য কারো পক্ষে'ই তৃতীয় বিশ্বের বাংলাদেশে কোন অবস্থায় সম্ভব নয়।
যেহেতু তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও গনতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানীকতা পায়নি। সেহেতু বিভিন্ন নেতার বিভিন্নমূখী ধ্যান ধারনার যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে দল ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে শক্তিহীন হয়ে পড়বে। পদত্যাগ পত্র প্রত্যাহার করার ক্ষেত্রে নেত্রীকে বাধ্য করতে সংঘবদ্ধ শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজনে আওয়ামীলীগের অংশটি তড়িৎ সকল উপদলীয় কোন্দল ভুলে এক বিন্দুতে অবস্থান গ্রহন করে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিল। তাঁদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির চাপে শেখ হাসিনা পদত্যাগ পত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।এই অংশের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিজয়ের ফসল গোলায় তুলতে শেখ হাসিনার বেশীদিন প্রয়োজন হয়নি। পরবর্তি আন্দোলন, সংগ্রাম এবং নির্বাচনে তাঁর প্রমান পাওয়া যায়।তখন থেকে আওয়ামীলীগে একটি সত্য বহুল আলোচিত এবং জনপ্রিয়তা পায়--"ঐক্যবদ্ধ আওয়ামীলীগকে কেউ হারাতে পারবে না"।
(গ) সুযোগ সন্ধানী চিহ্নিতকরণ ও তাঁদের নিস্তেজ করণে সহায়ক ভুমিকা--
দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বিতীয় অংশটি'র মধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষনায় খুশীর বন্যা বয়ে যায়। তাঁরা বুঝতে'ই পারেনি দলকে এই মহুর্তে বিপযস্ততা কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধ করাই ছিল কঠিন এবং দু:সাধ্য কাজ। হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মী রাজনীতি বিমূখ হওয়ার পুর্বে তাঁদেরকে মাঠে ধরে রাখার কৌশল গ্রহন এবং নিয়ন্তর রাজনীতিতে নিবিষ্ট রাখাই ছিল তখনকার সময়ের দাবী। শেখ হাসিনার তাৎক্ষনিক পদত্যাগ বহুধাবিভক্ত নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে পদত্যাগ পত্র গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।, ৫বছরের নিয়ন্তর রাজনৈতিক প্রচেষ্টাকে মাত্র ৫ঘন্টায় নামিয়ে এনেছিল মাত্র একটি পদত্যাগের ঘোষনা।
দলের প্রতি আনুগত্যশীল আওয়ামীলীগের বর্ষিয়ান জননেতাগন ধারনা পোষন করতেন--'শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পরিপক্কতা আসেনি।' তাঁর কাঁচা নেতৃত্বের কারনে দিন দিন দল জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত বালিকা সুলভ আচরন দলকে অস্তিত্ব সংকটে নিপতীত করছে। দলের এই অংশটির অনেকে সদ্য শুন্য হওয়া সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত হতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তাঁরা বিভিন্নভাবে দলের বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবি শুভাকাংক্ষী, শুভানুধ্যায়ীদের শরণাপন্ন হয়ে দীর্ঘদিনের লালিত ইচ্ছা অকপটে প্রকাশ করেন।
জননেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি তাঁদের কর্মকান্ড দলের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা সুবিধাবাদী,অতিজ্ঞানী, অহংকারী পরিগনিত হওয়ার যথেষ্ট উপকরণ বিদ্যমান ছিল। অথছ তাঁদের প্রস্তাব এবং সমর্থনে 'শেখ হাসিনা'কে নেতৃত্ব প্রদান করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে তাঁরা মনে করেছিলেন রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ শেখ হাসিনা তাঁদের পরামর্শেই দল চালাবেন।তাঁদের স্বপ্ন পূরন না হওয়ায় নেত্রীর প্রতি অনিহা প্রকাশ করতেন। নেতাদের নেতৃত্বের প্রতি অনিহা, আস্থাহীনতা, আনুগত্যহীনতা বার কয়েক দলকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিল।নেত্রী'র রাজনৈতিক অবস্থানের বিপরীতে অবস্থান গ্রহন করতেও অনেক বিজ্ঞ নেতাদের দেখা গেছে।এতে দেশে বিদেশে আওয়ামীলীগের দলীয় ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখিন হতে দেখা গেছে।
তাঁদেরকে চিহ্নিত করতে উক্ত 'পদত্যাগ পত্র' মহৌষদের ব্যাবস্থা পত্রের কাজ করে। উক্ত মহৌষদটি বিজ্ঞ ডাক্তার শেখ হাসিনার' রাজনীতির দক্ষ হাতে ধীরে ধীরে প্রয়োগের ফলে অনেকে'ই রাজনীতির মাঠ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। কেউবা আওয়ামীলীগ ত্যাগ করে নাম সর্বস্ব দলের সভাপতি সেজে আজীবনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে আত্মসুখ অনুভব করছেন অথবা জিঘাংসা চরিতার্থ করার সুযোগের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।
৯১ইং সালের নির্বাচন পরবর্তিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা তৃনমূল থেকে উধ্বস্তর পয্যন্ত দল গুচিয়ে সমসায়িক জনসম্পৃত্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রনয়ন করেন।অত:পর তৃনমুল থেকে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রতি মনযোগ নিবিষ্ট করেন।তৃনমূল থেকে কেন্দ্র পয্যন্ত যাওয়ার আগেই আন্দোলনে ব্যাপক জনসম্পৃত্ততার লক্ষন দৃশ্যমান হতে থাকে। বিএনপি সরকারের মাত্র সাড়ে তিন বছর শাসন অতিবাহিত হতে না হতে আওয়ামীলীগের আন্দোলনের ফসল মাঠে পাকতে শুরু করে।
আওয়ামীলীগ সমমনা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েকটি দল সঙ্গে নিয়ে, বলতে গেলে একক শক্তি'তে বিএনপি সরকারের অপশাসন এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে ১৯৯৫ ইং সালের প্রথমার্ধে আন্দোলন শুরু করেন। ৯৫ইং সালের শেষদিকে উক্ত আন্দোলন 'শেখ হাসিনা'র নেতৃত্বে গনঅন্দোলনে রুপপরিগ্রহ করে। মাত্র দেড়বছরের কমসময়ে লাগাতার আন্দোলন ১৯৯৬ইং সালের মাঝামাঝি গনভ্যুত্থানের রুপপরিগ্রহ করে। উক্ত গনভ্যুত্থান 'বেগম জিয়া'কে ক্ষমতার মসনদ থেকে টেনে ভূমিতে নামিয়ে আনে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখহাসিনার নেতৃত্বে একই বছর অনুষ্ঠিত সাধারন নির্বাচনে বিজয় অর্জন করে।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য--'৯৬ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিজয় শুধুমাত্র দলের পুণ:ত্থান ঘটাতে পেরেছিল। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার পর্দার অন্তরালে রয়ে যায়। আসনের দিক থেকে স্বল্প আসনের বিজয় দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার দেয়াল তুলে রেখেছিল।শেখ হাসিনা উক্ত সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রতিবন্ধকতা দুর করার প্রক্রিয়া গ্রহন করতে গেলে তাঁর সরকার ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য হওয়ার প্রচন্ড সম্ভাবনা ছিল।
বঙ্গবন্ধুকন্যা সবদিক বিবেচনা করে পরিবেশের প্রতিকুলে যাওয়া থেকে বিরত থেকে বিচক্ষনতার পরিচয় দিয়েছিলেন।বাংলাদেশের পরবর্তি রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ এবং ২০১৪/১৫ ইং সালের অশুভ চক্রের হঠকারী আন্দোলন গড়ে তোলার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে সকল মহল একমত হবেন--আমার বিশ্বাস।
১৯৯১ ইং সালের সাধারন নির্বাচনের প্রেক্ষাপট নিশ্চয়ই আপনারা কেউ ভুলে যাননি।উক্ত নির্বাচনে দেশী বিদেশী সকল জরিপ ফলাফলকে ভুল প্রমান করে বিএনপি বিজয়ী হয়ে জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। বাংলাদেশের জনগন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি, আওয়ামীলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং কি বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রের জনগন, রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগন অতিশয় বিস্মিত হতবাক, কিংকর্তব্যবিমূড হয়ে পড়েছিলেন নিশ্চিত বিজয়ী আওয়ামীলীগের অকস্মাৎ পরাজয়ে।
লক্ষনীয় বিষয়টি ছিল-জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর জৈষ্ঠকন্যা, আজকের লৌহমানবী খ্যাত জননেত্রী 'শেখ হাসিনা' অকস্মাৎ এই পরাজয়ে মোটেও হতবাক হননি। তাঁর চলন বলন, কথাবার্তা, আচার আচরণ, খাওয়া দাওয়া এবং মুখায়বে অন্য সকল দিনের মত সম্পুর্ণ স্বাভাবিকতা বিরাজমান ছিল।ভাবখানা এমন ছিল যেন--"বহু আগে থেকে'ই তিনি জানতেন, এমন একটি পরাজয় তাঁর এবং দলের জন্যে অপেক্ষমান ছিল"। তিনি পরাজয় মেনে নিতে আগে ভাগে প্রস্তুত হয়ে বসে আছেন"।
জননেত্রী শেখ হাসিনার অন্তরে ব্যাঘ্র চিত্ত অথছ আচরনে ধীরস্থির সুস্থ্য এবং সাবলীল মস্তিস্কে বিচক্ষন, সাহষী এবং দুরদর্শী এক সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। যাহা অতীতে এতদাঞ্চলের রাজনীতি বা সরকারে কখনই প্রচলিত ছিলনা ,বর্তমানেও প্রচলন নেই। তিনি তৎক্ষনাৎ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর পদ সহ দলের সকল স্তর হ'তে পদত্যাগের দু:সাহষী সিদ্ধান্ত ঘোষনা করেন। ঘোষনানুযায়ী তাঁর সিদ্ধান্তে লৌহকঠিন অনড় ছিলেন। এই কয়দিন পর ক্ষমতায় আসার দৃড আত্মবিশ্বাসী আওয়ামীলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের অকস্মাৎ পরাজয়ের গ্লানী--নিম্ন থেকে উধ্বস্তরে হতবিহব্বল, জ্ঞান শুন্যবস্থায় রেখে অকস্মাৎ তাঁর এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত, দলের ভিতরে বাইরে বড় রকমের ঝাঁকুনি দেয়। এই ঝাঁকুনি দেশ ও দলের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তিনটি গুরুত্বপুর্ণ বার্তা সর্বমহলে পৌঁছে দিয়েছিলেন এবং পরবর্তিতে অক্ষরে অক্ষরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিফপিত হতে দেখা গেছে।
(১) নীতি আদর্শহীন রাজনৈতিক দল দেশ পরিচালনায় সক্ষম নয়:--
শেখ হাসিনার তাৎক্ষনীক পদত্যাগ সারা বিশ্বকে বাংলাদেশের রাজনীতি'র ক্ষেত্রে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল।তিনি বিশ্বকে বুঝাতে চাইলেন যে--"বিএনপি'র এই বিজয় দলীয় আদর্শিক বিজয় নয় বা রাজনৈতিক দর্শনের বিজয়ও নয়"। এই বিজয় একান্ত বাঙ্গালী মননের শ্বাস্বত: আবেগের বিজয়। "সুতারাং এই বিজয়কাল অত্যান্ত ঠুনকো এবং ক্ষনস্থায়ী। শেখ হাসিনা তাঁর বার্তার গুরুত্বের প্রমান রেখেছেন মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায়।
(খ) ঐক্যবদ্ধ আওয়ামীলীগ দুর্ভেদ্যশক্তি প্রমানীত:--
আওয়ামীলীগের অতি আত্মবিশ্বাসী, বিশৃংখল নেতাকর্মীগন বিভিন্ন সংসদীয় আসনে আত্মকলহে লিপ্ত ছিল। নেতাদের উপদলীয় কোন্দলে সাধারন কর্মীরা বিপযস্ত ছিল। দল দ্বিধাবিভক্ত, অনেক ক্ষেত্রে ত্রিধাবিভক্ত নেতাকর্মীরা পরস্পর কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়িতে ব্যাস্ত ছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত তৎক্ষনাৎ পরাজয়ের গ্লানী মূছে দলের অভ্যন্তরে সকল মহলকে এক বিন্দুতে নিয়ে আসতে অকল্পনীয় ভুমিকা রেখেছিল।
আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে নেতৃত্বের প্রশ্নে স্পষ্টত: দুটি ধারা বিরাজমান ছিল। একটি অংশ শেখ হাসিনার প্রতি অনুগত অন্য অংশটি দলের প্রতি অনুগত হলেও নেত্রীর প্রতি ছিল অনিহা। নেত্রীর প্রতি অনিহা অংশটি'র প্রস্তাবক্রমে শেখ হাসিনা বিদেশে অবস্থানকালীন সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।দলের ঐক্য এবং বয়সে জুনিয়র নেত্রীর উপর খবরদারী করার মানষিকতায় তাঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন--পরবর্তি ঘটনা প্রবাহে তা স্পষ্ট প্রমানীত হয়।শেখ হাসিনা এবং দল উভয়ের প্রতি অনুগত অংশটি মুলত: আদর্শিক, ত্যাগী, নিবেদিত নেতাকর্মীদের অংশ। এদের ধারনা ছিল আওয়ামীলীগের ন্যায় ঐতিহ্যবাহী দলের ঐক্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ব্যাতিরেকে অন্য কারো পক্ষে'ই তৃতীয় বিশ্বের বাংলাদেশে কোন অবস্থায় সম্ভব নয়।
যেহেতু তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও গনতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানীকতা পায়নি। সেহেতু বিভিন্ন নেতার বিভিন্নমূখী ধ্যান ধারনার যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে দল ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে শক্তিহীন হয়ে পড়বে। পদত্যাগ পত্র প্রত্যাহার করার ক্ষেত্রে নেত্রীকে বাধ্য করতে সংঘবদ্ধ শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজনে আওয়ামীলীগের অংশটি তড়িৎ সকল উপদলীয় কোন্দল ভুলে এক বিন্দুতে অবস্থান গ্রহন করে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিল। তাঁদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির চাপে শেখ হাসিনা পদত্যাগ পত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।এই অংশের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিজয়ের ফসল গোলায় তুলতে শেখ হাসিনার বেশীদিন প্রয়োজন হয়নি। পরবর্তি আন্দোলন, সংগ্রাম এবং নির্বাচনে তাঁর প্রমান পাওয়া যায়।তখন থেকে আওয়ামীলীগে একটি সত্য বহুল আলোচিত এবং জনপ্রিয়তা পায়--"ঐক্যবদ্ধ আওয়ামীলীগকে কেউ হারাতে পারবে না"।
(গ) সুযোগ সন্ধানী চিহ্নিতকরণ ও তাঁদের নিস্তেজ করণে সহায়ক ভুমিকা--
দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বিতীয় অংশটি'র মধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষনায় খুশীর বন্যা বয়ে যায়। তাঁরা বুঝতে'ই পারেনি দলকে এই মহুর্তে বিপযস্ততা কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধ করাই ছিল কঠিন এবং দু:সাধ্য কাজ। হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মী রাজনীতি বিমূখ হওয়ার পুর্বে তাঁদেরকে মাঠে ধরে রাখার কৌশল গ্রহন এবং নিয়ন্তর রাজনীতিতে নিবিষ্ট রাখাই ছিল তখনকার সময়ের দাবী। শেখ হাসিনার তাৎক্ষনিক পদত্যাগ বহুধাবিভক্ত নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে পদত্যাগ পত্র গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।, ৫বছরের নিয়ন্তর রাজনৈতিক প্রচেষ্টাকে মাত্র ৫ঘন্টায় নামিয়ে এনেছিল মাত্র একটি পদত্যাগের ঘোষনা।
দলের প্রতি আনুগত্যশীল আওয়ামীলীগের বর্ষিয়ান জননেতাগন ধারনা পোষন করতেন--'শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পরিপক্কতা আসেনি।' তাঁর কাঁচা নেতৃত্বের কারনে দিন দিন দল জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত বালিকা সুলভ আচরন দলকে অস্তিত্ব সংকটে নিপতীত করছে। দলের এই অংশটির অনেকে সদ্য শুন্য হওয়া সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত হতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তাঁরা বিভিন্নভাবে দলের বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবি শুভাকাংক্ষী, শুভানুধ্যায়ীদের শরণাপন্ন হয়ে দীর্ঘদিনের লালিত ইচ্ছা অকপটে প্রকাশ করেন।
জননেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি তাঁদের কর্মকান্ড দলের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা সুবিধাবাদী,অতিজ্ঞানী, অহংকারী পরিগনিত হওয়ার যথেষ্ট উপকরণ বিদ্যমান ছিল। অথছ তাঁদের প্রস্তাব এবং সমর্থনে 'শেখ হাসিনা'কে নেতৃত্ব প্রদান করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে তাঁরা মনে করেছিলেন রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ শেখ হাসিনা তাঁদের পরামর্শেই দল চালাবেন।তাঁদের স্বপ্ন পূরন না হওয়ায় নেত্রীর প্রতি অনিহা প্রকাশ করতেন। নেতাদের নেতৃত্বের প্রতি অনিহা, আস্থাহীনতা, আনুগত্যহীনতা বার কয়েক দলকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিল।নেত্রী'র রাজনৈতিক অবস্থানের বিপরীতে অবস্থান গ্রহন করতেও অনেক বিজ্ঞ নেতাদের দেখা গেছে।এতে দেশে বিদেশে আওয়ামীলীগের দলীয় ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখিন হতে দেখা গেছে।
তাঁদেরকে চিহ্নিত করতে উক্ত 'পদত্যাগ পত্র' মহৌষদের ব্যাবস্থা পত্রের কাজ করে। উক্ত মহৌষদটি বিজ্ঞ ডাক্তার শেখ হাসিনার' রাজনীতির দক্ষ হাতে ধীরে ধীরে প্রয়োগের ফলে অনেকে'ই রাজনীতির মাঠ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। কেউবা আওয়ামীলীগ ত্যাগ করে নাম সর্বস্ব দলের সভাপতি সেজে আজীবনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে আত্মসুখ অনুভব করছেন অথবা জিঘাংসা চরিতার্থ করার সুযোগের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।
৯১ইং সালের নির্বাচন পরবর্তিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা তৃনমূল থেকে উধ্বস্তর পয্যন্ত দল গুচিয়ে সমসায়িক জনসম্পৃত্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রনয়ন করেন।অত:পর তৃনমুল থেকে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রতি মনযোগ নিবিষ্ট করেন।তৃনমূল থেকে কেন্দ্র পয্যন্ত যাওয়ার আগেই আন্দোলনে ব্যাপক জনসম্পৃত্ততার লক্ষন দৃশ্যমান হতে থাকে। বিএনপি সরকারের মাত্র সাড়ে তিন বছর শাসন অতিবাহিত হতে না হতে আওয়ামীলীগের আন্দোলনের ফসল মাঠে পাকতে শুরু করে।
আওয়ামীলীগ সমমনা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েকটি দল সঙ্গে নিয়ে, বলতে গেলে একক শক্তি'তে বিএনপি সরকারের অপশাসন এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে ১৯৯৫ ইং সালের প্রথমার্ধে আন্দোলন শুরু করেন। ৯৫ইং সালের শেষদিকে উক্ত আন্দোলন 'শেখ হাসিনা'র নেতৃত্বে গনঅন্দোলনে রুপপরিগ্রহ করে। মাত্র দেড়বছরের কমসময়ে লাগাতার আন্দোলন ১৯৯৬ইং সালের মাঝামাঝি গনভ্যুত্থানের রুপপরিগ্রহ করে। উক্ত গনভ্যুত্থান 'বেগম জিয়া'কে ক্ষমতার মসনদ থেকে টেনে ভূমিতে নামিয়ে আনে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখহাসিনার নেতৃত্বে একই বছর অনুষ্ঠিত সাধারন নির্বাচনে বিজয় অর্জন করে।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য--'৯৬ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিজয় শুধুমাত্র দলের পুণ:ত্থান ঘটাতে পেরেছিল। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার পর্দার অন্তরালে রয়ে যায়। আসনের দিক থেকে স্বল্প আসনের বিজয় দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার দেয়াল তুলে রেখেছিল।শেখ হাসিনা উক্ত সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রতিবন্ধকতা দুর করার প্রক্রিয়া গ্রহন করতে গেলে তাঁর সরকার ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য হওয়ার প্রচন্ড সম্ভাবনা ছিল।
বঙ্গবন্ধুকন্যা সবদিক বিবেচনা করে পরিবেশের প্রতিকুলে যাওয়া থেকে বিরত থেকে বিচক্ষনতার পরিচয় দিয়েছিলেন।বাংলাদেশের পরবর্তি রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ এবং ২০১৪/১৫ ইং সালের অশুভ চক্রের হঠকারী আন্দোলন গড়ে তোলার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে সকল মহল একমত হবেন--আমার বিশ্বাস।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন