বাংলাদেশের সমাজে বুদ্ধিজীবিদের অবমূল্যায়ন।
বাংলাদেশের সমাজে বরেন্য বুদ্ধিজীবিদের লালনে সংকীর্ণতা।
যে কোন সমাজের বুদ্ধিজীবিরা সেই সমাজের মহামুল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। মূলত: বুদ্ধিজীবিরা রাষ্ট্র ও সমাজের পথপ্রদর্শক--' উন্নতি, অগ্রগতি, প্রগতি'র সোপান। বুদ্ধিজীবিহীন রাষ্ট্র, জাতী, সমাজ, সরকার বাঁচতে পারেনা। নেতৃত্বহীন দল যেমন আগোছালো--মৃত প্রায়, তেমনি বুদ্ধিজীবিহীন সমাজও মৃত, আগোছালো, দিকভ্রম, অস্থির, অন্ধকারের আবর্তে নিমজ্জিত হতে বাধ্য হয়। মেধাশূন্য জাতী উন্নতি, অগ্রগতি সাধনের কোন উপায় থাকেনা বা করতে পারেনা। যে সমাজ মেধার কদর জানে না, সেই সমাজে মেধাবী'রা জম্মগ্রহন করেনা এবং সে সমাজ অসভ্য সমাজের অন্তভুক্ত।
বুদ্ধিজীবি'র সংজ্ঞা:--
দৈহিক শ্রমের বাহিরে মানষিক চিন্তাচেতনার শক্তিতে যে সমস্ত ব্যাক্তিবর্গ জীবন জীবিকা নির্বাহ মরেন তাঁদেরকে বুদ্ধিজীবি বলা হয়। অর্থাৎ জ্ঞান চর্চাকারীরাই বুদ্ধিজীবি।
সমাজে বুদ্ধিজীবিদের অবদান:--
মানব সভ্যতা বিকাশের প্রাথমিক যুগ হতে আজকের এই প্রযুক্তি যুগের শিখরে অবস্থান নেয়া মানব সভ্যতা পরিবর্তনের প্রতিটি স্তরে'ই রেয়েছে মেধাবী মানুষদের মেধার অন্যন্ন, অনবদ্য অবদান ও ভুমিকা। মুলত: মেধাবী মানুষেরাই সমাজকে আজকের বিজ্ঞানে'র অত্যাধুনিক আবিস্কার প্রযুক্তি'র সভ্যতার যুগে টেনে তুলেছে। প্রত্যহ-প্রতিনিয়ত মানব সমাজের অতিব প্রয়োজনীয় ও কল্যানকর উপাদান সমূহ যেমন--"জ্ঞান বিজ্ঞান, শিল্প, সংস্কৃতি, চিকিৎসা, উদ্ভাবন, ইতিহাস, ঐতিহ্যের বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় বিচরনরত: সৃষ্টিশীল মেধাবী'দের সাধারন ভাবে এক কথায় প্রকাশে বুদ্ধিজীবিদের অবদান অনস্বিকায্য বলা যায়"।
নির্দিষ্ট একটি দেশের বুদ্ধি চর্চারত: ব্যাক্তি বা মেধাবী জনেরা স্বদেশ ও স্বজাতীর কল্যানে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা, লব্দ জ্ঞানের অলো স্বদেশ, স্বসমাজ, স্বজাতী সহ বিশ্ব সমাজকে আলোকিত করে তোলে। মেধাবীজনের আবিস্কার, উদ্ভাবন, রচনা, গভেষনা 'স্ব-জাতির কল্যান বয়ে আনে এবং চলার পথ নির্দেশ করে, সাথে সাথে 'বিশ্বমানব কুলের কল্যান, উন্নতি, অগ্রগতিতেও অন্যন্ন অবদান রাখে।সেই অর্থে বুদ্ধিজীবি'রা শুধুমাত্র স্ব-জাতী'র বা স্বদেশের সম্পদ বলতে গেলে তাঁদের প্রতি অবিচার করা হবে--'তাঁরা বিশ্ব সমাজেরও অমুল্য সম্পদ'।
বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের আলাদা মায্যদা:--
আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিদের রয়েছে দেশ ও জাতীর নিকট এক আলাদা মায্যদা। দেশ ও জনগনের কল্যানে নিবেদিত আমাদের বুদ্ধিজীবি সমাজ সর্বদাই জাতীর ক্রান্তিকালে জনতার সঙ্গে একাত্ম হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে। যেমন--'৬৯ এর গনভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহন, '৭১ বাঙ্গালী জাতীর গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে অকুন্ঠ সমর্থন। '৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশবিরোধী রাজাকার ও দখলদার পাকিস্তানী সেনাদের হাতে অসংখ্য বুদ্ধিজীবির প্রানবলি দান, '৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে জনগনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ এবং 'গনতন্ত্র পুণ:রোদ্ধারের লক্ষে 'জনতার মঞ্চ' প্রতিষ্ঠা, ৯৪ ইং সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ৭১ইং সালে জাতীর মহান মুক্তিযুদ্ধে 'মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িত শীর্ষ রাজাকারদের প্রতিকী বিচারানুষ্ঠান,উক্ত বিচারানুষ্ঠান জাতী'কে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভোদ্ধকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, '২০০১ইং সালে জামায়াত শিবির এবং তাঁদের প্রেতাত্বা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের প্রতিহিংসার বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবি সমাজের সম্মিলীত প্রতিবাদী ভূমিকা পালন--"বাঙ্গালী জাতীর নিকট বুদ্ধিজীবিদের বরেন্য, পুজনীয়, শ্রদ্ধা, সম্মানের সর্ব উচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে"।
বুদ্ধিজীবি'র পরিচয়:--
সাধারাণত: মানব সভ্যতা বিকাশ, দেশ ও জনগনের কল্যানে নিবেদিত সমাজের মেধাবী এবং বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ, জ্ঞানী, গুনীজনদের বুদ্ধিজীবি বলে। মানব সমাজের অতিব প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহে প্রতিনিয়ত বিচরনরত: এবং বিশেষ ক্ষেত্রে অধিকতর জ্ঞানী, গুনীজনদের বুদ্ধিজীবি হিসেবে অভিহীত করা হয়। তাঁরা সর্বকালে সর্বদেশে রাষ্ট্র, সমাজ ও জনগনের নিকট সম্মানের পাত্র। এইরুপ সম্মানীত ব্যাক্তিবর্গ নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বুদ্ধি চর্চা বা জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে সৃষ্ট উপাদানের উপর জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।তাঁরা সভ্যতার বিকাশ, মানবকল্যান, দেশ, জাতী, জনগনের উন্নয়ন অগ্রগতি ভাবনায় নিজেদের নিয়োজিত রাখেন। দেশ ও জাতীর ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষনে নিবেদিত প্রান ব্যাক্তিবর্গ বুদ্ধিজীবি'র আওতায় পড়ে। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চারত: ব্যাক্তিবর্গ, উৎপাদন ও উন্নয়ন সহযোগী ব্যাক্তিবর্গ দেশ ও জাতীর কল্যানে সদা সর্বদা নিবেদিত বুদ্ধিজীবি হিসেবে সমাজে পরিচিত।
বুদ্ধিজীবি'র প্রকারভেদ:--
বিশেষ একটি বিষয়ে গভেষনার মাধ্যমে বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী ব্যাক্তিদের বিশেষজ্ঞ, পরিক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয় আবিস্কারকারীদের আবিস্কারক, উদ্ভাবনকারীদের উদ্ভাবক, কবিতা রচয়িতাদের কবি, বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষনকারীদের বিশ্লেষক ইত্যাদি প্রকারভেদ রয়েছে। এক কথায় বিশেষ বিষয়ে গভেষনা, উদ্ভাবন, বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষনে পারদর্শী ব্যাক্তিবর্গ'কে বুদ্ধিজীবি বলা যায়। বিশেষজ্ঞ, উদ্ভাবক, প্রযুক্তিবীদ, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পি, সাংবাদিকেরা স্ব-স্ব পেশা ভিত্তিক উল্লেখিত বিষয়ে একাডেমিক জ্ঞান আহরনের সত্বেও, উক্ত বিষয়টির সম্পর্কে নিয়ন্তর চর্চারত: থাকেন। ফলত: উপলব্দ বিষয়টি'র বহি:রাবরনের স্বরুপ যেমন উৎঘাটন করেন তেমনি অন্তনিহীত ক্ষতিকর উপাদান সমূহ চিহ্নিত করে বিষয়টি'র সামগ্রিক উপকারীতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে জনসচেতনতায় সৃষ্টিতে ভুমিকা পালন করেন। এককথায় স্ব-স্ব-ক্ষেত্রে স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত বিশেষজ্ঞ, উদ্ভাবক, বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবীদ, রাজনীতিবীদ, কৃষিবীদ, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পি, সংস্কৃতি সেবী সহ অন্যান্ন শাখা প্রশাখায় বিচরণ পুর্বক মেধা ও দক্ষতা'য় কায়িক শ্রমে সৃষ্ট সৃজশীল সৃষ্টি'র উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন--তাঁরা'ই সমাজে বুদ্ধিজীবি হিসেবে পরিচিত।"
সম্মান ও মায্যদা:--
এই শ্রেনীর ব্যাক্তিবর্গ রাষ্ট্র ও সমাজে একনম্বর নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। রাষ্ট্র তাঁদের বিশেষ বিশেষ কাজে অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ বিভিন্ন পদক, উপহার, উপঢৌকন, উপাদিতে সম্মানীত করেন।সরকার তাঁদেরকে বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রচলিত বিভিন্ন পদক অথবা সরকারের মায্যদাপূর্ণ উপহার প্রদান করেন। রাষ্ট্রীয় বিশেষ অনুষ্ঠানে এই শ্রেনী'র সম্মানীত নাগরিকগন নিমন্ত্রন পেয়ে থাকেন--নিমন্ত্রিত অতীথিরা রাষ্ট্রীয় অতীথি হিসেবে বিবেচিত হন। বিবিধ গুনে গুনাম্বিত রাষ্ট্রের প্রথম শ্রেনী'র নাগরিক হিসেবে তাঁরা সর্বদা রাষ্ট্র এবং জনকল্যানে নিবেদিত থাকেন। রাষ্ট্রীয় রীতিনীতি পরিবর্তন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন, সরকার পরিবর্তন সমাজের বুদ্ধিজীবি শ্রেনী'র বিশেষ বিবেচ্য বিষয় নয়। রাষ্ট্র ও সরকার, দেশ ও জনকল্যানে তাঁদের কর্ম, সৃষ্টি, গভেষনা, উদ্ভাবন নিয়ে তাঁরা ব্যাস্ত থাকতে বেশী পছন্দ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর হত্যা তালিকায় বুদ্ধিজীবি:-
এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাইদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে এক আলোচনায় বলেছিলেন, বুদ্ধিজীবী ছাড়া যেমন বড় ধরনের কোন বিপ্লব সংঘটিত হয় নি, তেমনি তাদের ছাড়া কোন বিপ্লববিরোধী আন্দোলনও সংঘটিত হয় নি। এক কথায়, তারাই হচ্ছেন ‘বিপ্লব’ এর প্রাণ। অন্যভাবে বলা যায়, শাসকগোষ্ঠীর টিকে থাকার জন্যে যেমন একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী প্রয়োজন, তেমনি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্যেও আরেক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদেরকে তাঁদের রোষানলে পড়তে হয়। এ কারণেই দেখা যায় যে, গত শতাব্দীর শুরুতেই আর্মেনিয়ায় গণহত্যা শুরু হয়েছিল ২৫০ জন বুদ্ধিজীবীকে গ্রেফতার ও হত্যার মাধ্যমে। হিটলার ও তার নাৎসি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যা করেছিল। এই দিক দিয়ে বিবেচনা করলে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা মোটেই নতুন কিছু নয়, বরং প্রকৃতিগত দিক হতে পূর্বের গণহত্যাগুলোর সাথে এটা সাদৃশ্য পূর্ণই বটে।
৭১ এ বাঙ্গালী জাতী'র গৌরবের অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার পাক বাহিনী ও তাঁদের এদেশীয় দোষর রাজাকার আলবদর, আল শামস বাহিনী'র হত্যা তালিকায় বুদ্ধিজীবিরা ছিলেন অন্যতম নিশানা। যুদ্ধের নয় মাস দেশব্যাপী খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয়েছিল বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবিদের। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যখন প্রায় সমাসন্ন, পাকিস্তানী বাহিনী যখন বুঝতে পেরেছে তাঁদের পতন অনিবায্য, তখনই তাঁরা ঢাকা শহরের আনাছে কানাছে যে সমস্ত দেশবরেন্য বুদ্ধিজীবিদের বসবাস ছিল, তাঁদের অনেককে ধরে ধরে অকথ্য নিয্যাতনের পর হাত পা বেঁধে হত্যা করা হয়েছিল।
হত্যার উদ্দেশ্য:--
বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করার মুল উদ্দেশ্য ছিল বাঙ্গালী জাতীকে মেধাশুন্য করার মহা পরিকল্পনারই অংশ। মুক্তিযুদ্ধের প্রম্ভে এবং শেষ পয্যায়ে বুদ্ধিজীবি হত্যায় উদ্দেশ্যের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে বুদ্ধিজীবি হত্যা ছিল বাঙ্গালীর মুক্তি সংগ্রামকে স্তব্দ করে পাশ্চিমা শাষক গোষ্টির শাষন শোষন নিরবচ্ছিন্ন রাখা। এতদ উদ্দেশ্যে হত্যা মিশন ছিল দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের মেধাবী শিক্ষক, নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিগন।
হত্যাকান্ডের দ্বিতীয় ধাপটি ছিল অত্যান্ত মর্মান্তিক এবং বেদনা দায়ক। ডিসেম্বরের তিন বা চার তারিখ থেকে এই হত্যা মিশনটি কায্যকর করা হয়। লক্ষ করলে দেখা যায় এই হত্যাযজ্ঞটি শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবি সমাজের উপর চালানো হয়েছিল। উক্ত হত্যা মিশনে আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবিদের এককভাবে হত্যা করা হয়নি, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্রদের হত্যা করা হয়েছিল। স্পষ্টত:ই উক্ত হত্যাযজ্ঞের লক্ষ ছিল আগামীর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে মেধাশুন্য করার চক্রান্তের বাস্তবায়ন। বাঙ্গালী জাতীকে জ্ঞান, বিজ্ঞান, আবিস্কার উদ্ভাবন সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধাশুন্য করে অন্ধকারে নিমজ্জিত করার পরিকল্পনা।
আর একটি বিষয় লক্ষ করলে দেখা যায়--মুক্তিযুদ্ধে পরিকল্পিত ভাবে শিক্ষকদের খুব বেশী হত্যা করেছিল। অর্থাৎ নতুন বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্র ধ্বংস করে দিতে পারলে অনায়াসে বাঙ্গালী জাতীর উপর তাঁর সুদুরপ্রসারী কুপ্রভাব পড়বে, এই চিন্তা চেতনাই তাঁদের মধ্যে কাজ করেছে মনে করি।
মহান মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিতযসা জ্ঞান-গরিমায় অগ্রসরমান,প্রগতির ধারক বাহকদের হত্যা করেছিল।নিম্নে তাঁর একটি তালিকা প্রদান করছি।
শিক্ষাবিদ - ৯৯১ জন।
সাংবাদিক - ১৩ জন।
চিকিৎসক - ৪৯ জন
আইনজীবী - ৪২ জন
অন্যান্য (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী এবং প্রকৌশলী) - ১৬
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বুদ্ধিজীবি সমাজ--
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে শুরু হওয়া মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিবীদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রগতিশীল চিন্তাধারার অধিকারীদের উপর আঘাত আজও বন্ধ হয়নি। দেশবিরোধী চক্রটি সুযোগ পেলেই প্রথমে তালিকা প্রকাশ করে--'পরবর্তিতে সুযোগ বুঝে হত্যাকান্ড ঘটায়'। বাংলাদেশের জম্মলগ্ন থেকে অশুভশক্তি একেক সময় একেক নামে তাঁদের উত্থান ঘটিয়েছে। তাঁরা কখনও গুপ্ত হত্যা, কখনও সভাসমাবেশে বোমা হামলা, কখনও বা প্রতিষ্ঠানে হামলা,কখনও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নির্মম, নিষ্ঠুর ভাবে মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী গুনিজনদের হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের এই ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে চিহ্নিত কয়েকটি প্রেতাত্বার দল ও গোষ্টি। লক্ষ করলে দেখা যায়--'এই সমস্ত প্রেতাত্বা সদৃস রাজনৈতিক দল সমূহের উত্থান ঘটেছে-'জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু'কে স্বপরিবারে হত্যার পর'।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী বুদ্ধিজীবিদের লালন করে থাকে তাঁদের স্বার্থে। আমাদের সমাজে তাঁদের চরিত্র হনন, কুৎসা রটনা, নির্বিচারে হত্যা, গুম চালানো হয়। অশুভ শক্তির হত্যাযজ্ঞে ইতিমধ্যে অগনিত বুদ্ধিজীবি প্রান হারিয়েছে, অসংখ্য দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য পরিস্কার--'প্রগতির ধারা থেকে বাংলাদেশকে বিচ্যুত করে অন্ধকার যুগে ফিরিয়ে নেয়া'।
উপসংহার:---
আমাদের বুদ্ধিজীবি আমাদের সম্পদ। বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নকামী একটি দেশের বুদ্ধি চর্চারত: ব্যাক্তিদের লালন করা প্রয়োজন দেশ ও জাতীর বৃহত্তর স্বার্থে। ইতিমধ্যে প্রমানীত হয়েছে--"এক প্রযুক্তিবীদের চিন্তাধারায় বাংলাদেশের সমাজ স্বল্প সময়ে উন্নতি, অগ্রগতি'র শিখরে অবস্থান নিয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে 'উন্নত প্রযুক্তি বিশ্বে'র কোন একটি দেশেও সম্ভব হয়নি"।
তিনি আর কেউ নন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র সুযোগ্য পুত্র জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি উন্নত বিশ্বকে বিস্মিত করে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নেতৃত্বের আসনটি নীজ যোগ্যতায় ইতিমধ্যে দখল করে নিয়েছেন। সুতারাং বলা যায়-- সভ্যতা বিকাশে এবং সমাজ উন্নয়নে বুদ্ধিজীবিদের লালন করা বাংলাদেশের স্বার্থেই প্রয়োজন।তাঁদের জীবন ও সম্পদের নিশ্চয়তা দেয়ার গ্যারান্টি যতক্ষন না আমরা দিতে পারবো ততক্ষন দেশের এই মহামুল্যবান সম্পদ 'মেধা' পাচার অর্থাৎ বুদ্ধিজীবির দেশত্যাগ বন্ধ করা যাবে না।
যে কোন সমাজের বুদ্ধিজীবিরা সেই সমাজের মহামুল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। মূলত: বুদ্ধিজীবিরা রাষ্ট্র ও সমাজের পথপ্রদর্শক--' উন্নতি, অগ্রগতি, প্রগতি'র সোপান। বুদ্ধিজীবিহীন রাষ্ট্র, জাতী, সমাজ, সরকার বাঁচতে পারেনা। নেতৃত্বহীন দল যেমন আগোছালো--মৃত প্রায়, তেমনি বুদ্ধিজীবিহীন সমাজও মৃত, আগোছালো, দিকভ্রম, অস্থির, অন্ধকারের আবর্তে নিমজ্জিত হতে বাধ্য হয়। মেধাশূন্য জাতী উন্নতি, অগ্রগতি সাধনের কোন উপায় থাকেনা বা করতে পারেনা। যে সমাজ মেধার কদর জানে না, সেই সমাজে মেধাবী'রা জম্মগ্রহন করেনা এবং সে সমাজ অসভ্য সমাজের অন্তভুক্ত।
বুদ্ধিজীবি'র সংজ্ঞা:--
দৈহিক শ্রমের বাহিরে মানষিক চিন্তাচেতনার শক্তিতে যে সমস্ত ব্যাক্তিবর্গ জীবন জীবিকা নির্বাহ মরেন তাঁদেরকে বুদ্ধিজীবি বলা হয়। অর্থাৎ জ্ঞান চর্চাকারীরাই বুদ্ধিজীবি।
সমাজে বুদ্ধিজীবিদের অবদান:--
মানব সভ্যতা বিকাশের প্রাথমিক যুগ হতে আজকের এই প্রযুক্তি যুগের শিখরে অবস্থান নেয়া মানব সভ্যতা পরিবর্তনের প্রতিটি স্তরে'ই রেয়েছে মেধাবী মানুষদের মেধার অন্যন্ন, অনবদ্য অবদান ও ভুমিকা। মুলত: মেধাবী মানুষেরাই সমাজকে আজকের বিজ্ঞানে'র অত্যাধুনিক আবিস্কার প্রযুক্তি'র সভ্যতার যুগে টেনে তুলেছে। প্রত্যহ-প্রতিনিয়ত মানব সমাজের অতিব প্রয়োজনীয় ও কল্যানকর উপাদান সমূহ যেমন--"জ্ঞান বিজ্ঞান, শিল্প, সংস্কৃতি, চিকিৎসা, উদ্ভাবন, ইতিহাস, ঐতিহ্যের বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় বিচরনরত: সৃষ্টিশীল মেধাবী'দের সাধারন ভাবে এক কথায় প্রকাশে বুদ্ধিজীবিদের অবদান অনস্বিকায্য বলা যায়"।
নির্দিষ্ট একটি দেশের বুদ্ধি চর্চারত: ব্যাক্তি বা মেধাবী জনেরা স্বদেশ ও স্বজাতীর কল্যানে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা, লব্দ জ্ঞানের অলো স্বদেশ, স্বসমাজ, স্বজাতী সহ বিশ্ব সমাজকে আলোকিত করে তোলে। মেধাবীজনের আবিস্কার, উদ্ভাবন, রচনা, গভেষনা 'স্ব-জাতির কল্যান বয়ে আনে এবং চলার পথ নির্দেশ করে, সাথে সাথে 'বিশ্বমানব কুলের কল্যান, উন্নতি, অগ্রগতিতেও অন্যন্ন অবদান রাখে।সেই অর্থে বুদ্ধিজীবি'রা শুধুমাত্র স্ব-জাতী'র বা স্বদেশের সম্পদ বলতে গেলে তাঁদের প্রতি অবিচার করা হবে--'তাঁরা বিশ্ব সমাজেরও অমুল্য সম্পদ'।
বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের আলাদা মায্যদা:--
আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিদের রয়েছে দেশ ও জাতীর নিকট এক আলাদা মায্যদা। দেশ ও জনগনের কল্যানে নিবেদিত আমাদের বুদ্ধিজীবি সমাজ সর্বদাই জাতীর ক্রান্তিকালে জনতার সঙ্গে একাত্ম হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে। যেমন--'৬৯ এর গনভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহন, '৭১ বাঙ্গালী জাতীর গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে অকুন্ঠ সমর্থন। '৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশবিরোধী রাজাকার ও দখলদার পাকিস্তানী সেনাদের হাতে অসংখ্য বুদ্ধিজীবির প্রানবলি দান, '৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে জনগনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ এবং 'গনতন্ত্র পুণ:রোদ্ধারের লক্ষে 'জনতার মঞ্চ' প্রতিষ্ঠা, ৯৪ ইং সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ৭১ইং সালে জাতীর মহান মুক্তিযুদ্ধে 'মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িত শীর্ষ রাজাকারদের প্রতিকী বিচারানুষ্ঠান,উক্ত বিচারানুষ্ঠান জাতী'কে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভোদ্ধকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, '২০০১ইং সালে জামায়াত শিবির এবং তাঁদের প্রেতাত্বা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের প্রতিহিংসার বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবি সমাজের সম্মিলীত প্রতিবাদী ভূমিকা পালন--"বাঙ্গালী জাতীর নিকট বুদ্ধিজীবিদের বরেন্য, পুজনীয়, শ্রদ্ধা, সম্মানের সর্ব উচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে"।
বুদ্ধিজীবি'র পরিচয়:--
সাধারাণত: মানব সভ্যতা বিকাশ, দেশ ও জনগনের কল্যানে নিবেদিত সমাজের মেধাবী এবং বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ, জ্ঞানী, গুনীজনদের বুদ্ধিজীবি বলে। মানব সমাজের অতিব প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহে প্রতিনিয়ত বিচরনরত: এবং বিশেষ ক্ষেত্রে অধিকতর জ্ঞানী, গুনীজনদের বুদ্ধিজীবি হিসেবে অভিহীত করা হয়। তাঁরা সর্বকালে সর্বদেশে রাষ্ট্র, সমাজ ও জনগনের নিকট সম্মানের পাত্র। এইরুপ সম্মানীত ব্যাক্তিবর্গ নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বুদ্ধি চর্চা বা জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে সৃষ্ট উপাদানের উপর জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।তাঁরা সভ্যতার বিকাশ, মানবকল্যান, দেশ, জাতী, জনগনের উন্নয়ন অগ্রগতি ভাবনায় নিজেদের নিয়োজিত রাখেন। দেশ ও জাতীর ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষনে নিবেদিত প্রান ব্যাক্তিবর্গ বুদ্ধিজীবি'র আওতায় পড়ে। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চারত: ব্যাক্তিবর্গ, উৎপাদন ও উন্নয়ন সহযোগী ব্যাক্তিবর্গ দেশ ও জাতীর কল্যানে সদা সর্বদা নিবেদিত বুদ্ধিজীবি হিসেবে সমাজে পরিচিত।
বুদ্ধিজীবি'র প্রকারভেদ:--
বিশেষ একটি বিষয়ে গভেষনার মাধ্যমে বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী ব্যাক্তিদের বিশেষজ্ঞ, পরিক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয় আবিস্কারকারীদের আবিস্কারক, উদ্ভাবনকারীদের উদ্ভাবক, কবিতা রচয়িতাদের কবি, বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষনকারীদের বিশ্লেষক ইত্যাদি প্রকারভেদ রয়েছে। এক কথায় বিশেষ বিষয়ে গভেষনা, উদ্ভাবন, বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষনে পারদর্শী ব্যাক্তিবর্গ'কে বুদ্ধিজীবি বলা যায়। বিশেষজ্ঞ, উদ্ভাবক, প্রযুক্তিবীদ, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পি, সাংবাদিকেরা স্ব-স্ব পেশা ভিত্তিক উল্লেখিত বিষয়ে একাডেমিক জ্ঞান আহরনের সত্বেও, উক্ত বিষয়টির সম্পর্কে নিয়ন্তর চর্চারত: থাকেন। ফলত: উপলব্দ বিষয়টি'র বহি:রাবরনের স্বরুপ যেমন উৎঘাটন করেন তেমনি অন্তনিহীত ক্ষতিকর উপাদান সমূহ চিহ্নিত করে বিষয়টি'র সামগ্রিক উপকারীতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে জনসচেতনতায় সৃষ্টিতে ভুমিকা পালন করেন। এককথায় স্ব-স্ব-ক্ষেত্রে স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত বিশেষজ্ঞ, উদ্ভাবক, বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবীদ, রাজনীতিবীদ, কৃষিবীদ, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পি, সংস্কৃতি সেবী সহ অন্যান্ন শাখা প্রশাখায় বিচরণ পুর্বক মেধা ও দক্ষতা'য় কায়িক শ্রমে সৃষ্ট সৃজশীল সৃষ্টি'র উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন--তাঁরা'ই সমাজে বুদ্ধিজীবি হিসেবে পরিচিত।"
সম্মান ও মায্যদা:--
এই শ্রেনীর ব্যাক্তিবর্গ রাষ্ট্র ও সমাজে একনম্বর নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। রাষ্ট্র তাঁদের বিশেষ বিশেষ কাজে অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ বিভিন্ন পদক, উপহার, উপঢৌকন, উপাদিতে সম্মানীত করেন।সরকার তাঁদেরকে বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রচলিত বিভিন্ন পদক অথবা সরকারের মায্যদাপূর্ণ উপহার প্রদান করেন। রাষ্ট্রীয় বিশেষ অনুষ্ঠানে এই শ্রেনী'র সম্মানীত নাগরিকগন নিমন্ত্রন পেয়ে থাকেন--নিমন্ত্রিত অতীথিরা রাষ্ট্রীয় অতীথি হিসেবে বিবেচিত হন। বিবিধ গুনে গুনাম্বিত রাষ্ট্রের প্রথম শ্রেনী'র নাগরিক হিসেবে তাঁরা সর্বদা রাষ্ট্র এবং জনকল্যানে নিবেদিত থাকেন। রাষ্ট্রীয় রীতিনীতি পরিবর্তন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন, সরকার পরিবর্তন সমাজের বুদ্ধিজীবি শ্রেনী'র বিশেষ বিবেচ্য বিষয় নয়। রাষ্ট্র ও সরকার, দেশ ও জনকল্যানে তাঁদের কর্ম, সৃষ্টি, গভেষনা, উদ্ভাবন নিয়ে তাঁরা ব্যাস্ত থাকতে বেশী পছন্দ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর হত্যা তালিকায় বুদ্ধিজীবি:-
এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাইদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে এক আলোচনায় বলেছিলেন, বুদ্ধিজীবী ছাড়া যেমন বড় ধরনের কোন বিপ্লব সংঘটিত হয় নি, তেমনি তাদের ছাড়া কোন বিপ্লববিরোধী আন্দোলনও সংঘটিত হয় নি। এক কথায়, তারাই হচ্ছেন ‘বিপ্লব’ এর প্রাণ। অন্যভাবে বলা যায়, শাসকগোষ্ঠীর টিকে থাকার জন্যে যেমন একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী প্রয়োজন, তেমনি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্যেও আরেক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদেরকে তাঁদের রোষানলে পড়তে হয়। এ কারণেই দেখা যায় যে, গত শতাব্দীর শুরুতেই আর্মেনিয়ায় গণহত্যা শুরু হয়েছিল ২৫০ জন বুদ্ধিজীবীকে গ্রেফতার ও হত্যার মাধ্যমে। হিটলার ও তার নাৎসি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যা করেছিল। এই দিক দিয়ে বিবেচনা করলে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা মোটেই নতুন কিছু নয়, বরং প্রকৃতিগত দিক হতে পূর্বের গণহত্যাগুলোর সাথে এটা সাদৃশ্য পূর্ণই বটে।
৭১ এ বাঙ্গালী জাতী'র গৌরবের অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার পাক বাহিনী ও তাঁদের এদেশীয় দোষর রাজাকার আলবদর, আল শামস বাহিনী'র হত্যা তালিকায় বুদ্ধিজীবিরা ছিলেন অন্যতম নিশানা। যুদ্ধের নয় মাস দেশব্যাপী খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয়েছিল বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবিদের। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যখন প্রায় সমাসন্ন, পাকিস্তানী বাহিনী যখন বুঝতে পেরেছে তাঁদের পতন অনিবায্য, তখনই তাঁরা ঢাকা শহরের আনাছে কানাছে যে সমস্ত দেশবরেন্য বুদ্ধিজীবিদের বসবাস ছিল, তাঁদের অনেককে ধরে ধরে অকথ্য নিয্যাতনের পর হাত পা বেঁধে হত্যা করা হয়েছিল।
হত্যার উদ্দেশ্য:--
বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করার মুল উদ্দেশ্য ছিল বাঙ্গালী জাতীকে মেধাশুন্য করার মহা পরিকল্পনারই অংশ। মুক্তিযুদ্ধের প্রম্ভে এবং শেষ পয্যায়ে বুদ্ধিজীবি হত্যায় উদ্দেশ্যের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে বুদ্ধিজীবি হত্যা ছিল বাঙ্গালীর মুক্তি সংগ্রামকে স্তব্দ করে পাশ্চিমা শাষক গোষ্টির শাষন শোষন নিরবচ্ছিন্ন রাখা। এতদ উদ্দেশ্যে হত্যা মিশন ছিল দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের মেধাবী শিক্ষক, নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিগন।
হত্যাকান্ডের দ্বিতীয় ধাপটি ছিল অত্যান্ত মর্মান্তিক এবং বেদনা দায়ক। ডিসেম্বরের তিন বা চার তারিখ থেকে এই হত্যা মিশনটি কায্যকর করা হয়। লক্ষ করলে দেখা যায় এই হত্যাযজ্ঞটি শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবি সমাজের উপর চালানো হয়েছিল। উক্ত হত্যা মিশনে আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবিদের এককভাবে হত্যা করা হয়নি, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্রদের হত্যা করা হয়েছিল। স্পষ্টত:ই উক্ত হত্যাযজ্ঞের লক্ষ ছিল আগামীর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে মেধাশুন্য করার চক্রান্তের বাস্তবায়ন। বাঙ্গালী জাতীকে জ্ঞান, বিজ্ঞান, আবিস্কার উদ্ভাবন সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধাশুন্য করে অন্ধকারে নিমজ্জিত করার পরিকল্পনা।
আর একটি বিষয় লক্ষ করলে দেখা যায়--মুক্তিযুদ্ধে পরিকল্পিত ভাবে শিক্ষকদের খুব বেশী হত্যা করেছিল। অর্থাৎ নতুন বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্র ধ্বংস করে দিতে পারলে অনায়াসে বাঙ্গালী জাতীর উপর তাঁর সুদুরপ্রসারী কুপ্রভাব পড়বে, এই চিন্তা চেতনাই তাঁদের মধ্যে কাজ করেছে মনে করি।
মহান মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিতযসা জ্ঞান-গরিমায় অগ্রসরমান,প্রগতির ধারক বাহকদের হত্যা করেছিল।নিম্নে তাঁর একটি তালিকা প্রদান করছি।
শিক্ষাবিদ - ৯৯১ জন।
সাংবাদিক - ১৩ জন।
চিকিৎসক - ৪৯ জন
আইনজীবী - ৪২ জন
অন্যান্য (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী এবং প্রকৌশলী) - ১৬
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বুদ্ধিজীবি সমাজ--
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে শুরু হওয়া মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিবীদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রগতিশীল চিন্তাধারার অধিকারীদের উপর আঘাত আজও বন্ধ হয়নি। দেশবিরোধী চক্রটি সুযোগ পেলেই প্রথমে তালিকা প্রকাশ করে--'পরবর্তিতে সুযোগ বুঝে হত্যাকান্ড ঘটায়'। বাংলাদেশের জম্মলগ্ন থেকে অশুভশক্তি একেক সময় একেক নামে তাঁদের উত্থান ঘটিয়েছে। তাঁরা কখনও গুপ্ত হত্যা, কখনও সভাসমাবেশে বোমা হামলা, কখনও বা প্রতিষ্ঠানে হামলা,কখনও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নির্মম, নিষ্ঠুর ভাবে মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী গুনিজনদের হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের এই ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে চিহ্নিত কয়েকটি প্রেতাত্বার দল ও গোষ্টি। লক্ষ করলে দেখা যায়--'এই সমস্ত প্রেতাত্বা সদৃস রাজনৈতিক দল সমূহের উত্থান ঘটেছে-'জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু'কে স্বপরিবারে হত্যার পর'।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী বুদ্ধিজীবিদের লালন করে থাকে তাঁদের স্বার্থে। আমাদের সমাজে তাঁদের চরিত্র হনন, কুৎসা রটনা, নির্বিচারে হত্যা, গুম চালানো হয়। অশুভ শক্তির হত্যাযজ্ঞে ইতিমধ্যে অগনিত বুদ্ধিজীবি প্রান হারিয়েছে, অসংখ্য দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য পরিস্কার--'প্রগতির ধারা থেকে বাংলাদেশকে বিচ্যুত করে অন্ধকার যুগে ফিরিয়ে নেয়া'।
উপসংহার:---
আমাদের বুদ্ধিজীবি আমাদের সম্পদ। বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নকামী একটি দেশের বুদ্ধি চর্চারত: ব্যাক্তিদের লালন করা প্রয়োজন দেশ ও জাতীর বৃহত্তর স্বার্থে। ইতিমধ্যে প্রমানীত হয়েছে--"এক প্রযুক্তিবীদের চিন্তাধারায় বাংলাদেশের সমাজ স্বল্প সময়ে উন্নতি, অগ্রগতি'র শিখরে অবস্থান নিয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে 'উন্নত প্রযুক্তি বিশ্বে'র কোন একটি দেশেও সম্ভব হয়নি"।
তিনি আর কেউ নন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র সুযোগ্য পুত্র জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি উন্নত বিশ্বকে বিস্মিত করে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নেতৃত্বের আসনটি নীজ যোগ্যতায় ইতিমধ্যে দখল করে নিয়েছেন। সুতারাং বলা যায়-- সভ্যতা বিকাশে এবং সমাজ উন্নয়নে বুদ্ধিজীবিদের লালন করা বাংলাদেশের স্বার্থেই প্রয়োজন।তাঁদের জীবন ও সম্পদের নিশ্চয়তা দেয়ার গ্যারান্টি যতক্ষন না আমরা দিতে পারবো ততক্ষন দেশের এই মহামুল্যবান সম্পদ 'মেধা' পাচার অর্থাৎ বুদ্ধিজীবির দেশত্যাগ বন্ধ করা যাবে না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন