শেখ হাসিনার দলীয় নেতৃত্ব ত্যাগ রাগ বা অনূরাগ বলবোনা--প্রয়োজন ছিল।

  শেখ হাসিনার দলীয় নেতৃত্ব ত্যাগ রাগ বা অনুরাগ বলবোনা--প্রয়োজন ছিল।

      ১৯৯১ ইং সালের সাধারন নির্বাচনের প্রেক্ষাপট নিশ্চয়ই আপনারা কেউ ভুলে যাননি।উক্ত নির্বাচনে দেশী বিদেশী সকল জরিপ ফলাফলকে ভুল প্রমান করে বিএনপি বিজয়ী হয়ে জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। বাংলাদেশের জনগন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি, আওয়ামীলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং কি বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রের জনগন,  রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগন অতিশয় বিস্মিত হতবাক, কিংকর্তব্যবিমূড হয়ে পড়েছিলেন নিশ্চিত বিজয়ী আওয়ামীলীগের  অকস্মাৎ পরাজয়ে।

         লক্ষনীয় বিষয়টি ছিল-জাতীর জনক  বঙ্গবন্ধুর জৈষ্ঠকন্যা, আজকের লৌহমানবী খ্যাত জননেত্রী 'শেখ হাসিনা' অকস্মাৎ এই পরাজয়ে মোটেও হতবাক হননি। তাঁর চলন বলন, কথাবার্তা, আচার আচরণ, খাওয়া দাওয়া এবং মুখায়বে অন্য সকল দিনের মত সম্পুর্ণ স্বাভাবিকতা বিরাজমান ছিল।ভাবখানা এমন ছিল যেন--"বহু আগে থেকে'ই তিনি জানতেন, এমন একটি পরাজয় তাঁর এবং দলের জন্যে অপেক্ষমান ছিল"। তিনি পরাজয় মেনে নিতে আগে ভাগে প্রস্তুত হয়ে বসে আছেন"।

      জননেত্রী শেখ হাসিনার অন্তরে ব্যাঘ্র চিত্ত অথছ আচরনে ধীরস্থির সুস্থ্য এবং সাবলীল মস্তিস্কে বিচক্ষন, সাহষী এবং দুরদর্শী এক সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। যাহা অতীতে এতদাঞ্চলের রাজনীতি বা সরকারে কখনই প্রচলিত ছিলনা ,বর্তমানেও প্রচলন নেই। তিনি তৎক্ষনাৎ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর পদ সহ দলের সকল স্তর হ'তে পদত্যাগের দু:সাহষী সিদ্ধান্ত ঘোষনা করেন। ঘোষনানুযায়ী তাঁর সিদ্ধান্তে লৌহকঠিন অনড় ছিলেন। এই  কয়দিন পর ক্ষমতায় আসার দৃড আত্মবিশ্বাসী আওয়ামীলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের অকস্মাৎ পরাজয়ের গ্লানী--নিম্ন থেকে উধ্বস্তরে হতবিহব্বল, জ্ঞান শুন্যবস্থায় রেখে অকস্মাৎ তাঁর এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত, দলের ভিতরে  বাইরে বড় রকমের ঝাঁকুনি দেয়। এই ঝাঁকুনি দেশ ও  দলের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তিনটি গুরুত্বপুর্ণ বার্তা সর্বমহলে পৌঁছে দিয়েছিলেন এবং পরবর্তিতে অক্ষরে অক্ষরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিফপিত হতে দেখা গেছে।

     (১)    নীতি আদর্শহীন রাজনৈতিক দল দেশ পরিচালনায় সক্ষম নয়:--
       শেখ হাসিনার তাৎক্ষনীক পদত্যাগ সারা বিশ্বকে বাংলাদেশের  রাজনীতি'র ক্ষেত্রে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল।তিনি বিশ্বকে বুঝাতে চাইলেন যে--"বিএনপি'র এই বিজয় দলীয় আদর্শিক বিজয় নয় বা রাজনৈতিক দর্শনের বিজয়ও নয়"। এই বিজয় একান্ত বাঙ্গালী মননের শ্বাস্বত: আবেগের বিজয়। "সুতারাং এই বিজয়কাল অত্যান্ত ঠুনকো এবং ক্ষনস্থায়ী। শেখ হাসিনা তাঁর বার্তার গুরুত্বের প্রমান রেখেছেন মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায়।

    (খ) ঐক্যবদ্ধ আওয়ামীলীগ দুর্ভেদ্যশক্তি  প্রমানীত:--

      আওয়ামীলীগের অতি আত্মবিশ্বাসী, বিশৃংখল নেতাকর্মীগন বিভিন্ন সংসদীয় আসনে আত্মকলহে লিপ্ত ছিল। নেতাদের উপদলীয় কোন্দলে সাধারন কর্মীরা বিপযস্ত ছিল। দল দ্বিধাবিভক্ত, অনেক ক্ষেত্রে ত্রিধাবিভক্ত  নেতাকর্মীরা পরস্পর কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়িতে ব্যাস্ত ছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত তৎক্ষনাৎ পরাজয়ের গ্লানী মূছে দলের অভ্যন্তরে সকল মহলকে এক বিন্দুতে নিয়ে আসতে অকল্পনীয় ভুমিকা রেখেছিল।

    আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে নেতৃত্বের প্রশ্নে স্পষ্টত: দুটি ধারা বিরাজমান ছিল। একটি অংশ শেখ হাসিনার প্রতি অনুগত অন্য অংশটি দলের প্রতি অনুগত হলেও নেত্রীর প্রতি ছিল অনিহা। নেত্রীর প্রতি অনিহা অংশটি'র প্রস্তাবক্রমে শেখ হাসিনা বিদেশে অবস্থানকালীন সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।দলের ঐক্য এবং বয়সে জুনিয়র নেত্রীর উপর খবরদারী করার মানষিকতায় তাঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন--পরবর্তি ঘটনা প্রবাহে তা স্পষ্ট প্রমানীত হয়।শেখ হাসিনা এবং দল উভয়ের প্রতি অনুগত অংশটি মুলত: আদর্শিক, ত্যাগী, নিবেদিত নেতাকর্মীদের অংশ। এদের ধারনা ছিল আওয়ামীলীগের ন্যায় ঐতিহ্যবাহী দলের ঐক্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ব্যাতিরেকে অন্য কারো পক্ষে'ই তৃতীয় বিশ্বের বাংলাদেশে কোন অবস্থায় সম্ভব নয়।

         যেহেতু তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও গনতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানীকতা পায়নি। সেহেতু বিভিন্ন নেতার বিভিন্নমূখী ধ্যান ধারনার যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে দল ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে শক্তিহীন হয়ে পড়বে। পদত্যাগ পত্র প্রত্যাহার করার ক্ষেত্রে নেত্রীকে বাধ্য করতে সংঘবদ্ধ শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজনে আওয়ামীলীগের অংশটি তড়িৎ সকল উপদলীয় কোন্দল ভুলে এক বিন্দুতে অবস্থান গ্রহন করে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিল। তাঁদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির চাপে শেখ হাসিনা পদত্যাগ পত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।এই অংশের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিজয়ের ফসল গোলায় তুলতে শেখ হাসিনার বেশীদিন প্রয়োজন হয়নি। পরবর্তি আন্দোলন, সংগ্রাম এবং নির্বাচনে তাঁর  প্রমান পাওয়া যায়।তখন থেকে আওয়ামীলীগে একটি সত্য  বহুল আলোচিত এবং জনপ্রিয়তা পায়--"ঐক্যবদ্ধ আওয়ামীলীগকে কেউ হারাতে পারবে না"।

   (গ) সুযোগ সন্ধানী চিহ্নিতকরণ ও তাঁদের নিস্তেজ করণে সহায়ক ভুমিকা--
           দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বিতীয় অংশটি'র মধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষনায় খুশীর বন্যা বয়ে যায়। তাঁরা বুঝতে'ই পারেনি দলকে এই মহুর্তে বিপযস্ততা কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধ করাই ছিল কঠিন এবং দু:সাধ্য কাজ। হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মী রাজনীতি বিমূখ হওয়ার পুর্বে তাঁদেরকে মাঠে ধরে রাখার কৌশল গ্রহন এবং নিয়ন্তর রাজনীতিতে নিবিষ্ট রাখাই ছিল তখনকার সময়ের দাবী। শেখ হাসিনার তাৎক্ষনিক পদত্যাগ বহুধাবিভক্ত নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে পদত্যাগ পত্র গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।, ৫বছরের নিয়ন্তর রাজনৈতিক প্রচেষ্টাকে মাত্র ৫ঘন্টায় নামিয়ে এনেছিল মাত্র একটি পদত্যাগের ঘোষনা।

     দলের প্রতি আনুগত্যশীল আওয়ামীলীগের বর্ষিয়ান জননেতাগন ধারনা পোষন করতেন--'শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পরিপক্কতা আসেনি।' তাঁর কাঁচা নেতৃত্বের কারনে দিন দিন দল জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত বালিকা সুলভ আচরন দলকে অস্তিত্ব সংকটে নিপতীত করছে। দলের এই অংশটির অনেকে সদ্য শুন্য হওয়া সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত হতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তাঁরা বিভিন্নভাবে দলের বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবি শুভাকাংক্ষী, শুভানুধ্যায়ীদের শরণাপন্ন হয়ে দীর্ঘদিনের লালিত ইচ্ছা অকপটে প্রকাশ করেন।

    জননেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি তাঁদের কর্মকান্ড দলের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা সুবিধাবাদী,অতিজ্ঞানী, অহংকারী পরিগনিত হওয়ার যথেষ্ট উপকরণ বিদ্যমান ছিল। অথছ তাঁদের প্রস্তাব এবং সমর্থনে 'শেখ হাসিনা'কে নেতৃত্ব প্রদান করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে তাঁরা মনে করেছিলেন রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ শেখ হাসিনা তাঁদের পরামর্শেই দল চালাবেন।তাঁদের স্বপ্ন পূরন না হওয়ায় নেত্রীর প্রতি অনিহা প্রকাশ করতেন। নেতাদের নেতৃত্বের প্রতি অনিহা, আস্থাহীনতা, আনুগত্যহীনতা বার কয়েক দলকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিল।নেত্রী'র রাজনৈতিক অবস্থানের বিপরীতে অবস্থান গ্রহন করতেও অনেক বিজ্ঞ নেতাদের দেখা গেছে।এতে দেশে বিদেশে আওয়ামীলীগের দলীয় ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখিন হতে দেখা গেছে।

    তাঁদেরকে চিহ্নিত করতে উক্ত 'পদত্যাগ পত্র' মহৌষদের ব্যাবস্থা পত্রের কাজ করে। উক্ত মহৌষদটি বিজ্ঞ ডাক্তার শেখ হাসিনার' রাজনীতির দক্ষ হাতে ধীরে ধীরে প্রয়োগের ফলে অনেকে'ই রাজনীতির মাঠ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। কেউবা আওয়ামীলীগ ত্যাগ করে নাম সর্বস্ব দলের সভাপতি সেজে আজীবনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে আত্মসুখ অনুভব করছেন অথবা জিঘাংসা চরিতার্থ করার সুযোগের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।

    ৯১ইং সালের নির্বাচন পরবর্তিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা তৃনমূল থেকে উধ্বস্তর পয্যন্ত দল গুচিয়ে সমসায়িক জনসম্পৃত্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রনয়ন করেন।অত:পর তৃনমুল থেকে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রতি মনযোগ নিবিষ্ট করেন।তৃনমূল থেকে কেন্দ্র পয্যন্ত যাওয়ার আগেই আন্দোলনে ব্যাপক জনসম্পৃত্ততার লক্ষন দৃশ্যমান হতে থাকে। বিএনপি সরকারের মাত্র সাড়ে তিন বছর শাসন অতিবাহিত হতে না হতে আওয়ামীলীগের আন্দোলনের ফসল মাঠে পাকতে শুরু করে।

        আওয়ামীলীগ সমমনা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েকটি দল সঙ্গে নিয়ে, বলতে গেলে একক শক্তি'তে বিএনপি সরকারের অপশাসন এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে ১৯৯৫ ইং সালের প্রথমার্ধে আন্দোলন শুরু করেন। ৯৫ইং সালের শেষদিকে উক্ত আন্দোলন 'শেখ হাসিনা'র নেতৃত্বে গনঅন্দোলনে রুপপরিগ্রহ করে। মাত্র দেড়বছরের কমসময়ে লাগাতার আন্দোলন ১৯৯৬ইং সালের মাঝামাঝি গনভ্যুত্থানের রুপপরিগ্রহ করে। উক্ত গনভ্যুত্থান 'বেগম জিয়া'কে ক্ষমতার মসনদ থেকে টেনে ভূমিতে নামিয়ে আনে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখহাসিনার নেতৃত্বে একই বছর অনুষ্ঠিত সাধারন নির্বাচনে বিজয় অর্জন করে।

   বিশেষভাবে উল্লেখ্য--'৯৬ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের  বিজয় শুধুমাত্র দলের পুণ:ত্থান ঘটাতে পেরেছিল। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার পর্দার অন্তরালে রয়ে যায়। আসনের দিক থেকে স্বল্প আসনের বিজয় দলের  কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার দেয়াল তুলে রেখেছিল।শেখ হাসিনা উক্ত সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রতিবন্ধকতা দুর করার প্রক্রিয়া গ্রহন করতে গেলে তাঁর সরকার ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য হওয়ার প্রচন্ড সম্ভাবনা ছিল।

    বঙ্গবন্ধুকন্যা সবদিক বিবেচনা করে পরিবেশের প্রতিকুলে যাওয়া থেকে বিরত থেকে বিচক্ষনতার পরিচয় দিয়েছিলেন।বাংলাদেশের পরবর্তি রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ এবং ২০১৪/১৫ ইং সালের অশুভ চক্রের হঠকারী  আন্দোলন গড়ে তোলার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে সকল মহল একমত হবেন--আমার বিশ্বাস।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন