মুক্তিযুদ্ধে দিকভ্রান্ত ছাত্রলীগের মুক্তি আজও মিলেনি--"এনএসএফ" এর পদাঙ্ক অনুসারণকারীদের প্রতি জাতীর আভিশাপ।"

 মুক্তিযুদ্ধে দিকভ্রান্ত ছাত্রলীগের মুক্তি আজও মিলেনি- "এনএসএফ পদাংক অনুসারীদের প্রতি জাতির অভিশাপ"।

    ৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বশেষ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ২০০৫-০৬ ইং সাল পয্যন্ত জোট সরকারের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা সকল জাতীয় আন্দোলন, সংগ্রামে নি:সন্দেহে ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ছাত্রলীগ চালিকাশক্তি'র ভূমিকা পালন করেছে। বলা যায় '৬২ এর কুখ্যাত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের সাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি'র বিরুদ্ধে গড়ে উঠা ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকার আন্দোলন, ৬৯ এর গনভ্যুত্থান এবং বাঙ্গালী জাতী'র মহান মুক্তিযুদ্ধ সময়কাল পয্যন্ত সকল আন্দোলন সংগ্রামে গৌরবজনক ভুমিকা 'ছাত্রলীগ 'বাঙ্গালী জাতীর সমীহ আদায় করে নিতে পেরেছিল।
      উল্লেখ্য, পুর্ব বাংলার সমস্ত আন্দোলন, সংগ্রামই সংগঠিত হয়েছিল পাকিস্তানী শাসকচক্র, সামরিকজান্তা সরকারের জেল, জুলুম, হুলিয়া, প্রকাশ্য রাজপথে মূহু মূহু গুলী বর্ষনের ভীতি উপেক্ষা করেই হয়েছিল। ৫২ সালে বাঙ্গালী জাতীর মুখের ভাষা বাংলা রক্ষার আন্দোলনে সফল নেতৃত্বের অধিকারি ছাত্রলীগ। শুধু তাই নয়--'বাংলা'কে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষার মায্যদায় প্রতিষ্ঠিত করার গৌরব এনে দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রনী ভুমিকার অধিকারিও ছাত্রলীগ। ৬২ ইং সালের শিক্ষা আন্দোলনের মূল নেতৃত্বই ছিল আজকের এই এনএসএফের পদভারে ক্যুজ্ব হয়ে পড়া ছাত্রলীগের হাতেই। পাকিস্তানের ফ্যাসিবাদী সরকার শিক্ষানীতি প্রনয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করেছিল।  গঠিত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী পুর্ব বাংলায় শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁরা সাম্প্রদায়িক শিক্ষা নীতি' চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। উক্ত কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজের গড়ে উঠা আন্দোলনের মূল কারিগর ছাত্রলীগ।
    '৬৬ এর বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬দফা ছিল বাঙ্গালী জাতীর মুক্তিসনদ। তিন বছরের অধিক সময় ৬দফার যথাযথ প্রচার করার সুযোগ পাকিস্তানী জান্তা সরকার বঙ্গবন্ধু'কে দেয়নি। ৬দফা আন্দোলন বানচাল করার উদ্দেশ্যে সর্বশেষ পাকিস্তানী সরকার বঙ্গবন্ধু'কে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে জেলে নিক্ষেপ করে। পাকিস্তানী সামরিক জান্তা জেলভ্যন্তরে ক্যাঙ্গারু আদালত বসিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির দন্ডাদেশ দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত হয়। এমত:বস্থায় ৬৯এ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ছাত্রসমাজের ১১দফা দাবী নিয়ে মাঠে নামে। ছাত্রজনতার মিলিত গনআন্দোলন নিমিষেই  গনভ্যুত্থানে রুপান্তরীত হয়। আন্দোলনের তিব্রতায় জান্তা সরকার 'বঙ্গবন্ধু'কে নি:শর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ছাত্রজনতার প্রিয় নেতা শেখ মুজিব'কে সরওয়ার্দি উদ্যানে নিয়ে যায় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ, এবং স্মরণাতীতকালের বৃহৎ সমাবেশে তাঁকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি'তে ভূষিত করে।
   জাতী'র মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী আধুনিক সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগ হারিয়েছে তাঁর নিবেদিত '৩৭ হাজার' নেতাকর্মী। যা পৃথিবী'র ইতিহাসে বিরল ঘটনা। এমন একটি দেশও বিশ্বে খুঁজে পাওয়া যাবেনা, স্বজাতীর মুক্তির লড়াইয়ে, সেই দেশের ছাত্র সমাজ, অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। '৭১এর মুক্তিযুদ্ধে গঠিত  'মুক্তিবাহিনী' এবং উক্ত বাহিনীর সর্বনিম্ন পয্যায়ের গ্রুপ কমান্ডার থেকে আরাম্ভ করে সর্বোচ্ছ বাহিনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছে অ-প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত আজকের এই প্রেতাত্বার ভারে ন্যুজ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা'ই। ছাত্র মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত: এদেশীয় নিয়মিত প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট, বাঙ্গালী ইপিআর, পুলিশবাহিনী, আনসার বাহিনী, সর্বশেষ ভারতীয় মিত্র বাহিনী সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অসীম সাহষিকতায় যুদ্ধ করেছে। এই পয্যন্ত আজকের এই অনাদর্শিক নেতাকর্মীর পদভারে ক্লান্ত, অবসন্ন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাঁর আপন মহিমায় বাঙ্গালী জাতীর গৌরব, অহংকার, শৌয্য, বিয্যের প্রতিকে অধিষ্ঠিতই ছিল বলা যায়।
   ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তানী দখদার সেনাবাহিনীর চরম পরাজয় এবং মুক্তিযুদ্ধের কাংক্ষিত বিজয় সাধিত হয়। ইত্যবসরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু'র অনুপস্থীতিতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময় ভারতের মাটিতে সাম্রাজ্যবাদী চক্রের কালছায়া আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দদের একাংশ এবং যুদ্ধরত: মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ'কে ছেয়ে ফেলে। ঘটনাটি প্রখর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রয়াত কংগ্রেস নেত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের অকৃতিম বন্ধু, শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধির নজর এড়ায়নি। তিনি তড়িগড়ি তাঁর দেশের সেনাবাহিনী'র সহযোগীতায় 'মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী'র সমন্বয়ে যৌথ কমান্ড "মিত্রবাহিনী" গঠন পূর্বক  বাংলাদেশ মুক্ত করতে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন। অল্পসময়ের যুদ্ধে প্রায় ১৪হাজার ভারতীয় সেনা, ত্রিশলক্ষ মা-বোনের ইজ্জত, তিনলক্ষ মুক্তিকামী মানুষ, অজস্র সম্পদহানীর বিনিময়ে-অবশেষে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি'র উম্মেষ ঘটে।
  মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা এবং পরাজিত শত্রু পাকিস্তানের যে কালছায়া সামগ্রিক যুদ্ধপরিস্থীতিকে টালমাটাল করে দিতে চেয়েছিল। সেই ষড়যন্ত্রটি যুদ্ধশেষে স্বাধীনদেশের মাটিতে দেশবিরুধী শক্তির পরিচয্যায় পরাজিতশক্তি সযত্নে কায্যকরভাবে প্রোথিত করে। নতুন দেশ, নতুন সরকারের বিরুদ্ধে অচিরেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠে প্রতিবিপ্লবীদের পদচারনা। চরম ডান পন্থি সাম্প্রদায়িক শক্তি, মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত এদেশীয় পাকিস্তানী দালাল সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলাম, মুসলিমলীগ, নেজামে ইসলাম, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির এদেশীয় অনুচর কতিপয় বুদ্ধিজীবি, চরম বামপন্থি তথাকথিত কমিউনিষ্ট পার্টি সমূহ, নিষিদ্ধ ঘোষিত স্বসস্ত্র সর্বহারা পার্টি সমূহ--সম্মিলীত সকলের প্রকাশ্য রাজনৈতিক প্লাটফরমের দায়িত্ব গ্রহন করে-'দিকভ্রান্ত ছাত্রলীগের তথাকথিত প্রতিবিপ্লবী দল "জাসদ"।
   সম্মিলীত শক্তি মুক্তিযুদ্ধে দিকভ্রান্ত ছাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে গঠিত প্রতিবিপ্লবী, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী "জাসদে'র ছায়াতলে বঙ্গবন্ধু সরকারকে অস্থির করে তুলে। ছাত্রলীগের প্রতিবিপ্লবী তরুন তুর্কিরা ষড়যন্ত্রের অ,আ,ক,খ, সম্পর্কে প্রথমাবস্থায় কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও সব হারিয়ে সময়ে ঠিকই বুঝতে পেরেছে। তাইতো দেখি--ভুক্তভুগী কারো কারো মুখে বিএনপি দলের সমালোচনায় রাজনীতির ভাষাজ্ঞান হারিয়ে কি বলেন হুঁশ জ্ঞানও থাকেনা। অনন্তকাল অনুশোচনার আগুনে দগ্ধ হয়েই জাতির পিতা হত্যার প্রায়চিত্ত করতে হবে তথাকথিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীদের--ইহাই প্রকৃ।তি'র অলিখিত বিধান।
   সম্মিলীত দেশবিরুধী শক্তি'র ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ নেতৃত্ব বাংলাদেশের জনগনের মধ্যে এবং ছাত্রলীগ নেতৃত্ব 'ছাত্র সমাজে'র মধ্যে কায্যত কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। এবং কি তাঁদের প্রতিনিয়ত গোয়েবলসীয় অপপ্রচারেরও সময়মত  জবাব প্রদান করার আগ্রহ প্রকাশ করেনি। বিশাল ব্যাক্তিত্বের অধিকারী বঙ্গবন্ধু মুজিবে'র ছায়াতলে বসে আওয়ামীলীগ এবং ছাত্রলীগ নেতৃত্ব সবকিছুকে ডেমকেয়ার মানষিকতায় তুচ্ছ তাচ্ছিল্যই করেছেন। ফলে ক্রমেই মিথ্যাচার মহিরুহ আকার ধারন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। অবশেষে পরাজিত শক্তি মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সুযোগ বুঝে ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ কালরাতে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু'কে হত্যা করে চরম প্রতিশোধ গ্রহন করে।
    মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশে '৭৫ পরবর্তি সময় একরকম আওয়ামীলীগ, বঙ্গবন্ধু নির্বাসিতই ছিল। পরোক্ষভাবে--প্রেতাত্বার প্রধান 'মেজর জিয়া' আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী'দের উপর প্রকাশ্য দিবালোকে অথবা রাতের অন্ধকারে হত্যা, গুম, খুনের তান্ডব চালাতে থাকে। নিদেনপক্ষে হত্যা, গুম, খুনে ব্যর্থ হলে সেই সমস্ত নেতাদের জেলখানার চার দেয়ালে বন্দিবস্থায় জীবন কাটাতে বাধ্য করে। বঙ্গবন্ধু'র খুনীচক্র আওয়ামীলীগ নেতাদের জন্যে জেলখানাও নিরাপদ রাখেনি। ৩রা নভেম্বর '৭৫এ জেলভ্যন্তরে হত্যার শিকার হন বঙ্গবন্ধু'র খুনীচক্রের সঙ্গে আপোষ না করা বাঙ্গালী জাতির অবিসংবর্ধিত জাতীয় চারনেতা।
    সন্দেহাতীতভাবে প্রমানীত--৭৫ পরবর্তি সকল হত্যা নিয্যাতন, নিপীড়নের নেপৈথ্য নায়ক মুক্তিযুদ্ধে লুকিয়ে থাকা অশুভশক্তির প্রেতাত্বা, মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর চর, সাম্রাজ্যবাদের দালাল, মেজর জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যার রেশ কিছুটা স্তিমিত হওয়ার পর এই খুনী রাতের আঁধারে বাংলাদেশের ক্ষমতার মসনদ দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষনা করে। এবার তাঁর  প্রত্যক্ষ ভূমিকায় বঙ্গবন্ধুর ঘামের ফসল, বাংলার মাটি ও মানুষের সংগ্রামের ফসল, জাতী'র মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বকারী দল, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকেও খন্ড বিখন্ড করার চেষ্টা চালায়। এমত:বস্থায় সুচুতুর আওয়ামীলীগ নেতৃত্ব দলের ভাঙ্গন রোধে বঙ্গবন্ধু'র জৈষ্ঠকন্যা শেখ হাসিনার কাঁধে দলীয় নেতৃত্ব তুলে দিয়ে নিজেরা হাফ ছেড়ে বাঁচেন।
    জনককন্যা দেশ, দল, জাতীর বৃহত্তর স্বার্থে এবং অশুভ শক্তির নিপীড়ন, নিয্যাতনের হাত থেকে দেশ ও জাতীকে রক্ষার ব্রত নিয়ে ১৯৮১ সালে আওয়ামীলীগ দলের সভানেত্রী'র দায়িত্ব গ্রহন করেন। ঐ বছরের ১৭ই মে সামরিক জান্তা সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্বদেশে'র মাটিতে ফিরে আসেন। তাঁর এই ফিরে আসা--দল, দেশ, জাতীর মনে নতুন আশার সঞ্চার করে। চতুদিকে দেখা দেয় উৎফুল্লতা। বাংলাদেশের সর্বত্র সামরিক জান্তার অলিখিত, অঘোষিত নিষিদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের রণশ্লোগান 'জয়বাংলা  জয়বঙ্গবন্ধু" ধ্বনিতে প্রকম্পিত হতে থাকে।
     জনককন্যা শেখ হাসিনার বিচক্ষন নেতৃত্বে শুরু হয় ক্যান্টনম্যান্টে বন্দি গনতন্ত্রের মুক্তির সংগ্রাম।  দীর্ঘ ২১ বছর সাম্রাজ্যবাদের দোসর, পাকিস্তানী প্রেতাত্বার সরকার, সামরিক সরকার, সামরিক আমলা শাসিত ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষনের বিরুদ্ধে বিরামহীন আন্দোলন, সংগ্রামের নেত্রী শেখ হাসিনা, একমাত্র দল আজকের এই রাজাকার, আলবদরের বংশধরদের পদভারে ক্যুজ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ।  জাতীর গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম,  স্বৈরাচার বিরুধী গন আন্দোলন, ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম সহ সর্বশেষ জোট সরকারের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে  গনআন্দোলন সহ বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার  প্রতিটি যৌক্তিক আন্দোলন, সংগ্রামে ছাত্র সমাজের পক্ষে একমাত্র আজকের এনএসএফ এর পদাংক অনুসারী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এই ছাত্রলীগের অকুতোভয় নেতাকর্মীরাই বুকের তাজা রক্তে জাতী'র সফলতা'র ভান্ডার বার বার পূর্ণ করে দিয়েছে, দুর্বৃত্তরা বার বার এই ভান্ডার লুটপাট করে খালী করেছে।
  সর্বশেষ গত 'মে ২০১৮ ইং থেকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পয্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্ধিত বেতন, ফিস আদায়ের বিরুদ্ধে 'চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রতিবাদী আন্দোলন সংগ্রাম--'চট্টগ্রামের আপামর জনগনের বিপুল প্রশংসা অর্জন করেছে। উল্লেখ্য  চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ আন্তদলীয় বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে আন্দোলন সংগঠিত করেছে। প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক ছাত্র সমাজের দাবী আদায় করে দিয়েছে। 'চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় ষড়যন্ত্রের ফাঁদেও বারকয়েক পড়েছে। সর্বশেষ তাঁদের নেতা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক রণি' ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। তাতেও ছাত্রলীগের আন্দোলন থামানো যায়নি। বলতে গেলে মহানগর ছাত্রলীগের অপরিসীম ত্যাগেের বিনীময়ে জাতীয়ভাবে ছাত্র সমাজের মাঝে ছাত্র রাজনীতি'র ধ্বংসপ্রায় নীতিনৈতিকতা, সংগ্রামী ঐতিহ্য উজ্জলাকারে তুলে ধরেছে।অন্তত:পক্ষে প্রায় পতিত ছাত্ররাজনীতিতে  আশার প্রদিপ জ্বালাতে সক্ষম হয়েছে।
    প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবদি জাতীয়, বিভিন্ন  অঞ্চল, শহর, বন্দর, শিক্ষাঙ্গন ভিত্তিক ছাত্র জনতার ন্যায্য দাবী আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের অনবদ্য ভুমিকা জাতীকে উজ্জিবীত, আশাম্বিত করেছে। ছাত্রলীগ বাংলাদেশের জনগনের প্রতিটি আন্দোলনে রাজপথে নিজেদের তাজা রক্ত ঢেলে জনগনের বিজয় ঘরে তুলে দিয়েছে। বিনিময়ে এমপি হওয়ার বায়না করেনি, মন্ত্রী হওয়ার তদ্ভিরও করেনি। বিনা ইন্টারভিউতে চাকুরীর সুযোগ চায়নি, সরকারের আমলা হওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেনি। শুধুই স্বপ্নই দেখেছে--প্রতিটি আন্দোলনের বিজয়ের পর দেশে শান্তি-শৃংখলা ফিরে আসবে। লেখা পড়ার পরিবেশ ফিরে আসবে,উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পথ প্রশস্ত হবে। জীবন যাত্রার ব্যয় কমবে, পড়ালেখার খরছ কমবে। গাবেষনার সুযোগ অবারীত হবে,উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে দেশে বিদেশে ব্যাপক সুযোগ পাবে। সর্বশেষ--লেখাপড়া শেষান্তে যথারীতি যোগ্যতানুযায়ী জীবিকা নির্বাহ করার সুযোগ পাব, মাতাপিতার দু:খ্য ঘুছাতে পারবে।
     এ যাবৎকাল সংগঠিত ছোট বড়, প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক, জাতীয় ও আঞ্চলিক, বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশার আন্দোলন সংগ্রামে ভুমিকা রাখতে গিয়ে ছাত্রলীগ একেবারেই ভুল করেনি তা বলবো না। তাও ঘটেছে ছাত্র রাজনীতিতে মেজর জিয়ার নষ্ট রাজনীতি চর্চার সুযোগ অবারিত করার কারনে। লক্ষনুযায়ী 'পেশী শক্তি' প্রদর্শন, চাঁদাবাজী, অস্ত্রবাজী, দখল, মাদকের অবাধ ব্যবহার ইত্যাদির তান্ডবের জোয়ারে। তাঁর সৃষ্ট শিক্ষাঙ্গনের নষ্ট রাজনীতির বাতাস ছাত্রলীগকে স্পর্ষ করতে পারেনি বলি কোন মুখে?এই সেদিনও জগন্নাথ বিশ্ব বিদ্যালয়ে বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে এই এনএসএফ এর পদাংক অনুসারী আজকের  ছাত্রলীগ।
   ভুলের পথেও একাধিকবার যায়নি তাও বলি কিভাবে? অনেকবার ভুল রাজনীতি'র গব্বরে নিমজ্জিত হয়েছে আবার উঠেও এসেছে। ভুল না করলে কি আর সদ্য স্বাধীন দেশ পুর্ণগঠনকালে প্রতিবিপ্লবী জাসদ সংগঠনের জম্ম হ'য়? জাসদের জম্ম না হলে জাতী কি বঙ্গবন্ধু'কে হারিয়ে এতিম হয়? ভুল না হলে কি দীর্ঘ তিন দশকেরও অধিক সময় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ ছাত্র জনতার বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয়ার প্রয়োজন হ'ত?
    এতসব কিছুর পরেও বিগত এক দশকে'র মধ্যে ২০১৩/১৪/১৫ এই তিন বছর বাদ দিলে জাতীয় রাজনীতিতে, ছাত্র রাজনীতিতে, শিক্ষাঙ্গনে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার সুবাতাস বয়ে যাওয়ার আলামত পরিস্ফুটিত হয়ে উঠেনি, শত্রুও বলবেনা। এখন আর চর দখলের মত করে--হল দখলের সংস্কৃতি শিক্ষাঙ্গনে কোন সংগঠন চর্চা করে না। সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা রাতে অস্ত্রের ঝঝনানি শুনা যায়না। সেশন জটের কবলে পড়ে মুল্যবান শিক্ষা জীবন নষ্টের কোন ভয়--'কোন ছাত্রই করেনা'। মারামারী, হানাহানি, আধিপত্য বিস্তারের খবর পত্রিকায় এই দশকের আগের দশকের মত করে আসেনা।এখন আর কোন পিতা মাতাই নিজের নয়নের মণিকে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে  মানষিক যন্ত্রনায় চটপট করেনা।
    এতসব ইতিবাচক দিক উম্মুচিত হওয়ার পরেও কিভাবে বলি--"ছাত্ররাই যতসব  নষ্টের মূল, অবিলম্বে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক! যে দাবীটি এই দেশের বুদ্ধিজীবি, ছাত্র অভিভাবক, সুশীল সমাজ, বিদগ্ধ রাজনীতিবীদ, নিবেদিত ছাত্রনেতা, অখ্যাত, প্রখ্যাত ব্যাক্তিদের মুখে গত দশকেও খইয়ের মত ফুটে উঠেছিল। ইহা কি নষ্ট রাজনীতি'র বিপরীতে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরে এসে গনতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অর্জন নয়?  শিক্ষিত সমাজই তো আগামী দিনের উন্নত, সমৃদ্ধ, তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশের নেতৃত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে। তাঁরাই যদি রাজনীতি চর্চা থেকে বিরত থাকে--কে দেশ ও জাতীর নেতৃত্ব দিবে? অশিক্ষিত,  অথর্ব, অশুভের প্রেতাত্বা? জনগনের টাকায় লালিত দেশরক্ষার পাহারাদার সামরিক আমলা? সাম্রাজ্যবাদী চক্রের পেইড এজেন্ট তথাকথিত এনজিও কর্মকর্তা? সুদখোর, ঘুষখোর, কাল টাকার মালিক, লুটেরা ব্যাবসায়ী? মৌলবাদী  সাম্প্রদায়িক গুষ্টি? ইদানিং তদ্রুপ আলামতই তো দেখছি।
  নচেৎ বিগত দশ বছরের মধ্যে প্রথম ছাত্র সমাজের মধ্যে গড়ে উঠা যৌক্তিক 'কোটা আন্দোলন' কিভাবে, কোন শক্তির বলে অশুভ শক্তির অন্ধকার কুঠরী থেকে বের হয়? তাঁদের অন্ধগলি থেকে বের হয়েছে বলেই তো জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত, লাঞ্চিত হতে হয়েছে। প্রকাশ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের কুটুক্তি করার সাহষ পেয়েছে। পাকিস্তানী সেনাদের বিয্যে জম্ম নেয়া জারজ সন্তানেরা স্বাধীন দেশের রাজপথে বুকে, পিঠে, গালে রাজাকার উল্কি এঁকে মিছিল, মিটিং করার সাহষ পেয়েছে। মুক্তি যোদ্ধারা যদি জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ না করতো--ঐ আন্দোলনকারীদের অধিকাংশ ইউনিভারসিটিতে পড়ার সুযোগ পেত কিনা, একবার কি তাঁরা ভেবেছে? অখন্ড পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিসে কতজন বাঙ্গালী কর্মকর্তা ছিল, তাঁরা কি জানে? সামরিক বাহিনীর উচ্চ পদে বাঙ্গালী সামরিক কর্মকর্তা আদৌ ছিল কিনা--তাঁরা কি জানে? আন্দোলনকারী ছাত্রদের অনেকের পিতা, পিতামহ পশ্চিম পাকিস্তানের মাত্র এক প্রদেশ-- পাঞ্জাবের-পাঞ্জাবীদের বাসা বাড়ীতে এই সেদিনও চাকরে'র কাজ করতে হয়েছে, তাঁরা কি জানে? আজও পাঞ্জাব ব্যাতিত বাকি তিন প্রদেশের সকল জাতী গুষ্টি পাঞ্জাব জাতীর হুকুমের গোলাম--তাঁরা কি জানে? এই না জানার দোষ কি দেব--নি:সন্দেহে ৭২ এর প্রতিবিপ্লবীদের!
   কোটা সংস্কার আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক আন্দোলন, কোটা সংস্কার রাষ্ট্রের নিয়মিত তদারকি কর্মকান্ডের মধ্যে একটি। অতীতে অনেকবারই কোটা, কোটাপদ্ধতি সংস্কার, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংকোচন, সংযোজন, বিয়োজন হয়েছে--প্রয়োজনে আরো বহুবার হবে। এটা রাষ্ট্রের একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে কি সেটা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাঞ্চিত করে? তাঁরা কি তাঁদের এই সুযোগ জাতীর নিকট কখনও দাবী করেছিল? তাঁরা কি তাঁদের সন্তানদের বিশেষ সুবিধা আদায়ে এযাবৎ রাজপথে একদিনের জন্যে আন্দোলনে নেমেছিল?
     জাতী বিবেকের তাড়নায় তাঁদের সন্তানদের এই সুযোগ দিয়েছে। দীর্ঘ তিন দশক অঘোষিত ভাবে তাঁদের ছেলেমেয়েদের সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ বন্ধ ছিল। তাঁরা কি কখনও ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দোলনে নেমেছিল? মাত্র গত ৫বছর তাঁদের সন্তানদের বিশেষ সুবিধার ব্যাবস্থা করেছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির সরকার। এতেই আপনারা এত বিচলিত কেন? বিচলিত হবেন ভাল কথা--কটুক্তি কেন? আপনি কার ওরসে জম্ম নিয়েছেন? পরাজিত শক্তির? বিশ্বের কোন দেশেই পরাজিত শক্তির নাগরিক অধিকার নেই, আপনারও থাকার কথা ছিলনা। বাঙ্গালী জাতীর ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আপনি লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছেন, ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে নিয়েছেন। আপনি থাকার কথা ছিল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের গোলাম। ইসলামের প্রথম যুগেও যেটা স্বিকৃত ছিল, প্রচলিত ছিল। আপনাদের কিসের আন্দোলন, কার বিরুদ্ধে আন্দোলন?কোথায় পান এত শক্তি?
   অশুভশক্তির বংশধরদের প্রকাশ্য রাজপথে আস্ফালনের দায় কার?  ছাত্র সমাজের কোটা সংস্কার করার দাবী'র যৌক্তিকতা অবশ্যই রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি'র বহু ছাত্র সংগঠন শিক্ষাঙ্গনে তৎপর থাকা সত্বেও সাধারন ছাত্রদের চাওয়া, পাওয়া কি, জানার চেষ্টা করেনি। অন্যভাবে বলতে গেলে বলতে হয়--প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাত্রসমাজের  পালস বুঝেনি, বা বুঝার চেষ্টা করেনি। এতে স্পষ্টত:ই প্রমানীত হয় সাধারন ছাত্রদের সঙ্গে ছাত্র নেতাদের সম্পর্ক নেই। সাধারন ছাত্রদের সাথে সম্পর্ক নেই বিধায় কোটা আন্দোলনের চাবি হাতে নিতে পারেনি। থাকবে কোত্থেকে? ছাত্র রাজনীতিও যে বড় ব্যবসা--এই ধারনাতো জিয়াই প্রথম ছাত্র নেতাদের শিখিয়ে গেছেন, বুড়িগঙ্গার প্রমোদতরী'র বিশেষ রাজনৈতিক প্রশিক্ষনে।
    প্রগতিশীল ছাত্রনেতাদের মুরুব্বিরা সবাই এখন মন্ত্রী, এমপি, দেশ ও জনগনের ভাগ্য নিয়ন্তা। তাঁদের ড্রয়িং রোম পাহারা দিবে, নাকি শিক্ষাঙ্গনে সাধারন ছাত্রদের সাথে সঙ্গ দিবে? প্রগতিশীল  ছাত্রনেতাদের শিক্ষাঙ্গনে দীর্ঘ অনুপস্থীতি'র সুযোগটাইতো নিলো অশুভ শক্তির প্রেতাত্বার তরুন তুর্কিরা। সুতারাং তাঁদের উত্থান যে বৃত্তের মধ্য থেকে হয়েছে, সেই বৃত্তের স্বার্থরক্ষাই তো করবে--ইহাই স্বাভাবিক, করেছেও তাই।
  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র সংসদে দেয়া ঘোষনানুযায়ী ছাত্র সমাজের দাবী সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হোক আন্তরিক ভাবে'ই কামনা করি। একটি মাত্র কারনেই দাবী বাস্তবায়ীত হওয়া প্রয়োজন--জাতিরজনকের কন্যার ঘোষনার কোনরুপ ব্যাত্যায় ঘটতে পারেনা, ব্যাত্যায় ঘটা উচিৎ নয়।"
    পরিশেষে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কটুক্তির সম্পূর্ণ দায় আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা '৭১/ '৭৫ এর রাজাকার, দালাল, মীরজাপরে'র প্রেতাত্বা, লুটেরা, দুর্বৃত্ত নেতাদের দিয়ে যাচ্ছি। যারা নিজ স্বার্থ চরিতার্থের উদ্দেশ্যে দলে দলে বিরুদ্ধ আদর্শের নেতাকর্মীদের আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করার সুযোগ দিয়েছে--তাঁদেরকে দিচ্ছি। যে সমস্ত ছাত্র নেতারা ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে রাতের অন্ধকারে ছদ্মবেশী অশুভশক্তির প্রেতাত্বার হাতে আমার বোন এশা'কে লাঞ্চিত করার সুযোগ  দিয়েছে তাঁদের' প্রতি লাঞ্চিত বাঙ্গালী জাতির অভিশাপ। যারা রাতের অন্ধকারে সম্মানীত ভিসি'র বাসভবন লুটতরাজের সুযোগ করে দিয়েছে--তাঁদের প্রতি লক্ষলক্ষ মুজিবাদর্শের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অন্তরে'র অভিশাপ বর্ষিত হোক, তাঁরা অচিরে'ই ধ্বংস হোক।

   
      

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন